দলের ভিতর থেকেই নবীন নাটককার এবং নবীন নির্দেশককে তুলে এনে আভাষ-এর নবতম প্রযোজনা ‘থিম থিম থিম’ প্রথম অভিনয় হল অ্যাকাডেমিতে। থিম-থিমের পুনরাবৃত্তিতে এমনটা অনুমানই করেছিলাম যে, নাটকের বিষয়বস্তু উৎসবপ্রিয় বাঙালির থিম-কেন্দ্রিক চিন্তাবস্তুকে আশ্রয় করে হবে। সে অনুমান হয়তো ভুল ছিল না। কিন্তু চমকে উঠলাম তখনই যখন দেখলাম নবীন নাটককার কাহিনিবস্তুকে শহর-মফস্সলের গণ্ডিতে বেঁধে না রেখে আয়লা বিধ্বস্ত সুন্দরবনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো গভীর সমস্যাকে বিষয়ের কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। যতক্ষণ এ নাটকে মফস্সলের মানুষদের কলকাতার পুজোর থিম অনুকরণের কাঙালপনা ছিল, ততক্ষণই সে ছিল হাল্কা রসের কমেডি-ফান ও কিঞ্চিৎ উইটের খানিক মোটা দাগের পরিবেশন। নাটককার সংঘমিত্রা চক্রবর্তীকে ধন্যবাদ জানাই, তিনি কমেডির হাল্কা-হাসির মনোরঞ্জন থেকে নাট্যকাহিনিকে নিয়ে গিয়েছেন আর্থ-সামাজিক সমস্যার গভীরে।
গেস্ট হাউসের মালিক সদাশিববাবু, তার ভাগনে পটল, ভৃত্য হাবলু। আর থিম পুজোর উৎপাতে কলকাতা থেকে শান্তির খোঁজে পালিয়ে মফস্সলে আসা শশাঙ্কবাবু ও তার স্ত্রী নীলিমা। তাদের ঘিরে যে হ্যাংলাপনা, হাল্কা দুষ্টুমি, হিংসুটেপনা আর ভালবাসার জমজমাট আসরে অত্যন্ত বেসুরো-রহস্য হয়ে বাজে বোর্ডার পরিতোষ শীল। আর সেই সূত্র ধরেই আসে দোলা চরিত্রটি।
ঘটনাস্রোত বদলে যায়। কমেডির আবহ থেকে দ্রুত নাট্যকাহিনি চলে যায় ট্র্যাজেডির গভীরতায়। মদন হালদারের মঞ্চ আর স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবহ প্রথমার্ধে কিছুটা স্থবির। কিন্তু নাটকের শেষ লগ্নে যখন পাগলি মেয়েটিকে পটের সামনে রেখে হাবলু মাতৃ-আরাধনার ভঙ্গিতে পুজো করে, গোটা নাটক যেন ওই একটি মাত্র দৃশ্যে এসে খুঁজে পায় এক অনন্য উত্তরণ। আলো-আবহ-মঞ্চ ও কোরিয়োগ্রাফির যেন এক অপূর্ব মন্তাজ তৈরি হয়। দিব্যেন্দু বর্ধনের নির্দেশনার হাতেখড়িও এই নাটকের মধ্য দিয়ে। অভিনয়ে দোলা চরিত্রে ঐন্দ্রিলা ঘোষকে বেশ জড়সড় মনে হয়েছে। সামগ্রিক অভিনয়ের মান বেশ সাধারণ হলেও পরিতোষের চরিত্রে দিব্যেন্দু বর্ধন, পটলের চরিত্রে অনন্যশঙ্কর ও শশাঙ্কের চরিত্রে সবিতাব্রত রায়ের অভিনয় আলাদা করে মনোযোগ দাবি করে।
মলয় রক্ষিত
অনুষ্ঠান
• সম্প্রতি উত্তম মঞ্চে সৃষ্টি পরিষদ আয়োজন করেছিল ‘প্রেমগীত-সুধারসে’ নামে একটি অনুষ্ঠানের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নির্বাচিত প্রেমের ও নববসন্তের গান পরিবেশন করেন এষা মিত্র, শ্রাবণী চট্টোপাধ্যায়, দেবশ্রী নন্দী, উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, ইন্দ্রজিৎ মুখোপাধ্যায়, শুভাশিস মজুমদার।
• জ্ঞান মঞ্চে কবিতার ক্লাস আয়োজন করেছিল একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের। প্রথমার্ধে সংস্থার ছাত্রছাত্রীরা পরিবেশন করেন ‘এই শহর এই সময়’। দ্বিতীয়ার্ধে কবিতা পাঠে ছিলেন রাজা। যন্ত্রানুষঙ্গে আশিস ঘোষ, অরুণাভ কবিরাজ।
• সম্প্রতি গিরিশ মঞ্চে ভ্রমরা আয়োজন করেছিল লোক উৎসবের। ঝুমুর ও গোয়ালপরীয়া লোকগীতে অনুষ্ঠানসন্ধ্যা মুখরিত হয়েছিল। অংশগ্রহণ করেছিলেন রতন কাঁহার, দেবব্রত দে, অমিতাভ মুহুরী, নিমাই অধিকারী, সুশান্ত কর, মানস দে, শুভঙ্কর রায়, সৃজা রায় প্রমুখ।
• জি ডি বিড়লা সভাঘরে পারম্পরিক আয়োজন করেছিল একটি সংগীত উৎসবের। অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করেন মহেন্দ্র টোকে, দেবাশিস ভট্টাচার্য, বিদুষী মঞ্জুষা কুলকার্নি পাতিল, তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার, স্বপন চৌধুরী, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
• তৃপ্তি মিত্র সভাঘরে উত্তরপাড়া ব্রাত্যজন মঞ্চস্থ করল নাটক ‘তোতাকাহিনি’। নাটকটি লিখেছেন জহর দাশগুপ্ত। নির্দেশনা দেন কৃষ্ণেন্দু দেওয়ানজি।
• রামমোহন লাইব্রেরি হলে আনন্দধারা নিবেদন করেছিল ব্রহ্ম সংগীতানুষ্ঠানের। সংগীত পরিবেশন করেন সমীর দাস, অব্যয় চট্টোপাধ্যায়, নন্দিনী ভট্টাচার্য, রিনা দোলন বন্দ্যোপাধ্যায়, সীমা ঘোষ, কাবেরী বাগ প্রমুখ। যন্ত্রসংগীতে অমিতাভ সাহা, প্রশান্ত রায়চৌধুরী, তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন অম্বালিকা পালচৌধুরী।