Advertisement
E-Paper

মুখ তার শ্রাবস্তীর...

সেই কারুকাজ আর নেই। কিন্তু সভ্যতার ধ্বংসাবশেষে জীবন্ত তথাগতের ২৫টি বর্যা কাটানোর ইতিহাস সেই কারুকাজ আর নেই। কিন্তু সভ্যতার ধ্বংসাবশেষে জীবন্ত তথাগতের ২৫টি বর্যা কাটানোর ইতিহাস

অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৭ ১৩:২৫
অঙ্গুলিমাল  স্তূপ

অঙ্গুলিমাল স্তূপ

গোধূলির আলোয় জেতবনে ঢুকতে-ঢুকতে মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে যায়।

কিন্তু স্তূপ আর বিহারে ঘেরা জেতবনে সূর্যাস্তের পরে ঝুপ করে অন্ধকার নামলে কী হবে, তা ভেবে গা-ছমছম করছিল বই কী! ভাবছিলাম, কাল সকালে এসেই না হয় ঘুরব। এখন বরং হোটেলে ফিরে যাই। কিন্তু কোথায় অন্ধকার! সূর্যাস্ত হতে না হতেই জেতবন জুড়ে জ্বলে উঠল হাজারো প্রদীপ, বুদ্ধের আরাধনায়। বুদ্ধপূর্ণিমার জ্যোৎস্নায় জেতবনে তখন মায়াবী পরিবেশ। হালকা ঠান্ডা হাওয়ার সঙ্গে শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে বৌদ্ধদের সমবেত গুনগুন, বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি...

রাজগীর, বুদ্ধগয়া, সাঁচি, সারনাথ... বুদ্ধের স্মৃতি ঘেরা জায়গা ভূ-ভারতে কম নেই। সে তুলনায় শ্রাবস্তীর ‘গ্ল্যামার’ খানিকটা কমই। কিন্তু ঘটনাচক্রে বুদ্ধের জীবনের সিংহভাগ কেটেছে এই শ্রাবস্তীতেই। বৌদ্ধদের হিসেব বলে, জীবনের পঁচিশটি বর্ষা বুদ্ধ কাটিয়েছেন রাপ্তী নদীর তীরে এই জনপদে।

অনন্তপিণ্ডক

অধুনা উত্তরপ্রদেশের ‘পিছড়া’ জনপদ শ্রাবস্তী। বুদ্ধের সময়ে কিন্তু তা ছিল না। বরং, রাপ্তীর তীরে এই শহর ছিল ভারতের অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র। কোশল সাম্রাজ্যে অযোধ্যার সঙ্গেই গড়ে উঠেছিল শ্রাবস্তী। কথিত আছে, কোশলরাজ শ্রাবস্ত নিজের হাতে শ্রাবস্তী নগরকে গড়ে তুলেছিলেন। বৌদ্ধদের ইতিহাস অবশ্য অন্য রকম। তাঁদের দাবি, শ্রাবস্তীর নাম হয়েছিল ঋষি সাবত্থীর নামে। এ হেন শ্রাবস্তীরই নামকরা শ্রেষ্ঠী ছিলেন সুদত্ত। বুদ্ধের নামডাক শুনে রাজগীরে এসে বুদ্ধের সাক্ষাৎপ্রার্থী হন তিনি।

সৌম্যদর্শন তথাগতকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যান সুদত্ত। শরণ নেন বুদ্ধের। সুদত্তর আমন্ত্রণেই বুদ্ধের শ্রাবস্তীতে আসা। বুদ্ধ হট্টগোল সহ্য করতে পারেন না। সে জন্য শ্রাবস্তীর দক্ষিণে নগরপ্রান্তে একটি বিশাল প্রাঙ্গণ বুদ্ধের জন্য কিনবেন বলে ঠিক করেন সুদত্ত। কোশলের রাজা তখন প্রসেনজিৎ। ওই প্রাঙ্গণ প্রসেনজিতের ছেলে জেত-এর সম্পত্তি। সুদত্ত জেতের শরণাপন্ন হলেন। মওকা বুঝে জেত জানিয়ে দিলেন, পুরো প্রাঙ্গণ স্বর্ণমুদ্রায় ঢেকে দিতে হবে। সেটাই হবে ওই প্রাঙ্গণের মূল্য। সুদত্ত তাতেই রাজি। এ বার জেত বায়না জুড়লেন, গাছ তো আর স্বর্ণমুদ্রায় ঢাকা পড়েনি। তাই প্রাঙ্গণের গাছ তাঁরই সম্পত্তি থাকবে। শেষমেশ অবশ্য বুদ্ধের কথা ভেবে তা ছেড়ে দিতে রাজি হলেন জেত। আর তাঁর প্রতি সম্মান জানিয়ে ওই প্রাঙ্গণের নাম হল জেতবন। এখানেই গৌতম বুদ্ধের বিশ্রামের জন্য উৎকৃষ্ট চন্দনকাঠ দিয়ে সুদত্ত তৈরি করেছিলেন ‘গন্ধকুটির’। ভগবান তথাগতর সুগন্ধ খুবই প্রিয় ছিল যে!

আনন্দবোধিবৃক্ষ

আজ সে সবই শ্রাবস্তীর প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে আছে সভ্যতার ভগ্নাবশেষ হয়ে।

জেতবন ঘুরতে-ঘুরতে গন্ধকুটিরের সামনে দাঁড়িয়ে চন্দনের সুগন্ধ হয়তো পাবেন না, কিন্তু ইতিহাসের আঁচ পেতে অসুবিধে হয় না।

গন্ধকুটির ঘিরে নানা কাহিনিও শোনা যায় শ্রাবস্তীতে। এখানেই নাকি রাজা প্রসেনজিৎ বুদ্ধকে প্রশ্ন করেন, ‘ভন্তে, আপনি নাকি বুদ্ধ! আপনার নাকি বোধিলাভ হয়েছে?’ কথিত, এর পর ওই গন্ধকুটিরের ঘরেই সহস্র বুদ্ধ দর্শন করেছিলেন কোশল-রাজ। আবার শ্রাবস্তীতেই বুদ্ধের সংস্পর্শে এসে দস্যু থেকে শ্রমণ হন অঙ্গুলিমাল।

সাহেত এবং মাহেত, এই দুই গ্রাম নিয়ে শ্রাবস্তী। বলরামপুর-শ্রাবস্তী রোডে প্রথমে পড়বে সাহেত। ৪০০ একরের সাহেতে হারিয়ে যাওয়া শ্রাবস্তীর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। আর সাহেত ছাড়িয়ে উত্তরে রাপ্তী নদীর দিকে খানিক এগোলেই পড়বে আর এক গ্রাম মাহেত। এখানেই রয়েছে কাচ্চি কুটি এবং পাক্কি কুটি। কাচ্চি কুটিই হল অনন্তপিণ্ডক বা সুদত্তর বাড়ি। আর পাক্কি কুটি অঙ্গুলিমালের স্তূপ হিসেবে পরিচিত। প্রাচীন কাঠামো হলেও দু’টি কুঠিই বেশ স্পষ্ট। জেতবনে দেখবেন দু’টি মনাস্ট্রি, ছ’টি মন্দির আর পাঁচটি স্তূপ। তার মধ্যেই রয়েছে যে পিপুল গাছের তলায় গৌতমের বোধিলাভ হয়েছিল, সেই গাছের ডাল থেকে তৈরি হওয়া বিশাল পিপুল গাছ ‘আনন্দবোধি বৃক্ষ’। বৌদ্ধদের কাছে যা অত্যন্ত পবিত্র। সময় পেলে ঘুরে আসতে পারেন শ্রাবস্তী থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে হিন্দুদের পবিত্র ধর্মস্থান দেবী পাটনের মন্দিরও।

কীভাবে যাবেন

কলকাতা থেকে ট্রেনে গোন্ডা বা বলরামপুর যান। সেখান থেকে গাড়ি বা অটোরিকশা বুক করে শ্রাবস্তী যাওয়া যায়।

লখনউ বিমানবন্দর থেকে যেতে পারেন। দূরত্ব প্রায় ১৮০ কিমি।

কোথায় থাকবেন

সারা বিশ্বের বৌদ্ধরা আসেন শ্রাবস্তীতে। তাই সব রকমের সরকারি বেসরকারি হোটেল রয়েছে এখানে। গিয়ে দেখে বুক করে নিন।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy