E-Paper

ট্রাইসাইকেল

সেই চোদ্দো বছর বয়সে বিয়ে হয়ে এসেছিলেন এই তিনমহলা বাড়িতে। বয়স্ক স্বামী পূর্ণচন্দ্রকে দেখে এক গলা ঘোমটা টেনে দিতেন।

সুপর্ণা চট্টোপাধ্যায় ঘোষাল

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৫:৪৪
ছবি: রৌদ্র মিত্র।

ছবি: রৌদ্র মিত্র।

সুধাময়ীকে কি এমনি-এমনিই লক্ষ্মীঠাকুরের সঙ্গে তুলনা করা হয়?

শাশুড়িমা অসুস্থ হয়ে যখন বিছানায় পড়লেন, সুধাময়ীর বয়স আর কতই বা! উনিশ! তত দিনে তিন ছেলেমেয়ের মা। ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে সামলে শাশুড়ির পিঠের ঘায়ে ওষুধ দেওয়া, পাকা পেঁপে চটকে ঝিনুক দিয়েশাশুড়িকে খাওয়ানো— সব একা হাতে করতেন।

কত দিন গিয়েছে, সুধাময়ী নিজে ভাত খেতে বসেছেন, আর গ্রাস তোলার সময় নিজের হাতে লেগে থাকা ঘায়ের পচা গন্ধে ভাতের গ্রাস মুখ অবধি তুলতে পারেননি। তবু কেউ বলুক দেখি, কারও সামনে টুঁ শব্দটুকু করেছেন!

সেই চোদ্দো বছর বয়সে বিয়ে হয়ে এসেছিলেন এই তিনমহলা বাড়িতে। বয়স্ক স্বামী পূর্ণচন্দ্রকে দেখে এক গলা ঘোমটা টেনে দিতেন। রাতে পাশাপাশি শোয়ার আগে সারা দিনে দেখা অবধি হত না। তবু স্বামীর সব শখ-আহ্লাদ গুছিয়ে রাখতেন সুধাময়ী। সেই গোছানো স্বভাবের জন্যই তো পূর্ণচন্দ্রের নয়নের মণি হয়ে উঠলেন।

পূর্ণচন্দ্র কিছুতেই সুধাময়ীর হাতের রান্না ছাড়া খাবেন না। পূর্ণচন্দ্রের দূরসম্পর্কের দিদি মাধু এই বাড়িতেই আশ্রিতা ছিলেন। সে বাটনা বেটে দিলে, কুটনো কুটে দিলেও মুখে অন্ন রুচত না পূর্ণচন্দ্রের। সুধাময়ীকেই সব করতে হবে। গর্বে মটমট করে উঠত সুধাময়ীর বুক। হাসিমুখে স্বামীর পাতে পঞ্চব্যঞ্জন তুলে দিতেন। ডান দিক থেকে শুরু করে শাক, ভাজা, তরকারি, মাছ, পায়েস, সম্বৎসরের ফল, ঘরে পাতা দই।

সুধাময়ীর গোছানো স্বভাব দেখে গ্রামের লোকেরা নিজের বাড়ির ঝি-বৌদের খোঁটা দেয়, “সুধাময়ীকে দেখে কিছু শিখতে পারিস তো! চিনেমাটির কাপ-ডিশ কেমন পরিপাটি করে দেরাজে তুলে রাখা দেখেছিস? রুপোর ফুলদানিতেকেউ একটা কালচে ছোপ দেখাকতো দেখি!”

এমন কি মাধুদিদির আইবুড়োবেলার বেলোয়ারি কাচের হাত-আয়নাটাও সুধাময়ী যত্ন করে তুলে দেখে দিয়েছিলেন আলমারিতে। শাশুড়ির গয়নার ঝলমলে ভাব সুধাময়ীর হাতে পড়ে এতটুকু টাল খায়নি। পূর্ণচন্দ্রের থিয়েটার দেখার নেশাকে কোনও দিন বাঁকা চোখে দেখেননি সুধাময়ী। পুরুষমানুষের অমন একটু-আধটু বাহিরপানের নেশা না থাকলে মেনিমুখো লাগে।

থিয়েটারের নায়িকা বিধুবালাকে নিয়ে এই গ্রামে, এই বাড়িতেই যখন এসে উঠলেন পূর্ণচন্দ্র, তখনও সুধাময়ী সব গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করলেন। বরাবরের মতো সে যাত্রাও উতরে গেলেন তিনি। পূর্ণচন্দ্রকে বললেন, “ও মেয়েকে আপনি যখন এনেছেন, তখন আমরা দুই বোন হয়েই থাকব।”

বিধুবালাও তার ছোট বোন হওয়ার কর্তব্য পালন করল সুধাময়ীর ঘরখানি দখল করে। সুধাময়ী উঠে গেলেন ঠাকুরঘরের পাশে অপেক্ষাকৃত ছোট ঘরটায়। সেখানকার পালঙ্ক ছোট। একটি বই দু’টি মানুষ ধরে না। প্রয়োজনও নেই। পূর্ণচন্দ্রও রাতে আশ্রয় নিলেন বিধুবালার ঘরে। ছেলেমেয়েরাও এই ব্যবস্থায় বড় হতে থাকল।

তারাও মায়ের মতো গোছানো স্বভাব পেয়েছে। ছেলে বিবেকের ঘরদোর পরিপাটি। আলনায় শার্ট, প্যান্ট নিপাট ভাঁজ করে তোলা থাকে। মশারি ভাঁজ করার সময় চারটে কোণ সমান ভাবে ধরে রাখে বিবেক। ইস্কুলের খাতায় একটাও অতিরিক্ত আঁচড় নেই। খবরের কাগজ বা ক্যালেন্ডার দিয়ে বইয়ের মলাট করার সময় যদি ভুল করে মানুষের মুখ পড়ে যায়, সেই মুখে পেন দিয়ে গোঁফ-দাড়ি আঁকে না।

মেয়ে মাধবীলতাও আলাদা হয়নি। চুল বাঁধার সময় একগাছা চুলও তার হাওয়ায় ওড়ে না। শাড়ির আঁচল দিনের শেষেও লাট খায় না এতটুকু। তার এই স্বভাবের জন্যেই গোবিন্দচরের রায়বাড়িতে বিয়ে হল মাধবীলতার। বড় বাড়ি, বড় ব্যবসা। স্বামী, ভাশুর, শ্বশুর মিলিয়ে ষোলো জনের সংসার। সব কিছু গুছিয়ে রাখতে গিয়ে মাধবীলতার শরীর যেমন ভাঙল, তেমনই এ বাড়ির সঙ্গে সম্পর্কও চুকল।

বিবেক গেল জেলাশহরে কলেজে পড়তে। সেখানে মেসের ছেলেরা বর্তে গেল বিবেককে পেয়ে। বিবেক তাদের বিছানা টান-টান করে পেতে দেয়। সন্ধের আগে মেসে ঢুকে ধূপ-ধুনো দিয়ে ঘরের মশা তাড়িয়ে রাখে। বালিশের তলায় ছারপোকার উপদ্রব শেষ হল বিবেক আসায়। আতশকাচ দিয়ে খুঁজেও কলাই করা বাটিতে আর হলুদের দাগছোপ পাওয়া গেল না।

ওকালতি পাশ করে বড় ব্যারিস্টারের কাছে প্র্যাকটিস করতে ঢুকল বিবেক। সুধাময়ী বুঝলেন, বাড়িতে লক্ষ্মীঠাকুর আনার সময় হয়েছে। যে-সে মেয়ে আনলে হবে না। রূপে সরস্বতী, গুণে লক্ষ্মী আনতে হবে। দেখতে হবে, এ বাড়ির স্বভাবের সঙ্গে যেন মিলমিশ খায় মেয়ের। গেছো মেয়ে, পাড়াবেড়ুনি মেয়ে সুধাময়ীর এক্কেবারে অপছন্দ। সাত গ্রামে ঘটক পাঠানো হল। কথায় বলে, বিয়ের থেকে বিয়ের আয়োজনে বেশি শব্দ খরচ হয়। সপ্তাহান্তে ঘটক আসে সুধাময়ীর কাছে। উঠোনে কাঠের চেয়ার পাতা হয়। চিনেমাটির কাপ-ডিশে চা আসে। মিষ্টি আসে। আসেন পূর্ণচন্দ্রও। এখন আর এই বাড়িতে তিনি থাকেন না। বিধুবালার নামে একখানা দোতলা বাড়ি করে দিয়ে সেখানেই উঠে গিয়েছেন।

পূর্ণচন্দ্র গম্ভীরমুখে মেয়েদের ছবি দেখে আর হালহকিকত শুনে সুধাময়ীর দিকে ছবিগুলো এগিয়ে দেন। সুধাময়ী খুঁটিয়ে দেখেন মেয়ের শাড়ি পরার ধরন। চুল বাঁধার রকমসকম। খুঁজে পেতে গোপীনাথপুরের রাইকে পেলেন।

সে রাইসুন্দরীই বটে! কুয়োপাড় থেকে ভিজে পায়ে হেঁটে এলে, উঠোনে সে মেয়ের পায়ের ছাপ পড়ে একদম আলপনার ছাপের মতো। শাশুড়ির কথার অন্যথা করে না। মুনিষ-মাইনদারদের জন্য রান্না করা বড় হাঁড়ির ফ্যান একাই গালতে পারে। কুরুশ-কাঁটা দিয়ে খঞ্চিপোশ বানাতে পারে। সুচ-সুতোয় টেবিলক্লথে লেখে, ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’। চটের আসনে টিয়াপাখি আর গোলাপ ফুলের নকশা তোলে। সুধাময়ী সেই খঞ্চিপোশে বারকোশ ঢাকা না দিয়ে তুলে রাখেন আলমারিতে। টেবিলক্লথ ভাঁজ হয়ে উঠে যায় দেরাজে। কেউ এলে নামিয়ে দেখান, কত ভাগ্যগুণে তিনি বৌমা পেয়েছেন। তার পর আবার তুলে রাখেন যথাস্থানে।

দেড় বছরের মাথায় রাইসুন্দরীর কোল আলো করে খোকা এল। বাড়িতে আবার নতুন করে উৎসবের মেজাজ ফিরে এল। সুধাময়ী পুরো গ্রামে রসগোল্লা বিলি করলেন। গোপালমন্দিরে বালক ভোজন করালেন গোবিন্দভোগ আতপের পোলাও দিয়ে। খাজাবাবার মাজারে চাদর চাপিয়ে এলেন বিবেকের সঙ্গে গিয়ে। বিধুবালা এসে খোকাকে আশীর্বাদ করে গেল সোনার দুধবালা দিয়ে। গোল গোল নাদুসনুদুস হাতে ঝিকমিকিয়ে উঠল বালাদুটো। বেশি ক্ষণের জন্য নয়। বিধুবালার সামনেই সুধাময়ী সে দুটো খোকার হাত থেকে খুলে আলমারিতে তুলে দিলেন।

বিধুবালা বলে উঠল, “ও কী দিদি, পরে থাকুক খানিক ক্ষণ!”

সুধাময়ীর যুক্তি তৈরিই ছিল, “না বোন, বাইরের লোক আসছে যখন তখন। কার কেমন নজর, বলা যায়?”

বিধুবালা মুখে কিছু বলল না। বাড়ি গিয়ে পূর্ণচন্দ্রের কাছে গজগজ করে, “সবই আলমারিতে তুলে রাখলে ভোগ করবে কী?”

পূর্ণচন্দ্র এ-সব মেয়েলি আলোচনায় থাকাটা পৌরুষ বলে মনে করেন না। তিনি চুপচাপ সিগারেটে টান দিলেন।

বিধুবালার গজগজানি যায় না। সে আবার বলে, “আলমারিতে কি জিনিসগুলো ডিম পাড়বে, বলো তো? সবই তুলে তুলে রেখে দিচ্ছেন, যেন কিচ্ছু ব্যবহার করার জন্য নয়, সবই সাজিয়ে রাখার জিনিস!”

“তাকে গিয়ে বললেই পারো!” গজরানি শুনে বিরক্ত পূর্ণচন্দ্র সেখান থেকে উঠে যান।

এ দিকে সুধাময়ীর জীবনে নতুন বাঁকবদল হল। এখন তাঁর জীবন আবর্তিত হয় খোকাকে ঘিরে। খোকাকে তার মা দুধ খাইয়ে দিয়ে ঘরের কাজে লেগে পড়ে। সুধাময়ীই খোকাকে তেল মাখিয়ে রোদ্দুরে শুইয়ে দেন। রোদের তাত বাড়লে খোকাকে আঁচলের তলায় লুকিয়ে নেন। পিতলের বালতিতে জল রাখা থাকে। জলের উপর দূর্বাঘাস ভাসে। খোকাকে সেই জলে চান করানো হয়। কপালে গোল কাজলের টিপ পরিয়ে পাউডার লেপে দেন সুধাময়ী। খোকার ঠান্ডা লাগার ধাত। সামান্য ঠান্ডা লাগলেই বুকে সর্দি বসে একাকার কাণ্ড। তায় আবার কত লোক আসে খোকাকে দেখতে। সবার নজর কি আর ভাল!

খোকাকে যারাই দেখতে আসে, তারাই হাতে করে কিছু না কিছু আনে। এক দিন বিবেকের আপিসের সিনিয়র এলেন এই বাড়িতে। সঙ্গে নিয়ে এলেন নরম পুতুল-ভাল্লুক। টেডি বেয়ার। ঘন দুধ-চা র‌ং। কুতকুতে বোতাম-চোখ। টেডি বেয়ার দেখেই খোকা হাত বাড়িয়ে দিল তাকে ধরবে বলে। তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে, মুখে দেওয়ার আগেই সুধাময়ী টেনে নিলেন, “এই এই... নাল-ঝোল মাখিয়ে নোংরা করে ফেলবে গো!”

ঘরের কাচ দেওয়া শো-কেসে ঠাঁই পেল টেডি বেয়ার। খোকার চোখের সামনেই রইল যদিও। খোকা অবোধ্য ভাষায় তাকে হাত-পা নেড়ে ডেকে গেল। কাচের অপর প্রান্ত থেকে বোতাম-চোখে তাকিয়ে রইল টেডি বেয়ার। কেউ কারও কাছে যেতেপেল না।

খোকার জীবনের প্রথম রথের মেলা থেকে আনা হল মাটির পুতুল, তালপাতার সেপাই আর কাগজের ফিরকি। ঠুনকো জিনিস সব। হাত থেকে পড়ে গেলেই ভেঙে কিংবা ছিঁড়ে যাবে। নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে সুধাময়ীর হাত ধরে একে একে সেই শো-কেসে জমা হল তারা।

খোকার বড় হওয়ার সঙ্গে তার ঠান্ডা লাগার ধাতও বাড়ল। তার দু’বছরের জন্মদিনের আগে শহরে ডাক্তার দেখাতে যাওয়া হল। ফেরার পথে সাইকেলের দোকান দেখে খোকা রাইসুন্দরীর চুল ধরে খামচায়, আর আঙুলের ইশারায় দোকানের দিকে দেখায়, “ভুম গাই! ভুম গাই!”

‘ভ্রুম গাড়ি’র অর্থ উদ্ধার করে বিবেক তখনই খোকার জন্য একখানা ট্রাইসাইকেল কিনে ফেলল। গোলাপি টুকটুকে ট্রাইসাইকেলের প্লাস্টিকের সিট, লোহার হাতল আর তিনটে মোটা মোটা চাকা। খোকার আনন্দ আর দেখে কে!

বাড়ি ফিরে ঘরের উঠোনেই খোকাকে বসানো হল ট্রাইসাইকেলে। খোকা প্যাডেলে চাপ দিতে পারে না। পুরো শরীরের ঝাঁকুনি দিয়ে হাতল ধরে ঠেলা মারে, আর হাসে “ভুম গাই, ভুম ভুম!” বিবেক তাকে পিছন থেকে আলতো ঠেলতেই সাইকেল চলতে শুরু করে। খোকা আনন্দে হাততালি দিয়ে ওঠে চটাস চটাস। নাকদিয়ে গড়িয়ে আসা সর্দি জিভ বার করে চাটে।

সুধাময়ী হাঁ-হাঁ করে দৌড়ে আসেন, “আরে কী করিস!”

বিবেক সত্যিই লজ্জা পায়। খোকার শরীর ভাল নেই। এই ভর সন্ধেবেলা হিম পড়ছে। খোকাকে উঠোনে আনা উচিত হয়নি।

বিবেক খোকাকে ট্রাইসাইকেল থেকে তুলে নিতেই সুধাময়ী সেই যানটিকে আঁচল দিয়ে মোছেন। “দেখো দেখি, নতুন জিনিস। চাকায় ধুলো লেগে গেল! তোর কি জ্ঞানগম্যি হবে না? যা তুলে রাখ!”

বিবেক আবার ট্রাইসাইকেলকে প্লাস্টিকের প্যাকেটে মুড়ে আলমারির মাথায় তুলে রাখে। খোকা ঘ্যানঘ্যান করে। কাঁদে। রাইসুন্দরী এসে আদর করে খোকাকে। কেঁদে কেঁদে খোকার নাক বন্ধ হয়। ঘুমোতে গেলে নিঃশ্বাস নিতে পারে না। রাইসুন্দরী আর বিবেক মিলে সারা রাত পালা করে খোকাকে কোলে নিয়ে দোলায়। নাকে ড্রপ দেয়। সুধাময়ী লম্ফ জ্বালিয়ে আকন্দ পাতায় আগুনের তাত নিয়ে খোকার বুকে চেপে ধরেন। খোকা ট্রাইসাইকেলের দিকে তাকিয়ে হাত বাড়ায়, “ভুম গাই।”

সুধাময়ী তখন ছেলেভুলানিগান ধরেন।

খোকার অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকে। ভাল করে খায় না। হাত পা ছোড়ে না। ঘরময় হামাগুড়ি দেয় না। শুধু ওষুধ খায়, আর ট্রাইসাইকেলের দিকে তাকিয়ে থাকে। ঝলমলে গোলাপি ট্রাইসাইকেলকে হাত নেড়ে ডাক দেয়, “আয়!” সে খোকার দিকে নীরবে তাকিয়ে থাকে। নতুনের মতো তোলা অবস্থায়।

সেদিন শনিবার। বাড়িতে নিরামিষ হবে। খোকাকে ভাত-ডাল চটকে খাওয়াতে এসে সুধাময়ী দেখেন, খোকার চোখ উল্টে গেছে।

হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই খোকা মারা গেল। সে টেডি বেয়ার চাইল না, তালপাতার সেপাই চাইল না, ট্রাইসাইকেলও চাইল না। চুপচাপ বিবেকের কোলে শুয়ে শ্মশানে চলে গেল।

সুধাময়ী মুখে আঁচল চাপা দিয়ে বিবেককে বললেন, “ওর ভুম গাইটা সঙ্গে দিয়ে দে। বড় প্রিয় ছিল।”

শ্মশানে ঝিরঝির করে বয়ে যাওয়া জলধারার পাশেই বিশাল বটগাছ। তার ছায়ায় সমাধি দেওয়া হল খোকাকে। শ্মশানবন্ধুদের কে এক জন বুদ্ধি করে নারকেল দড়ি এনেছিল। একটা ঢিলপ্যাঁচ মেরে ট্রাইসাইকেলটা ঝুলিয়ে দেওয়া হল বটগাছের ডালে। পড়ন্ত বিকেলের রোদ্দুরের ফালি এসে পড়ল ট্রাইসাইকেলের উপর। গোলাপি টুকটুকে ট্রাইসাইকেলটা ঝিকমিকিয়ে উঠল।

কেউ দেখাক দেখি, তার গায়ে কোথাও এতটুকু ধুলো লেগে আছে!


(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Short story Bengali Short Story

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy