Advertisement
E-Paper

দেশি-বিদেশি পাখির খোঁজে

পাখি দেখার ও ছবি তোলার আদর্শ সময় শীত। কিন্তু ছুটি বাড়ন্ত। চিন্তা নেই। দু’দিনই যথেষ্ট। তার মধ্যেই ঘুরে আসতে পারেন পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশার পাখি দেখার জায়গায় পাখি দেখার ও ছবি তোলার আদর্শ সময় শীত। কিন্তু ছুটি বাড়ন্ত। চিন্তা নেই। দু’দিনই যথেষ্ট। তার মধ্যেই ঘুরে আসতে পারেন পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশার পাখি দেখার জায়গায়

ঊর্মি নাথ

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
স্কারলেট মিনিভেট

স্কারলেট মিনিভেট

প্রায় সব ভ্রমণপ্রিয় মানুষই অপেক্ষা করেন শীতের জন্য। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি— এই ক’টা মাস বিশেষ করে তাঁদের জন্য মোক্ষম, যাঁরা পাখি দেখতে, পাখির ছবি তুলতে ভালবাসেন। এই সময়ই আমেরিকা, ইউরোপ, রাশিয়া, মঙ্গোলিয়া, তিব্বত, মানস সরোবর থেকে ভারতে উড়ে আসে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। যাদের আমরা পরিযায়ী বলি। যারা প্রতি বছর একই জায়গায় আসে এবং শীত ফুরোলে ফিরে যায় নিজের দেশে। এই পরিযায়ীরা আমাদের রাজ্যেও ভিড় করে। এই সময় স্থানীয় পাখিদেরও গতিবিধি বেড়ে যায়। পাখি দেখার নেশা সপ্তমে, অথচ ছুটি মেলা ভার। চিন্তা নেই। হাতে মাত্র দুটো দিন থাকলেই ঘুরে আসতে পারেন উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ বা ওডিশায় পাখিদের আস্তানায়। পাখির সঙ্গে মিলবে নানা রঙের প্রজাপতি ও ফুল। যাঁদের পাখি দেখার নেশা নেই, তাঁদেরও স্রেফ ছুটি কাটানোর জন্য ভাল লাগবে এই সব জায়গা। এই সব ক’টি জায়গাতেই আছে থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা। প্রতিটি জায়গাতেই পাবেন বার্ড গাইড।

লাটপাঞ্চার

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে গাড়িতে দেড় থেকে দু’ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছনো যায় লাটপাঞ্চারে। মহানন্দা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারির একটা অংশ এই ছোট অঞ্চলটি। লাটপাঞ্চার বিখ্যাত পাটকেলে ধনেশ বা রুফেস-নেকড হর্নবিলের জন্য। এখানে হামেশাই দেখা মেলে পায়েড হর্নবিল, স্কারলেট মিনিভেট, কলার্ড ফ্যালকনেট, ব্লু হুইসলিং থ্রাশ, হোয়াইট ক্যাপড রেডস্টার্ট-সহ নানা পাখির। লাটপাঞ্চার বিখ্যাত সিঙ্কোনা গাছের জন্যও। লাটপাঞ্চার থেকে মাত্র পাঁচ কিমি দূরে অহলধারা। যেখানে প্রচুর প্রজাপতির ভিড় আর দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার পরিষ্কার ভিউ।

বার হেডেড গুজ

গজলডোবা ও ঝান্ডি দারা

শিলিগুড়ি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে তিস্তা নদীর উপর যেখানে বাঁধ দেওয়া হয়েছে, সেই জায়গাটির নাম গজলডোবা। বাঁধ দেওয়ায় এখানে তিস্তা শান্ত ও চওড়া। নীল তিস্তা আর দূরে পাহাড়— এক কথায় স্বর্গীয় পরিবেশ। নভেম্বরের শুরু থেকে তিস্তার বুকে আশ্রয়ের খোঁজে আসে মালাড, গ্রেল্যাগ গুজ, নর্দার্ন ল্যাপউইং, কমন মারগ্যানজার, নর্দার্ন শোভেলার ইত্যাদি পাখির দল। নদীর উপর নৌকা নিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে চালকেরাই আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেবে পরিযায়ীদের সঙ্গে। বলতে বাধা নেই, ভারতে যত প্রজাতির পরিযায়ী হাঁস আসে, তাদের প্রায় সব ক’টি প্রজাতিকে এখানে দেখা যায়। নৌকা থেকে নেমে তিস্তার চরে দাঁড়ালে দেখা মিলবে স্যান্ডপাইপার, স্যান্ড মার্টিন, রিভার ল্যাপউইং‌, রেড-ন্যাপড আইবিশ, অসপ্রে ইত্যাদির।

হাতে সময় থাকলে গজলডোবা থেকে সোজা গাড়ি নিয়ে চলে যান গরুমারা ন্যাশনাল পার্ক। গজলডোবা থেকে মাত্র দু’ঘণ্টার মধ্যে আর একটি জায়গা ঝান্ডি দারা। এখানকার ইকো হাটের চারপাশে দেখা যায় স্পাইডার হান্টার, ব্লু ফ্রন্টেড রেডস্টার্ট... এমনই নানা ছোট পাখি।

রুফেস-নেকড হর্নবিল

পূর্বস্থলী

বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে চুপির চরে নভেম্বর পড়তেই আসা শুরু হয় পরিযায়ী পাখির। বাড়তে থাকে স্থানীয় পাখির সংখ্যা। সেই তালিকায় উল্লেখযোগ্য রেড-ক্রেস্টেড পোচার্ড, নর্দার্ন পিনটেল, রাফ, রেড ও ইয়েলো ওয়াটলড ল্যাপউইং, আইবিশ, পার্পল হেরন, কুট, কটন পিগমি গুজ, লেসার হুইসলিং ডাক, ব্যাক শোলডারড কাইট ইত্যাদি। চুপি থেকে নৌকা করেই চলে যাওয়া যায় মেটতলার চরে। মেটতলায় অনেক বেশি পরিমাণে দেখা মেলে রাডি শেলডাক, পায়েড কিংফিশার, কমন কিংফিশার এবং অসপ্রের। পূর্বস্থলীর কাছেই মায়াপুর। বার্ডি‌ংয়ের পাশাপাশি ঘুরে আসতে পারেন ইসকন-এর হেড কোয়ার্টারে।


নর্দার্ন পিনটেল

নীল নির্জন ও তিলপাড়া বাঁধ

বীরভূমের বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলাশয়ের নাম নীল নির্জন। এটি বিখ্যাত বার হেডেড গুজ বা বড়ি হাঁসের জন্য। এ ছাড়া এখানে দেখা মেলে টাফটেড ডাক, রেড-ক্রেস্টেড পোচার্ড, পিনটেল ইত্যাদি বিভিন্ন পরিযায়ী হাঁসেদের। বোলপুর থেকে গাড়িতে নীল নির্জনে যেতে সময় লাগে এক ঘণ্টা মতো। নীল নির্জনের কাছেই ময়ূরাক্ষী নদীর উপর তিলপাড়া ড্যাম। শীতের সময় সেখানেও প্রচুর দেশি-বিদেশি পাখির দেখা পাওয়া যায়। বিশেষ করে হাজার হাজার টিয়ার সবুজ ডানা মন ভরিয়ে দেবে।

রেড-ক্রেস্টেড পোচার্ড

সুন্দরবন

শীত পড়তে না পড়তেই হুইসলিং টিল, লিটল স্টিন্ট, কমন রোজ ফিঞ্চ, কার্লু, হোয়াইট আইড পোচার্ড, স্যান্ডপাইপার, গোল্ডেন প্লোভার, বিভিন্ন ধরনের ওয়াবলার, ওয়াগটেল, কিংফিশার এবং শিকারি পাখিদের কলরবে ভরে উঠে দক্ষিণবঙ্গের সুন্দরবন। শুধু পাখি নয়, এই সময় হরিণ, কুমির, মনিটর লিজার্ডের দেখাও মেলে বেশি। ভাগ্য ভাল থাকলে দেখা মিলবে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারেরও।

পায়েড কিংফিশার

মংলাজোড়ি

ওডিশার চিল্কা হ্রদের একটি অংশ মংলাজোড়ি। এখানে অবশ্য চিল্কার মতো অত জল নেই। মংলাজোড়িকে পরিযায়ী পাখিদের স্বর্গ বলা হয়। ওডিশার খুরদা স্টেশন থেকে গাড়িতে যেতে সময় লাগে ৩০ মিনিট। ভুবনেশ্বর থেকেও যাওয়া যায়। জলাশয়ে ছাউনি দেওয়া নৌকাবিহার করতে করতেই দেখা মেলে বিভিন্ন পরিযায়ী হাঁস, ইউরেশিয়ান টিল, পার্পল মুরহেন, রাফ ইত্যাদি পাখির। এই মরসুমে আসে পাঁচ থেকে সাত লক্ষ পাখি। মাঝেমাঝেই ঝাঁকে ঝাঁকে উড়তে দেখা যায় ব্ল্যাকটেলড গডউইট। যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে নিশ্চিত।

কুলডিহা

ওডিশার কুলডিহা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি হল সিমলিপাল ন্যাশনাল পার্কের একটা অংশ। কাছাকাছি রেল স্টেশন বালাসোর। উড আউল, হোয়াইট আই বাজার্ড, ইয়েলো ফুটেড গ্রিন পিজিয়ন, ব্লু ইয়ারড কিংফিশার দেখার জন্য যেতেই হবে কুলডিহায়।

এই সব জায়গার পাশাপাশি কলকাতার কাছে উত্তর ২৪ পরগনার খড়িবাড়িতেও আসে প্রচুর পরিযায়ী পাখি। তাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পায়েড অ্যাভোসেট। অবশ্য একটি বেলাই যথেষ্ট খড়িবাড়ির জন্য।


ছবি: লেখক

Birds Migratory Birds
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy