নাগমণি মুকুট, নীলাচূর্ণের বর্মে নিজেকে সাজিয়ে, রানি ক্লিওপেত্রা যখনই দেশভ্রমণে বেরোতেন, তাঁর চিতায় টানা শিবিকার ঠিক পিছনের যানটিতেই যেত কয়েকটি জেব্রা ও উটের পরিবার। ওদেরই দুধে স্নান করে নাকি মিশর-সম্রাজ্ঞীর ত্বকও দুর্মূল্য রত্ন হয়ে উঠেছিল। চাহনিতে থেমেছিল যৌবন। এ কাহিনি ইতিহাস না কিংবদন্তি জানা নেই। তবে রূপবিশারদদের দাবি, ত্বকের পুনরুজ্জীবনে দুধের ল্যাকটিক অ্যাসিড খুব কার্যকর। এখন যেহেতু গ্রীষ্মরাজ স্বমহিমায়, তাই সুযোগের সদ্ব্যবহার করুন। দুধ, মধু, গোলাপ, আতর ইত্যাদি নানা রাজকীয় স্নানে রূপের ডালি সাজিয়ে নিন। গরমের জ্বালা, র্যাশের সমস্যার সাহস হবে না লাবণ্যময়ীকে বিরক্ত করার।
স্নানের রকমফের তো সেই কবে থেকেই চলে আসছে। আলতো গরম জলের ধোঁয়ায় বার বার শরীর ভাপিয়ে হালকা করে তোলা। এখন এই সুবিধা বাড়িতেই মেলে। কাচবন্ধ শাওয়ার প্যানেলে স্টিমবাথ। ব্যবহার করুন অ্যালো ভেরা সাবান। ক্লান্তি উধাও হবে। ভিতর থেকে ঠান্ডা বোধ করবেন।
তার পর ধরুন, রূপকথার দুধপুকুর। এক কলস থেকে অফুরান দুধ আর অন্য ঘটি থেকে ঘন মধু ঢালার কাউকে না পেলেও ক্ষতি নেই। বড় বালতিতে দুধ ও জল সম পরিমাণে মিশিয়ে, তাতে ঢালুন মধু। তার চেয়ে ভাল প্রাকৃতিক ময়শ্চরাইজ়ার আছে কই? একটু ল্যাভেন্ডার, এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন। এই স্নানে ত্বক আশ্চর্য পরিষ্কার হয়। শোনা যায়, ক্লিওপেত্রার অনুচরেরা ডেড সি থেকে আনা লবণদানায় ঘি মাখিয়ে রানির অঙ্গচর্চা করতেন। আপনাকে অত দূর যেতে হবে না। বাজার থেকে ব্রাউন সুগারটুকু জোগাড় করুন। তাতে জলপাই তেল মেশালেই স্ক্রাব তৈরি। পায়ের বর্জ্যকোষ তুলুক সি সল্ট বা সমুদ্রবালির কণা।
মিশর-বিলাস সাঙ্গ হলে চলুন মুঘল অন্তঃপুরে। জেনানা-মহলে হাসনুহানার গন্ধমাখা হামাম। সেখানে রেওয়াজ গোলাপ স্নানের। ঠান্ডা জলে ভাসছে গোলাপের পাপড়ি। তাতে গা ডুবিয়ে বসে আছেন বাদশার দিলবরজানি। এমন দৃশ্য নিজ জীবনে বাস্তব করতে চান? বিস্তর লাল গোলাপ এনে তার পাপড়ি খুলে বাথটাবের জলে সারা রাত বিছিয়ে রাখুন। ঢালুন গোলাপের এসেন্স। সকালে আঙুর, কমলালেবুর খোসা মেশানো মুলতানি মাটিতে গা ঘষে, বাথটাবে শরীর ডুবিয়ে দিন। দশ-পনেরো মিনিট এই শখের সায়রে ডুব দিতে পারলে রোদের ট্যান ধুয়েমুছে সাফ।
এই বাংলার ঘরে অবশ্য পছন্দ ছিল নিম-তুলসির পাতা আর কচি শসা ভেজানো জলে স্নান। গৃহস্থ অ্যান্টিসেপটিকেই সজল কোমল হয়ে থাকত বঙ্গবালার চন্দ্রানন। এখানে যে গরম বড় কষ্টের। তাই জল ঠান্ডা করতে ব্যবহার হত পুদিনা। হলুদ ও বটপাতাগুঁড়ো দেওয়া তেলে সযত্ন অঙ্গমালিশের পর তরুণী জমিদার ঘরণী সেই ধরাজলে ভাসতেন। তাতে থাকত গন্ধরাজ লেবুর সুঘ্রাণ। মিশত ভাল জাতের বাদামভাঙা তেল। স্নান শেষে ধুঁদুল-ফুলের নির্যাস দেওয়া চন্দনবাসে পরিচর্যা করতেন দেহবল্লরীর।
সে সব দিন ফুরোলেও, উপকরণগুলো হারায়নি। যুগ বদলে এসেছে স্নানের নব নব অবতার। অসমের চা পাতা, ভিনিগার, জইগুঁড়ো, জেরানিয়াম তেল, আফ্রিকান জুঁই ফুল এ সব দিয়েই তৈরি হয় এখনকার বাথ পাউডার। সবই গরমের জ্বলুনিকে কুপোকাত করতে বিশেষ ভাবে তৈরি। সেগুলো না পেলেও দুঃখ নাস্তি। রান্নাঘরের জন্য নানা কিসিমের মশলা তো কেনেনই। পাতিলেবু, লবঙ্গ, দারুচিনি, প্যাকেট মোড়া হার্ব। সে সব একটু একটু করে স্নানঘরের তাকে তুলে রাখুন। ব্যস্ত দিনে আধ ঘণ্টা দিতে না পারলে পাঁচ-দশ মিনিটই সই। স্ক্রাব, সুগন্ধি স্নান, তোয়ালেতে শরীর মুছে একটু লোশন-ক্রিমের পরিচর্যা। এই স্নান-রুটিন অন্তত মেনে চলুন।