Advertisement
E-Paper

মহীরুহ ২

ময়দানের। জ্যোতিষ গুহ ও ধীরেন দে। জাতটাই ছিল আলাদা। প্রবাদপ্রতিম দুই ক্লাবকর্তার বহু অকথিত কাহিনি জুড়লেন চিরঞ্জীবলেক প্লেসের বাড়িতে বসে জ্যোতিষ গুহ টেলিফোন কলটা পেলেন। রিসিভারের অপর প্রান্তে ধীরেন দে, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানের কর্মকর্তা, ‘‘আপনি নাকি ময়দানে আসা ছেড়ে দিয়েছেন? এটা চলবে না, আমি চলতে দেব না। আপনার মতো মানুষকে ছাড়া ময়দানে খেলাধুলো হবে কী করে? আজ, এই মুহূর্ত থেকে আপনি মোহনবাগানের মেম্বার। অনারারি লাইফ মেম্বার।’’

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:০৩

লেক প্লেসের বাড়িতে বসে জ্যোতিষ গুহ টেলিফোন কলটা পেলেন।

রিসিভারের অপর প্রান্তে ধীরেন দে, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানের কর্মকর্তা, ‘‘আপনি নাকি ময়দানে আসা ছেড়ে দিয়েছেন? এটা চলবে না, আমি চলতে দেব না। আপনার মতো মানুষকে ছাড়া ময়দানে খেলাধুলো হবে কী করে? আজ, এই মুহূর্ত থেকে আপনি মোহনবাগানের মেম্বার। অনারারি লাইফ মেম্বার।’’

টেলিফোন রেখে দেওয়ার পরেও জ্যোতিষদা কিছুটা আপ্লুত, কিছুটা বিহ্বল।

কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না! কারণ, ইস্টবেঙ্গল ক্লাব আর তিনি যে সমার্থক!

১৯৭০-এর কথা।

ক্লাবের নির্বাচনে সে বার জ্যোতিষদা হেরে যান। হারের নেপথ্যে ছিলেন তাঁর একদা অতি বিশ্বাসভাজনদেরই কেউ কেউ। ক্লাবের ক্ষমতায় আসীন হলেন নৃপেন দাস। ওই গোষ্ঠী এসে জে সি গুহকে এক রকম ব্রাত্যই করে দিল।

জ্যোতিষদা ভাবতেই পারছিলেন না, যে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে তিনি সব সময়ে বুক দিয়ে আগলেছেন, সাফল্যের শিখরে তুলে নিয়ে গিয়েছেন, সেই ক্লাবেই তিনি অপাংক্তেয়!

এটা জ্যোতিষদার মতো মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই, একটা সময়ে ময়দানে যাওয়াই বন্ধ করে দিলেন তিনি।

খবরটা মোহনবাগানের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ধীরেন দে-র কানে গেল। আর তার পরেই ওই ফোন।

জ্যোতিষ গুহের সঙ্গে তাঁর এক সময়ের বিশ্বস্তদের অধিকাংশ বিশ্বাসঘাতকতা করলেও অল্প কয়েক জন কিন্তু তাঁকে ছেড়ে যাননি।

ধীরেন দে-র ফোনটা যখন এল, তাঁরা তখন জ্যোতিষদার বাড়িতে। ফোন রেখে কিছুটা ধাতস্থ হওয়ার পর জ্যোতিষ গুহ তাঁর ওই স্নেহভাজনদের বললেন, ‘‘ধীরেন ফোন করেছিল। আজ থেকে আমি নাকি মোহনবাগানের মেম্বার। একটা সময়ে ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার ছিলাম। পরে সেক্রেটারি হয়েছি। তোমরাই দেখেছ, কী ভাবে সন্তানের মতো লালন-পালন করেছি ক্লাবটাকে। আর আজ সেই ক্লাবেরই আমি কেউ নই।’’

তার পর বললেন, ‘‘তোমরা যারা ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে আর যাবে না বলে ঠিক করেছ, তারাও আমার সঙ্গে কাল মোহনবাগান লনে বিকেলের আড্ডায় চলো।’’ খবরটা পেয়ে মোহনবাগান ক্লাবের লনে পরদিন অপেক্ষা করছিলাম। বিকেল হতেই দেখলাম, ধবধবে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি শোভিত, ঋজু, দীর্ঘদেহী জ্যোতিষদা সবুজ-মেরুন তাঁবুর গেট দিয়ে ঢুকছেন।

লনে তখন বিভিন্ন গোলটেবিলে প্রবীণ ও মাঝবয়সিরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আড্ডায়।

জ্যোতিষদাকে দেখেই উমাপতি কুমার বললেন, ‘‘আরে জ্যোতিষ, এ দিকে এসো।’’ অন্যেরাও ডাকছেন। ধীরেন দে ওই ফোনালাপের কথা আগেই বলে রেখেছিলেন সবাইকে। জ্যোতিষদার ক্লাবে ঢোকার খবর পেয়েই টেন্টের ভিতর থেকে স্যুটেড-বুটেড ধীরেনদা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন লনে। তার পর জ্যোতিষদাকে জড়িয়ে ধরলেন।

শৈলেন মান্না জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘একটু চা খাবেন তো?’’

পরে এক দিন কথায় কথায় এই প্রসঙ্গে জ্যোতিষদা বলেছিলেন, ‘‘ধীরেন দে-র ওই আহ্বান আমার কাছে অভাবনীয় ছিল। আমাকে ওই ভাবে মর্যাদা দিল! কোনও দিন ভুলতে পারব না।’’

আর এখন? কোথায় এই প্রীতির নজির!

উল্টে সর্বত্রই যেন অসহিষ্ণুতা। খেলার মাঠ, রাজনীতি, সমাজ, ধর্ম, সব জায়গাতেই।

জ্যোতিষ গুহ ইস্টবেঙ্গলের ও ধীরেন দে মোহনবাগানের সচিব হয়েছিলেন। কিন্তু তার আগে সহ-সচিব থাকাকালীনই দু’জনে হয়ে উঠেছিলেন নিজের নিজের ক্লাবের সর্বময় কর্তা।

জ্যোতিষ গুহকে যখন মোহনবাগান ক্লাবের আজীবন সদস্য করে দেওয়ার কথা বলে আহ্বান জানানো হল, ধীরেন দে তখন মোহনবাগানের সহ-সচিব। বয়সে জ্যোতিষ গুহর চেয়ে ধীরেন দে অনেকটা ছোট তবে জ্যোতিষ গুহ যেমন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সঙ্গে ওতপ্রোত হয়ে যাওয়া প্রথম কর্মকর্তা, মোহনবাগানের ক্ষেত্রে ধীরেন দে-ও তাই।

ময়দানে বরাবরই প্রচুর গাছের ভিড়। কিন্তু মহীরুহ আমার চোখে কেবল দু’জন। জ্যোতিষ গুহ ও ধীরেন দে। ব্যক্তিত্ব, কর্মকাণ্ড, পরোপকার এবং সর্বোপরি খেলার উন্নয়নে অবদান— সব মিলিয়ে এঁরা দু’জন যে উচ্চতার, আর কোনও কর্মকর্তা সেটা অতিক্রম করা দূরের কথা, ছুঁতেও পারেননি (জগমোহন ডালমিয়াকে এখানে ধরা হচ্ছে না, তাঁর সঙ্গে তুলনাটা হবে পঙ্কজ গুপ্তর মতো মানুষদের)।

দু’জনের চরিত্রে, কাজের ধরনে প্রচুর পার্থক্য ছিল। জ্যোতিষ গুহের ইউএসপি যদি ব্যক্তিত্ব ও স্থৈর্য হয়, তা হলে ধীরেন দে ছিলেন বর্ণময়।

খেলোয়াড়দের সম্ভ্রম ও সম্মান পাওয়ার পাশাপাশি জ্যোতিষদা ছিলেন তাদের কাছের মানুষ। অন্য দিকে, ধীরেনদা ছিলেন একটু দূরের, যেন ধরাছোঁয়ায় ভয় হয়।

জ্যোতিষদার ট্রেডমার্ক ছিল ধুতি-পাঞ্জাবি, ধীরেনদার স্যুট-টাই। তবে প্রথম জীবনে জ্যোতিষদাও বহু বার সাহেবি পোশাক পরেছেন।

আবার ফি বছর পয়লা বৈশাখে মোহনবাগানে বারপুজোর দিন ধীরেনদা পরনে ধুতি, গায়ে চাদর ও কপালে চন্দনের ফোঁটা নিয়ে হাজির থাকতেন।

এত পার্থক্য থাকলেও দু’জনেরই ঘরানা বা ক্লাসটা ছিল অন্য মাপের। লতাগুল্মদের মতো এলেবেলে নয়।

দু’জনেই ক্লাব অন্তপ্রাণ ছিলেন। ফুটবল অন্তপ্রাণ হওয়ার কারণেই। কোনও মতলবের জন্য নয়।

ষাটের দশকের শেষ দিকে, সকালে ময়দানে ফুটবলারদের প্র্যাকটিস দেখতে যাওয়ার রেয়াজ সাংবাদিকদের মধ্যে তেমন ছিল না। কিন্তু মতিদা অর্থাৎ আধুনিক বাংলা ক্রীড়া সাংবাদিকতার পথিকৃৎ মতি নন্দীর নির্দেশে প্রতিটি বড় ম্যাচের (মহামেডান স্পোর্টিং-ও কিন্তু তখন তিন প্রধানের অন্যতম) আগের দিন প্র্যাকটিস দেখতে যেতে হত।

মতিদা বলে দিয়েছিলেন, এটা করলে খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়বে, ফিচার লেখারও মশলা পাওয়া যাবে।

আনন্দবাজার পত্রিকায় আমার কিংবদন্তি ক্রীড়া সম্পাদকের ওই নির্দেশ মেনেই খেলার মাঠের আর এক কিংবদন্তি জ্যোতিষ গুহর সঙ্গে প্রথম পরিচয়।

সাতসকালেও জ্যোতিষ গুহ মাঠে থাকতেন। খেলোয়াড়দের তালিম কোচ দিচ্ছেন তো কী, ইস্টবেঙ্গল সচিবও সব কিছু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ রাখতেন। ওই রকম ব্যক্তিত্ববানের সঙ্গে প্রথম প্রথম কথা বলার সাহস পেতাম না। কিন্তু রোজই যাচ্ছি দেখে আমি ওঁর মুখচেনা হয়ে গেলাম। একটু ভয় নিয়েই একদিন মাঠে একটা প্রশ্ন করলাম। ওটাই জ্যোতিষদার সঙ্গে আমার প্রথম কথোপকথন।

জিজ্ঞেস করি, ফুটবলারদের প্র্যাকটিসে তো অ্যাথলেটিক্সের কোচ সুজিত সিংহকে দেখছি। ফুটবল কোচ কোথায়?

জ্যোতিষদা বললেন, ‘‘বিলেতে দেখেছি, ফুটবলারদের ফিটনেস বাড়াতে অ্যাথলেটিক্স-এর কোচকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। আগে তার কাছেই ফুটবলাররা দৌড়বে, লাফাবে, নানা রকম ব্যায়াম করে ফিট হবে। তার পর শুরু হবে ফুটবল কোচের কাজ।’’ ক্লাবের একজন কর্মকর্তা হয়েও জ্যোতিষদা যে ধেলাধুলোর ব্যাপারে কতটা আধুনিকমনস্ক ছিলেন, ওই কথাই তার প্রমাণ। আসলে ময়দানের সঙ্গে জ্যোতিষ গুহর প্রথম বন্ধন কর্মকর্তা হিসেবে নয়, হয়েছিল ফুটবলার হিসেবে।

১৯৩০-এ শুরু করে বছর খানেক তিনি ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার ছিলেন। তার পর ১৯৪৫-এ চলে যান বিলেতে। শোনা কথা, ব্যারিস্টারি পড়তে গিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও কারণে সে দিকে না গিয়ে খাস আর্সেনাল ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হন, সেখানে ফুটবলের প্রশিক্ষণও নেন। কলকাতায় ফিরে কর্মকর্তা হিসেবে ক্লাবের হাল ধরেন। দেশ জুড়ে ফুটবলের প্রতিভা অন্বেষণ করে তাঁদের কলকাতায় নিয়ে এসে ইস্টবেঙ্গলে খেলিয়ে বিখ্যাত করে তোলা, সুখেদুঃখে খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়ানো, তাঁদের মধ্যে পেশাদারিত্ব সঞ্চার, কর্মকর্তা হয়েও তীব্র ফুটবলবোধের পরিচয়— প্রথম জীবনে ফুটবলার হওয়ার জন্য ও আর্সেনালে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসার ফলেই জ্যোতিষ গুহ এগুলো করতে পেরেছিলেন।

ইস্টবেঙ্গলে প্রথম বিদেশি, বর্মার (এখন মায়ানমার) তারকা ফরওয়ার্ড পাগসেলেকে খেলানোর ব্যাপারে তিনিই ছিলেন উদ্যোক্তা।

বড় ম্যাচের দিন দল মাঠে নামার ঠিক আগে কোচ রণকৌশল শেষ বারের মতো বুঝিয়ে দেওয়ার পর জ্যোতিষদা দিতেন ভোকাল টনিক।— ‘‘দলের মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব তোমাদের। হারা চলবে না কোনও মতেই। লাল-হলুদ রংটা মনে রাখবে। প্রতিটি ইঞ্চির জন্য যুদ্ধ করতে হবে। তোমাদের এ যুদ্ধ জিততেই হবে। যাও, বয়েজ, নেমে পড়ো।’’

এ সব বলে প্রত্যেকের পিঠ চাপড়ে দিতেন। জ্যোতিষদা বলেছিলেন, এই ভোকাল টনিক তিনি শেখেন ইংল্যান্ডে গিয়ে। বিলেতে তিনি দেখেছিলেন, কী ভাবে জেতার জন্য কোচ তথা ম্যানেজার গোটা দলকে উদ্বুদ্ধ করছেন।

খেলায় এ দেশে মনোবিদের প্রবেশের ক্ষেত্রেও জ্যোতিষ গুহই ছিলেন পথিকৃৎ। মনে হয়, পি কে বা প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোকাল টনিক জ্যোতিষ গুহকে অনুসরণ করেই। তবে পিকে-রটা জ্যোতিষদার ভোকাল টনিকের আরও ধারালো, আরও যুগোপযোগী সংস্করণ।

ইস্টবেঙ্গল হয়তো কোনও ম্যাচে মোহনবাগানের কাছে হেরে গিয়েছে। সে দিন কোচ বকাবকিও করলেন খেলোয়াড়দের। কিন্তু জ্যোতিষদা অবিচল। বললেন, ‘‘খেলায় হারজিত থাকবেই। আর মন খারাপ করবে না। আজ বিশ্রাম নেবে। রাতে ভাল করে ঘুমোবে। সামনে এ মরসুমের অনেক ম্যাচ পড়ে আছে।’’

ম্যাচ হারার পরেও ফুটবলারদের পিঠে হাত রেখে এ সব কথা বলছেন। ভাবা যায়! পর দিন সাতসকালে টেন্টে এসে আগের দিনের ম্যাচে দলের কয়েকটা ভুল ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘মোহনবাগান তোমাদের এই সব দুর্বল জায়গায় আঘাত করেছিল। এই সব সামান্য ফাঁকফোকর শুধরে নিও। দেখবে, পরের ম্যাচে তোমরাই হারিয়ে দিয়েছ মোহনবাগানকে।’’

তার পর ক্লাবের ক্যান্টিনে নির্দেশ— ‘‘এদের আজ ভাল করে খেতে দাও। কাল অনেক ধকল গিয়েছে।’’

ঠিক যেন অভিভাবক।

সেই জন্যই তো মহম্মদ হাবিবের মতো খেলোয়াড় ওঁকে জ্যোতিষদা বলতেন না, ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতেন। কেউ আবার ‘গুহ সাব’।

একটা ঘটনা জ্যোতিষদার মুখেই শোনা। ১৯৪৯-এর আইএফএ শিল্ড ফাইনাল। ইস্টবেঙ্গলে তখন আপ্পা রাও। দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়।

আপ্পা রাওয়ের হাঁপানি ছিল। যা ম্যাচের আগের দিন প্রচণ্ড বেড়েছে। ডাক্তার দেখিয়ে, ওষুধ খাইয়ে, ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়েও তেমন কাজ হচ্ছে না। ম্যাচের দিন সকালেও আপ্পা রাও বেশ অসুস্থ। জ্যোতিষদা দিশেহারা। শেষ পর্যন্ত ডাক্তারের পরামর্শে মাঠে, সাইড লাইনের পাশে অক্সিজেন সিলিন্ডার নেওয়া হল।

ম্যাচ শুরুর ১০ মিনিট আগেও আপ্পা রাও শোয়া, তাঁর নাকে অক্সিজেনের নল।

দল যখন মাঠে নামছে, আপ্পা তখন নল খুলে উঠে পড়েন। খেলেন পুরো জান দিয়ে। বিরতিতে আবার সেই নাকে নল।

টানা এই সময়টা সারাক্ষণ আপ্পা রাওয়ের পাশে ছিলেন জ্যোতিষ গুহ।

ঘটনাটা গল্পের মতো শুনিয়ে বলেন, ‘‘জানো, আপ্পার খেলা দেখে কিন্তু সে দিন এক বারের জন্যও বোঝা যায়নি, ও দুই হাফেই মাঠে নামার আগে অক্সিজেন নিয়েছিল। ম্যাচটা আমরা ২-০ জিতি।’’

বিশ্বের আর কোথাও এমন নজির আছে? জ্যোতিষদা বলেছিলেন, ‘‘অন্তত আমার জানা নেই।’’

এই সব কারণে জ্যোতিষ গুহকে যেমন ইস্টবেঙ্গল থেকে আলাদা করা যায় না, তেমনই মোহনবাগান আর ধীরেন দে-ও অবিচ্ছেদ্য। তবে খেলোয়াড়দের ব্যাপারে ধীরেন দে সব সময়ে খোঁজখবর নিলেও, প্রয়োজনে তাদের চিকিৎসার বন্দোবস্ত করলেও ফুটবলারদের সঙ্গে তাঁর নৈকট্য জ্যোতিষ গুহর মতো ছিল না।

তবে দে’জ মেডিক্যালের ডিরেক্টর ধীরেনদা অনেক সময়েই তাঁর কোম্পানির ওষুধ খেলোয়াড়দের বিনামূল্যে দিতেন। আসলে স্যুট-বুট-টাই, মাঝেমধ্যে গগলস পরা ধীরেন দে ছিলেন আনখশির বাঙালি সাহেব। ধীরেনদার এই পোশাক-পরিচ্ছদই অন্য অনেকের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি করেছিল।

ময়দানে ওই রকম সাহেবকে দেখে কারও কারও অস্বস্তি হত। তা ছাড়া, অকৃতদার ধীরেনদার ঠাটবাট, চাল-চলনও ছিল অন্য রকম। দামি গাড়ি চড়েন, বেঙ্গল ক্লাবের মেম্বার আর অনেক দিন সেখানেই লাঞ্চ-ডিনার করেন, এক-এক দিন এক-এক রকম বিদেশি সুগন্ধিতে সুরভিত হয়ে থাকেন।

এক সময়ে ভারতের সেরা মিডফিল্ডার প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৮৪ থেকে টানা ছ’বছর মোহনবাগানে খেলেছিলেন। প্রশান্তর কথায়, ‘‘ধীরেন দে-কে বড় রাশভারী মনে হত। আসলে অত বড় কোম্পানির মালিক তো! সহজ ভাবে মিশতে বাধো বাধো ঠেকত আমার।’’

বাস্তবিকই ধীরেন দে-র বাইরের চেহারার সঙ্গে তখনকার ময়দানের, বিশেষ করে ফুটবল ক্লাবের পরিবেশটা ঠিক খাপ খেত না। আর সেই জন্য ধীরেন দে সম্পর্কে ভুলভাল কথাও শোনা যেত।

একটা ঘটনা বলি।

জ্যোতিষদা যেমন বড় ম্যাচের আগে নিয়মিত ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সকালের প্র্যাকটিসে হাজির থাকতেন, গ্যালারিতে বসে দলের খেলা দেখতেন, ধীরেনদাকে কখনও সে রকম দেখিনি। অন্তত আমার চোখে পড়েনি। প্রশ্ন করায় দলেরই এক প্রাক্তন খেলোয়াড় এক বার তির্যক ভঙ্গিতে বলেছিলেন, ‘‘ধীরেনদাকে কেমন করে মাঠে দেখবে? কী যে বলো! মাঠের নোংরা গ্যালারিতে বসবেন ঝকঝকে, দামি স্যুট-টাই পরা দে’জ মেডিক্যালের মালিক!’’

এটা কিন্তু আদৌ গ্যালারিতে ধীরেনদার নিয়মিত অনুপস্থিতির কারণ ছিল না।

সত্যিটা কিছু পরে জেনেছিলাম।

আর তখন আরও বেশি করে বুঝতে পারি, মানুষটা নিজের ক্লাবের ব্যাপারে কী ভীষণ স্পর্শকাতর, কী ভীষণ আবেগপ্রবণ।

ইডেনে সে দিন মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল সম্ভবত লিগের ম্যাচ।

প্রেসবক্সে বসে ম্যাচ দেখছেন মতিদা, মুকুল দত্ত আর পুষ্পেন সরকার। আমার অ্যাসাইনমেন্ট ড্রেসিংরুমে।

ক্রিকেটের মতো ফুটবলারদেরও ড্রেসিংরুম তখন ছিল এনসিসি প্যাভিলিয়নে। হঠাৎই সেখানে দেখা ধীরেনদার সঙ্গে।

বললাম, চলুন, সামনে গিয়ে ম্যাচ দেখি। ধীরেনদা বললেন, ‘‘ধুৎ। ম্যাচ দেখব কী রে! ফুটবলের যা ছিরি! তুই রেজাল্টটা বল তো!’’

বললাম, এখনও গোললেস। তার পর ওঁর প্রশ্ন, ‘‘কারা ভাল খেলছে রে?’’ বললাম, আপনার টিম। শুনে একটু অসন্তুষ্ট হলেন, ‘‘কী বললি? বল, আমাদের টিম।’’

জ্যোতিষদা যেমন প্রথম আলাপের দিন থেকে শেষ পর্যন্ত আমাকে ‘তুমি’ সম্বোধন করে গিয়েছেন, ধীরেন দে কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই ‘তুমি’ থেকে ‘তুই’য়ে পৌঁছে যান।

অথচ আমি পূর্ববঙ্গীয়, দেশ খুলনা জেলায়। বাইরে তেমন প্রকাশ না করলেও মনে মনে ইস্টবেঙ্গলেরই সমর্থক। সবুজ-মেরুনের বিরুদ্ধে লাল-হলুদ জিতলেই বরাবর খুশি হই। কিন্তু ধীরেনদার কেন জানি না বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিল যে, আমি পাঁড় মোহনবাগানী। বহু বার আমি নিজে ভুল ভাঙানোর চেষ্টা করেছি। তবু ধীরেনদা মানতে চাননি।

ওই বিকেলে মোহনবাগান ভাল খেলছে শুনে আশ্বস্ত দেখাল ধীরেনদাকে।

দামি কোলন মাখানো পাট করা রুমাল বার করে মুখ মুছে বললেন, ‘‘চল, একটু ঘুরে আসি। গঙ্গার ধারে অনেক দিন যাই না।’’

আমি বললাম, ‘‘আমার যে এখানে ডিউটি!’’ উনি নাছোড়, ‘‘আরে যাব আর আসব। বেশিক্ষণ লাগবে না। তুই কিছু মিস করবি না।’’

আউট্রাম ঘাটে গাড়ি থেকে নেমে গঙ্গার দিকে কিছুটা উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন ধীরেন দে। তার পর বললেন, ‘‘জানিস, ক্লাবের খেলা থাকলেই বুকটা ভীষণ ধুকপুক করে। না জিতলে সমর্থকেরা আমাদের ছিঁড়ে খাবে। ক্লাবের খেলা আমি ভয়ে দেখি না। ম্যাচে খারাপ কিছু হলে তো খেলা দেখতে দেখতেই মরে যাব। চোখের সামনে দেখব, মোহনবাগান হেরে যাচ্ছে, এটা আমি নিতে পারব না রে। তাই, মোহনবাগান মাঠে খেলা থাকলেও দেখি না। পুরো সময়টা টেন্টে থাকি।’’

তখনও কলকাতায় টেলিভিশন আসেনি। তাই, টিভি-তেও খেলা দেখার প্রশ্ন ছিল না।

এমনকী, ম্যাচ চলাকালীন ট্রানজিস্টর মাঝেমধ্যে খুলে খেলার ফল শুনেই সেটা বন্ধ করে দিতেন ধীরেনদা। এতটাই টেনশনে থাকতেন।

ধীরেন দে-র মতো মোহনবাগান ম্যাচ একই কারণে দেখতেন না সাহিত্যিক বিমল করও।

এক বার ঠিক করেছিলাম, মোহনবাগানী বিমলদা বড় ম্যাচ দেখে সেই বর্ণনা লিখবেন। একটু অন্য স্বাদের লেখা হবে। কিন্তু বিমলদা শুনেই সাফ বলে দেন, ‘‘এটা পারব না। আমার খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে। মোহনবাগানের ম্যাচ আমি দেখি না।’’

ফুটবলে মোহনবাগানকে নিয়ে এতটা আবেগপ্রবণ ধীরেন দে একটা সময়ে ছিলেন ক্রিকেটার। ময়দানে চুটিয়ে ক্লাব ক্রিকেট খেলেছেন।

আবার জে সি গুহর মতো ফুটবল খেলা বা বিলেত থেকে ফুটবলের প্রশিক্ষণ পাওয়ার অভিজ্ঞতা ধীরেন দে-র ছিল না। কিন্তু অন্য ভাবে খেলাটার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ছিল। কারণ, ধীরেন দে ছিলেন পাশ করা রেফারি।

একটা সময়ে কলকাতা ফুটবল লিগ, আইএফএ শিল্ডের মতো টুর্নামেন্টের ম্যাচও পরিচালনা করেছেন। যে কারণে ধীরেন দে নিছক ব্যবসাদার কর্মকর্তাদের মতো টাকা ঢেলে বা জোগাড় করে এবং তারকা খেলোয়াড়দের দলে সই করিয়ে কৃতিত্ব নেননি। ধীরেন দে-র জন্যই ত্রুকটাউন, পাখতাকোর আর পেলে-র কসমস কলকাতা মাঠে খেলে গিয়েছিল। এবং ক্লাবগুলোর মধ্যে তখন একমাত্র মোহনবাগান মাঠেই যে ফ্লাডলাইট লেগেছিল, তারও মূলে ধীরেন দে।

কোনও এক সময়ে ক্লাবের তহবিলে তেমন টাকা নেই। কিন্তু অবিলম্বে প্রচুর টাকার প্রয়োজন। মোহনবাগানে ধনী সদস্যের সংখ্যা কম ছিল না।

ধীরেন দে কাউকে কুড়ি, কাউকে পনেরো, কাউকে বা দশ হাজার টাকা দিতে বললেন। ধীরেনদার এক কথায় সবাই টাকা দিয়ে দিত। এমনই ছিল ওঁর ব্যক্তিত্ব।

মোহনবাগানের ঘরের ছেলে বিদেশ বসু বলছেন, ‘‘প্রতি বছর পয়লা বৈশাখে বারপুজোর দিন ধীরেনদা আগের মরসুমে যারা ভাল খেলেছে, তাদের প্রত্যেককে একটা করে রুপোর কয়েন উপহার দিতেন। আমি প্রত্যেক বার পেয়েছি।’’

আবার প্রশান্ত বললেন, ‘‘টিম খারাপ খেললে ধীরেনদা বকতেন না। বরং, পরের ম্যাচে ভাল খেলতে বলতেন।’’ অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে ধীরেন দে আর জ্যোতিষ গুহ ছিলেন এক রকম।

তবে মোটা টাকা দিয়ে অন্য দল থেকে নিয়ে আসা কোনও তারকা খেলোয়াড় যদি প্রত্যাশা মতো খেলতে না পারত, ধীরেনদা তার বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়ার আগে তাকে বিস্তর ঘোরাতেন।

শেষ পর্যন্ত টাকা মিটিয়ে দিতেন ঠিকই, কিন্তু ইচ্ছাকৃত বহু টালবাহানা করার পর। মনে করতেন, মোটা টাকা দিয়ে যখন আনা হয়েছে, তখন ঠিকঠাক খেলতে না পারার মাসুল দিতে হবে।

এক দুপুরে ধীরেনদা লিন্ডসে স্ট্রিটে ওঁর অফিসে ডেকেছেন। আগেই বলে রেখেছিলেন, ‘‘অফিস থেকে দু’জনে বেঙ্গল ক্লাবে যাব। তুই আমার সঙ্গে লাঞ্চ করবি।’’

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তখন সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। ধীরেনদা ওকে ‘মানু’ বলে ডাকতেন। দু’জনের সখ্যের কথা ময়দানের অনেকেরই জানা ছিল। ধীরেনদার অফিসে গিয়ে দেখি, এক তারকা ফুটবলার ওঁর চেম্বারের ঠিক বাইরে অপেক্ষা করছে। নামটা বলছি না, আরও অনেকের মতো আমিও তার ভক্ত।

আমি ঢুকতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘বাইরে দেখেছিস, কে বসে আছে? ওর বকেয়া ২০ হাজার টাকা আজ আমার দেওয়ার কথা। এই সিজনে ও এখনও পর্যন্ত ক’টা গোল করেছে?’’ বললাম, একটাও না, ওর কিছু একটা সমস্যা হচ্ছে। এ বার ওই ফুটবলারকে ঘরে ডেকে বসিয়ে বললেন, ‘‘হ্যাঁ, আজ তোর টাকাটা দিয়ে দেব।’’

কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই টেলিফোন বাজল।

ধীরেনদা রিসিভার তুললেন। শুনলাম ধীরেনদা বলছেন, ‘‘হ্যাঁ, মানু বলো, কী খবর। সে কী! তাই নাকি! এখনই যেতে হবে? না, না কোনও সমস্যা নেই। আমি এখনই বেরোচ্ছি। গাড়িতে রাইটার্স যেতে যতক্ষণ লাগে।’’

ফোন রেখে প্রচণ্ড টেনশনে কিছু কাগজপত্র খুঁজতে খুঁজতে ওই তারকার উদ্দেশে বললেন, ‘‘দেখলি তো, চিফ মিনিস্টারের ফোন এলো। আমাকে খুব জরুরি দরকারে এখনই রাইটার্স ছুটতে হবে। তুই বরং...।’’

ধীরেনদা কথা শেষ করার আগেই ওই ফুটবলার শশব্যস্ত হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে বলল, ‘‘না, না ঠিক আছে, আমি বরং পরে এক দিন আসছি।’’

ওই খেলোয়াড় দরজা ঠেলে বেরিয়ে যাওয়ার পর বললাম, ‘‘ধীরেনদা, আমিও তা হলে আজ উঠি।’’ কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ধীরেন দে মুচকি হেসে বললেন, ‘‘বেঙ্গল ক্লাবে লাঞ্চ করবি না?’’

জিজ্ঞেস করলাম কী করে হবে, আপনাকে তো সিএম ডাকছেন! মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে ধীরেনদা বললেন, ‘‘কোথায় সিএম, এই দ্যাখ, টেবলের নীচে।’’

দেখি, পা রাখার পাটাতনের পাশে একটা ঘণ্টি, সেটায় পা দিয়ে চাপ দিলেই বেজে উঠছে টেলিফোন।

আমি একেবারে হাঁ।

খেলোয়াড় ধীরেন দে (মাঝখানে)

ধীরেনদা বলে চলেছেন, ‘‘আমি ব্যবসাদার মানুষ। এ সব ব্যবস্থা রাখতে হয়, বুঝলি? গোল করতে পারে না, আবার এখনই পুরো টাকা মেটাব কী রে?’’

কিন্তু জ্যোতিষ গুহ এ সব ক্ষেত্রে ছিলেন পুরোপুরি পেশাদার। ভাল খেলতে বা গোল করতে পারুক-না পারুক, চুক্তি করে যখন কোনও ফুটবলারকে নিয়েছেন, তখন নির্দিষ্ট সময়ে তার পুরো টাকাটাই মিটিয়ে দিতেন জ্যোতিষদা।

আর সংবাদপত্র তাঁর সম্পর্কে কী লিখছে, না লিখছে, সেই ব্যাপারে প্রকাশ্যে তাঁকে ব্যতিব্যস্ত বা বিচলিত হতে কখনও দেখিনি। আর এর ঠিক উল্টোটাই ছিলেন ধীরেন দে। সাংবাদিকের কলমের অল্প আঁচড়েই যেন বেশি মাত্রায় রক্তপাত হত তাঁর।

মাঝেমধ্যে এমন আচরণ করতেন, যাতে মনে হত তিনি অপরিণতবয়স্ক। সাংবাদিকদের মধ্যে কারা মোহনবাগান সমর্থক, সেই ব্যাপারে খবর রাখতেন।

রাজন বালা তখন আনন্দবাজার সংস্থার ইংরেজি দৈনিক হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড-এর ক্রীড়া সম্পাদক।

রাজনের বাবা এম এস বালা ছিলেন বার্ড কোম্পানির চিফ এগজিকিউটিভ এবং ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্মকর্তা।

সে দিক দিয়ে রাজন শুধু ইস্টবেঙ্গল সমর্থকই নয়, ইস্টবেঙ্গল পরিবারের সদস্য। এক বার ওর কলাম ‘বুলস আই’য়ে রাজন লিখল, ‘দে’জ মেডিক্যালের কেয়ো কার্পিনে এক ফোঁটাও তেল নেই।’

ধীরেনদা রেগে কাঁই। জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘বালা সাহেবের ছেলেটা এমন কেন রে? একেই ইস্টবেঙ্গলের লোক বলে মোহনবাগান নিয়ে যা খুশি তাই লেখে। এ বার আমার কোম্পানির সম্পর্কেও বাজে কথা লিখল? দাঁড়া, তোদের এডিটর অশোকবাবুকে এখনই কমপ্লেন করছি।’’

বললাম, ধীরেনদা, এটা কিন্তু ঠিক হবে না। ‘‘ঠিক বলেছিস, বেচারার চাকরি নিয়ে টানাটানি হতে পারে।’’

সে যাত্রায় নিরস্ত হলেন ধীরেনদা। কিন্তু রাজন সম্পর্কে ওঁর অ্যালার্জি কিছুতেই গেল না।

কিছুকাল পরে অরিজিৎ সেন হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ডে যোগ দিল ডেপুটি স্পোর্টস এডিটর হিসেবে।

অরিজিতের সঙ্গে ধীরেনদার পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললাম, ও কিন্তু মোহনবাগান পরিবারের ছেলে। অরিজিৎ আবার ধীরেনদার মতোই স্যুটেড-বুটেড থাকত। এমন ছেলের সঙ্গে আলাপ করে ধীরেনদা খুব খুশি। অরিজিৎ আড়াল হতেই জি়জ্ঞেস করলেন, ‘‘ছেলেটাকে বিশ্বাস করা যায়, কী বল? তবে রাজনকে ও বাঁশ দিতে পারবে তো?’’ বলে অশ্লীল ভাবে হাতের মুদ্রা দেখালেন। আমার চোখমুখ তখন লাল।

মোহনবাগান সম্পর্কে বড্ড বেশি আবেগপ্রবণ ছিলেন ধীরেন দে।

একদিন বললেন, ‘‘যা-ই বলিস, আমাদের মতো ভদ্র ক্লাব আর হয় না। কুমারবাবু, বলাইবাবু (বলাইদাস চট্টোপাধ্যায়) মান্না, চুনীর মতো লোক আর কোনও ক্লাবে আছে?’’

জ্যোতিষ গুহর মতো অপমানিত হয়ে ধীরেন দে-কে ক্লাব ছাড়তে হয়নি। নতুন কমিটি এসে তাঁকে সভাপতি পদ দিয়েছিল। তবে ধীরেনদা তখন বলতেন, ‘‘বয়স হয়েছে। দিনকালও বদলেছে। আর ভাল লাগে না।’’

আসলে নামে সভাপতি হলেও বাস্তবে তাঁর কোনও ক্ষমতাই ছিল না। সেটা বুঝতে পেরে ধীরে ধীরে ময়দানে যাওয়া কমিয়ে শেষ পর্যন্ত যাওয়া বন্ধই করে দিলেন তিনি।

ধীরেন দে-কে ফের ময়দানমুখো করাতে ইস্টবেঙ্গলের কেউ কিন্তু তাঁকে অনারারি মেম্বারশিপের প্রস্তাব দেননি।

chiranjeeb jyotish guha dhiren dey
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy