Advertisement
E-Paper

আগ বাড়িয়ে কোনও কথা বলতাম না

কমলকুমার। সহধর্মিণী দয়াময়ী মজুমদারের চোখে।কমলকুমার। সহধর্মিণী দয়াময়ী মজুমদারের চোখে।

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০১

এক হাতে চায়ের কাপ, অন্য হাতে বই

ওঁর কাছে সাহিত্য ছিল সাধনার মতো। একজন যদি সাহিত্য সাধনা করে, তখন অন্যজনের চারদিক সামলানোর দায়িত্ব পড়ে যায়। বাড়িতে এক নিস্তব্ধ পরিবেশ। সর্বক্ষণ মগ্ন থাকতেন। হয়তো বাইরে থেকে ফিরলেন, বিশ্রাম করছেন। বললাম, চা খাবে? বললেন, হ্যাঁ দাও কিংবা একটু পরে। চায়ের কাপটা যেই হাতে এল, তখন এক হাতে চায়ের কাপ, অন্য হাতে বই নিয়ে পড়ে চলেছেন। এর ফাঁকে, যদি নিজের কিছু বলার থাকত তা বলতেন। আমি আগ বাড়িয়ে কোনও কথা বলতাম না।

চলো বেড়িয়ে আসি

বেশ কিছু দিন ভুগে সুস্থ হলে একদিন বললেন, চলো বেড়িয়ে আসি কোথাও। হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়া গেল। সেটা বোধহয় পুজোর আগে চতুর্থীর দিন। ট্রেনে বেশ ভিড় ছিল। কোথাও যাবার আগে যে প্রস্তুতি যেমন গেস্ট হাউস বুক করা ও সব ওঁর মধ্যে ছিল না। যাই হোক, দুবরাজপুরে একটা ডাকবাংলো পাওয়া গেল। সুন্দর বাংলো। বেশ বড় ঘর। দরজার সামনে জানলাগুলো। জানলার একটারও রেলিং নেই। বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হল। শেয়াল, কুকুর ডাকতে শুরু করল। লাইট নেভানো। হ্যারিকেনের আলো। উনি খেয়ে দেয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লেন। একটু নাকও ডাকতে লাগল। আমি বিছানায় বসে আছি। কিছুতেই ঘুম আসছে না। একে শেয়ালকুকুরের ডাক, তার ওপর একটানা ঝিঁ ঝিঁ পোকার আওয়াজ। বিরাট জঙ্গল পাশে। আলোর তফাত হচ্ছে। কখনও ফর্সা হয়ে আসছে। কখনও গাঢ়। মনে হচ্ছে কারা যেন আসছে। কী যে গা ছমছম করা ব্যাপার, তা উনি জানতেও পারলেন না।

উনি বললেন, তুমি লিখো না

দুবরাজপুর থেকে ফিরে মনে হয়েছিল কিছু লিখি। ফেরার পর ওঁকে একদিন বললাম, আমি কি লিখব? উনি বললেন, তা লেখো না। পরে বললেন, তুমি যদি লেখো তবে কী হবে জানো? আমি বললাম, কী হবে? লোকে বলবে, ব্যাটা নিজে ট্যুইস্ট করে লেখে, এখন স্ত্রীর নাম দিয়ে সহজ করে লিখেছে। তুমি লিখো না। তারপর থেকে লেখার কথা কোনও দিন বলিনি।

‘শবরীমঙ্গল’ অল্প সংযোজন করে শেষ করি

সংযোজনার কাজটা আগ বাড়িয়ে করিনি। যার কাছে ছিল, তিনি আধখানা পাঠিয়েছিলেন। আমার কেমন মনে হয়েছিল, এখান থেকেও শুরু করা যায়। আমি নির্মাল্য আচার্য এবং সুব্রত চক্রবর্তীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, যদি এখান থেকে শুরু করি, গল্পটা দাঁড়াবে তো? ওঁরা মত দিলেন। বললেন, বিদেশে লেখকদের স্ত্রীরা বা বন্ধুরা অনেক অসমাপ্ত লেখা শেষ করেছেন। আমি জানতাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কিছু লেখা শেষ করেছেন নিরুপমা দেবী ও রাধারানী দেবী। তবুও ভয় ভয় করছিল। সবাই বলল, ভয় পাচ্ছেন কেন? ভয় পাব না? একে ওঁর লেখা, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ওঁর লেখায় কেউ হাত দেয়নি। প্রুফ সংশোধনও ওঁকে দেখিয়ে করতে হত। যাই হোক শেষ পর্যন্ত সাহস পেয়ে শবরীমঙ্গল অল্প একটু সংযোজনা করে শেষ করেছিলাম।

ফ্রান্সের ম্যাপ বালিশের তলায়

ফরাসি নিয়ে পাগল ছিলেন। তবে সে সব বিয়ের আগে। আমার সময়ে ফরাসি ভাষা তেমন চর্চা করতে দেখিনি। বালিশের তলায় ফ্রান্সের ম্যাপ থাকত কি না বলতে পারব না। তবে স্যুটকেসের মধ্যে ফ্রান্সের ম্যাপ দেখেছি। তবে শুধু ফরাসি কেন, জার্মানটা শিখতে চেষ্টা করেছিলেন।

পায়ে হেঁটে তেহরান

অনেক মজা করতেন। যেমন একদিন বললেন, চলো আমরা পায়ে হেঁটে তেহরান যাই। কিংবা চলো কাশীর ঘাটে গিয়ে বসি। তুমি হারমোনিয়াম বাজাবে আর আমি রামায়ণের গান গাইব। এ সব অনেক পাগলামি ছিল। তারপর সবই বন্ধ হয়ে যায়। তিনি লেখা নিয়েই মেতে ছিলেন। ভয়ংকর ভাবে ভয়ের গল্প বলতে পারতেন। একবার আমার সারারাত ঘুম হয়নি। এত ভয় পেয়েছিলাম।

শখ ছিল কিউরিওর

ওঁর কিউরিও ছিল অনেক। কিউরিও মাঝে মাঝে কিনে আনতেন। কখনও বিক্রিও করতেন। উনি চলে যাওয়ার পরও কিউরিও ছিল। তার মধ্যে থেকে ‘মাধব’, যাকে আমি পুজো করি, সেই মূর্তিটা আমার খুব ভাল লেগেছিল। বলব কি বলব না, পাব কি পাব না, ভেবে বলেই ফেললাম একদিন মূর্তিটা আমায় দেবে? উনি রাজি হয়ে গেলেন। নিজেই দোকানে গিয়ে পালিশ করিয়ে নিয়ে এলেন। সেই থেকে ‘মাধব’ আমার কাছে থেকে গেছেন। এই ‘মাধব’ই আমার গৃহদেবতা। (সংকলিত)

কৃতজ্ঞতা স্বীকার: প্রতিবিম্ব (কমলকুমার ১০০)

kamalkumar majumder dayamoye majumder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy