শান্তি ও আনন্দ একে অন্যের পরিপূরক। তাই শান্তির উৎস সন্ধানে সঙ্গীতকেই মাধ্যম করে বিনোদনের আরও এক নতুন প্রয়াস ‘পিস’। আয়োজক ‘রাগ অনুরাগ মিউজিক রিসার্চ অ্যাকাডেমি’। এর আগে এদেরই প্রযোজনায় ‘ক্রাইসিস’ এবং ‘জার্নি’ প্রযোজনা দু’টির প্রথমটিতে সংকট মোচনের পথ খোঁজা এবং দ্বিতীয়টিতে তার সমাধানের সূত্র বেরোয় সঙ্গীতেরই মাধ্যমে। এ বারের প্রযোজনা ‘পিস’। ‘ওঁম’ ধ্বনি দিয়েই সঙ্গীতানুষ্ঠানের শুরু। এর পরেই রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আগুনের পরশমণি’। গুরুগম্ভীর পরিবেশ। সংস্থার কর্ণধার স্মৃতি লালার দাবি, “এর আগের দু’টি প্রযোজনা নিয়ে বিশ্ব ঘুরে আমার মনে হয়েছে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শান্তি। এখানে ‘ফোক’ যেমন গুরুত্ব পেয়েছে, তেমনই পর্যায়ক্রমে বিবেকানন্দকেও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ‘যুগনায়ক, তুমি বিবেকানন্দ, তুমি সত্য, তুমিই আনন্দ’।
‘ফোক’-এর পর্যায়ে প্রত্যেকটি গান, কম্পোজিশন, থিম এমনকী প্রযোজনাও সংস্থার নিজের। এই পর্যায়ের গানগুলির বক্তব্য একটিই-- ‘এ বার দেশটাকে বাঁচাও। গান গেয়ে দেশটাকে বাঁচাও। সব ভুলে হাতে হাত মেলাও।’ এই পর্যায়ের কিছুটা অংশ জুড়ে রয়েছে শুধু সুরভিত্তিক কম্পোজিশন। এই ‘পিস’- এর বড় ভাগিদার ছোটরাও। স্কুল ছুটির পরে বাড়ি ফিরেও তারা পড়াশোনার চাপে অসহায় বোধ করে। একটু আনন্দ খুঁজতে চায়। সেই আনন্দ অবশ্যই ‘শান্তি’র আনন্দ। এই সূত্রেই বেশ নতুনত্ব কম্পোজিশন ‘ইনস্ট্রুমেন্টাল মিউজিক অ্যান্ড কনসার্ট’। এর পরেই অবশ্য সেই রবীন্দ্রনাথ। ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু’, ‘বিরহ দহন লাগে’, ‘তবুও শান্তি তবুও আনন্দ’। সব যন্ত্রণাকে ছাপিয়েও আমরা এগিয়ে চলি। সেই চলার পথেও শুধু পাওয়ার চিন্তা। দেওয়ার চিন্তা কতটুকু থাকে? দেওয়া ও নেওয়া নিয়েই তো সম্পর্ক তৈরি হয়। নেওয়ার থেকে দেওয়ার ওজনটা একটু বেড়ে গেলেই যে কোনও সম্পর্ক অনেক মধুর হতে পারে।
‘পিস’ খুঁজতে গিয়ে ‘বৃদ্ধাশ্রম’-এর আবাসিকদের করুণ পরিণতিও উঠে এসেছে এই প্রযোজনায়। তাঁরা কি কোনও দিন ভাবতে পেরেছিলেন যে প্রিয় সন্তানরা তাঁদেরই এ ভাবে দূরে সরিয়ে দেবে? হায় ঈশ্বর! বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পৌঁছে দিয়ে সন্তানরা নিজেদের ‘শান্তি’র খোঁজ করে। অথচ সেই আবাসিকরা এর পরেও সন্তানদের আশীর্বাদ দেওয়া থেকে বঞ্চিত করেন না।
১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হলেও প্রশ্ন জাগে, কতটা ভালবাসলে শহিদ হওয়া যায়? পরবর্তী প্রজন্মকে দেশপ্রেম শেখাতে এখানে একটি সুন্দর গান নির্বাচন করা হয়েছে। ‘চরম দুখেও সুখী যে আমরা, তোমাকেই ভালবাসি। অসহায় তাই কাটে দিন, তবু তোমাকেই ভালবাসি’। এমনি করেই আরও বিভিন্ন পর্যায় এই সংকলনে স্থান পেয়েছে। তবে অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তের অশান্তিকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ‘প্রতিবাদ মানেই কি অরাজকতা?’ স্মৃতি লালার সমাধান, ‘প্রতিবাদের ভাষা আছে। কিন্তু সঙ্গীতই যে তার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার’। তাই অনুষ্ঠানের মূল
নির্যাস বেরিয়ে আসে শেষের কবিতায়:
‘হে ঈশ্বর, এই ত্রিভুবন তোমারই সৃষ্টি
তোমার সৃষ্টিতে আলো নির্মল পবিত্র দৃষ্টি
দয়া করো প্রভু আনো মনের শক্তি
সব অশান্তি থেকে দাও মোদের মুক্তি
ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি.....’
জি ডি বিড়লা সভাঘরে এই ‘শান্তি’র প্রতিধ্বনি
৭ সেপ্টেম্বর, রবিবার।