পত্রিকা: আপনি তো পাউডার ব্যবহার করতে বারণ করেন। কিন্তু বর্ষা মানেই যে ফাঙ্গাল সংক্রমণ। যাঁদের হবে, কী করবেন তাঁরা?
শর্মিলা সিংহ ফ্লোরা: পাউডার কোনও অবস্থাতেই ব্যবহার করতে বারণ করব। ফাঙ্গাল ইনফেকশন হলে বিশেষজ্ঞর পরামর্শ মতো ভাল কোনও মেডিকেটেড পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। এমনকী আক্রান্ত জায়গাটাকে ভাল করে পরিষ্কার করে, শুকনো করে বোরিক পাউডারও লাগানো যায়।
পত্রিকা: উচ্চ এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন কি এই সময় ব্যবহার করতেই হবে? অনেকেই তো রোদ নেই ভেবে সানস্ক্রিন লাগাতেই চান না এই সময়...
শর্মিলা: সানস্ক্রিন ব্যবহার করা মাস্ট। দেখুন কড়া রোদ হয়তো বর্ষার সময়টায় থাকে না। সে কারণে চাইলে এসপিএফ ৪০-এর জায়গায় এসপিএফ ২০-যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতেই পারেন। রোদ না থাকলেও দূষণ তো আর কমছে না। সানস্ক্রিন তো দূষিত পরিবেশ থেকেও স্কিন-কে রক্ষা করে। তবে হ্যাঁ, সানস্ক্রিন পাউডার মানে লোশনের জায়গায় ডাস্ট সানস্ক্রিন কখনওই ব্যবহার করবেন না। ত্বকের রন্ধ্রগুলো বন্ধ করে দেয়। ব্রণ বা র্যাশের সমস্যা হতে পারে তখন।
পত্রিকা: মুখের ত্বক তো বর্ষার সময় খুব তেলতেলে হয়ে যায়। যাঁদের অয়েলি স্কিন, তাঁদের সমস্যা আরও বেশি। কী করবেন তাঁরা?
শর্মিলা: হ্যাঁ, অয়েলি স্কিন যাঁদের, তাঁদের সমস্যাটা সত্যিই বেশ বেশি। বারেবারে নন-অয়েলি ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোবেন। আর মুখ পরিষ্কার করে টোনার লাগান দিনে যত বার সম্ভব। বাইরে বেরনোর আগে ওয়াটারপ্রুফ সানস্ক্রিন লাগাতে হবে। আর রাতে বাড়ি ফিরে মুখ ধুয়ে টোনার লাগালেই হয়। চাইলে হাল্কা ময়েশ্চারাইজারও লাগানো যায়। এগুলো করলেই অয়েলি স্কিন যাঁদের, তাঁদের সমস্যা কিছুটা কমবে তো বটেই।
পত্রিকা: স্কিন ডিহাইড্রেশনের সমস্যাতেও তো অনেকেই ভোগেন এই সময়। শুধু জল খেলেই কি এই সমস্যা এড়ানো যাবে? না কি আরও কিছু করা উচিত?
শর্মিলা: দিনে ৪-৫ লিটার জল খেতেই হবে। আসলে গরমে যেমন জল তেষ্টা পায়, বর্ষায় তো সেটা অতটা থাকে না। তাই মনে করে বারবার জল খাওয়াটা দরকার। জল ছাড়াও লিক্যুইড খাবার যেমন স্যুপ বা জ্যুসও পরিমাণ মতো খাওয়া দরকার। অনেকেই অয়েলি ভাবটা এড়াতে এমন কিছু নন-অয়েলি প্রডাক্ট ব্যবহার করেন যাতে স্কিন আর্দ্রতা হারিয়ে রুক্ষ হয়ে পড়ে। কাজেই বেছে বেছে প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। আর প্যাক লাগান। বাইরে যাঁরা বেরোন, তাঁদের তো স্ক্রাব প্যাক লাগানোটা খুবই জরুরি। এ ছাড়াও ফ্রুট প্যাক, প্রোটিন প্যাক, ভেজ পিল প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। তাতেই ডিহাইড্রেশনের সমস্যা এড়াতে পারবেন।
পত্রিকা: বর্ষার আর্দ্রতা গরমের চাইতেও অনেক বেশি। চুলের তো দফারফা হয়ে যায় এই কারণে। অতিরিক্ত চুল পড়ে যে কারণে। এই সমস্যা এড়াতে কী করা উচিত মনে হয় আপনার?
শর্মিলা: প্রতিদিন শ্যাম্পু করতেই হবে। বাইরে বেরোলে তো রোজ শ্যাম্পু করা মাস্ট। সম্ভব হলে কেশুত পাতা বেটে মাথায় তিন দিন লাগাতে পারেন। আর যদি সে সব করার সময় না থাকে, তা হলে ভাল কোনও হেয়ার টনিক ব্যবহার করতে পারেন যাতে চুলের গোড়া হেলদি হয়। গরমে রোজ কন্ডিশনার না লাগালেও চলে। একদিন ব্যবহার করতে পারেন কন্ডিশনার। রোজের ব্যবহারে চুল পেতে গিয়ে স্টাইল নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
পত্রিকা: ভিজে জামাকাপড়ে তো র্যাশের সমস্যাও অনেক বেশি হয় এই সময়। বাইরে কাজে বেরোচ্ছেন যাঁরা, তাঁদের তো জামাকাপড় বদলানোর সুযোগও থাকে না অনেক সময়। কী করবেন তাঁরা?
শর্মিলা: অতিরিক্ত জামাকাপড় সব সময়ই ক্যারি করার চেষ্টা করবেন। আর একান্তই যদি সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে বাড়ি ফিরে চন্দন-নিমপাতা বেটে গায়ে লাগাতে পারেন। স্নানের সময় জলে একটুকরো ফিটকিরি ফেলে দিলেও কিন্তু স্কিন র্যাশের সমস্যা থেকে বাঁচা যায়। আর দিনের বেলা বেরনোর সময় সানস্ক্রিন তো লাগাবেনই।
পত্রিকা: অনেকেই না কি চুল ভিজে থাকলে পার্টিতে যাওয়ার আগে পাউডার পাফ করে নেন চুলে। ব্যাপারটা চুলের পক্ষে কি ক্ষতিকর?
শর্মিলা: ব্যাপারটা চূড়ান্ত আনসায়েন্টিফিক। ট্যালকম চুল হোক বা ত্বক সবের পক্ষেই ক্ষতিকর একটা জিনিস। বাজারে এখন খুব ভাল ড্রাই স্প্রে শ্যাম্পু পাওয়া যায়। পার্টিতে যাওয়ার আগে লাগিয়ে নিলেই হল।
পত্রিকা: অল্পবয়সিরা বৃষ্টিতে ভিজতে খুব পছন্দ করে। যদিও ত্বকচর্চা ব্যাপারটা নিয়ে আদৌ মাথা ঘামায় না। ওদের জন্য একটা রেগুলার ত্বকচর্চার রুটিন কি হতে পারে?
শর্মিলা: বৃষ্টিতে ভিজে এলে ঘরে ঢুকেই উষ্ণ গরম জলে স্নান করে নিতে হবে। স্ক্রাব করলে তো খুবই ভাল। গা মুছে নিয়ে হাল্কা কোনও বডি ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিলেই হল...
পত্রিকা: এই সময় নখেও তো ফাঙ্গাল ইনফেকশন হয় অনেক সময়। নখ ভেঙে যায় খুব তাড়াতাড়ি। যাঁরা বড় নখ রাখেন, তাঁদের কি বেশি করে ম্যানিকিওর করা উচিত?
শর্মিলা: নাহ্, বেশি করে ম্যানিকিওর করার কোনও ব্যাপার নেই। মাসে একটা করলেই যথেষ্ট। সপ্তাহে এক-দু’বার গরম জলে জেলোটিন গুলে ১০-২০ মিনিট হাত ডুবিয়ে রাখলেও কাজ হবে। আর হ্যাঁ, ক্যালসিয়াম খাওয়াটাও কিন্তু দরকার এ রকম সমস্যায়।
পত্রিকা: বর্ষার বিয়েবাড়ি। অতিরিক্ত আর্দ্রতায় মেক আপ গলে যাচ্ছেতাই অবস্থা দাঁড়ায় এক এক সময়। কী ধরনের মেক আপ করা উচিত এই সময়?
শর্মিলা: অবশ্যই ভাল কোনও ওয়াটার বেসড্ মেক আপ ব্যবহার করুন। আর ভিজে স্পঞ্জ দিয়ে মেক আপটা সমান ভাবে মুখের সর্বত্র লাগিয়ে নিন। এক ঘণ্টা বাদে বাদে ময়েশ্চারাইজারযুক্ত ভাল কোনও পাউডার পাফ করে নিতে হবে একটু করে। বর্ষায় ম্যাট লিপস্টিক না লাগিয়ে হাল্কা গ্লসি লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। দেখতে ভাল লাগবে। স্টাইলিংয়ের জন্য চুলে ভাল কোনও ইন্টারন্যাশনাল জেল ব্যবহার করলেও কোনও অসুবিধে নেই।
পত্রিকা: অনেকেই বর্ষাকালটা শুধু হাত-পায়ের যত্নেই সেরে দেন। বৃষ্টি হয়ে ঠান্ডা পড়লে নিয়মিত স্নান করেন না, এমনও অনেকে আছেন। বাকি শরীরের যত্ন নিতে কী করতে বলবেন এঁদের?
শর্মিলা: পেডিকিওর-ম্যানিকিওর করাটাই কিন্তু যথেষ্ট নয়। আমরা তো আর ঠান্ডার দেশে বাস করি না যে নিয়মিত স্নান করা যাবে না। প্রতিদিন হাল্কা গরম জলে স্নান করাটা কিন্তু নিজেকে পরিষ্কার রাখা, ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় শর্ত। খেয়াল রাখবেন বৃষ্টির নোংরা জল যেন গায়ে না বসে। নোংরা জল বসে এই সময় গায়ে ছুলি, একজিমার মতো অসুখ হতে পারে। তাই রোজ স্নান করাটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
পত্রিকা: ত্বক ময়েশ্চারাইজ করাটা কতটা জরুরি এই সময়? বাতাসে আর্দ্রতা তো এই সময় প্রচুর পরিমাণে থাকে?
শর্মিলা: স্কিন রোজ ময়েশ্চারাইজ করতে হবে। ময়েশ্চারাইজারের সঙ্গে অল্প জল মিশিয়ে লাগাতে পারেন। বাতাসের আর্দ্রতা আপনার ত্বকের কোনও উপকার করবে না।
পত্রিকা: বর্ষা মানেই তো রংচঙে ফ্যান্সি জুতো পরার সময়। ব্র্যান্ডেড জুতোর একঘেয়েমি ছেড়ে যাঁরা এ সব জুতো পরেন, তাঁদের অনেকেরই পায়ের ত্বকে নানান চর্মরোগজনিত সমস্যা দেখা যায়। ত্বকচর্চা দিয়ে তা সারানোর কি কোনও উপায় আছে। নাকি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াটাই উচিত হবে এ ক্ষেত্রে?
শর্মিলা: সস্তার রংচঙে জুতো পরে স্টাইল করার দরকার নেই। এখন তো ভাল ভাল ব্র্যান্ডেরই নানান রঙের স্টাইলিশ সব জুতো পাওয়া যায়। জুতোর রাবার ভাল না হলে কিন্তু মারাত্মক স্কিন অ্যালার্জির সমস্যায় ভুগতে হতে পারে।
পত্রিকা: চল্লিশ পেরিয়েছেন যাঁরা, তাঁদের নিয়মিত ত্বকচর্চার কোনও বিশেষ পরামর্শ?
শর্মিলা: নিয়মিত ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিংয়ের রুটিন মাস্ট। ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভাল কোনও নারিশিং ক্রিম মাসাজ করে মুছে নিয়ে ভাল কোনও প্রোটিন প্যাক লাগাতে পারলে ভাল হয়। সেটা তুলে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিলেই হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy