Advertisement
E-Paper

প্রতিবাদ থেমে থাকে না

নীরবতা এবং বাঙ্ময়তা একই সঙ্গে একই মঞ্চে ফুটে উঠল। ফুটে উঠল মঞ্চে নির্মিত ছবিতে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিদিনের খবরে উঠে আসা প্রতিহিংসা ও জৈব কামনা-বাসনার যে বিকৃত রূপ আমরা দেখছি, তা অহরহ সংবেদনশীল মানুষকে তাড়িত করছে। কেড়ে নিচ্ছে ঘুম। কী করব? কোথায় যাব? কেমন হবে প্রতিবাদের ভাষা? নির্বাক অভিনয় অ্যাকাডেমির সাম্প্রতিকতম প্রযোজনা ‘ধূসর গোধূলি’ নাটকটি সেই পথ-ই দেখিয়েছে।

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৪ ০০:১০

নীরবতা এবং বাঙ্ময়তা একই সঙ্গে একই মঞ্চে ফুটে উঠল। ফুটে উঠল মঞ্চে নির্মিত ছবিতে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিদিনের খবরে উঠে আসা প্রতিহিংসা ও জৈব কামনা-বাসনার যে বিকৃত রূপ আমরা দেখছি, তা অহরহ সংবেদনশীল মানুষকে তাড়িত করছে। কেড়ে নিচ্ছে ঘুম। কী করব? কোথায় যাব? কেমন হবে প্রতিবাদের ভাষা? নির্বাক অভিনয় অ্যাকাডেমির সাম্প্রতিকতম প্রযোজনা ‘ধূসর গোধূলি’ নাটকটি সেই পথ-ই দেখিয়েছে। একটি মেয়ে। সব মেয়েরই নারী হয়ে ওঠার কাহিনি এক। বিপরীতে একটি ছেলে, সব ছেলেরই পুরুষ হয়ে ওঠার কাহিনি এক। মাতৃগর্ভ থেকে মেয়েকে মেয়ে এবং পুরুষকে পুরুষ তৈরি করার সহজ সাবলীল অভ্যস্ত প্রচেষ্টা থেকে ভবিষ্যতের কবর খোঁড়া। তাই ধর্ষণ যতই ঘটুক না কেন আইনেও তার বিভাজন হয় পুরুষের পছন্দমতো।

তাই হয়তো নির্বাক এর কুশীলব বলে ওঠেন, ‘বিপুলা এ পৃথিবীর অনেক বিধান/ অর্থ-ধর্ম-সমাজের রাজকীয় নীতি/ পুরুষকেই তুচ্ছ করে, ক্ষুদ্র করে/ সভ্যতার সমাহারে পুরুষেরই পুরুষত্বহারা হয়।’ কিংবা যখন শুনি ‘পশুদের ফ্রিজ নেই, ডিও নেই তবু আছে মেয়েদের মান।’ আরও জোরে বলতে শুনি ‘যায় মহব্বত মূর্ছা যায়/কূটনীতি আর অসম্মানের ঘুরচাকায়!’ নানা ইমেজারি আর মন্তাজে মঞ্চে প্রতিবাদ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। দর্শকাসনে সকলেরই তখন শিরদাঁড়া হিম! পরিচালক অঞ্জন দেবের চ্যালেঞ্জ ছিল এইখানে। একই মঞ্চে প্রায় তিরিশ জন শিল্পী। সুদীপ সান্যালের আলো, সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কথাকলির কণ্ঠে ব্যবহৃত দেহতত্ত্বের গান, এবং পরিশেষে শঙ্খ ঘোষের কবিতা অন্য মাত্রা দিয়েছে। প্রথম থেকে দু-এক ছত্রে আসা কবিতাগুলি তৈরিতে দক্ষতার ছাপ রেখেছেন সুরঞ্জনা দাশগুপ্ত। বোঝা যায় নীরব টেক্সট-এর উপরে লেখাগুলি লেখা হয়েছে। তবে কবিতাগুলি পাঠের ব্যাপারে পরিচালকের হয়তো আরও একটু সতর্কতা প্রয়োজন ছিল।

ঈশ্বর চেতনায় রবীন্দ্রনাথ

কলামন্দিরে রাহুল মিত্রের একক গান শুনলেন শিখা বসু

সম্প্রতি কলামন্দির মঞ্চে রাহুল মিত্রের নিবেদনে একক রবীন্দ্রসঙ্গীতের আসরের শীর্ষনামটি ছিল ‘হৃদয়েশ্বর’। রবীন্দ্রনাথের ঈশ্বর চেতনার গান। সুনির্বাচিত, সঠিক বিন্যাসে ও সুস্পষ্ট চিন্তাবাহী। ভক্তের চেতনায় ঈশ্বরের নানা রূপকল্প। এই সূত্র নির্ভর করে ৩৬টি গান দু’টি পর্বে এবং ছ’ খানি অণুপর্বে সাজানো হয়েছিল। যেমন বিষাদময়, প্রেমময়, লীলাময় এবং চিত্তময়, প্রাণময় ও শেষে সুধাময়। প্রতি অণুপর্বে ছ’ খানি আঙ্গিকের গান ধ্রুপদাঙ্গ, খেয়ালাঙ্গ, বিশেষ গীতিঅঙ্গ, বাউলাঙ্গ, কীর্তনাঙ্গ ও টপ্পাঙ্গ। এক কথায় বলা যায় যে শিল্পী সকল আঙ্গিকের গানে সমান ভাবে দক্ষ ও মনোযোগী। শিল্পীকে সাধুবাদ জানাতে হয় আজকের এই উচ্চগ্রামের যন্ত্রানুষঙ্গের দিনে শুধু বেহালা, তালবাদ্য ও জোড়া তানপুরা ব্যবহার করে সুদীর্ঘ এই অনুষ্ঠানে শ্রোতার মনোনিবেশ ও নিবেদনের সমতা বজায় রাখার জন্য। কোনও একটি বিষয়কে ধরে দশ মিনিটের বিরতি সহ প্রায় তিন ঘণ্টার গান শোনার রেশ এখনও কাটেনি।

অনুষ্ঠান শুরু করলেন ‘বিষাদময়’ অণুপর্বে ধ্রুপদাঙ্গের গান ‘আজি কোন ধন হতে’ দিয়ে। ক্রমে খেয়ালাঙ্গে তালবাদ্য সহযোগে ‘দিন যায় রে’ প্রথম শোনার অভিজ্ঞতা। এ পর্বের শেষ গান ‘এ পরবাসে রবে কে’ উজ্জ্বল হয়ে রইল। পরের অণুপর্বে ‘লীলাময়’। ‘অসীম আকাশে অগণ্য কিরণে’র ধ্রুপদী নৈপুণ্যের পরে তালবাদ্যে খেয়ালাঙ্গের ‘দেখা যদি দিলে’। কীর্তনাঙ্গে ‘মাঝে মাঝে তব’ মন ছুঁয়ে যায়। প্রথম পর্বের শেষ ছ’টি গান ‘পেয়েছি সন্ধান’ কি ‘কেন জাগে না’ প্রায় বিস্মৃত রবীন্দ্রকণ্ঠে বিধৃত ‘আমি সংসারে মন’ ও শেষে ‘এ কী করুণা’ অনবদ্য।

দ্বিতীয় পর্যায়ে এসে ‘চিত্তময়’ অণুপর্বের শুরুতেই ‘প্রতিদিন তব গাথা’ বহুশ্রুত এই গানটি প্রায় না শোনা মনে হল। শিল্পীর কণ্ঠে ‘হৃদয়বাসনা’ অতি উচ্চমানের হলেও দু’ একটি বাউলাঙ্গের গান আরও খোলা গায়কিতে গাওয়া যেত। পরিশেষে সুধাময় অণুপর্বে বিরল অভিজ্ঞতা ও ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল ‘শূন্য প্রাণ কাঁদে’ বিলম্বিত ত্রিতালে শেষ করেই তাল-বাদ্য সহযোগে গাইলেন ‘দিন ফুরালো হে সংসারী’। বলা যায়, এ দিনের সব গানের বেশির ভাগই অশ্রুত। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন অম্লান হালদার, গৌতম দত্ত, গৌতম চৌধুরী।

এ কী লাবণ্যে

শিখা বসু

পীযূষকান্তির গায়কি জি ডি বিড়লা সভাঘরে

পীযূষকান্তি নেই। তাঁর গায়কি রয়ে গিয়েছে গুণগ্রাহী ও ছাত্রদের মধ্যে। সুরধ্বনি সংস্থা বিনম্র শ্রদ্ধায় মজিয়েছেন তাঁর স্মরণসন্ধ্যা সম্প্রতি জি ডি বিড়লা সভাঘরে। সহযোগিতায় রমা রম্যবীণা। মূলত গান, ফাঁকে ফাঁকে স্মৃতিচারণে ছিলেন তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার, আশিস খান, স্বপন চৌধুরী, সঞ্জয় চক্রবর্তী। একক গান শোনালেন রমা মণ্ডলের ছাত্রী কোয়েল অধিকারী। ‘জানি তুমি ফিরে’, ‘চরণরেখা তব’ দু’টি গানেই লাবণ্যময় অলক রায়চৌধুরী। পীযূষপুত্র পুষ্পল সরকার গাইলেন দু’টি গান। শ্রাবণী সেন শোনালেন ‘আমার প্রাণের পরে’, আর ‘তুমি কি কেবলই’ অপূর্ব। প্রয়াত শিল্পীর গায়কি বৈশিষ্ট্য ধরা রয়েছে বর্ষীয়ান শিল্পী রবীন চৌধুরীর গলায়। খোলা মেজাজে পাঁচ, ছ’টি গান গাইলেন শ্রী চৌধুরী যার মধ্যে বিশেষ করে কানে থেকে যায় ‘তুমি খুশি থাকো’ আর ‘এক দিন যারা মেরেছিল।’

শেষ পর্বে মন কাড়লেন তরুণ শিল্পী স্মার্ত মজুমদার। পীযূষকান্তির শেষ বেলাকার কনিষ্ঠতম ছাত্র। প্রচলিত প্রশংসাবাক্য স্মার্ত সম্পর্কে তুচ্ছ। কারণ এই তরুণ গান করেন না, গান হয়ে ওঠেন। শরীর মন আত্মা সব নিয়ে মিশে যান রবীন্দ্রগানে। অনুভবের কোন যে গভীরতায় তাঁর অবগাহন। গানের মধ্যে যেখানে বাণীবিহীন সুরবিহার, স্মার্ত যেন উদাস পাহাড়ি ঝরনা। ‘গানে গানে’ সব বন্ধন প্রথম থেকেই টুটে গেল। ‘নীল অঞ্জন ঘন’ বাতাস ভরিয়ে দিল শান্তিনিকেতনের সোঁদা মাটির গন্ধ। পূর্ণ রোম্যান্স প্রাণ পেল ‘তুমি একটু কেবল’।

‘মোদের কিছু’ বাউলাঙ্গ গান বেজে উঠল সহজ আনন্দে। ভাসিয়ে নিয়ে গেল ‘এ কী লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ’। তবু এ সবের পরেও আলাদা করে মনে বেজে ওঠে ‘পিনাকেতে লাগে টঙ্কার’।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy