Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বর্ষায় নয়,বছরভর বাচ্চাকে ফোটানো জল খাওয়ান

ফোটানো জলে স্নানও করান। পেটের সমস্যা ও জ্বর থেকে রেহাই পাবে। পরামর্শ দিচ্ছেন ডা. সুব্রত চক্রবর্তী। লিখছেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়ফোটানো জলে স্নানও করান। পেটের সমস্যা ও জ্বর থেকে রেহাই পাবে। পরামর্শ দিচ্ছেন ডা. সুব্রত চক্রবর্তী। লিখছেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৪ ০০:০৫
Share: Save:

প্র: বর্ষা শুরু হতে না হতেই বাচ্চার পেটের সমস্যা শুরু হয়ে গিয়েছে। মাঝে মাঝে জ্বরও আসছে। কী করব?
উ: জলটা ফুটিয়ে খাওয়ান। খেয়াল রাখুন বাইরে থেকে এসে বাচ্চা যেন হাত ভাল করে ধুয়ে নেয়।

প্র: বাড়িতে তো ফিল্টার করা জলই খাওয়া হয়...
উ: বাচ্চাকে বছরভর ফোটানো জল খাওয়াবেন। সেই সঙ্গে বর্ষার সময়টা ফোটানো জলেই স্নান করাবেন।

প্র: সে তো রোজই গরম জলে স্নান করে।
উ: কথাটা বুঝলেন না...

প্র: মানে?
উ: বলছি স্নানের জলটাও পুরোপুরি ফুটিয়ে নেবেন। তার পর সেই ফোটানো জল ঠাণ্ডা করে নিয়ে তা দিয়ে স্নান করান।

প্র: গিজারের জল চলবে?
উ: চলবে। সে ক্ষেত্রে পুরো জলটাই একবারে গরম করে নিয়ে ঠাণ্ডা করে নেবেন। বাইরে থেকে ঠাণ্ডা জল মেশালে কিন্তু হবে না। কারণ সেই জল স্নানের সময় বাচ্চার মুখে গেলে পেটের অসুখ হতে পারে।

প্র: ডায়রিয়া হলে বাড়িতে কী করব?
উ: বার বার ওয়ারেশ দেবেন। ডিহাইড্রেশন হচ্ছে কি না, সে দিকে খেয়াল রাখবেন।

প্র: সেটা কী করে বুঝব?
উ: বার বার বাথরুমে যেতে থাকলে বাচ্চা ঝিমিয়ে পড়তে পারে। প্রস্রাব কমে যাবে। প্রস্রাবের রং হলুদ হতে পারে। যদি দেখেন, ৮-৯ ঘণ্টা প্রস্রাব হয়নি, তবে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। বাচ্চাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে।

প্র: সামান্য পেটের অসুখ থেকে হাসপাতালে ভর্তি?
উ: এ জন্য বাচ্চার ডায়রিয়া হয়েছে বুঝলেই বার বার ওয়ারেশ দিতে থাকবেন। তা হলে আর ব্যাপারটা ডিহাইড্রেশন পর্যন্ত গড়াবে না।

প্র: বাড়িতে নুন-চিনির জলও তো চলবে?
উ: এক দম না। পাড়ায় পাড়ায় ওষুধের দোকানে ওয়ারেশ পাওয়া যায়। সেখানে খামকা নুন-চিনির জল খাওয়াতে যাবেন কেন?

প্র: কেন? তাতে অসুবিধে হবে?
উ: নুন-চিনির জলে নুনের অনুপাতটা জানতে হবে। জলে নুনের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে বিপত্তি হতে পারে। তখন একটা সামলাতে গিয়ে আর একটা সমস্যা চলে আসবে।

প্র: ধরুন বেড়াতে গিয়ে বাচ্চার ডায়রিয়া হল, হাতের কাছে ওয়ারেশ নেই। তখন?
উ: ওয়ারেশ সব সময় সঙ্গে রাখবেন। যদি না থাকে, তবে নুন-চিনির জলই ভরসা। সে ক্ষেত্রে নুন এমন ভাবে মেশাতে হবে, যেন জিভে ঠেকালে মনে হবে জলটা সামান্য নোনতা হয়েছে।

প্র: ডায়রিয়া না কমা পর্যন্ত কি বাচ্চাকে অন্য কিছু খেতে দেব না?
উ: না না, খাইয়ে যাবেন। অসুস্থ হয়েছে বলে খাবার বন্ধ করবেন না। সাবু, পাতলা খিচুড়ি, নুন-লেবু দিয়ে সেদ্ধ চিঁড়ে, পাতলা মাছের ঝোল-ভাত খাওয়াতে পারেন। না খাওয়ালে বাচ্চা ঝিমিয়ে পড়বে। তবে শাকসব্জি বা দুধ দেবেন না। ব্রেস্ট মিল্ক খেলে সেটা অবশ্য বন্ধ করবেন না।

প্র: কিন্তু বাচ্চা তো কিছুই খেতে চাইছে না?
উ: একটু একটু করে খাইয়ে দেবেন। ওয়ারেশ দিতে থাকলে আস্তে আস্তে বাচ্চার খিদেভাব চলে আসবে।

প্র: শুনেছি জল থেকেই এই সময় বাচ্চাদের জন্ডিসও হয়?
উ: হ্যাঁ। যদি দেখেন একেবারেই খেতে চাইছে না, খিদে কমে গেছে, তা হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাবেন।

প্র: জন্ডিসের জন্য খিদে ভাব চলে যাবে?
উ: হ্যাঁ। পাশাপাশি জ্বরও হবে। তবে খুব বেশি জ্বর উঠবে না। প্রথম দিকে চার-পাঁচ দিন জ্বর থাকতে পারে। বাচ্চা কিছুই খেতে চাইবে না। প্রস্রাবের রং সর্ষের তেলের মতো হয়ে যাবে। বাচ্চার কিছুই ভাল লাগবে না। ক্লান্ত লাগবে। চোখের রং-ও হলদে হয়ে যেতে পারে। দিনের আলোয় দেখলে বুঝতে পারবেন।

প্র: তা হলে?
উ: তাড়াতাড়ি বাচ্চার ডাক্তারকে জানাবেন। কিছু রক্ত পরীক্ষা, ইউরিন টেস্ট করতে হবে।

প্র: বর্ষায় বাচ্চাদের টাইফয়েডও তো খুব ভোগায়।
উ: হ্যাঁ। সেই জল থেকেই। টাইফয়েড হলে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করা দরকার।

প্র: টাইফয়েড হয়েছে বুঝব কী করে?
উ: প্রথমে ঘুসঘুসে জ্বর হবে। তার পর আস্তে আস্তে জ্বর বাড়বে। খিদে কমে যাবে। বাচ্চা ঘ্যান ঘ্যান করবে। এতগুলি ব্যাপার এক সঙ্গে দেখলে সতর্ক হবেন। তবে ভয়ের কিছু নেই। ভাল ওষুধ আছে।

প্র: জন্ডিস বা টাইফয়েড যাতে না হয় তার জন্য কী করব?
উ: ওই যে বললাম, বর্ষার শুরু থেকেই বাচ্চাকে ফোটানো জল খাওয়াবেন আর ফোটানো জলে স্নান করাবেন। বাইরের খাবার বুঝেশুনে দেবেন। দুই বছরের ঊর্দ্ধে বাচ্চাকে তিন বছর অন্তর অন্তর টাইফয়েডের ভ্যাকসিন দিতে পারেন। এক বছরের ঊর্দ্ধে হেপাটাইটিসের ভ্যাকসিন দিয়ে দিতে পারেন। আশপাশে কোনও বাচ্চার জন্ডিস হলেই সতর্ক হয়ে যাবেন।

প্র: আশেপাশে অন্য বাচ্চার হলে আমার বাচ্চারও জন্ডিস হবে?
উ: হ্যাঁ। জল থেকে হয় তো অসুখটা। ফোটানো জল খাওয়ানো শুরু করলে সমস্যা এড়ানো যাবে। আর শুধু বর্ষাকাল নয়, বাচ্চার পেটের অসুখ এড়াতে সারা বছরই বাচ্চাকে বাইরের ফাস্ট ফুড দেবেন না।

প্র: কিন্তু বাচ্চা তো বাইরের খাবারের জন্য বায়না করে...
উ: যদি দেন, সেটা দেবেন গরম গরম। ঠাণ্ডা আর বাসি কিছু দেবেন না। চিপস বা প্রিজারভেটিভ যুক্ত খাবারও দেবেন না।

প্র: কিন্তু স্কুলের টিফিনে তো কিছু খায় না। বাধ্য হয়ে চিপিস-ই দিতে হয়। অন্তত পেটে কিছু থাকে...
উ: ছোট থেকে চটজলদি প্যাকেটবন্দি সিরিয়াল জাতীয় খাবার খাইয়ে বাচ্চার এ ধরনের অভ্যাস তৈরি হয়। এর পর বাচ্চা ফাস্টফুড ছাড়া কিচ্ছু খেতে চায় না। সময় বাঁচাতে বাবা-মা’ও ওগুলোই দেন। তার ফলে সারা বছরই বাচ্চাদের পেটের সমস্যায় ভুগতে থাকে।

প্র: কিন্তু বাচ্চা তো কিছুই খেতে চায় না। টিফিনে কী দেব?
উ: আর যা-ই দিন, ফাস্টফুড দেবেন না। চিড়ের পোলাও, ফ্রুট স্যালাড, ঘরে তৈরি স্যান্ডুইচ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দিন। আর একেবারে ছোট থেকে বাচ্চার ঠিকঠাক খাবার অভ্যাসটা তৈরি করুন।

প্র: সেটা কী রকম?
উ: ব্রেস্ট মিল্ক ছাড়ার পর থেকেই বাচ্চাকে ঘরের খাবারে অভ্যস্ত করুন। ভাত, ডাল, তরকারি, মাছ একটু একটু করে দিন। বাজারের চলজলদি সিরিয়াল যেন বাচ্চার মূল খাবার না হয়ে দাঁড়ায়। সারা সপ্তাহে অন্তত ২১ ধরনের নানা রকম খাবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াবেন। তবেই বাচ্চার ঠিকঠাক পুষ্টি হবে।

ভাল থাকার সহজ উপায়

• বছরভর বাচ্চাকে ফোটানো জল খাওয়ান

• ফোটানো জল ঠাণ্ডা করে নিয়ে তা দিয়ে বাচ্চাকে স্নান করান

• বাইরের ঠাণ্ডা বা বাসি খাবার দেবেন না

• চিপস আর প্রিজারভেটিভ যুক্ত খাবার বাচ্চাকে না দিলেই ভাল

• ডায়রিয়া হলে বার বার ওয়ারেশ দিন

• বাচ্চার খিদে কমছে কি না নজর রাখুন

যোগাযোগ- ২৩৫৮-১৮৬৯

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE