ডিজিটাল যুগে অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমের প্রভাব পড়ছে শিশুদের চোখেও। মোবাইল, টিভি এমনকি, স্কুলে কম্পিউটারের পর্দায় দীর্ঘ ক্ষণ চোখ রাখছে শিশুরা। চোখ ভাল রাখতে কেবল স্ক্রিন টাইম কমালে চলবে না, রোজের খাওয়াদাওয়ায় নজরও দিতে হবে। চিকিৎসকেরা বলেন, চোখের জন্য জরুরি ভিটামিন এ বা বিটা-ক্যারোটিন যা পাওয়া যায় গাজর থেকে। তাই বলে রোজ গাজর খাওয়ালেই যে দৃষ্টিশক্তি ভাল হবে তা নয়। চোখের জন্য আরও কিছু পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয়। গাজর ছাড়া আর কী কী খাওয়াতে পারেন শিশুকে, বাবা-মায়েদের জেনে রাখা জরুরি।
চোখের জন্য ভাল কোন কোন খাবার?
এমন খাবার পাতে রাখতে হবে যাতে লুটেইন, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, জ়িঙ্ক, ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই থাকে। পালং শাক, মেথি শাক, ব্রকোলিতে প্রচুর পরিমাণে লুটেইন থাকে যা রেটিনার স্বাস্থ্য ভাল রাখে। শিশুকে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন শাকপাতা খাওয়াতেই হবে।
ছোট মাছ চোখের জন্য খুবই ভাল। পুঁটি মাছ চোখ ভাল রাখতে সাহায্য করে। তা ছাড়া রুই, কাতলা, পমফ্রেট, ভেটকিতেও প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে।
আরও পড়ুন:
পেঁপেতে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই-এর মতো উপাদান। দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে পেঁপের জুড়ি মেলা ভার। পেঁপে চোখের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। কাঁচা ওপাকা দু’রকম পেঁপেই চোখের জন্য ভাল। শিশুর পাতে রোজ পেঁপে রাখলে ভাল। পেঁপে সেদ্ধ অথবা পেঁপে দিয়ে চিকেন স্ট্যু, মাছের পাতলা ঝোল বানিয়ে দিতে পারেন।
ডিমের কুসুম খেলে কোলেস্টেরল বাড়ে ভেবে অনেকেই ভয় পান। তবে ছোটদের কুসুম-সহ ডিমই খাওয়াতে হবে। কুসুমে থাকে জ়িঙ্ক ও লুটেইন, যা দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখতে সাহায্য করে।
রোজ সকালে একটি করে আমলকি খাওয়ালে শিশুর চোখ যেমন ভাল থাকবে, তেমনই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে। আমলকি ছাড়াও কমলালেবু, মুসাম্বির রস, পেয়ারাতেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। রোজ খাওয়ার পরে যে কোনও এক রকম ফল খাওয়াতে হবে শিশুকে।
রাঙা আলু ও কুমড়োতে গাজরের মতোই বিটা-ক্যারোটিন থাকে। রোজের তরকারিতে এই সব্জিগুলি রাখলে ভাল হয়।
সকালের জলখাবারে অল্প করে বাদাম ও বীজ মিশিয়ে খাওয়ান শিশুকে। আখরোট, কাঠবাদাম, সূর্যমুখী ও তিসির বীজ চোখের জন্য খুব ভাল।
বেরি জাতীয় ফল চোখের জন্য ভাল। তবে স্ট্রবেরি বা ব্লুবেরি এখানে সহজলভ্য নয়। এর বিকল্প হিসেবে বেদানা খাওয়াতে পারেন শিশুকে। ফল হবে একই।
শিশুর থালায় কী ভাবে সাজাবেন?
সকালে আপেল, ডিম সেদ্ধ, দুপুরে ভাত, ডাল, পালং শাকের তরকারি, পেঁপে দিয়ে মাছের ঝোল আর বিকেলে বাদাম-বীজ দিতে পারেন।
সকালে যে দিন ওট্স দেবেন সঙ্গে কলা দিন, দুধ-কর্নফ্লেক্স দিলে টক জাতীয় ফল দেবেন না। দুপুরে ভাতের সঙ্গে মিষ্টি আলু বা কুমড়োর তরকারি, চিকেন স্ট্যু দিতে পারেন। পাকা পেঁপে দিন বিকেলে।
ময়দার খাবার কম খাওয়াতে পারলে ভাল। লুচির বদলে হাতে গড়া রুটি বা বেসন অথবা রাগির চিল্লা বানিয়ে দিন। সঙ্গে আপেল বা পেয়ারার মতো যে কোনও ফল দিতেই হবে। দুপুরে মাছ বা চর্বি ছাড়া চিকেনের মধ্যে যে কোনও একটি রাখুন। বিকেলে হালকা স্ন্যাক্স হিসেবে রোস্টেড মাখানা দিতে পারেন।