শীতের সময়ে শুষ্ক ত্বক, হাত-পায়ের চামড়া ফেটে যাওয়ার সমস্যা সাধারণ। অনেকেরই তা হয়। তবে চর্মরোগ এর থেকে আলাদা। তাপমাত্রার পারদ নামলে, ত্বক তার স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারাতে থাকে। সঠিক উপায়ে যত্ন না নিলে, তখন ত্বকে মৃতকোষের আধিক্য ঘটে নানা রকম চর্মরোগের প্রকোপ শুরু হয়। জ়েরোসিস, এগজ়িমা, স্ক্যাবিস, সোরিয়াসিসের মতো সমস্যা দেখা দিতে থাকে। আবার উলের পোশাক থেকেও অ্যালার্জি হয় অনেকের। সে ক্ষেত্রেও চামড়া ফুলে ওঠা, ত্বকে লালচে র্যাশ দেখা দিতে পারে।
শীতের কী কী চর্মরোগ থেকে সাবধানে থাকবেন?
স্নানের পরে ময়েশ্চারাইজ়ার বা তেল না মাখলে ত্বক খসখসে হয়ে সাদাটে ছোপ পড়তে থাকে। চুলকানি বাড়ে এবং ত্বক লাল হয়ে ওঠে। অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকে এই সমস্যা দেখা দেয়। আবার যাঁরা জল বেশি ব্যবহার করেন বা অতিরিক্ত ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করেন, তাঁদেরও এই সমস্যা দেখা দেয়।
সারকপটিস স্ক্যাবি নামক পরজীবীর সংক্রমণে এই ধরনের চর্মরোগ হয়। সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে অন্য মানুষেরও রোগটি হয়। সে ক্ষেত্রে এই অণুজীবগুলি ত্বকের একেবারে উপরিস্তরকে আক্রমণ করে এবং চামড়ার মধ্যে গহ্বর তৈরি করে। দিনের পর দিন স্নান না করে থাকলে, অপরিচ্ছন্ন পোশাক পরলে তা থেকে এমন সংক্রমণ ঘটতে পারে।
আরও পড়ুন:
শীতের সময়ে এগ্জ়িমার সমস্যা বাড়ে। হাতে, পায়ে, কনুইয়ের কাছে লালচে র্যাশ বেরোতে পারে, বড় বড় ফোস্কার মতো দেখা দিতে পারে ত্বকে। গাল, থুতনি, কানের পিছন দিকে লালচে র্যাশ বেরোতে পারে। পেট, কনুই, ঊরুতেও বড় বড় ফোস্কা পড়বে অথবা ঘামাচির মতো দেখা যাবে। মাথার ত্বকে র্যাশ বেরোতে পারে। চামড়া খসখসে এবং পুরু হয়ে যাবে।
ঠান্ডার সময়ে খুশকির সমস্যা বাড়ে। ঠিকমতো শ্যাম্পু ব্যবহার না করলে ছত্রাকের সংক্রমণও হতে পারে মাথায়। টিনিয়া ক্যাপিটিসের সংক্রমণে মাথার ত্বকে ক্ষত, র্যাশ হতে দেখা যায়। এতে মাথার ত্বক আরও বেশি তৈলাক্ত হয়ে পড়ে, চুলকানির সমস্যা বাড়ে। ফলে ব্রণ-ফুস্কুড়ি, লালচে র্যাশ দেখা দেয়।
উলের পোশাক থেকেও অ্যালার্জি হয় অনেকের। ত্বকে ফুস্কুড়ি, র্যাশ বেরোতে পারে। উলের সংস্পর্শে এলেই ত্বকে চুলকানি হতে পারে। এটিও এক ধরনের কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিসের লক্ষণ।
ত্বকের যত্নে
স্নানের পর ত্বক অল্প ভিজে থাকা অবস্থায় ময়েশ্চারাইজ়ার বা নারকেল তেল মাখুন। ক্ষারযুক্ত সাবান বা অ্যালকোহল আছে এমন প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না।
সুতির পোশাক পরুন। গ্লিসারিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করুন।
সরাসরি উলের পোশাক গায়ে দেবেন না। ভিতরে একটি নরম সুতির ফুল হাতা জামা পরে তার পর শোয়েটার বা শাল নিন।
খুশকি রোধ করতে রসুনের তেল, লেবুর রস বা টি-ট্রি অয়েল মালিশ করতে পারেন চুলে। খাবার সোডা এবং দই, দু’টিই খুশকি দূর করার সহজতম ঘরোয়া উপায়। দই, এক চিমটে খাবার সোডা ও পুদিনা পাতার কুচি দিয়ে একটি মিশ্রণ বানিয়ে মাথায় মাখুন। কিছু ক্ষণ রেখে হালকা কোনও শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
এমন ক্রিম বা জেল ব্যবহার করতে হবে, যাতে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ও বেঞ্জয়েল পারঅক্সাইড রয়েছে। ঘরোয়া উপায়ে হলুদ-মধু ও কাঁচা দুধের প্যাক সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করলেও ব্রণ-র্যাশের সমস্যা কমবে।
ওট্স ত্বক থেকে মৃত কোষ দূর করতে খুব কার্যকর। ওট্স-এর সঙ্গে কাঠবাদাম মিশিয়ে হালকা করে গুঁড়িয়ে নিন। এতে দুধ ও কয়েক ফোঁটা মধু দিন। মুখের পাশাপাশি গলা, ঘাড়, হাত এমনকি সারা শরীরেই এটা ব্যবহার করতে পারেন। এই প্যাক এগ্জ়িমার মতো চর্মরোগ থেকে বাঁচাবে।
ত্বক ভাল রাখতে পর্যাপ্ত জল পান করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে শাকসব্জি ও টাটকা মরসুমি ফল খেতে হবে।