Advertisement
E-Paper

বলিউডে বারবার টলিউডে ক’বার

মুম্বইতে হিন্দি, এমনকী ইংরেজি ছবিতে অসংখ্য বার শেক্সপিয়র। বাংলায় কেন নয়? উত্তর খুঁজলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্তশেক্সপিয়র যদি বেঁচে থাকতেন তা হলে এখন হয়তো উনি বলিউডের জন্য চিত্রনাট্য লিখতেন! লন্ডনে বসে এমনই একটি উক্তি করেছিলেন ‘পোপো গিগি: শেক্সপিয়র গোজ্ বলিউড’ মিউজিকাল কমেডির পরিচালক স্যাম স্টারলিং। এই নাটকের মুখ্য চরিত্র এক বলিউড তারকা, যিনি ইংল্যান্ডে আসেন ‘রোমিও জুলিয়েট’ নাটকে অভিনয় করবেন বলে। কিন্তু ঠিক করেন যে শেক্সপিয়রকে ভারতে নিয়ে যেতে হবে। এসব ঘিরেই স্যামের কমেডি।

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৪ ০০:১০
হায়দার-এ শ্রদ্ধা কপূর ও শহিদ কপূর

হায়দার-এ শ্রদ্ধা কপূর ও শহিদ কপূর

শেক্সপিয়র যদি বেঁচে থাকতেন তা হলে এখন হয়তো উনি বলিউডের জন্য চিত্রনাট্য লিখতেন!

লন্ডনে বসে এমনই একটি উক্তি করেছিলেন ‘পোপো গিগি: শেক্সপিয়র গোজ্ বলিউড’ মিউজিকাল কমেডির পরিচালক স্যাম স্টারলিং। এই নাটকের মুখ্য চরিত্র এক বলিউড তারকা, যিনি ইংল্যান্ডে আসেন ‘রোমিও জুলিয়েট’ নাটকে অভিনয় করবেন বলে। কিন্তু ঠিক করেন যে শেক্সপিয়রকে ভারতে নিয়ে যেতে হবে। এসব ঘিরেই স্যামের কমেডি।

নাটকের বিষয় নিয়ে আলোচনা না করেও এটা বলা যেতেই পারে যে, বহু কাল থেকে বলিউডের পরিচালকদের এক অদ্ভুত আকর্ষণ দেখা গেছে শেক্সপিয়রের প্রতি। রবীন্দ্রনাথ থেকে শরৎচন্দ্র, মুন্সি প্রেমচন্দ থেকে রাসকিন বন্ড অন্তত সংখ্যার দিক থেকে এঁদের সবাইকে এক অর্থে পিছনে ফেলে দিয়েছে বলিউডে শেক্সপিয়রের কাহিনির ‘অ্যাডপশন’।

তা হলে কি এটাই বলতে হয়, বলিউডের পরিচালকদের কোনও আলাদা দুর্বলতা কাজ করে শেক্সপিয়রের জন্য? নাকি বাজারি দুনিয়ায় শেক্সপিয়র নামটা ঢুকিয়ে দিতে পারলে ছবির প্রোমোশনে অনেক বেশি সুবিধে হয়?

কয়েক মাস আগে কাশ্মীরে শু্যটিং করছিলেন বিশাল ভরদ্বাজ। এর আগে ওথেলো, ম্যাকবেথ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ছবি করেছেন তিনি বলিউডে। এ বার তাঁর বিষয় হ্যামলেট। ছবির নাম ‘হায়দার’, যেখানে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন শহিদ কপূর, টাবু, শ্রদ্ধা কপূর।

বিশালের ‘হায়দার’ মুক্তি পাওয়ার পরে হয়তো আরেক পরিচালক ওনির শুরু করবেন তাঁর হ্যামলেট। ছবির নাম দেবেন ‘ভেদা’। চিত্রনাট্যে হ্যামলেট একজন মহিলা! ওনিরের মতে, “শেক্সপিয়রের নাটকের বিষয়ের মধ্যে একটা বিশ্বজনীন ও শাশ্বত মূল্যবোধ আছে। নাটকীয়তা রয়েছে। তাঁর কাহিনিকে নানা ভাবে প্রকাশ করার সুযোগ থাকে।” এটাও কি কারণ বারবার শেক্সপিয়রের কাছে ফিরে ফিরে যাওয়া? বলিউডে শেক্সপিয়র এত জনপ্রিয় যে শুধু হিন্দিতে নয়, ইংরেজি ভাষাতেও ছবি তৈরি হয়েছে সেখানে। ‘আ মিডসামার নাইটস্ ড্রিম’ অবলম্বনে ইংরেজি ছবি করেছে বলিউড। ২০১২-তে মুক্তি পাওয়া সে ছবির নাম ছিল ‘১০মিলি লাভ’।

তবে ওনির বলছেন, বলিউডের সব চিত্রনাট্যকার যে শেক্সপিয়র চর্চা করে তারপর তাঁর কাহিনিতে অনুপ্রাণিত হয়েছেন, এমনটা নয়। এমনও তো বলা হয়, বলিউডের অর্ধেকের বেশি সিনেমার মূলে শেক্সপিয়রের কোনও না কোনও রচনা? এ কথাও মানতে তিনি রাজি নন। “বিশাল নাটক করেছেন। সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী। আমিও সাহিত্যের ছাত্র। কিন্তু বলিউডের অন্য সবাই যে শেক্সপিয়রের লেখা বুঝে চিত্রনাট্য লেখেন তা নয়। ‘রোমিও জুলিয়েট’-এর কথাই ভাবুন। ‘হীর রন্ঝা’ বা ‘লয়লা মজ্নু’-র গল্প তো একই ধরনের। কিন্তু তাঁর কাহিনি ‘রোমিও জুলিয়েট’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে করা এমনটা বলতে শোনা যায়। এই চিন্তাটার পিছনে কাজ করে আমাদের ঔপনিবেশিক মনোভাব। সব হিন্দি ছবির মূলে শেক্সপিয়রের নাটক বলাটা যতটা সহজ, ততটা সহজ নয় এটা বলা যে, অনেক ছবির গল্পের শিকড় গাঁথা আছে মহাভারত বা রামায়ণ-এ!”

এ দিকে বলিউড যখন শেক্সপিয়র নিয়ে সিনেমা তৈরি করতে এতটাই আগ্রহী সেখানে টলিউড তাঁর কাহিনি নিয়ে কেন তেমন করে এখনও ছবি করতে এগিয়ে আসেনি? সেই কবে ‘সপ্তপদী-তে ‘ওথেলোর’-র এক দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন উত্তম-সুচিত্রা। ১৯৬৩-তে উত্তমকুমার অভিনয় করেছিলেন ‘ভ্রান্তিবিলাস’-এ। তা’ও সেটা প্রাথমিক ভাবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কাহিনি অবলম্বনে তৈরি, যা আবার শেক্সপিয়রের ‘কমেডি অব এররস্’-এর আদলে লেখা।

কিন্তু তারপর?

এই ২০১৪-য় এসে হঠাৎ শোনা যাচ্ছে ‘রোমিও জুলিয়েট’ অবলম্বনে দুটো ছবি তৈরি হবে। তার একটি অপর্ণা সেনের পরিচালনায়। যেখানে মুখ্য চরিত্রে থাকবেন দেব। গল্পটি পারস্পরিক শত্রুমনোভাবাপন্ন দুটি পরিবারের। যাদের মূল পেশা প্রোমোটিং। অন্য ছবিটি একদম মূল ধারার বাণিজ্যিক বাংলা ছবি। সোজাসুজি মূল কাহিনি ভিত্তি করে। পরিচালক অশোক পতি। এখানে রোমিও-র ভূমিকায় থাকছেন অঙ্কুশ।

বাংলা নাটকে যখন শেক্সপিয়র বারবার ফিরে এসেছে, সেখানে বাংলা চলচ্চিত্রে কেন শেক্সপিয়র ব্রাত্য থেকে গিয়েছেন?

সত্যজিৎ রায় থেকে ঋত্বিক ঘটক সবাই সাহিত্যনির্ভর ছবি তৈরি করেছেন। রবীন্দ্রনাথ থেকে বিভূতিভূষণের কাহিনি নিয়ে সত্যজিতের কালজয়ী ছবি তৈরি হয়েছে। এমনকী শক্তিপদ রাজগুরুর গল্প অবলম্বনে ঋত্বিক ঘটক করেছেন ‘মেঘে ঢাকা তারা’। শংকরের ‘চৌরঙ্গী’ থেকে ‘জয় গোস্বামীর ‘যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল’ বাংলা সাহিত্যের গল্প নিয়ে ছবির তো অন্ত নেই। পর্দায় বার বার এসেছেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, সমরেশ বসু থেকে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, সুচিত্রা ভট্টাচার্যের সাহিত্য। আর অবশ্যই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু শেক্সপিয়র?

অপর্ণা সেনের ছবিটির চিত্রনাট্য লিখছেন শ্রীজাত। তার মতে, বাংলা ছবির ক্ষেত্রে সাহিত্যনির্ভরতা বরাবরই ছিল। “বাংলার মতো গদ্যসম্পদ খুব কম ভারতীয় ভাষাতে আছে। ঘরেই এত জিনিস আছে যে পরিচালকদের অনেক ক্ষেত্রেই তা ব্যবহার করাটা সহজ হয়ে দাঁড়ায়। দর্শকের সঙ্গে অনায়াসে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়,” বলছিলেন শ্রীজাত।

তার সঙ্গে শ্রীজাত এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, গদ্য সাহিত্যিকদের তুলনায় বাংলায় নাট্যকারের সংখ্যা অনেক কম। “সেই জন্যই হয়তো বাংলা নাটকের ক্ষেত্রে শেক্সপিয়রকে অবলম্বন করে অনেক কাজ হয়েছে”, বললেন শ্রীজাত।

একেবারে অন্য পথে হাঁটলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথা, “গল্পের দিক থেকে শেক্সপিয়রের নাটক খুব দুর্বল। আর কী অদ্ভুত সব ব্যাপার। কেউ বাগানে শুয়ে আছে, আর তার কানে বিষ ঢেলে দিয়ে খুন করার চেষ্টা হচ্ছে। তবে জড়োয়া গয়নার মতো কিছু কাজ আছে বলেই, এত দিন শেক্সপিয়রের কাহিনি এ ভাবে থেকে গিয়েছে।” তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, বাংলা সিনেমার দর্শক অতিনাটকীয় বিষয় নিয়ে ছবি দেখতে পছন্দ করে না। তাই সাহিত্যনির্ভর ছবি করতে গেলেও পরিচালকরা শেক্সপিয়রের দিকে তাকান না।

বিতর্কিত মন্তব্য। নিঃসন্দেহে। তবে আপাতত সেই বিতর্কে না গিয়ে এই মুহূর্তে এটাই দেখার যে টলিউডে ‘রোমিও জুলিয়েট’-কে ঘিরে দুই ভিন্ন ঘরানার ছবি মুক্তি পেলে শেক্সপিয়র নিয়ে বাংলাতেও সিনেমা তৈরির চল হয় কি না!

দশ দফা

• খুন কা খুন (১৯৩৫), ‘হ্যামলেট’ অবলম্বনে সোহরাব মোদির ছবি
• জালিম সৌদাগর (১৯৪১), ‘দ্য মার্চেন্ট অব ভেনিস’ থেকে অনুপ্রাণিত জেজে ম্যাডানের ছবি
• দো দুনি চার (১৯৬৩), ‘কমেডি অব এররস্’ অবলম্বনে বিমল রায়ের ছবি
• অঙ্গুর (১৯৮২), ‘কমেডি অব এররস্’ অনুপ্রাণিত গুলজারের ছবি
• ক্যায়ামত সে ক্যায়ামত তক (১৯৮৮), ‘রোমিও জুলিয়েট’ থেকে অনুপ্রাণিত নাসির হুসেনের ছবি
• মকবুল (২০০৪), ‘ম্যাকবেথ’ থেকে অনুপ্রাণিত বিশাল ভরদ্বাজের ছবি
• ওমকারা (২০০৬), ‘ওথেলো’ থেকে অনুপ্রাণিত বিশাল ভরদ্বাজের ছবি
• ইসকজাদে (২০১২), ‘রোমিও জুলিয়েট’ অবলম্বনে হাবিব ফায়সলের ছবি
• ইসাক (২০১৩), ‘রোমিও জুলিয়েট’ থেকে অনুপ্রাণিত মণীশ তেওয়ারির ছবি
• গোলিও কি রাসলীলা রাম-লীলা (২০১৩), ‘রোমিও জুলিয়েট’ থেকে অনুপ্রাণিত সঞ্জয় লীলা বনশালীর ছবি

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy