Advertisement
১৭ জুন ২০২৪

রাগে-অনুরাগে শান্তি সন্ধান

জি ডি বিড়লা সভাঘরে ‘পিস’ অনুষ্ঠানে। লিখছেন বারীন মজুমদারসারা দুনিয়ায় চূড়ান্ত অস্থিরতার বাতাবরণ। চরম অশান্তি যখন মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে, তখন চার দিকের এই ভয়াবহ পরিবেশ আর পরিপ্রেক্ষিতে ঠিক কী করণীয়? কী ভাবেই বা সমাধান সম্ভব? কোনও শিল্পী যদি সঙ্গীতের মূর্ছনার মাধ্যমে শান্তি খুঁজতে চান তখন সেই শিল্পীকে আমাদের সাধুবাদ জানাতেই হয়। ‘যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই’ স্লোগান শিশুরাও ছোট থেকে শুনে অভ্যস্ত।

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৪ ০০:১১
Share: Save:

সারা দুনিয়ায় চূড়ান্ত অস্থিরতার বাতাবরণ। চরম অশান্তি যখন মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে, তখন চার দিকের এই ভয়াবহ পরিবেশ আর পরিপ্রেক্ষিতে ঠিক কী করণীয়? কী ভাবেই বা সমাধান সম্ভব? কোনও শিল্পী যদি সঙ্গীতের মূর্ছনার মাধ্যমে শান্তি খুঁজতে চান তখন সেই শিল্পীকে আমাদের সাধুবাদ জানাতেই হয়। ‘যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই’ স্লোগান শিশুরাও ছোট থেকে শুনে অভ্যস্ত। তাই যে কোনও শিল্পীর মতোই এটাও স্মৃতি লালার নিজস্ব ভাবনা— যা তিনি অন্যদের মধ্যেও সঞ্চারিত করতে পারবেন বলে মনে করেন। ২০০০ সালে এক নতুন ভাবনা নিয়ে শিল্পী স্মৃতি লালা পথ চলা শুরু করেন রাগ অনুরাগ মিউজিক রিসার্চ অ্যাকাডেমি নিয়ে। তিনি ও তাঁর সুযোগ্য দল সম্প্রতি জি ডি বিড়লা সভাঘরে উপস্থাপন করলেন গীতবাদ্যের সংমিশ্রণে তাঁরই রচিত ও পরিচালিত ‘পিস’ গীতিআলেখ্য। সমাজের প্রতি যে দায়বদ্ধতা আছে সেটাই প্রযোজনার মাধ্যমে বুঝিয়ে আসছেন। ‘পিস’-ও তার ব্যতিক্রম নয়। অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে সংবর্ধনা জানানো হয় ও শিল্পীর সদ্য প্রয়াত পিতার স্মরণে দু’মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সঙ্গীতের মাধ্যমে তিনি সারা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার শপথ গ্রহণ করেছেন বলেই শুরুতেই সমবেত কণ্ঠে সুরে সুরে বলেছেন ‘বন্ধুর গান গেয়ে তাই দেশটা বাঁচাও’ বা ‘দেশজুড়ে আজ হানাহানি পাপের বোঝায় বাড়ছে গ্লানি’ (সরগম ও ছন্দবিভাগ চমৎকার)। এই অনুষ্ঠানে খুব বেশি গান নেই, তবে সমবেত বৃন্দবাদন ও সমবেত কণ্ঠে সরগমের সাহায্যে যে বাতাবরণ তৈরি হয়েছে তা অনবদ্য। এ দিন শিল্পী তৈরি করেন অন্তরঙ্গ এক পরিবেশ। যেখানে শুধুই শান্তির আবহ। আরও একটা কথা না বললেই নয়, সমগ্র অনুষ্ঠানে যে ভাবে তালবৈচিত্র ও যন্ত্রবৈচিত্রকে ব্যবহার করা হয়েছে তার থেকেই পরিস্ফুট হয় স্মৃতি লালার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের যথার্থ শিক্ষার। শান্তি আরও একটি কারণে বিশিষ্ট হয়ে উঠেছে যে, পরিচালিকা সমাজের প্রতিটি স্তরের অশান্তি বা অপ্রাপ্তির প্রতি দৃষ্টিদান করে তার বিহিত করার চেষ্টা করেছেন। পিছনের পর্দায় বিষয়বস্তুর প্রতি সামঞ্জস্য রেখে যে চিত্রগুলি প্রদর্শিত হয়েছে সেগুলিও উল্লেখযোগ্য। প্রযোজনাটির বিভিন্ন অধ্যায়ে রাগের ব্যবহারও খুব আকর্ষণীয়, যেমন ‘বৃদ্ধাশ্রম’ পর্বে। বৃদ্ধাশ্রমের গল্প যে কতটা সত্যি তা সর্বজনবিদিত। শ্রীমতী লালা একক অংশে বেহালা ও সরোদে যে ভাবে কিরওয়ানি রাগের মূর্ছনায় বিষাদের সুরটি ভরিয়ে দেন তখন শ্রোতার অন্তরে গুমরে ওঠে কান্না। বিষয়বস্তুর মধ্যে আরও আছে শিশুশিক্ষা, স্বাধীনতার শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি, নারীত্বের অধিকার ও ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকারের প্রতি সওয়াল। সমাজ সে তো নির্মম হবে না, কারণ আকাশ এক বাতাস এক। তবুও কেন এত অশান্তি? সত্যিই কি এর থেকে মুক্তি নেই? এই প্রশ্নই তাঁর। বিলাবল, শ্যামকল্যাণ, গোরখকল্যাণ, আড়ানা সব কিছুর সংমিশ্রণে অধ্যায়গুলি যেন প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। শেষে বিবেকানন্দ ও গাঁধীর বার্তা এসেছে। অহিংসার প্রতিমূর্তি তো এঁরাই। শেষ রাগ কৌশিকধ্বনির বৃন্দবাদনের সঙ্গে শিল্পীদলের হাতের তুড়ির ব্যবহারে ছন্দ ব্যবহারটি অভিনব। সত্যিই যদি আমরা সমাজের সকল স্তরের অশান্তি, অপ্রাপ্তিকে সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে ভরে তুলে শান্তিতে পূর্ণ করতে পারি, তবে প্রতিটি ভোর হবে সুন্দর, স্নিগ্ধ ও অপাপবিদ্ধ।

অভিনয়ে মুনশিয়ানা

ছবি: অরুণাভ চক্রবর্তী

রাহুল সেনগুপ্তের পরিচালনায় ইন্দ্রাশিস লাহিড়ির ‘কন্টিনিউটি’ নাটকটি সম্প্রতি মঞ্চস্থ হল উত্তম মঞ্চে। নাটকের মূল চরিত্রে বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর অভিনয় এ নাটকের বড় সম্পদ। শুটিং চলাকালীন নাটকের ফ্রেমে হঠাৎ চলে আসে এক ব্যক্তি ও একটি গরু। শেষমেশ শুটিং-এর কন্টিনিউটির ঠেলায় নায়কের স্ত্রী যূথি এবং গরুর মৃত্যু অবধারিত হয়ে ওঠে। অভিনয়ে মুনশিয়ানা দেখালেন মুন্নি (মেঘলীনা দাস পুরকায়স্থ), যূথি (সরস্বতী ঘোষ দস্তিদার), বিজয়া (শমির্ষ্ঠা রায়)। বিশ্বজিৎ পরিচালকের চরিত্রে অনবদ্য। অন্যান্য ভূমিকায় বিশ্বরূপ, রঞ্জন, বিশ্বপ্রেম, বাসুদেব, অরুণাংশু,অরূপ, সন্দীপ, রাহুলও ভাল অভিনয় করলেন। আয়োজক ‘নামসা’।

অশ্রুত আগমনী

সঞ্চারী বন্দোপাধ্যায়

শাক্ত পদাবলীর এক অনন্য ধারা দুর্গাবন্দনা। যেখানে মা দুর্গাকে আমাদের অতি পরিচিত এক সাধারণ পরিবারের মেয়ে উমা হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। উমার বাপের বাড়ি আসা নিয়ে রচিত হয়েছে আগমনী,ফিরে যাওয়া নিয়ে বিজয়ার গান। শাস্ত্রীয়, উপশাস্ত্রীয় ও লোকায়ত বিভিন্ন ভাবে এই আগমনী গানের রচনা করা হয়েছে। খুবই প্রচলিত এই গানের সম্ভার নিয়ে ‘সল্টলেক সুরের ধারা’ আয়োজন করেছিল এই অনুষ্ঠানের। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ‘জাগো পুরবাসী’ সমবেত সঙ্গীত দিয়ে শুরু। গিরিশ ঘোষের ‘কবে যাবে বল গিরিরাজ’ নিবেদিতার কণ্ঠে অন্য মাত্রা পেয়েছে। সায়নের কণ্ঠে ‘অচল সচল হও আনিতে ঈশানজায়া’, প্রিয়াঙ্কার কণ্ঠে ‘এ বার আমার উমা এলে’ গানগুলি প্রশংসনীয়। এ ছাড়াও এ দিন শোনা গেছে বহু অশ্রুত আগমনী গান। সংস্থার কর্ণধার সায়ন সেনগুপ্তের এই প্রয়াস অভিনন্দন কুড়িয়েছে।

যে গানে বিদেশি সাদৃশ্য

রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু গানের সঙ্গে পাশ্চাত্য সঙ্গীতেরও একটা গভীর সম্পর্ক লক্ষ করা যায়। ‘বাল্মীকি প্রতিভা’, ‘কালমৃগয়া’ ও ‘মায়ার খেলা’ গীতিনাট্যের জন্য তিনি রচনা করেছিলেন এমন কিছু গান, যেগুলির সুরের সঙ্গে বিদেশি গানের সাদৃশ্য রয়েছে। মূল গানগুলো ছিল ইংরেজি, স্কটিশ ও আইরিশ ভাষায়। সম্প্রতি ‘রবীন্দ্রনাথ: সুরে সুরান্তরে’ অনুষ্ঠানে গান শোনালেন শান্তিনিকেতনের শিল্পী শিঞ্জিনী আচার্য মজুমদার। প্রথমেই তিনি পরিবেশন করলেন ‘কালী কালী বলো রে’, ‘পুরানো সেই দিনের কথা’, ‘ও দেখবি রে ভাই’ গানগুলি। ‘আলো আমার আলো’, ‘তোমার হল শুরু’-র ইংরাজি অনুবাদও শোনালেন শিঞ্জিনী। যা অনবদ্য।

গীতিকাব্যে নতুন বৌঠান

সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে ঈষিকার গীতিকাব্য ‘রবির নতুন বৌঠান’ বেশ নজর কেড়েছিল। কাদম্বরীর পাঠে ঈশিতা দাস অধিকারী প্রশংসা পাবেন। প্রকৃতির খেয়ালে, পূর্ণিমার চাঁদে আর সাগরের প্রাণে যেমন টান— বৌঠান আর রবিরও তেমনই এক অলক্ষ্য বাঁধনে সম্পর্কটি নিবিড় ভাবে বাঁধা ছিল। সেই সখ্যের কথা কখনও কবিতায়, কখনও ভাষ্যে তুলে ধরেছেন ঈশিতা। এষা মিত্রের কণ্ঠে ‘আমার প্রাণের পরে’, ‘হৃদয়ের একূল ওকূল’, শৈবাল চৌধুরীর কণ্ঠে ‘আমি তোমার সঙ্গে’ এবং সুহৃদ দাসের ‘মরণ মিলন’ গীতিকাব্যকে অতি মনোরম করে তুলেছিল।

ইমন, কেদার ও ভৈরবী রাগে

রবীন্দ্র সাহিত্য পরিষদ আয়োজিত ‘বিশ্ববন্দনায় রবীন্দ্রনাথ’ অনুষ্ঠানে প্রাধান্য পেয়েছিল ইমনকল্যাণ, কেদার ও ভৈরবী রাগাশ্রিত বিভিন্ন গান। ভাষ্যপাঠে ছিলেন রত্না মিত্র দে । গানে সুনন্দা ঘোষ। রত্নার পাঠের পর সুনন্দার ভৈরবী রাগে ‘বিশ্ব সাথে যোগে যেথায়’ গানটি দক্ষ গায়কিতে অনন্য হয়ে ওঠে। পরের গান ইমনকল্যাণ রাগে ‘মহাবিশ্বে মহাকাশে’ তেওড়া তালে অন্য মাত্রা এনে দেয়। শিল্পীর অন্যান্য গানের মধ্যে ছিল কেদার রাগে ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’, ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’ উল্লেখযোগ্য। সব শেষে শোনা গেল মহীশূরী ভজন এক তালে নিবদ্ধ ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ গানটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

barin mazumder sanchari bandyopadhyay nana
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE