Advertisement
E-Paper

হারিয়ে যায়নি যে নাট্যমেলা

নান্দীকার নাট্যমেলার বয়স তিন দশক হল। দুই দশকে আরও অনেক নাট্যমেলার জন্ম হয়েছে। কিন্তু নান্দীকার নাট্যমেলা সেই ভিড়ে হারিয়ে যায়নি। এ বারে অবশ্য একেবারে নতুন প্রযোজনা গতবারের চেয়ে কম। শুরুই হয়েছিল নান্দীকারে পুরোনো নাটক, ‘শানু রায়চৌধুরী’ দিয়ে (ইংরেজি মূল নাটক: উইলি রাসেল, বাংলা রূপায়ণ: রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত)। মধ্যবয়স্কা বিবাহিতা নারীর একঘেয়ে ক্লান্ত জীবনের কাহিনি, যা তিনি নিজেই শোনান রান্নাঘরের দেয়ালের সঙ্গে কথা বলে। স্বাতীলেখার প্রাণবন্ত একক অভিনয়ে সে কাহিনি নিছক গল্প থাকে না, পুরোদস্তুর নাটক হয়ে ওঠে শানু ও গল্পের অন্যান্য চরিত্রদের জীবন্ত মঞ্চ-উপস্থিতি সমেত।

তিন দশকেও অটুট রেখেছে নিজেদের ঐতিহ্য। নাটকগুলি দেখে এসে লিখছেন মনসিজ মজুমদার।

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৩:৪২

নান্দীকার নাট্যমেলার বয়স তিন দশক হল। দুই দশকে আরও অনেক নাট্যমেলার জন্ম হয়েছে। কিন্তু নান্দীকার নাট্যমেলা সেই ভিড়ে হারিয়ে যায়নি। এ বারে অবশ্য একেবারে নতুন প্রযোজনা গতবারের চেয়ে কম। শুরুই হয়েছিল নান্দীকারে পুরোনো নাটক, ‘শানু রায়চৌধুরী’ দিয়ে (ইংরেজি মূল নাটক: উইলি রাসেল, বাংলা রূপায়ণ: রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত)। মধ্যবয়স্কা বিবাহিতা নারীর একঘেয়ে ক্লান্ত জীবনের কাহিনি, যা তিনি নিজেই শোনান রান্নাঘরের দেয়ালের সঙ্গে কথা বলে। স্বাতীলেখার প্রাণবন্ত একক অভিনয়ে সে কাহিনি নিছক গল্প থাকে না, পুরোদস্তুর নাটক হয়ে ওঠে শানু ও গল্পের অন্যান্য চরিত্রদের জীবন্ত মঞ্চ-উপস্থিতি সমেত।
ওড়িশার প্রখ্যাত নাট্যকার সুবোধ পট্টনায়ক পরিচালিত ওড়িয়া নাটক, ‘সুয়া’র (মূল স্রোত) কাহিনি স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে ব্যাপক দুর্নীতির প্রকোপ নিয়ে। খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের রেশন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর দুর্নীতিগ্রস্ত রেশন ডিলার ও পুলিশের যোগসাজশে সাধারণ মানুষের দুর্দশা ও তাদের প্রতিরোধের সরল গল্পের সরল নাট্য-প্রযোজনা। পরিচালক প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছেন এমন নয়, কিন্তু স্বল্প পরিসর সেটের ভেতরে-বাইরে কুশীলবদের ক্ষিপ্র মঞ্চচারণা ও দেহদক্ষ অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করে।উৎসবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হিন্দি প্রযোজনা দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার ‘দাফা-২৯২’। প্রখ্যাত উর্দু লেখক মান্টোর ছোটগল্প ও জীবন নিয়ে রচিত তিনটি ছোট নাটিকা (পরিচালনা ও স্ক্রিপ্ট: অনুপম ত্রিবেদী), অতি সুষ্ঠু অভিনয় ও ন্যূনতম মঞ্চপ্রয়োগে অতি পরিচ্ছন্ন প্রযোজন্য। স্টেশনে প্রতীক্ষারত তিনটি গ্রামবালা, আপাত লাজুক ও স্বল্পবাক, কিন্তু কথা যখন বলতে শুরু করে, তাদের প্রগলভতায় তিতিবিরক্ত হয় সহযাত্রীরা, এমনই স্বচ্ছ কৌতুকের নাটক অসামান্য অভিনয়ে জমিয়ে দিয়েছেন তিন তরুণী অভিনেত্রী। অন্য নাটিকায় মান্টোর জীবনের প্রত্যক্ষ উল্লেখ আছে একটিতে ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের টানাপোড়েন আর অন্যটিতে আদালতে অশ্লীলতার অভিযোগে অভিযুক্ত মান্টোর পক্ষে-বিপক্ষে সাধারণ মানুষের মনে প্রতিক্রিয়ার চমৎকার নাট্যরূপ। এই যুক্তিতর্ক থেকে নাটকের উত্তরণ ঘটে মান্টোর অশ্লীলতার দৃষ্টান্ত হিসেবে যে গল্পাংশ অভিনীত হয় তার করুণ অভিঘাতে।
নান্দীকার নাট্যোৎসবে পুদুচেরির নাট্যদল, থালাই-কে-কোল, মঞ্চস্থ করেছিল তামিল নাটক ‘মন্তীরণ’ (রচনা ও পরিচালনা: ভি অরুমুঘম)। কাহিনি সূত্র পড়ে মনে হয়েছিল পুরাণ-কাহিনিকে আধুনিক দৃষ্টিতে বিচার করা এই প্রযোজনার প্রধান লক্ষ্য। হনুমান যে গন্ধমাদন পাহাড় উপড়ে নিয়ে এসেছিলেন তাতে পরিবেশ, পশুপাখি, গাছপালার ধ্বংস হয়েছিল কিন্তু পুরাণ সে ব্যাপারে নির্বাক। কিন্তু যা মঞ্চস্থ হল তাতে রাবণের শক্তিশেলে লক্ষ্মণ সমেত রামসেনার বিপর্যয়, বন্দিনি সীতার একঘেয়ে সুরেলা করুণ বিলাপ আর মঞ্চে শূন্যচারী সার্কাস ছাড়া আর কিছু ছিল না।
অসমের বা নাট্যদলের অহমীয়া ‘মেনকা’ (মূল রচনা উপন্যাস: হেমেন বোরগোহেন, নাট্যরূপ: পাকিজা বেগম ও জিমনি চৌধুরী, পরিচালনা: পাকিজা বেগম) এক জোরালো প্রতিবাদী প্রযোজনা। নিম্নবর্গের মানুষদের অস্পৃশ্য মনে করলেও উচ্চবর্গীয়েরা তাদের ব্যবহার করে, শোষণ করে। মেনকা নিপীড়িত নিম্নবর্গেরই এক নারী, সে তার কুমারী ননদকে গর্ভধারণের গ্লানি ও লাঞ্ছনা থেকে উদ্ধার করে দায়মুক্ত হতে চায়। মেনকার ভূমিকায় পাকিজা প্রায় একাই একশো। তার দাপুটে অভিনয়ে তেজী, প্রতিবাদী ও অসীম সাহসী মেনকা এক তীব্র ব্যক্তিত্ব অর্জন করে। প্রযোজনার সাফল্যের অন্যতম কৃতিত্ব অনুপ হাজরিকার আলো, সঙ্গীত ও প্রতীকী মঞ্চসজ্জা।
দিল্লির মণ্ডপ নাট্যগোষ্ঠীর হিন্দি নাটক ‘শায়ের শাটার ডাউন’-এর (রচনা ও পরিচালনা: ত্রিপুরারি শর্মা) বিষয় নাগরিক নিঃসঙ্গতা। বিষয় ক্লিশে হলেও শক্তিশালী অভিনেতা তিকম জোশীর একক অভিনয়ে এই নাটিকা খুবই জোরদার হতে পারত যদি স্ক্রিপ্ট দুর্বল না হত। রাজেশ সিংহের আলো ও মঞ্চসজ্জায় কোনও যত্নের অভাব ছিল না। সেই সন্ধ্যায় অসমের সীগাল মঞ্চস্থ করেছিল ইউজিন আয়োনেস্কোর নাটক ‘দ্য লেসন’ (অহমিয়া রূপান্তর: বাহারুল ইসলাম, পরিচালনা: ভাগীরথী)। আয়নেস্কোর থিয়েটার অব দি অ্যাবসার্ড-এর চরিত্র পুরো বজায় রেখে পরিচালক নাটকের রঙ্গরসের সঙ্গে তীক্ষ্ন ব্যঙ্গ ও শিক্ষার করুণ পরিণতিকে একটি নিটোল নাটকীয় অভিঘাতে সুসংবদ্ধ করেছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy