কিন্তু রাস্তা?
যে কোনও সঞ্চয়েরই গোড়ার কথা হল, আগে তার সম্পর্কে দু’টি বিষয় খুব স্পষ্ট ভাবে জানা—
(১) ওই টাকা কখন এবং কত সময়ের জন্য লাগবে।
(২) প্রয়োজনীয় টাকার অঙ্ক কত?
এ ক্ষেত্রে দু’টিই কিন্তু আগাম আঁচ করা বেশ শক্ত। কারণ, বৃদ্ধাবাসে কখন যাবেন, সেটি তা-ও আপনার হাতে আছে। কিন্তু সেখানে কত দিন থাকতে হবে, তা আঁচ করা অসম্ভব। সেই কারণে খুব ভেবেচিন্তে এর জন্য পরিকল্পনা করা জরুরি। আমাদের মতে, সুবিধের জন্য এই পরিকল্পনাকে দু’ভাগে ভেঙে নেওয়া ভাল:
• সিকিউরিটি ডিপোজিটের জোগান: বৃদ্ধাবাসে পা রাখতেই ৩ থেকে ২২ লক্ষ টাকা প্রয়োজন হচ্ছে আপনার। এবং তা লাগছে একসঙ্গে। অনেকটা ফ্ল্যাটের ডাউনপেমেন্টের মতো। সুতরাং শেষ জীবন এ ধরনের বৃদ্ধাবাসে কাটানোর পরিকল্পনা থাকলে, আগে সেই টাকা জোগাড়ের বন্দোবস্ত করুন।
যাঁরা ইতিমধ্যেই অবসর নিয়েছেন কিংবা তার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছেন, তাঁদের জন্য অল্প-অল্প করে টাকা জমানোর সুযোগ আর তেমন নেই। কিন্তু তা বলে সঞ্চয়ের যে-কোনও থোক টাকায় দুম করে হাত দেবেন না। বিশেষত ‘ম্যাচিওর’ করার আগে কোনও স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) বা মাসিক আয় প্রকল্পের (এমআইএস) টাকা ভাঙিয়ে না-দেওয়াই ভাল। একান্তই উপায় না-থাকলে আলাদা কথা। নইলে দেখুন, কাছাকাছি সময়ের মধ্যে কোন-কোন মোটা টাকা হাতে আসতে চলেছে। সেই অনুযায়ী নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাজান।
আর যদি বয়স কম হয়, তা হলে অনেক আগে থেকে হিসেব কষে ওই টাকা তুলে রাখতে পারেন আপনি। বিষয়টি এ ভাবে ভাবতে পারেন—
• প্রথমে দেখুন, আপনার জীবনযাত্রার মান যেমন, বা বেশি বয়সে আপনি যে ধরনের স্বাচ্ছন্দ্যে সময় কাটাতে চান, সেই পরিষেবা দেয় কোন-কোন বৃদ্ধাশ্রম। সেখানে সিকিউরিটি ডিপোজিটের অঙ্কই বা কত।
• ধরুন, আপনার বয়স এখন ৪৫ বছর। আপনি ৬৫ বছরে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে চান। আর যে-ধরনের জায়গায় যেতে চান, তাতে শুরুতেই এক লপ্তে লাগছে ১০ লক্ষ টাকা। সে ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির হার ৬-৮ শতাংশ ধরে দেখুন আজ থেকে ২০ বছর পরে তা কত টাকায় দাঁড়াবে। এ বার সেই অঙ্ক জোগাড়ের লক্ষ্যে কোনও দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্পে সঞ্চয় শুরু করুন। যেমন, নিয়মিত রেকারিং ডিপোজিটে টাকা ঢালতে পারেন। বা এসআইপি-র মাধ্যমে লগ্নি করতে পারেন মিউচুয়াল ফান্ডে। তবে খুব বিপদে না-পড়লে, মাঝখানে সেই টাকায় হাত দেবেন না। তাহলে থোক টাকা জমানো শক্ত হবে।
• প্রতি মাসের খরচ: এ বার আপনাকে দেখতে হবে, যে-বৃদ্ধাশ্রম আপনি বেছেছেন, সেখানে প্রতি মাসে খরচ কেমন পড়ে। যদি খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে, তাহলে দেখুন, কোনও টাকা মেয়াদি আমানত বা এমআইএসের মতো প্রকল্পে রেখে তার সুদ থেকে ওই মাসিক খরচ জোগাড় করতে পারেন কি না।
ঝুঁকতে পারেন সিনিয়র সিটিজেন স্কিমের দিকে। সেখানে সুদ তুলনায় কিছুটা বেশি পাবেন।
আর বয়স এখনও কম হলে, এর জন্যও গুছিয়ে টাকা জমানো শুরু করে দেওয়া ভাল। ঠিক যে-ভাবে সচ্ছল অবসরের জন্য পেনশন তহবিল তৈরি করেন আপনি। ফের সেই ৪৫ বছর বয়সের উদাহরণেই ফিরে যাই। এ ক্ষেত্রেও দেখতে হবে:
• আপনার পছন্দের বৃদ্ধাশ্রমে মাসিক খরচ কত।
• ২০ বছর পরে মূল্যস্ফীতির ধাক্কা সামলে তা কততে পৌঁছতে পারে।
• তখন সেই টাকা সুদ হিসেবে পেতে কত টাকার তহবিল গড়া প্রয়োজন। সেই অঙ্ক পেয়ে গেলে, তাকে পাখির চোখ করে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে লগ্নি করা শুরু করুন।
• সাধারণত বৃদ্ধাশ্রমগুলিতে এই মাসিক খরচের অঙ্ক ফি বছর কিছুটা করে (৫-১০ শতাংশ) বাড়ে। সেই বিষয়টিও মাথায় রাখতে ভুলবেন না।
আগে থেকে টাকা জমানোর উপর এত জোর দেওয়ার কারণ খুব সোজা। যাতে অবসরকালীন সুবিধা (পিএফ, গ্র্যাচুইটি ইত্যাদি) বাবদ পাওয়া থোক টাকা ভেঙে আপনাকে তা জোগাতে না হয়। বরং শেষ বয়স নির্ঝঞ্ঝাটে আর আরামে কাটানোর তহবিল আপনার অজান্তেই গড়ে ওঠে।
দিশা
সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।