Advertisement
E-Paper

কুবের উবাচ

শৈবাল বিশ্বাসচাকরি জীবনের প্রথম থেকেই এমন ভাবে লক্ষ্য স্থির করা উচিত, যাতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা পূরণ করতে সমস্যা না-হয়। অনেকেরই পৈতৃক সম্পদ বা হাতে লগ্নি-যোগ্য অর্থ থাকে ঠিকই, কিন্তু বিনিয়োগ করতে গিয়ে রাস্তা হারিয়ে ফেলেন। ঠিক সেটাই হয়েছে অম্বরের ক্ষেত্রে।

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৫ ০০:৫০

অম্বর (২৭) • স্ত্রী (২৮) • ছেলে (১.৫)

ডাক বিভাগের কর্মী • স্ত্রী গৃহবধূ • থাকেন মায়ের কাছ থেকে পাওয়া ফ্ল্যাটে
• বাবা, মা এবং ভাই থাকেন পৈতৃক বাড়িতে • সন্তানের জন্য একটি ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী
• বছরে এক বার ঘুরতে যেতে চান • ৫-৬ বছরে দ্বিতীয় সন্তানের পরিকল্পনা রয়েছে

চাকরি জীবনের প্রথম থেকেই এমন ভাবে লক্ষ্য স্থির করা উচিত, যাতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা পূরণ করতে সমস্যা না-হয়। অনেকেরই পৈতৃক সম্পদ বা হাতে লগ্নি-যোগ্য অর্থ থাকে ঠিকই, কিন্তু বিনিয়োগ করতে গিয়ে রাস্তা হারিয়ে ফেলেন। ঠিক সেটাই হয়েছে অম্বরের ক্ষেত্রে।

অম্বর মায়ের থেকে একটি ফ্ল্যাট পেয়েছেন। এর সঙ্গেই পাবেন পৈতৃক বাড়ির একটি অংশও। তিনি নিজের জন্য কিছু লক্ষ্যও স্থির করেছেন। এই পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। কিন্তু লক্ষ্যগুলি নিয়ে যে তিনি ভাবেননি, তা তাঁর চিঠিতেই স্পষ্ট। সন্তানের শিক্ষা এবং নিজের অবসর জীবনের জন্য সঞ্চয় নিয়ে তাঁর চিঠিতে কোনও উল্লেখই নেই। অথচ এখন সেটাই ভাবা সবচেয়ে জরুরি। আসুন দেখি কী ভাবে তাঁর ভুলগুলি ধরিয়ে দিয়ে লগ্নির রাস্তায় এগিয়ে দেওয়া যায়।

দ্বিতীয় ফ্ল্যাটের লক্ষ্যে

অনেক সময়েই আমরা শুধুমাত্র ভাল লগ্নি হচ্ছে ধরে নিয়ে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ফ্ল্যাট কেনার পথে পা বাড়াই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিনি। কিন্তু খরচের মধ্যে তার সুদটাকে ধরি না। একটু হিসাব দিলে ব্যাপারটা বুঝতে সুবিধা হবে—

ধরুন অম্বর ৬০ লক্ষ টাকার একটি ফ্ল্যাট কিনলেন। আমি ধরে নিচ্ছি ব্যাঙ্ক ৫০ লক্ষ ঋণ দিচ্ছে। অর্থাৎ প্রথমেই তাঁকে ডাউনপেমেন্টের ১০ লক্ষ টাকা জোগাড় করতে হবে। সুবিধার জন্য আমি ধরছি কম করে ১৫ বছরের জন্য ঋণ নেওয়া হচ্ছে এবং সুদ ১২%।

সে ক্ষেত্রে মাসিক কিস্তি দাঁড়াচ্ছে ৬০,০০৮ টাকা।

বছরে তা ৭,২০,০৯৬ টাকা।

১৫ বছরে তাঁকে মোট দিতে হচ্ছে প্রায় ১.০৮ কোটি টাকা।

ফলে ৬০ লক্ষের একটি ফ্ল্যাটের জন্য তাঁর মোট লগ্নি দাঁড়াচ্ছে ১.১৮ কোটি টাকা (ডাউনপেমেন্ট ধরে)।

অম্বর কি সত্যিই মনে করছেন ১৫ বছর পরে কোনও ফ্ল্যাটের দাম ওই পরিমাণ বাড়বে? আমার মনে হয় না। যদি তিনি ১.২০ কোটি বা ১.২৫ কোটি টাকায় ওই ফ্ল্যাট বিক্রিও করেন, তা হলেও তাঁর মুনাফা দাঁড়াবে মাত্র ২-৭ লক্ষ টাকা। কিন্তু ১৫ বছর ধরে ওই ফ্ল্যাটের রক্ষণাবেক্ষণ এবং করের পিছনে যে-পরিমাণ খরচ করতে হবে, তাতে তাঁর লাভ তো হবেই না, বরং লোকসান হতে পারে। অম্বরের মাথা গোঁজার চিন্তা নেই। ফলে সন্তানের জন্য ফ্ল্যাট কেনার কথা না-ভেবে বরং ওই টাকা লগ্নি করে তার উচ্চশিক্ষা এবং ভবিষ্যৎ তৈরির পথে পা বাড়ান।

জীবনবিমার সমস্যা

বিমাগুলির জন্য মাসে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টাকা খরচ করছেন অম্বর। কিন্তু বিমামূল্য মাত্র ২১.৫৫ লক্ষ টাকা।

সাধারণত সংসারের আর্থিক দায়িত্ব যাঁর কাঁধে থাকে, তাঁর জন্যই বিমা করা হয়। এ ক্ষেত্রে স্ত্রীর নামে বিমা করলেও, অম্বরের কিছু হলে সেই টাকা পাওয়া যাবে না।

বিমা প্রকল্পে যে-বোনাস দেওয়া হয়, তার অঙ্ক মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় কম। মানি ব্যাক পলিসিগুলির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় অন্তর টাকা মেলে বলে, সব শেষে পাওয়া রিটার্ন অন্যান্য পলিসির থেকে কম। ফলে ভবিষ্যতে সেই টাকা কোনও কাজে আসে না।

অম্বরের সব পলিসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে তাঁর ৫৮ বছর বয়সের মধ্যে। অথচ এই সময়টাতেই তাঁর পলিসির প্রয়োজন ছিল সবচেয়ে বেশি।

বেশির ভাগ টাকাই বিমা পলিসিতে আটকে থাকায় অন্যান্য ক্ষেত্রে অম্বর লগ্নি ছড়িয়ে দিতে পারেননি।

এই সব কারণে আমি বলব বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে কিছু পলিসি বন্ধ করে অন্য খাতে টাকা রাখা শুরু করুন এবং অবশ্যই বড় অঙ্কের টার্ম পলিসি করুন।

অবসরের চিন্তা

অম্বরের অবসর নিয়ে চিন্তা নেই ঠিকই, কিন্তু তাঁর প্রোফাইল পড়ে আমার এই বিষয়টিতেই বেশি জোর দেওয়া উচিত বলে মনে হয়েছে। আপনার দু’টি ফ্ল্যাটের মধ্যে থেকে কোনও একটিকে বেছে নিন ও তার থেকে টাকা পাওয়া যায় কি না দেখুন। সে জন্য আপনার সামনে তিনটি পথ খোলা রয়েছে—

পৈতৃক বাড়ির অংশ বিক্রি করে, সেই টাকা নিয়মিত আয়ের প্রকল্পে লগ্নি করতে থাকুন।

পৈতৃক বাড়িতে ফিরে গিয়ে বর্তমান ফ্ল্যাটটি বিক্রি করুন। সেই টাকা বিনিয়োগ করুন।

কোনও একটি ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে, সেই টাকা লগ্নি করে অবসরের তহবিল গড়ে তুলুন।

অন্যান্য

পিপিএফে লগ্নি বাড়ান। লগ্নি ও রিটার্ন করমুক্ত হওয়ার পাশাপাশি পিপিএফ কিন্তু জীবনবিমার থেকে অনেক ভাল রিটার্ন দেয়।

অম্বরের লগ্নির পুরোটাই করা হয়েছে ঋণপত্র নির্ভর প্রকল্পে। তাঁর বয়সের কথা ভেবে বলব শেয়ার ভিত্তিক প্রকল্পগুলিতে এ বার বিনিয়োগ শুরু করা উচিত। এসআইপি পদ্ধতিতে এখন থেকেই অল্প অল্প করে মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রাখুন, যা মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করবে।

নিজের, স্ত্রী ও সন্তানের জন্য কমপক্ষে ৩ লক্ষ টাকার ফ্যামিলি ফ্লোটার স্বাস্থ্যবিমা কিনতে হবে।

বেড়াতে যাওয়া বা স্কুটার কেনার জন্য এই মুহূর্তে তাঁর হাতে টাকা নেই। তবে সুযোগ পেলেই এসআইপি বা রেকারিং-এর সাহায্যে তাঁকে তহবিল গড়ে তুলতে হবে।

অম্বরের ৩ লক্ষ টাকা মূল্যের সোনা রয়েছে। এই সোনা যদি গয়না হিসেবে থাকে, তা হলে তাঁর খুব একটা লাভ হবে না। কারণ সোনার দাম বাড়লেও, গয়না ভাঙিয়ে টাকা জোগাড় করতে গেলে কিছুটা লোকসান হবে তাঁর। তবে তা যদি এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড বা ইটিএফ হিসেবে থাকে, তা হলে অনেকটাই সুবিধা হবে।

আগামী ৫-৬ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তানের পরিকল্পনা করছেন অম্বর। যা খুবই ভাল কথা। কিন্তু আগে থেকে সে জন্যও তাঁকে আর্থিক সংস্থানের পরিকল্পনা করে নিতে হবে।

অম্বরকে কোনও ভাবেই নিরাশ করা আমার লক্ষ্য নয়। কিন্তু পরিকল্পনা করে না-এগোলে ভবিষ্যতে তাঁকে সমস্যায় পড়তে হতে পারে।

(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত)

kuber ubacho financial suggestion abp bishoy asoy shaibal biswas kuber ubacho latest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy