Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Presents

কুবের উবাচ

বয়স অল্প। বেতন ভাল। চাকরি জীবনের শুরুতে ঋণ নিয়ে দামি ফ্ল্যাট কিনেছেন। অথচ তেমন সঞ্চয় নেই। ঘাটতি বিমাতেও। এ রকম মানুষ চার পাশে অনেক। অরিজিৎ সেই গোত্রেরই।

শৈবাল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:০৭
Share: Save:

অরিজিৎ (৩০) • স্ত্রী (২৬) • মেয়ে (১.৫) • বাবা (৬২) • মা (৫৬)

বেসরকারি সংস্থার কর্মী • চাকরি সূত্রে ভিন্‌ রাজ্যে • কলকাতায় ফ্ল্যাট
• সন্তানের উচ্চশিক্ষা ও বিয়ের তহবিল গড়তে আগ্রহী • ইচ্ছে পঞ্চাশে অবসর
• চান বছরে অন্তত এক বার বেড়াতে যেতে নিট আয় (মাসে) ৮৫,০০০ (বেতন ও ভাতা)

বয়স অল্প। বেতন ভাল। চাকরি জীবনের শুরুতে ঋণ নিয়ে দামি ফ্ল্যাট কিনেছেন। অথচ তেমন সঞ্চয় নেই। ঘাটতি বিমাতেও। এ রকম মানুষ চার পাশে অনেক। অরিজিৎ সেই গোত্রেরই।

ছ’মাস হল ভিন্‌ রাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন। সঙ্গে স্ত্রী ও মেয়ে। কলকাতায় ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে কিনেছেন ফ্ল্যাট। জেলা -শহরে থাকা বাবা-মায়ের জন্য ৩.৩০ লক্ষ টাকার ঋণে কিনেছেন গাড়ি। কিন্তু ফ্ল্যাট ছাড়া তেমন সম্পদ নেই। নেই নিজস্ব স্বাস্থ্যবিমা। জীবনবিমা নামমাত্র। অর্থাৎ ভবিষ্যতে তাঁর কিছু হলে পরিবার কোথায় দাঁড়াবে, তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা দেখা যাচ্ছে না।

জীবনবিমার সমস্যা

অরিজিৎ টার্ম পলিসি পছন্দ করেন না। তাঁর হয়তো মনে হয়, যে-লগ্নিতে রিটার্ন নেই, সেখানে কেন পুঁজি ঢালব? কিন্তু কেন টার্ম পলিসি করা উচিত, সেটা অরিজিতের প্রোফাইল বিচার করে দেখে নেব।

অরিজিতের বেতন ৮৫ হাজার। আর লগ্নি, ঋণ ও সংসার খরচ মিলিয়ে লাগে ৬৫-৭০ হাজার। কিন্তু হঠাৎ তাঁর কিছু হলে সংসার চলবে কী ভাবে? বাড়ি ও গাড়ি ঋণ শুধবে কে? মেয়ের পড়াশোনা এবং বিয়ের টাকা কোথা থেকে আসবে? এই সব কথা ভাবলে বিমা ২.৫ লক্ষ টাকার হত না।

ফ্ল্যাটের বাজার দর দেখে তাঁর সম্পদ ভাল মনে হচ্ছে। আসলে তা সাড়ে ২৩ লক্ষ। কারণ ঋণের ২৫ লক্ষ টাকা বাদ যাবে। রয়েছে ৩.৩০ লক্ষের গাড়ি ঋণও। ফলে বাড়ি বেচে ও অন্য সব সঞ্চয় থেকে মোট ২০ লক্ষ কোনও সুরক্ষিত প্রকল্পে রেখে যা আয় হবে, তা দিয়েই তাঁর স্ত্রীকে সংসার চালাতে হবে। যা যথেষ্ট নয়।

তাই পছন্দ না-হলেও অরিজিতের উচিত অন্তত ৩০ বছরের জন্য ৫০ লক্ষ টাকার টার্ম পলিসি কেনা। প্রিমিয়াম পড়বে বছরে ৬,৬০০ টাকা। যাতে তাঁর অবর্তমানে সংসার চালানো, মেয়ের উচ্চশিক্ষা, বিয়ে ইত্যাদি টাকার অভাবে আটকে না-যায়।

স্বাস্থ্যবিমা

অরিজিৎ অফিস থেকে নিজের, স্ত্রীর ও মেয়ের জন্য ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমা পান। বাবা-মায়ের জন্য অফিস থেকেই তিন লক্ষ টাকার বিমা করিয়েছেন। বছরে প্রিমিয়াম ২৪ হাজার। কিন্তু অরিজিৎ এর অসুবিধার দিকগুলি ভেবে দেখেননি। যেমন—

৫০ হলেই অবসর নিতে চান । তখন ওই বিমার সুবিধা পাবেন?

বাবা-মায়ের বয়স হচ্ছে। ৩ লক্ষ টাকার বিমাতে কি কাজ হবে?

আগামী দিনে আরও ভাল সুযোগ এলে চাকরি বদলাবেন। সেখানে তিনি এই অঙ্কের বিমা পাবেন তো? বাবা-মায়ের বিমারই বা কী হবে?

তাই আমার পরামর্শ, স্ত্রী, মেয়ে-সহ নিজের জন্য অন্তত ৫ লক্ষ টাকার ফ্যামিলি ফ্লোটার বিমা করান। আগামী দিনে যা আরও বাড়াতে হবে। বাবা-মায়ের বিমা নিয়ে অফিসে কথা বলুন। দেখুন চাকরি ছাড়লেও সেই সুবিধা মিলবে কি না।

গাড়ি ও গৃহঋণ মেটানো

অরিজিৎ মেয়াদের আগে ঋণ চুকিয়ে দিতে চান। এটা ভাল কথা। এখন গাড়ি-বাড়ি ঋণ মিলিয়ে ২৮ হাজার টাকারও বেশি মাসিক কিস্তি শোধেন তিনি। তার পর সংসার খরচ চালিয়ে সঞ্চয় যা হয়, সেটা খুব বেশি নয়। ফলে আগে জীবনবিমার দিকটি সুরক্ষিত করুন। তার পরের কাজই হবে ঋণ শোধের পথে হাঁটা।

প্রথমে ভাবুন গাড়ি ঋণের কথা। কারণ, বাড়ি বা ফ্ল্যাটের দাম ভবিষ্যতে বাড়তে পারে, গাড়ির কমবে। হাতে থাকা নগদ ৫ লক্ষ দিয়ে ঋণ মেটান।

গাড়ি ঋণ শোধ করার পরে মাসে যে কিস্তির টাকা বাঁচবে, তা ভাল ফান্ডে এসআইপি করুন, কমপক্ষে ৫ বছরের মেয়াদে। তার পর সেই টাকা থোক দিয়ে কিছুটা করে ঋণ শোধ করতে থাকুন। সঙ্গে কিস্তি তো চলবেই। এ ভাবে প্রতি ৫ বছরে কিছুটা করে দিয়ে মেয়াদের আগেই ঋণ মেটানো যাবে।

অরিজিৎ মূলত লগ্নির জন্যই ফ্ল্যাট কিনেছেন। সেখান থেকে মাসে ৮ হাজার টাকা ভাড়া পাওয়ার আশা। সেটা দিয়েও এসআইপি করা যায়। গড়ে ওঠা তহবিলে গৃহঋণ মেটান।

মেয়ের শিক্ষা ও বিয়ের সঞ্চয়

মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য সুকন্যা সমৃদ্ধি প্রকল্পে লগ্নি করেছেন অরিজিৎ। কিন্তু পড়াশোনা, বিয়ে— এই দুইয়ের জন্য তা যথেষ্ট নয়। মেয়ের উচ্চশিক্ষার জন্য তাঁর হাতে আর সাড়ে ১৬ বছর। সে জন্য এই প্রকল্পে মাসে ২,০০০ টাকা রাখার যে পরিকল্পনা করেছেন, তা কার্যকর করুন। সঙ্গে ভাল দেখে ডাইভার্সিফায়েড ফান্ডে মাসে ৫,০০০ টাকা করে লগ্নি শুরু করুন। এ ভাবে ১৬ বছরে প্রায় ৩০ লক্ষ জমবে (১২% রিটার্ন ধরে)। উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যপূরণের পরেও যা চালাতে হবে বিয়ের জন্য।

৫০ বছরে অবসর

সংসার ও লগ্নি চালাতে ৫০ হাজার টাকা লাগে। অবসরের সময়ে (২০ বছর পর) তা পৌঁছবে মাসে প্রায় ১.৬০ লক্ষ টাকায় (৬% মূল্যবৃদ্ধি ধরে)। বছরে ১৯.২০ লক্ষ। ৬% সুদের কোনও সুরক্ষিত প্রকল্পে টাকা রেখেই ওই ১৯.২০ লক্ষ টাকা বছরে পেতে হলে, তহবিল হতে হবে ৩.২০ কোটি। আছে মেয়ের বিয়ে, শিক্ষা ও নিজেদের চিকিৎসা-খরচও। আমার মতে—

পিপিএফে ৫ হাজার করে রাখুন। লগ্নি করুন ভলান্টারি পিএফেও।

ইকুইটি ফান্ডে এসআইপি বাড়ান। অন্তত আরও ৫,০০০ মাসে রাখুন।

ঋণ শোধের পর কিস্তির টাকা ফান্ড, রেকারিং ইত্যাদি প্রকল্পে ছড়িয়ে দিন।

খরচ (মাসে) বাড়ি ভাড়া ১০,৫০০ • সংসার ২০,০০০ • বাবা-মায়ের স্বাস্থ্যবিমা ২,০০০
• গাড়ি ঋণের কিস্তি ৫,৬০০ • সঞ্চয় (মাসে) গৃহঋণের কিস্তি ২২,৫০০ • পিএফ ৬,৪০০
• জীবনবিমা (অরিজিৎ) ১,০০০ (বিমামূল্য ২.৫ লক্ষ) • জীবনবিমা (মেয়ের) ৭৫০ (বিমামূল্য ২.৫ লক্ষ) • ইএলএসএস ৫০০ • মিউচুয়াল ফান্ড এসআইপি ২,৫০০ সম্পদ পিপিএফ ৫০,০০০ • এনএসসি ১০,০০০ • পিএফ ২,০০,০০০ •
সুকন্যা সমৃদ্ধি ১০,০০০ • নগদ ৫,০০,০০০
• ফ্ল্যাট ৩৮,০০,০০০

হাতে টাকা এলে করমুক্ত বন্ড কিনুন।

স্থায়ী আমানত, লিকুইড ফান্ড বা সেভিংস অ্যাকাউন্টে দু’তিন মাসের বেতন জমা রাখুন।

প্রতি বছর লগ্নি পরিকল্পনা খতিয়ে দেখতে ভুলবেন না।

পঞ্চাশে অবসর নিতেই হবে, এমন ভেবে নেবেন না। ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করে তবেই তা করুন।

বেড়াতে যাওয়া

অরিজিৎ প্রতি বছর মোটা অঙ্ক খরচ করে বেড়াতে যান। কিন্তু সঞ্চয়ের স্বার্থে বেড়ানোর খরচ ছাঁটতে হবে। লিকুইড ফান্ড কিনুন বা রেকারিং ডিপোজিটে টাকা জমান। তাতে বেড়ানো একেবারে মন্দ হবে না।

অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত (মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE