Advertisement
১৬ মে ২০২৪
Presents

কুবের উবাচ

পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীদের সঞ্চয়ের দিশা দেখাচ্ছেন শৈবাল বিশ্বাস।

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৪৩
Share: Save:

সুনীল (৩৬) • স্ত্রী (২৭) • মা (৫৯) • বাবা (৬৭)

স্বাধীন পেশায় যুক্ত • পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী • নিজেদের বাড়ি • বিয়ে হয়েছে দু’বছর
• এখনও সন্তান নেই • বছরে এক বার ঘুরতে চান • ইচ্ছে, গাড়ি কেনা • লক্ষ্য, সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

শৈবাল বিশ্বাস

সুনীল তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি। দু’বছর হল বিয়ে হয়েছে। এখনও সন্তান নেই। পরিবারের সব দায়িত্বই অবশ্য তাঁর কাঁধে। বাড়িতে বসেই কম্পিউটারে মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশনের কাজ করেন তিনি। স্ত্রীও চাকরির সন্ধান করছেন। নিজের জন্য এখনই লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে রেখেছেন তিনি। সে সব নিয়েই তাঁর বিভিন্ন প্রশ্ন রয়েছে, যা আজ বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব।

সংসার খরচ চালিয়ে, সব ধরনের লগ্নি করার পর সুনীলের হাতে প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা থাকে। যা হয়তো তাঁর সমস্ত লক্ষ্যপূরণের কাজে আসবে না। সে কারণে আমার প্রথম পরামর্শ, আপনি সবচেয়ে আগে নিজের আয় বাড়ানোর চেষ্টা করুন। আপনার স্ত্রী চাকরির সন্ধান করছেন, তা পেলে সুরাহা হবে। কিন্তু তার পরও আপনি নিজে আয় বাড়ানো সম্ভব কি না, তার খোঁজ করে দেখুন। কারণ—

• এখনও সন্তান নেই। কিন্তু সন্তান হলে তার জন্য খরচ বাড়বে। পাশাপাশি, সন্তান জন্মানোর সময়ও আপনার থোক টাকার প্রয়োজন হবে।

• মূল্যবৃদ্ধির কথা মাথায় রাখতে হবে। এই আয়ে আর কয়েক বছর পর পাঁচ জনের সংসার চালানো কঠিন হবে।

• বাবা-মায়ের বয়স হয়েছে। তাঁদের চিকিৎসা বিমা করাতে হবে।

• আপনার ও স্ত্রীয়েরও ফ্যামিলি ফ্লোটার স্বাস্থ্য বিমা করতে হবে।

এ বার আসব সুনীলের বিভিন্ন লক্ষ্যে। দেখব তার কোনটা পূরণ করা সম্ভব, আর কোনটা নয়।

সঞ্চয়ের ধারণা

সুনীল সঠিক সঞ্চয়ের উপায় জানতে চেয়েছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গে আমাদের সব পাঠককে একটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, ‘সঠিক সঞ্চয়ের উপায়’ বলে কিছু হয় না। প্রত্যেক মানুষের সামাজিক অবস্থান, দায়-দায়িত্ব অন্য জনের থেকে আলাদা। ফলে একই আয়ের দুই ব্যক্তির লগ্নির পরিকল্পনাও সেই অনুসারে আলাদা হয়ে যায়। এই পরিকল্পনা মূলত নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের উপর

• যাঁর আর্থিক পরিকল্পনা করা হচ্ছে তিনি কোথায় থাকেন (গ্রামে না শহরে), আয় কত, সংসারের দায়িত্ব নিতে হয় কি না, পরিবারের সদস্য কত, ভবিষ্যতের স্বপ্ন কী ইত্যাদি।

• ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা।

• কত দিন লগ্নি চালাতে পারবেন।

• কত টাকা লগ্নি করতে পারবেন।

সুনীলকেও লগ্নির পরিকল্পনা করার সময় এই সব দিক বিচার করতে হবে। আমরা আজ তাঁকে সেই রাস্তায় কিছুটা এগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।

এসআইপি-তে লগ্নি

সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (এসআইপি) সম্পর্কে তাঁর ধারণা নেই বলে চিঠিতে জানিয়েছেন সুনীল। এক কথায় এটি হল প্রতি মাসে নির্দিষ্ট মাসিক কিস্তিতে সঞ্চয়। তা ইকুইটি-নির্ভর ফান্ডে হতে পারে কিংবা ঋণপত্রে। সুনীলের সব সঞ্চয়ই রয়েছে ঋণপত্র নির্ভর কোনও না কোনও প্রকল্পে। কিন্তু যা বয়স, তাতে এখনই তাঁর ইকুইটি নির্ভর প্রকল্পে টাকা রাখার আদর্শ সময়। আর মনে রাখতে হবে, এসআইপি করা যায় ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডেও।

এ বার সুনীলের লক্ষ্যগুলি নিয়ে আলোচনা করব।

লক্ষ্য ১: আগে থেকে সঞ্চয়

সুনীলের এখনও সন্তান নেই। কিন্তু আগেভাগেই তার জন্য সঞ্চয় করতে চান তিনি। এ জন্য এখন থেকেই কোনও ডাইভার্সিফায়েড ইক্যুইটি ফান্ডে প্রতি মাসে ২,০০০ টাকা করে এসআইপি করুন। টানা ১৮-১৯ বছর লগ্নির মানসিকতা নিয়েই এই খাতে টাকা রাখতে হবে।

লক্ষ্য ২: প্রতি বছর বেড়ানোর ইচ্ছে

আমার মতে, আপাতত সুনীলের যা আয় এবং সংসার খরচ, তাতে প্রতি বছর ঘুরতে যেতে পারবেন না তিনি। যে কারণে আমি বলব, এখন তাঁর লক্ষ্য হওয়া উচিত দু’বছরে অন্তত এক বার দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া। এ জন্য প্রতি মাসে ১ হাজার টাকার একটি রেকারিং করুন।

লক্ষ্য ৩: গাড়ি কেনা

সুনীল গাড়ি কিনতে চান, তবে তার জন্য কিছু দিন অপেক্ষা করতে রাজি। আমি বলব, আপাতত কয়েক বছর গাড়ি কেনার কথা মাথায় না আনতে। এর চেয়েও জরুরি অনেক দায়িত্ব তাঁকে পালন করতে হবে। ফলে সেই দিকে নজর দিলেই ভাল করবেন তিনি।

লক্ষ্য ৪: সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা

সুনীল যে ইচ্ছের কথা আমাদের লিখে পাঠিয়েছেন, তার মধ্যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি কাজ হল সেভিংস অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা রাখা। কারণ, হঠাৎ কোনও প্রয়োজন পড়লে তিনি সামলাতে পারবেন না। ফলে আমার পরামর্শ—

• আপনি এখনই মাসে ১,৫০০ টাকার একটি রেকারিং শুরু করুন। যত দিন না ওই ৫০ হাজার টাকা জমছে, তত দিন তা চালিয়ে যান। টাকা জমলে, তা সেভিংস অ্যাকাউন্টে রেখে দিন।

• আপনার যে স্থায়ী আমানত রয়েছে, সেই অ্যাকাউন্ট সেভিংস অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত করে (ওভার ড্রাফট) রাখুন। এর ফলে হঠাৎ টাকার প্রয়োজন পড়লে, সেখান থেকে নিতে পারবেন।

লক্ষ্য ৫: বিমার হাল-হকিকৎ

• সুনীলের জীবনবিমার অঙ্ক খুবই কম। ফলে তাঁকে বিমায় লগ্নির পরিকল্পনা বদলাতে হবে। এ জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন। দেখুন কোন প্রকল্প রাখবেন, আর কোনটা বন্ধ করবেন। কত বছরের বা কত টাকার টার্ম পলিসি করলে ভাল হয়, সে বিষয়ে খোঁজ নিন বিশেষজ্ঞের কাছেই।

• অনেক মানুষই জীবনবিমায় মানি ব্যাক পলিসি পছন্দ করেন। কিন্তু এতে নির্দিষ্ট মেয়াদে টাকা পাওয়া যায় বলে, শেষ পর্যন্ত যে অঙ্ক হাতে আসে, তা কখনওই মূল্যবৃদ্ধিকে ছাপিয়ে যেতে পারে না। ফলে আপনার মানি ব্যাকের আর কত বছর বাকি রয়েছে, তা দেখে সেটি বন্ধ করবেন কি না ভাবুন।

• বাবা-মা এবং আপনাদের নিজেদের জন্য স্বাস্থ্য বিমার কথা ভুললে চলবে না। আগামী দিনে আপনার আয় বাড়লে কমপক্ষে ৩ লক্ষ টাকার বিমা করার কথা ভাবুন।

অবসরের সঞ্চয়

সুনীলের হাতে এই মুহূর্তে অবসর জীবনের লক্ষ্যে সঞ্চয় করার মতো অর্থ নেই। কিছু লগ্নি তিনি এখন করছেন, তার বাইরে আরও কিছু প্রকল্পে লগ্নির পরামর্শ দিয়ে রাখার চেষ্টা করব।

• আয় বাড়লে ডাইভার্সিফায়েড ইক্যুইটি ফান্ডে এসআইপি আরও বাড়ানোর চেষ্টা করুন।

• তিন বছর ধরে সুনীল নিয়মিত যে এনএসসি করছেন, তা চালিয়ে যান।

• পিপিএফে লগ্নি বাড়াতে চেষ্টা করুন।

• ইনফ্লেশন ইনডেক্সড বন্ড কেনার কথা ভাবুন।

প্রথমে যে কথাটা বলে লেখা শুরু করেছিলাম, তা ফের এক বার মনে করিয়ে দিয়েই লেখা শেষ করতে চাই। যে পরিকল্পনাই আপনি করুন না কেন, তার জন্য আগে আয় বাড়াতে হবে। আপনার স্ত্রী চাকরি পেলে সেই সমস্যার কিছুটা সুরাহা হবে। তখন আরও ভাল ভাবে সঞ্চয় করতে পারবেন।

(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত)

বিষয় সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শের জন্য লিখুন।
নিজের ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না

‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ,

আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা, পিন-৭০০০০১.

ই-মেল: bishoy@abp.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE