বিবেক (২৮) • মা (৫৬)
বেসরকারি সংস্থার কর্মী • এখনও বিয়ে করেননি • নিজেদের বাড়ি
• লক্ষ্য, বাড়ি সারানো ও বিয়ের জন্য সঞ্চয় • জানতে চান শেয়ারে লগ্নি নিয়ে
প্রায় মাস দুয়েক ধরে শেয়ার বাজারের দৌড় দেখছি আমরা। একের পর এক রেকর্ড গড়ছে সেনসেক্স। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, এই চড়া বাজারে কী করা উচিত? আজ যাঁর প্রোফাইল আলোচনা করব, সেই বিবেকও জানতে চেয়েছেন বাজারে টাকা ঢালা সম্পর্কে। এই লেখার শেষের দিকে এ নিয়ে বিশদে আলোচনা করব। তবে আমার মতে, যতটা ঝুঁকি নিতে আপনি স্বচ্ছন্দ এবং ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা যতখানি— সেই দুই দিক বিচার করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
বিবেকের কিছু স্বপ্ন রয়েছে। আছে নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য। তাঁর বয়স কম। তাই স্বপ্ন বা লক্ষ্যপূরণের জন্য হাতে সময়ও আছে অনেকখানি। তা ছাড়া, বিবেক মায়ের সঙ্গে থাকেন। আপাতত বাড়ি তৈরির কথা ভাবতে হচ্ছে না। তবে তাঁকে তা সারানোর কাজে হাত দিতে হবে। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে চললে লক্ষ্যপূরণ হবে, আসুন দেখি—
লক্ষ্য ১: বিয়ের টাকা জোগাড়
দু’তিন বছরের মধ্যে বিয়ে করার ইচ্ছে বিবেকের। সে জন্য এখন থেকেই সঞ্চয় করতে হবে। এখন তাঁর হাতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা থাকে। আগামী ৩ বছর কোনও ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডে এসআইপি করুন। প্রতি মাসে রাখুন ১,৫০০ টাকা করে। এ ভাবে প্রায় ৬২ হাজার টাকা জমবে (৮% রিটার্ন ধরে)। বিয়ের পুরো খরচ এতে মিটবে না। সে ক্ষেত্রে অন্য যে এসআইপি রয়েছে, সেখান থেকেও টাকা নিতে পারবেন।
লক্ষ্য ২: জীবনবিমা
বিবেক ও তাঁর মায়ের জীবনবিমা নেই। পরিবারের মূল উপার্জনকারীর নামে জীবনবিমা অবশ্যই থাকা উচিত। আমি বিবেককে বলব টার্ম পলিসি করতে। তাঁর বর্তমান বেতন ১৬ হাজার টাকা। কিন্তু বিপদ-আপদের জন্য সেভিংস অ্যাকাউন্টেও কিছু রাখা দরকার। সে কথা মাথায় রেখে আমি বিমার অঙ্ক হিসাব করছি সাড়ে ১৫ হাজার টাকা ধরে। এ বার ৮% সুদযুক্ত সুরক্ষিত প্রকল্পে রেখে প্রতি মাসে ওই সাড়ে ১৫ হাজার টাকা পেতে বিমা মূল্য কত হতে হবে, তা-ই হিসাব করব আমরা—
টার্ম পলিসির মেয়াদ: ৩০ বছর
মাসে বেতন: ১৫,৫০০ টাকা
বছরে বেতন: ১.৮৬ লক্ষ টাকা
বিমা মূল্য: ২৩.২৫ লক্ষ টাকা
বছরে প্রিমিয়াম: ৬,০৩৫ টাকা
মাসে প্রিমিয়াম: ৫০৩ টাকা
লক্ষ্য ৩: ফান্ডে লগ্নি
দু’টি এসআইপি-র মাধ্যমে ইতিমধ্যেই মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি শুরু করেছেন বিবেক। একটি ডাইভার্সিফায়েড লার্জ ক্যাপ ইক্যুইটটি ফান্ড। অন্যটি গোল্ড ইটিএফ ফান্ড। আমার পরামর্শ—
• প্রথম ফান্ডটি চালিয়ে যান। তবে গোল্ড ফান্ড নিয়ে ভেবে দেখতে পারেন। কয়েক মাস ধরেই গোল্ড ফান্ড প্রত্যাশা মাফিক ফল দিতে পারছে না। দীর্ঘ মেয়াদে তার রিটার্নও ইকুইটির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে ওই ইটিএফে নতুন লগ্নি করা থেকে বিরত থাকতে পারেন। কিন্তু সেটিতে যে টাকা আছে, তা তুলবেন না। পরে সোনার দাম বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে, ফের সেখানে টাকা ঢালতে পারবেন। এখন বরং কোনও মিড ক্যাপ ফান্ডে টাকা রাখুন।
• এর বাইরেও ইন্ডেক্স ফান্ডে মাসে হাজার টাকার এসআইপি করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ভুলের সম্ভাবনা কম থাকে।
• এসআইপি নিয়ে আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন বিবেক। তাঁকে আশ্বস্ত করে বলতে পারি, ফান্ডে এককালীন লগ্নির তুলনায় এসআইপি-তে ঝুঁকি অনেকটাই কম। তবে সে জন্য অবশ্যই কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতে হবে। যেমন—
• দীর্ঘ দিন ধরে নিয়মিত লগ্নি
• ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা বুঝে টাকা ঢালা
• ফান্ড বাছাইয়ের জন্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলা ইত্যাদি।
লক্ষ্য ৪: ঋণ শোধ
সম্প্রতি মোটরসাইকেল কিনেছেন বিবেক। সে জন্য অফিস থেকে ৯০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। মাসিক কিস্তি ২,১৭৫ টাকা। চেষ্টা করুন, দ্রুত ওই ধার শোধ করার। তা হলে, সেই টাকা অন্য কাজে লাগাতে পারবেন।
লক্ষ্য ৫: শেয়ারে লগ্নি
বিবেক সরাসরি শেয়ার কিনতে আগ্রহী। তাঁর যা বয়স, তাতে এখনই শেয়ার কেনার উপযুক্ত সময়। এখন ইকুইটিতে বেশি লগ্নি করে, পরে তা ধাপে ধাপে কমিয়ে আনাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কিন্তু বিবেককে এর জন্য কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ—
• বিবেকের সামনে এখন যে সব লক্ষ্য রয়েছে, তার কয়েকটি (বিয়ে, জীবনবিমা ইত্যাদি) পূরণ না-হওয়া পর্যন্ত শেয়ার কেনা ঠিক হবে না।
• এখন তাঁর যা বেতন, তাতে খুব বেশি শেয়ার কেনাও যাবে না।
• তাড়াহুড়ো করে শেয়ার কিনলে, পরে ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে।
• এখন বাজার চড়া। ফলে সুযোগের অপেক্ষায় থাকুন। বরং শেয়ার সংক্রান্ত বিষয়ে পড়াশোনা করে রাখুন।
• আগামী দিনে বেতন বাড়লে ভাল শেয়ারে লগ্নি করতে পারবেন। তবে সে জন্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন।
লক্ষ্য ৬: বাড়ি সারানো
বিবেক বাড়ি সারানোর জন্য কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা স্থির করেননি। তবে আমার ধারণা, আগামী কয়েক বছরে তিনি এই কাজে হাত দিতে চান। প্রথমে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা বলুন। বুঝতে পারবেন, কত টাকা খরচ হবে। সেই অনুসারে টাকা জমানো শুরু করুন।
এ জন্য আলাদা তহবিল তৈরি করুন। হাতে যখনই থোক টাকা আসবে, তা সেখানে জমা দিন। এ ছাড়া, অল্প অল্প করে নিয়মিত টাকাও রাখতে পারেন।
অন্যান্য
• বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অবসরের জন্য সঞ্চয় শুরুর কথা মাথায় রাখুন।
• মায়ের স্বাস্থ্যবিমার অঙ্ক বাড়াতে হবে। শুধু অফিসের ভরসায় না-থেকে নিজের জন্য আলাদা বিমা করান।
আশা করি, আমাদের পরামর্শ কিছুটা হলেও কাজে লাগবে।
(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত)
ভ্রম সংশোধন
গত ৮ মে-র ‘কুবের উবাচ’-তে ‘সিঁড়ি বেয়ে লক্ষ্যে’ তালিকায়
ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পের ‘এখনকার লগ্নি’ অংশে ১১,৭৭,০০০-এর
জায়গায় ১,৭৭,০০০ লেখা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য দুঃখিত।