Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Presents

হদিস

অন্যের হয়ে শেয়ার, ডলার বা পণ্য কেনা-বেচা করেও কিন্তু ভাল আয়ের মুখ দেখতে পারেন আপনি। লেনদেনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রাহকের। কিন্তু পরিশ্রম আর পরামর্শ আপনার। ব্যস্‌, তা হলেই টাকার ঝনঝনানি আপনার পকেটে। অরিন্দম সাহাশেয়ার, মুদ্রা বা পণ্য বাজারে টাকা খাটিয়ে কী ভাবে মুনাফার মুখ দেখা যায়, তা নিয়ে এত দিন বিস্তর আলোচনা করেছি আমরা। খোঁজ করেছি বিভিন্ন রকম কৌশলের। কিন্তু একটু ভেবে দেখুন তো। ওই সমস্ত বাজারে টাকা ঢালা নিয়ে আমরা এত কথাবার্তা বলেছি কেন? যাতে সেখানে লাভের দৌলতে আমাদের রোজগারপাতি কিছুটা বাড়ে, তাই তো? কিন্তু কথা হল, শুধু লগ্নি করে লাভই ওই সমস্ত বাজার থেকে আয়ের একমাত্র রাস্তা নয়।

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৪ ০১:১০
Share: Save:

শেয়ার, মুদ্রা বা পণ্য বাজারে টাকা খাটিয়ে কী ভাবে মুনাফার মুখ দেখা যায়, তা নিয়ে এত দিন বিস্তর আলোচনা করেছি আমরা। খোঁজ করেছি বিভিন্ন রকম কৌশলের। কিন্তু একটু ভেবে দেখুন তো। ওই সমস্ত বাজারে টাকা ঢালা নিয়ে আমরা এত কথাবার্তা বলেছি কেন? যাতে সেখানে লাভের দৌলতে আমাদের রোজগারপাতি কিছুটা বাড়ে, তাই তো? কিন্তু কথা হল, শুধু লগ্নি করে লাভই ওই সমস্ত বাজার থেকে আয়ের একমাত্র রাস্তা নয়। পেশাদার হিসেবে অন্যের টাকা খাটিয়েও সেখানে রোজগারের রাস্তা খুলতে পারি আমরা। আয় করতে পারি ব্রোকারেজ। এমনকী সেই আয় রীতিমতো পাল্লা দিতে পারে (বা টপকে যেতে পারে) মুনাফা বাবদ আয়কে।

তাই আজ এখানে সেই রাস্তা নিয়েই কথা বলব। আমরা এ পর্যন্ত যে-ভাবে শুধু বিনিয়োগ কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করেছি, তার থেকে এই লেখা হয়তো অনেকটাই আলাদা। কিন্তু মূল লক্ষ্য সেই একই। তা হল, নিজের রোজগার বাড়ানোর পথ খোঁজা। চলুন আজ সেই আড্ডায় বসি।

গোড়ার কথা

শেয়ার, মুদ্রা বা পণ্য যে-বাজারে লেনদেন হয়, তাকে বলে এক্সচেঞ্জ। এই এক্সচেঞ্জে কেউ বা কোনও সংস্থা সরাসরি ব্রোকার হিসেবে নথিভুক্ত হতে পারেন। অথবা ওই সমস্ত ব্রোকার সংস্থার অধীনে আবার ব্যক্তিগত ভাবে বা নিজের ছোট সংস্থা খুলে ব্যবসা করতে পারেন। এঁরাই অথরাইজড পার্সন (এপি) হিসেবে পরিচিত। এখানে মূলত এই অথরাইজড পার্সন কী ভাবে হওয়া যায় এবং তার থেকে রোজগারের উপায় নিয়েই আলোচনা করব আমরা। কারণ, পেশাদার হিসেবে বাজারে পা রাখার ক্ষেত্রে এই অথরাইজড পার্সন বা এপি হওয়াই সহজতম পথ। তার ঝক্কি তুলনায় কম। অনেকখানি কম তার জন্য প্রয়োজনীয় লগ্নির অঙ্কও।

ব্রোকার সংস্থা হোক বা এপি সকলের কাজই কিন্তু মূলত এক। তা হল, গ্রাহকদের কথা অনুযায়ী তাঁদের হয়ে লেনদেন করা। মনে করুন, কোনও গ্রাহক বললেন, আমি এখন ‘ক’ সংস্থার ১০টি শেয়ার কিনতে চাই। সে ক্ষেত্রে ব্রোকারের কাজ হল তা কেনার যাবতীয় বন্দোবস্ত করা।

এপি হিসেবে আপনি যত টাকার লেনদেন করবেন, আপনার ব্রোকারেজ নির্ভর করবে তার উপরই। মনে করুন, মোট ১০,০০০ টাকার লেনদেন করলেন। সে ক্ষেত্রে তার উপর ০.০৩% ব্রোকারেজ মানে তিন টাকা আয় করবেন আপনি। তবে এই টাকার পুরোটা আপনার নয়। যে-ব্রোকার সংস্থার অধীনে ব্যবসা করছেন, একটা ভাগ তারও।

মনে রাখবেন, কেনা-বেচার সিদ্ধান্ত যেহেতু পুরোপুরি গ্রাহকের, তাই আপনার ব্রোকারেজ লগ্নির লাভ-ক্ষতির উপর নির্ভর করে না। শুধু লেনদেনের অঙ্কের উপরই তা নির্ভরশীল। আর হ্যাঁ, এখানে আপনার কাজ আদৌ মিউচুয়াল ফান্ডের ম্যানেজারের মতো নয়। সেখানে ফান্ডের লগ্নিকারীদের পছন্দের বৃত্ত (মূলত শেয়ার না ঋণপত্র) বুঝে নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন ম্যানেজারই। এখানে আপনার দায়িত্ব কিন্তু তা নয়। ব্রোকার হিসেবে গ্রাহককে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ আপনি অবশ্যই দিতে পারেন। কিন্তু গ্রাহকের অনুমতি ছাড়া (যার প্রমাণ থাকা আবশ্যক) তাঁর হয়ে কোনও লেনদেন করার এক্তিয়ার আপনার নেই।

সুযোগ কোথায়?

এপি হিসেবে কোথায় কোথায় রোজগারের সুযোগ রয়েছে আপনার?

• শেয়ার বাজার: সাধারণত বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (বিএসই), ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসই)-সহ বিভিন্ন শেয়ার বাজারে কেনা-বেচা চলে দু’ভাবে

(১) টাকা দিয়ে সরাসরি শেয়ার কেনা। এবং নিজের ইচ্ছে মতো তা ধরে রাখা বা বিক্রি করা। এর নাম ক্যাশ সেগমেন্ট। অর্থাত্‌, এখানে একটি শেয়ার সত্যি সত্যিই কিনছেন-বেচছেন আপনি। মনে করুন, আজ ১০০ টাকায় ‘খ’ সংস্থার একটি শেয়ার কিনলেন। কিছু দিন পরে তার দর ১১০ হতেই তা বেচে দিলেন। ফলে সে ক্ষেত্রে গ্রাহকের মুনাফা হল ১০ টাকা।

(২) ভবিষ্যতে কোনও একটি নির্দিষ্ট দিনে সংস্থার শেয়ার দর কী হতে পারে, তা আন্দাজ করে আগাম কিনে বা বেচে রাখতে চুক্তি করা। একে বলে ডেরিভেটিভ সেগমেন্ট। অর্থাত্‌, এ ক্ষেত্রে সরাসরি শেয়ারে লগ্নি না-করে টাকা ঢালা হচ্ছে তার দরের গতিবিধির উপর। সত্যি করে শেয়ার এখানে কেনা বা বেচা হচ্ছে না। একটি নির্দিষ্ট দিনে তা কেনা বা বেচার জন্য আগাম চুক্তি করে রাখা হচ্ছে মাত্র।

ডেরিভেটিভ মূলত দু’ভাবে লেনদেন হয়। ফিউচার এবং অপশন। সেই খুঁটিনাটিতে আমরা এখানে আর যাচ্ছি না। কিন্তু ক্যাশ আর ডেরিভেটিভ সেগমেন্টের কথা আলাদা ভাবে বলার কারণ, এপি হিসেবে তাদের জন্য পৃথক অনুমোদন নিতে হবে আপনাকে।

• মুদ্রা বাজার: এখানে ডলার, পাউন্ড, ইউরোর মতো বিদেশি মুদ্রার শুধু ডেরিভেটিভ লেনদেন চলে। অর্থাত্‌, ভবিষ্যতে কোনও নির্দিষ্ট দিনে তাদের দর কেমন হতে পারে, সেই আন্দাজের ভিত্তিতে মুদ্রা কেনা বা বিক্রির জন্য চুক্তি করা হয়। মনে রাখবেন, সরাসরি ওই সমস্ত বিদেশি মুদ্রা কেনা-বেচা কিন্তু এক্সচেঞ্জে করা যায় না। বিদেশে এই বাজার এমনিতেই বিশাল। এখন আমাদের দেশেও এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে তরতরিয়ে। ফলে স্টক এক্সচেঞ্জে বিদেশি মুদ্রা কেনা-বেচার এপি হতে পারলেও ভাল আয়ের সুযোগ রয়েছে।

• পণ্য বাজার: এর সঙ্গে পণ্য বাজার (কমোডিটি মার্কেট) তো রয়েইছে। সেখানে সোনা-রুপো, অশোধিত তেল, তামার মতো বহু পণ্যের লেনদেন হয়। লগ্নিকারীর সংখ্যাও ফেলনা নয়। এই বাজারে কাজ করতে চাইলে এমসিএক্স কিংবা এনসিডিইএক্সের মতো এক্সচেঞ্জে যোগাযোগ করতে হবে।

• ডি-ম্যাট পরিষেবা: এপি হিসেবে একটু নামডাক হওয়ার পরে ভাবতে পারেন ডি-ম্যাট পরিষেবা দেওয়ার কথাও। শেয়ার বাজারে লেনদেন করতে হলে যে-কোনও গ্রাহকের ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলা আবশ্যক। অনুমোদন পেলে এনএসডিএল কিংবা সিডিএসএল-এর মতো ডিপোজিটরির ব্রোকার সংস্থাগুলির হয়ে কাজ করতে পারেন আপনি।

যোগ্যতা

সাধারণত এপি হতে চাইলে সে রকম বিরাট কিছু ডিগ্রি লাগে না। কিন্তু ন্যূনতম কিছু যোগ্যতা অবশ্যই আপনার থাকতে হবে। যেমন—

এপি হতে চাইলে স্নাতক হলে ভাল। তবে তা বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু সরাসরি স্টক এক্সচেঞ্জগুলিতে ব্রোকার হিসেবে কাজ করতে চাইলে, স্নাতক হতেই হবে আপনাকে।

অথরাইজড পার্সন হিসেবে কাজের আগে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সিকিউরিটিজ ম্যানেজমেন্টের (এনআইএসএম) পরীক্ষা দিতে হবে। মুদ্রা বাজার, শেয়ার বাজার, মিউচুয়াল ফান্ড ইত্যাদিতে কাজের জন্য এই পরীক্ষা পাশের শংসাপত্র থাকা বাধ্যতামূলক। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই পরীক্ষা নেওয়া হয়।

কম্পিউটারের প্রাথমিক জ্ঞান অবশ্যই থাকা প্রয়োজন।

বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ মাঝেমধ্যেই সদস্যদের জন্য নানা সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজন করে। সুযোগ বুঝে সেখানে প্রশিক্ষণ নিন। তাতে সুবিধা আপনারই।

মনে রাখবেন, এই ব্যবসায় প্রথম ১০০ জন লগ্নিকারীর কাছে পৌঁছনোই সবচেয়ে কঠিন কাজ। তারপর বরং ভাল পরিষেবার সুনাম ছড়িয়ে পড়তে থাকলে, কাজের বহর আপনিই বাড়তে থাকবে। তাই শুরুতে নিজেকে তৈরি করার জন্য কোমর বাঁধুন।

কাগজপত্র

এপি হিসেবে ব্যবসা শুরুর পরিকল্পনা থাকলে, আগে নীচের কাগজপত্র গুছিয়ে ফেলুন—

ঠিকানা ও পরিচয়ের সরকারি প্রমাণ (যেমন, ভোটার-কার্ড, পাসপোর্ট ইত্যাদি)

প্যান কার্ড।

এনআইএসএমের শংসাপত্র।

মূলত তিন ভাবে আপনি এই কাজ করতে পারেন: (১) প্রোপ্রাইটরশিপ (ব্যক্তিগত উদ্যোগ) (২) পার্টনারশিপ (এক বা একাধিক অংশীদারের সঙ্গে) (৩) কর্পোরেট (পুরোপুরি কর্পোরেট সংস্থা হিসেবে)। যে ভাবে ব্যবসা করবেন, সেই অনুযায়ী ট্রেড লাইসেন্স-সহ ব্যবসা সংক্রান্ত বিভিন্ন ছাড়পত্র নিতে হবে আপনাকে।

পরিকাঠামো

ব্যবসার বহর বাড়লে অনেকে বড়সড় অফিস খোলেন ঠিকই। তবে এই কাজ শুরু করা যায় বাড়িতে বসেই। একটি মাত্র ঘরকে সম্বল করে। তবে ব্যবসা শুরুর জন্য বেশ কিছু জিনিস মাথায় রাখা জরুরি

ইন্টারনেট সংযোগযুক্ত কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থাকতেই হবে। রাখতে হতে পারে একাধিক সংযোগও। যাতে কোনও কারণে একটি কম্পিউটার বা সংযোগে অসুবিধা হলে, অন্যটিতে কাজ চালানো যায়।

এক জন সাহায্যকারী থাকলে ভাল। তিনি লেনদেনের অর্ডার দেওয়ার কাজ করতে পারবেন। তবে প্রাথমিক ভাবে এই কাজ নিজে করতে পারলে ভাল। তাতে খরচ বাঁচানো সম্ভব হবে।

শুধু নেট থাকলে চলবে না। লাগবে ফোনের সংযোগও। তাতে কথাবার্তা রেকর্ড করার ব্যবস্থা থাকাও একান্ত জরুরি। যাতে লগ্নি সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হলে, গ্রাহকের সঙ্গে কথাবার্তার প্রমাণ আপনার হাতে থাকে।

বাজারে যে-লেনদেন করছেন, প্রতি মুহূর্তে তাতে নজর রাখা এবং সেই সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য যাচাইয়ের জন্য বিশেষ সফটওয়্যার পাওয়া যায়। তা অবশ্যই ব্যবহার করুন। লাগাতে হবে ভাল অ্যান্টি-ভাইরাসও।

চোখ-কান খোলা রাখুন। দেখুন, চারপাশে কী ঘটছে। বিশেষত দেশ তথা বিশ্বের শিল্প ও অর্থনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা জরুরি। এ জন্য টিভি থাকতেই হবে।

অনেক সময়ে ব্রোকার সংস্থাগুলি চুক্তির ভিত্তিতে এই সমস্ত পরিকাঠামো তৈরি করে দেয় (সাধারণত খরচ এক লক্ষ টাকা বা তারও কম)। তাই এপি হওয়ার সময়েই এ নিয়ে কথা বলুন। পরিকাঠামো কে গড়ছেন (এপি নিজে নাকি ব্রোকার সংস্থা), ব্রোকারেজের ভাগ-বাটোয়ারার অনুপাত নির্ভর করে তার উপরেও।

কী করণীয়?

শেয়ার বাজারে এপি হিসেবে কাজ করতে যাবতীয় ছাড়পত্র হাতে আসার পরে কাগজপত্র নিয়ে সেবি এবং স্টক এক্সচেঞ্জগুলি দ্বারা অনুমোদিত ব্রোকার সংস্থার কাছে আবেদন করুন।

একই ভাবে পণ্য বাজারের জন্য যেতে হবে নিয়ন্ত্রক ফরওয়ার্ড মার্কেটস কমিশন (এফএমসি) এবং এমসিএক্স বা এনসিডিইএক্সের মতো এক্সচেঞ্জ দ্বারা অনুমোদিত ব্রোকার সংস্থার কাছে।

এই সংস্থাগুলিই এপিদের হয়ে সংশ্লিষ্ট এক্সচেঞ্জে আবেদন করে।

সাধারণত এক্সচেঞ্জগুলিতে এ জন্য প্রায় ২,৫০০ টাকা জমা দিতে হয়।

শেয়ার বাজারে ক্যাশ ও ডেরিভেটিভ সেগমেন্ট, পণ্য বাজার এবং মুদ্রা বাজার এপি হিসেবে কাজ করার জন্য এগুলির প্রতিটি ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ভাবে নথিভুক্তির আবেদন করতে হবে। এবং তা করতে হবে প্রতিটি এক্সচেঞ্জের জন্য।

প্রতি মাসে পরিকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গড়পরতা খরচ (ফোনের বিল, ইন্টারনেটের খরচ ইত্যাদি) ১৫,০০০ টাকার মতো। সুতরাং তা বইতে তৈরি থাকুন।

সুবিধার খতিয়ান

এপি হিসেবে কাজ করার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। এক ঝলকে তা দেখে নেওয়া ভাল—

আগে ব্রোকার সংস্থাগুলি সাধারণত নিজেদের অধীনে থাকা সাব-ব্রোকারদের দিয়ে কাজ করাতো। কিন্তু এখন এপি-র মাধ্যমেই লেনদেনে উত্‌সাহ দিচ্ছে সেবি এবং এক্সচেঞ্জগুলি। যার মূল কারণ এর সরল পদ্ধতি।

সরাসরি বিএসই, এনএসই, এমসিএক্স কিংবা এনসিডিইএক্সের মতো এক্সচেঞ্জগুলির ব্রোকার হিসেবে কাজ করতে হলে, জমা রাখতে হতে পারে দেড় কোটি টাকারও বেশি। এ ছাড়াও, থাকে নথিভুক্তির চার্জ। প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। সেখানে এপি-র ক্ষেত্রে প্রাথমিক লগ্নি অনেক কম।

প্রথমে এপি হিসেবে অভিজ্ঞতা অর্জন করে পরে নিজের ব্রোকার সংস্থা খোলার কথা ভাবতে পারেন।

এখনও দেশের অনেক জায়গাতেই আর্থিক পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার মতো পরিকাঠামো নেই। ব্যাঙ্কই সর্বত্র পৌঁছয়নি, তো শেয়ার বা মুদ্রা বাজার। ফলে এখন শুরু করতে পারলে, এপি হিসেবে নিঃসন্দেহে বড়সড় বাজার অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।

এপি হিসেবে কাজ করলে, অনেক সময়ে বিভিন্ন আইনি জটিলতা এড়ানোও সহজ হয়।

মাথায় থাকুক অসুবিধাও

সরাসরি ব্রোকার হলে, অনেক সময়ে কম মার্জিন মানিতে (ডেরিভেটিভ লেনদেনের ক্ষেত্রে শেয়ারের পুরো দামের পরিবর্তে যে-টাকা দিয়ে বায়না করতে হয়) লেনদেনের সুবিধা মেলে। এপি-র ক্ষেত্রে তা নেই।

এখানে ব্রোকার সংস্থাগুলিকে লাভের ভাগ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা মাথায় রাখতে হয়।

সম্প্রতি সরাসরি ব্রোকার হওয়ার নিয়ম কিছুটা শিথিল করেছে সেবি। যেমন, এখন এক বার কোনও এক্সচেঞ্জে তা হলে, অন্য এক্সচেঞ্জে ফের নতুন করে পুরো আবেদন না-করলেও চলবে। একই নথিভুক্তি নম্বরে সেই কাজ সারা যাবে। কিন্তু এপিদের প্রতি ক্ষেত্রে আলাদা আবেদন করা বাধ্যতামূলক।

আয়ের সূত্র ব্রোকারেজ

কাজের ধরন

এপি-র মূল কাজ লগ্নিকারীর হয়ে লেনদেন করা। অর্থাত্‌, ব্রোকার সংস্থা ও বিনিয়োগকারীর সেতুবন্ধন। যাতে লগ্নিকারীরা নিশ্চিন্ত মনে টাকা খাটাতে পারেন। বাদবাকি ঝামেলা তাঁদের আর পোহাতে না-হয়।

তবে মনে রাখবেন, এপি কিন্তু কোনও ভাবেই কোনও লগ্নিকারীর অজান্তে তাঁর টাকা খাটাতে পারবেন না। কারণ, গ্রাহক নিজের শেয়ার, মুদ্রা বা পণ্য আপনাকে লেনদেনের অধিকার (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) দিলে, তবেই তা কেনা-বেচা করতে পারবেন আপনি।

এপি দু’রকম লেনদেনে সামিল হতে পারেন:

(১) ইন্ট্রা-ডে ট্রেড: যে কেনা-বেচা দিনের-দিন হয়। মনে করুন, আজ বাজার খোলার সময়ে কোনও সংস্থার ১০টি শেয়ার কিনলাম। আবার তা বেচেও দিলাম আজই বাজার বন্ধের আগে। একে বলে ইন্ট্রা-ডে ট্রেড।

(২) ডেলিভারি ট্রেড: মনে করুন, কম দামের সুযোগ বুঝে কোনও সংস্থার খান দশেক শেয়ার কিনে রাখলাম। এবং তা বেশ কিছু দিন ধরেও রাখলাম দর বাড়ার অপেক্ষায়। বাজারে এটি ডেলিভারি ট্রেড বলে পরিচিত।

এই দু’রকম লেনদেনের জন্য ব্রোকারেজও দু’রকম। সাধারণত ইন্ট্রা-ডে ব্রোকারেজ ডেলিভারি ব্রোকারেজের তুলনায় কম। তবে কোন লেনদেনে কোন ব্রোকারেজ প্রযোজ্য হবে, তা বোঝার একটি সহজ উপায় আছে। সাধারণত যে- সমস্ত লেনদেনে দিনের শেষে সত্যি সত্যিই কিছু হাতে থাকে (যেমন, শেয়ার, পণ্য বাজারে ডেলিভারির বন্দোবস্ত থাকা কিছু পণ্য ইত্যাদি), একমাত্র সেখানেই ডেলিভারি-ব্রোকারেজ প্রযোজ্য। বাকি জায়গায় এপি হিসেবে আপনার প্রাপ্য ইন্ট্রা-ডে ব্রোকারেজই। আর এই দু’য়ের যোগফলই আপনার মোট আয়।

এপি হিসেবে আপনার আয় কোনও ভাবেই গ্রাহকের লাভ-লোকসানের উপর নির্ভর করে না। বরং তা একান্ত ভাবেই নির্ভরশীল লেনদেনের অঙ্কের উপর।

পকেটে কত?

এ বার দেখা যাক, আপনি এপি হিসেবে ব্রোকারেজ বাবদ কত আয় করতে পারেন। তার একটা আঁচ পাওয়া যাবে কী ভাবে

ইন্ট্রা-ডে ব্রোকারেজ সাধারণত ০.০৩%-০.০৪%। অর্থাত্‌, এক কোটি টাকার লেনদেনে আপনি পাবেন ৩-৪ হাজার টাকা। এবং যত বার ওই টাকা দিয়ে কেনা-বেচা হবে, তত বারই ওই ব্রোকারেজ মিলবে।

ডেলিভারি-ব্রোকারেজ তুলনায় অনেকটাই বেশি। সাধারণত ০.৩%-০.৪%। তার মানে, প্রতি এক কোটিতে ৩০-৪০ হাজার টাকা।

শেয়ার, মুদ্রা, পণ্য সব বাজারে লেনদেন করে পাওয়া আপনার মোট ব্রোকারেজ যোগ করেই আয়ের অঙ্কে পৌঁছনো যাবে।

উদাহরণ

ধরুন, আপনি এপি। মাসে এক কোটি টাকা ডেলিভারি ট্রেড-এ আপনার মাধ্যমে লগ্নি হয়েছে। তার উপর ব্রোকারেজ পেয়েছেন ০.৪% হারে। মানে মোট ৪০ হাজার টাকা।

এ বার ওই মাসেই হয়তো আপনার ইন্ট্রা-ডে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়াল দশ কোটি টাকা। ফলে সেখানে ০.০৪% ব্রোকারেজ ধরে আপনি পাবেন আরও ৪০ হাজার টাকা।

অর্থাত্‌, শুধু শেয়ার বাজার থেকেই ৮০ হাজার টাকা পকেটে পুরে ফেললেন আপনি।

এ বার মনে করুন আপনি মুদ্রা এবং পণ্য বাজারেও কাজ করছেন। ধরে নিলাম, পণ্য বাজারে ওই মাসে আপনি লেনদেন করেছেন ৫ কোটি টাকার। আর মুদ্রা বাজারে ২ কোটি। ফলে এই দুই খাতে ব্রোকারেজ ০.০৪% ধরে আপনার রোজগার আরও ২৮ হাজার টাকা। উল্লেখ্য, একমাত্র নির্দিষ্ট কয়েকটি পণ্য ছাড়া যেহেতু মুদ্রা আর পণ্য বাজারের অন্য কোনও লেনদেনে ডেলিভারির প্রশ্ন নেই, তাই এখানে ইন্ট্রা-ডে ব্রোকারেজই ধরলাম আমরা।

ফলে সব বাজারে লেনদেনের পর আপনার হাতে এল মাসে ১,০৮,০০০ হাজার টাকা!

তবে এর পুরোটা অবশ্যই আপনার নয়। একটা অংশ ব্রোকার সংস্থাকেও দিতে হবে। এপি হওয়ার জন্য ব্রোকার সংস্থার সঙ্গে চুক্তিতেই লেখা থাকে যে, আয়ের কত ভাগ কে পাবে। ধরলাম সেই অঙ্ক ৩০%।

তার মানে, ৩২,৪০০ টাকা দিয়ে দিতে হবে ব্রোকার সংস্থাকে। ফলে রইল ৭৫,৬০০ টাকা। এর মধ্যে পরিকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের খরচ হিসেবে ১৫,০০০ টাকা বাদ দিলেও মাসের শেষে হাতে থাকবে ৬০ হাজার টাকা। আয় হিসেবে যা নেহাত মন্দ নয়।

সব থেকে বড় কথা এখানে লগ্নির ঝুঁকি পুরোপুরি গ্রাহকের। ফলে ক্ষতির বোঝা বইতে হবে তাঁকেই। সেই দায় আপনার নয়।

আর মাসে এক কোটি-দশ কোটি লেনদেন শুনে হয়তো খটকা লাগতে পারে। কিন্তু হলফ করে বলতে পারি, বাজারে গড়ে অমন লেনদেন অনেক এপি-ই করে থাকেন।

হুঁশিয়ার

এপি হিসেবে কাজ করতে হলে নীচের বিষয়গুলি নিয়ে গোড়া থেকেই সতর্ক থাকুন—

অনেক সময়ে নিজের আয় বাড়াতে ব্রোকার সংস্থা বা এপি বেশি লেনদেন করতে লগ্নিকারীদের উপর চাপ দেন। বলেন, ঘন ঘন একই টাকা বিভিন্ন জায়গায় খাটানোর কথা। মনে রাখবেন, সেবি এবং এফএমসি দুই নিয়ন্ত্রকই কিন্তু এ ধরনের লেনদেনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ফলে এই বিষয়ে সতর্ক থাকুন। সত্‌ ভাবে ব্যবসা করার মানসিকতা থাকাও জরুরি।

অনেক সময়ে পুরো বিষয়টি নিয়ে ভাল করে না-জেনেই কেউ কেউ ব্যবসায় নেমে পড়েন। কিংবা হয়তো তেমন ভাবে জোরই দেন না পরিকাঠামো গড়ে তোলায়। এ ভাবে কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে টিকে থাকা মুশকিল হবে। ব্রোকার সংস্থা এবং এপিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্র। ফলে তা যুঝে টিকে থাকতে ফাঁক রাখলে চলবে না।

এপি হিসেবে যে-ব্রোকার সংস্থার হয়েই কাজ করুন না কেন, প্রথমে তার সম্পর্কে ভাল করে খোঁজ নিন। তারা কী ধরনের পরিষেবা দেয়, তার মান কী রকম সমস্ত কিছু যাচাই করুন। প্রয়োজনে আগে সেখানে সাধারণ লগ্নিকারী হিসেবে টাকা ঢালুন। নইলে পরে অসুবিধায় পড়তে পারেন।

অতএব...

সব মিলিয়ে, আয়ের জন্য এপি হওয়া খুব খারাপ পেশা নয়। হয়তো প্রচুর পরিশ্রম আছে, শুরুতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার চ্যালেঞ্জ আছে। কিন্তু এক বার কষ্ট সয়ে তা করে ফেলতে পারলে, রীতিমতো মোটা টাকা আয় করতে পারবেন আপনি। ব্যক্তিগত ভাবে বলতে পারি, অনেক ক্ষেত্রে তা ছাপিয়ে যেতে পারে লগ্নিকারী হিসেবে পাওয়া রিটার্নকেও।

লেখক বাজার বিশেষজ্ঞ (মতামত ব্যক্তিগত)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arindam saha brockery advice
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE