Advertisement
E-Paper

প্রথম শিখেছিলাম বাংলা গালাগাল

সেই কবে ভারতে এসেছি। তা-ও দেখতে দেখতে প্রায় বছর কুড়ি হয়ে গেল। চণ্ডীগড়, মুম্বই, দিল্লিতে খেলেছি বা কোচিং করিয়েছি। খেলার জন্য ভারতের নানা জায়গায় গিয়েছি। কিন্তু আমাকে সবাই চিনেছে কলকাতায় খেলার জন্যই। মহমেডান দিয়ে শুরু করেছিলাম। পরে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানেও খেলেছি। আমাকে খেলানোর জন্যই মোহনবাগানের মতো শতবর্ষ প্রাচীন ক্লাব তাদের ঐতিহ্য ভেঙেছিল। তিন প্রধানেই খেলেছি চুটিয়ে। কত গোল করেছি।

চিমা ওকোরি

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৫ ০০:১৩

সেই কবে ভারতে এসেছি। তা-ও দেখতে দেখতে প্রায় বছর কুড়ি হয়ে গেল। চণ্ডীগড়, মুম্বই, দিল্লিতে খেলেছি বা কোচিং করিয়েছি। খেলার জন্য ভারতের নানা জায়গায় গিয়েছি। কিন্তু আমাকে সবাই চিনেছে কলকাতায় খেলার জন্যই। মহমেডান দিয়ে শুরু করেছিলাম। পরে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানেও খেলেছি। আমাকে খেলানোর জন্যই মোহনবাগানের মতো শতবর্ষ প্রাচীন ক্লাব তাদের ঐতিহ্য ভেঙেছিল। তিন প্রধানেই খেলেছি চুটিয়ে। কত গোল করেছি। ‘চি-মা, চি-মা’ চিৎকারে কত বার ডুবে গিয়েছে স্টেডিয়াম। কত ট্রফি জিতেছি। সমর্থকদের কাঁধে চড়ে বাড়ি ফিরেছি কত বার। আর এ সব করতে করতেই কখন যেন অদ্ভুত ভাবে মিশে গিয়েছি বাংলা আর বাঙালির সঙ্গে। তাই এই শহর ছাড়তে চাইনি।

নাইজেরিয়া থেকে এসে কোন টানে জীবনের এতটা সময় কাটিয়ে ফেললাম টেগোরের এই বাংলায়? ভেবে দেখেছি, সেটা ফুটবলের জন্যই। আমার দেশ নাইজেরিয়ার মানুষ ফুটবল পাগল। ফুটবলের জন্য তাঁদের প্যাশন সবাই জানে। কলকাতাও তো ফুটবল পাগল। ডার্বির সময় সেটা বোঝা যায়। সে জন্যই হয়তো এত তাড়াতাড়ি আমাকে আপন করে নিয়েছে এই শহর। এখন তো আমার মনে হয় আমি এই শহরেরই লোক।

পুজোর সময় ঠাকুর উদ্বোধন করতে ডাক পড়ে মাঝেমধ্যে। আমিও তক্ষুনি চলে যাই উৎসবে শামিল হতে। আসলে আলো দিয়ে সাজানো শহরটাকে আমার তখন দারুণ লাগে। কী রং! অদ্ভুত একটা জাদু ঘিরে রাখে কলকাতাকে। রঙিন নতুন জামা-কাপড় পরে মানুষ ঠাকুর দেখে। কচি-কাঁচা-বুড়ো সবাই। আমিও হইহই করে ঠাকুর দেখি। চারপাশটাও দেখি। আসলে বাঙালি মেয়েরা শাড়ি পরলে দারুণ লাগে। আর পুজোর মেজাজে সাধারণকেও অসাধারণ সুন্দর মনে হয়। আকর্ষণীয় মনে হয়। শাড়ির আভিজাত্যই আলাদা।

কিন্তু যেটা আমাকে অবাক করে তা হল, আমি যখন শহরে প্রথম পা রেখেছিলাম তখনকার মতো আর শাড়ি মেয়েদের কাছে জনপ্রিয় নেই। আমাদের দেশের মেয়েদের মতো জিন‌্স, টপ বা ওই ধরনের পশ্চিমি পোশাকই তারা সাধারণত পরে। কাজের সুবাদে অনেক মেয়ের সঙ্গে পরিচয় আছে আমার। অনেক বন্ধুও আছে। তারা বলে, বাসে-ট্রামে শাড়ি সামলে চলাফেরা করা কঠিন বলেই এটা কমছে। কিন্তু উৎসব হলে, সবাই পরে।

আমার নিজেরই এ রকম অনুভূতি হয়েছিল এক বার ধুতি পরার সময়। কোঁচা দিয়ে ধুতি সামলানো বেশ কঠিন। এক বার বোধহয় বিজ্ঞাপনের কাজে ধুতি পরেছিলাম। বেশ মজা হয়েছিল। কাগজের ফোটোগ্রাফারদের অনুরোধেও একবার পরেছিলাম ধুতি। আসলে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের নিজস্ব পোশাক আছে। আমি তার কিছু দেখেছিও। কিন্তু ধুতি-শাড়ির মতো মন ভাল করা উৎসবের পোশাক দেখিনি। এটা বাংলার সঙ্গে যেন মিলে যায়। একটা স্নিগ্ধ ব্যাপার যেন এর মধ্যে জড়িয়ে আছে।

ইংরেজি জানতাম। নাইজেরিয়ান ভাষা তো বটেই। কিন্তু তাতে খেলার সময় অসুবিধা হত। এত দিন পর বলতে বাধা নেই, সতীর্থদের কাছ থেকে প্রথম বাংলা শিখেছিলাম— বিশুদ্ধ ময়দানি খিস্তি। পরে ‘খেতে যাবে না কি’, ‘ভাল করে খেলো’, ‘নমস্কার’, এ সব শিখেছি।

বাংলা সংস্কৃতি যে আমি খুব একটা বুঝি তা নয়, শুধু টেগোরের কিছু গানের সুর ভাল লাগে। কিন্তু বাংলার যে জিনিসটা আমার লা-জবাব লাগে, তা হল: খিচুড়ি। বিশ্বের বহু দেশ ঘুরেছি, ভারতের নানা রাজ্যও, কিন্তু ওই স্বাদ কোত্থাও পাইনি কখনও। বাড়িতে মাঝেমধ্যে খিচুড়ি রান্না করে খেতাম। এখনও খাই। অপূর্ব স্বাদ। হোটেলে গিয়েও খিচুড়ি খাই। রসগোল্লা, মিষ্টি দই খেতে কার না ভাল লাগে! কিন্তু আমার কাছে খিচুড়ি সবার আগে।

(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত)

Chima okorie mohunbagan football kolkata India Delhi mumbai Bengali new year Poilab
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy