Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Queen of Anatahan

এক মহিলা, ৩২ পুরুষ! নির্জন দ্বীপে ধুন্ধুমার ছ’বছর, বেঁচে ফিরেছিলেন মাত্র ২০ জন

প্রশান্ত মহাসাগরের আনাতাহান দ্বীপে ঘটেছিল এই কাণ্ড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একেবারে শেষ দিকে, ১৯৪৫ সাল থেকে ১৯৫১ সালে ওই দ্বীপে জাপানি তরুণী কাজ়ুকো হিগা এবং ৩২ জন তরুণ আটকে পড়েছিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৩ ১১:০১
Share: Save:
০১ ২২
image of woman

বিশাল মহাসাগরের মাঝে ছোট্ট এক নির্জন দ্বীপ। ভাগ্যের ফেরে সেখানে আটকে পড়েছিলেন এক তরুণী। বিয়ে করেছিলেন। শান্তিতেই ছিলেন। হঠাৎই এক জাহাজ দুর্ঘটনা তাঁদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তাঁকে নিয়ে ‘যুদ্ধ’ শুরু হয় ৩২ জন পুরুষের। প্রাণ যায় বহু জনের। শেষ পর্যন্ত কোনও মতে বেঁচেছিলেন সেই তরুণী।

০২ ২২
image of island

প্রশান্ত মহাসাগরের আনাতাহান দ্বীপে ঘটেছিল এই কাণ্ড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একেবারে শেষ দিকে, ১৯৪৫ সাল থেকে ১৯৫১ সালে ওই দ্বীপে জাপানি তরুণী কাজ়ুকো হিগা এবং ৩২ জন তরুণ আটকে পডেছিলেন। ১৯৫১ সালে তরুণী কোনও মতে পালিয়ে এসেছিলেন জাপানের মূল ভূখণ্ডে। প্রাণে বাঁচেন তিনি। প্রাণে বাঁচেন বাকি পুরুষেরাও।

০৩ ২২
image of island

ওই সুন্দরী তরুণীর জন্য পুরুষদের মধ্যে দ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে একে অপরের প্রাণ নিতে উদ্যত হয়েছিলেন তাঁরা। ১১ জনের প্রাণ গিয়েছিল সেই নির্জন দ্বীপে। কী ভাবে তাঁদের মৃত্যু হয়েছিল, সেই নিয়ে আজও রয়েছে রহস্য। শেষ পর্যন্ত বাকি পুরুষেরা খুন করতে গিয়েছিলেন সুন্দরীকেই। কোনও মতে হয়েছিল প্রাণরক্ষা।

০৪ ২২
image of island

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আনাতাহান দ্বীপ দখল করেছিল জাপান। যুদ্ধ শেষে সেখানে একটি সংস্থা গড়ে তুলেছিল তারা। নাম নানিয়াং জিংফা। ওই দ্বীপে নারকেলের চাষ শুরু করেছিল সংস্থাটি। সেখানে কাজের জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠেন জাপানের অনেক নাগরিক। বিশেষ সুবিধাও দিয়েছিল সরকার।

০৫ ২২
image of island

১৯৩৯ সালে মারিয়ানা দ্বীপে গিয়েছিলেন তরুণী কাজ়ুকো হিগা। তাঁর বয়স তখন মাত্র ১৬ বছর। ১৮ বছর বয়সে শোই চি হিগা নামে এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। ওই যুবক নানিয়াং জিংফা সংস্থায় কাজ করতেন। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে আনাতাহান দ্বীপে সংস্থার কাজ নিয়ে চলে যান তিনি।

০৬ ২২
image of couple

সেখানে গিয়ে দম্পতি নারকেল চাষের কাজ তদারকি করতেন। তখনই শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যদিও নির্জন সেই দ্বীপে যুদ্ধের প্রভাব পড়েনি। কাজ়ুকো আর তাঁর স্বামী শোইচি নিজের মতো দিন কাটাচ্ছিলেন।

০৭ ২২
image of island

ওই দম্পতির সঙ্গে ওই দ্বীপে ছিলেন শোইচির বস মাসামি হিনোশিটা। তিনি আবার কাজ়ুকোর রূপে মুগ্ধ ছিলেন। শোইচি সবই বুঝতেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাতেন না।

০৮ ২২
image of body

তখন জাপানে বিমান হানা চালাচ্ছে আমেরিকা। আনাতাহান দ্বীপে বোমা ফেলে তারা। জঙ্গলে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচে কাজ়ুকো এবং মাসামি হিনোশিটার। কিন্তু সেই বিমান হানার পর কাজ়ুকোর স্বামীকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। মনে করা হয়, বিমানহানায় মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। অনেকে দাবি করেন, তাঁর বসের সঙ্গে মিলে কাজ়ুকোই খুন করিয়েছিলেন তাঁকে।

০৯ ২২
image of island

আমেরিকার বিমানহানায় ওই দ্বীপের নারকেলের বাগান ধ্বংস হয়ে যায়। সংস্থার কর্মীদের যে খাদ্যের সঞ্চয় ছিল, তা-ও ধ্বংস হয়ে যায়। বোমাবর্ষণের পর দ্বীপ তখন প্রায় জনশূন্য। শুধু বেঁচে ছিল ৪০টি শূকর, ২০টি মুরগি। তার উপর নির্ভর করেই দিন চলতে থাকে কাজ়ুকো এবং হিনোশিটার।

১০ ২২
image of couple

এর পর থেকে স্বামী-স্ত্রী হিসাবেই থাকতে শুরু করেন কাজ়ুকো এবং হিনোশিটা। নির্জন দ্বীপে ধীরে ধীরে গুছিয়ে তুলেছিলেন নিজেদের সংসার। জাপান থেকে তখন আর জোগান আসত না। ফলে আদিম যুগের মতোই জীবন যাপন করতে শুরু করেন তাঁরা।

১১ ২২
image of sea

নদীর মাছ ধরে, বন্য প্রাণী মেরে খেতেন। পরার কাপড় ছিল না। গাছের পাতা পরে দিন কাটত কাজ়ুকোদের। ১৯৪৪ সালে আচমকাই বদলে যায় তাঁদের জীবন।

১২ ২২
image of second world war

আনাতাহান দ্বীপের কাছে আমেরিকার হানায় ভেঙে পড়ে একটি জাপানি জাহাজ। খাদ্যসামগ্রী ছিল তাতে। সব তলিয়ে যায় সাগরের জলে। তাতে সওয়ার ছিলেন ৩১ জন জাপানের নাগরিক। তাঁদের মধ্যে ১০ জন সেনা ছিলেন।

১৩ ২২
image of man

কোনও মতেও জাহাজের সওয়ারিরা সাঁতরে আনাতাহান দ্বীপে এসে পৌঁছন। হিনোশিটা এবং কাজ়ুকো তাঁদের আপ্যায়ন করে দ্বীপে নিয়ে যান। আহতদের শুশ্রূষা করেন। ওই ৩১ জন কিছু দিনের মধ্যেই বুঝতে পারেন জাপানের মূল ভূখণ্ডে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই আনাতাহানে আদিম মানুষের মতো জীবন যাপন করতে শুরু করেন।

১৪ ২২
image of couple

গোটা দ্বীপে তখন কাজ়ুকো একাই মহিলা ছিলেন। বাকি পুরুষেরা ছিলেন তরুণ। সকলেরই নজর পড়ে কাজ়ুকোর উপর। ধীরে ধীরে তাঁরা জানতে পারেন, কাজ়ুকো এবং হিনোশিটার বিয়ে হয়নি।

১৫ ২২
image of couple

জাহাজের সওয়ারিদের মধ্যে এক প্রবীণ পরামর্শ দেন, হিনোশিটার সঙ্গে কাজ়িকোর বিয়ে দেওয়া হোক। তা হলে বাকিরা নিজে থেকেই সরে যাবেন। সেই মতো সকলের উপস্থিতিতে কাজ়িকোর সঙ্গে হিনোশিটার বিয়ে হয়। কিন্তু সমস্যা মেটে না।

১৬ ২২
image of war

১৯৪৬ সালের আগস্টে এই আনাতাহন দ্বীপের উপর দিয়ে যাচ্ছিল একটি আমেরিকার যুদ্ধবিমান। সেখান থেকে দ্বীপে পড়ে যায় পাঁচটি পিস্তল এবং ৭০ রাউন্ড গুলি। তার পরেই শুরু হয় গোল।

১৭ ২২
image of man

এমনিতেই দ্বীপে কোনও আইনকানুন ছিল না। তার উপর সকলেই মনে মনে কামনা করতেন কাজ়ুকোকে। কথিত, কাজ়ুকোও নাকি পুরুষদের প্ররোচনা দিতেন। এই পরিস্থিতিতে বন্দুক হাতে পেয়ে হিংস্র হয়ে ওঠে পুরুষেরা।

১৮ ২২
image of island

দেখা যেতে থাকে, দ্বীপে যে পুরুষ কাজ়ুকোর কাছে আসতেন, তিনিই খুন হয়ে যেতেন। এক দিন দেখা গেল জাপানি জাহাজের ক্যাপ্টেনের দেহ সমুদ্রে ভাসছে। তার কিছু দিন পর দ্বীপ থেকে উদ্ধার হল দুই সেনার দেহ। দু’জনের দেহেই ছিল গুলির চিহ্ন।

১৯ ২২
image of man

এর পরেই একে অপরের প্রতি সন্দিগ্ধ হয়ে ওঠেন বাকি পুরুষেরা। কিছু দিন পর সকলেই বুঝতে পারেন, এই খুনের কেন্দ্রে রয়েছেন কাজ়ুকো। তাঁর কাছে যাওয়ার জন্যই লড়াই করে মরছেন পুরুষেরা। ক্রমে বাড়তে থাকে সংঘাত।

২০ ২২
image of man

পরের কয়েক মাসে কারও বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়। কেউ গাছ থেকে পড়ে মারা যান। কেউ বেমালুম গায়েব হয়ে যান। শেষে দ্বীপে পুরুষের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯। আর কাজ়ুকো একা মহিলা। বাইরে যে বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছে, সেই খবরও জানতে পারেননি তাঁরা।

২১ ২২
image of woman

১৯ জন মিলে ঠিক করেন কাজ়ুকোকেই খুন করবেন। তা হলে নিজেদের মধ্যে আর লড়াই হবে না। সেই মতো পরিকল্পনাও করেন। সেই পরিকল্পনার কথা কাজ়ুকোর কাছে ফাঁস করে দেন এক জন। কাজ়ুকো কোনও মতে পালিয়ে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকেন। কয়েক সপ্তাহ জঙ্গলে লুকিয়ে থাকার পর একটি আমেরিকান জাহাজ দেখতে পান তিনি। চিৎকার করে থামান সেটিকে। জাহাজে চেপেই ছাড়েন দ্বীপ। সময়টা ১৯৫০।

২২ ২২
image of sea

কাজ়ুকো জাপানে ফিরে সকলকে জানান সেই দ্বীপের কথা। সেখানে কী ঘটেছিল, সে সব কথা। ওই দ্বীপের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে জাপান সরকার। শেষ পর্যন্ত ১৯ জনকে উদ্ধার করে আমেরিকার সেনা। শেষ হয় নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE