আফগানিস্তানের টোরা বোরায় লাদেনকে হাতের মুঠোয় পেয়েও ধরতে ব্যর্থ হয় মার্কিন সেনাবাহিনী। মহিলার ছদ্মবেশে মার্কিন সেনাকে বোকা বানিয়ে আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিলেন আল কায়দা প্রধান। সেখানে ছিলেন ২০১১ সাল পর্যন্ত। মার্কিন সেনাকে অপেক্ষায় রেখে রাতের অন্ধকারে ট্রাকের পিছনে চেপে আফগানিস্তান ছেড়েছিলেন লাদেন, এমনটাই মনে করেন অভিযানে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিআইএ কর্তারা।
আফগানিস্তানের হামলা থেকে বরাতজোরে প্রাণে বাঁচার পর সীমান্ত পেরিয়ে সপরিবারে পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদে আশ্রয় নেন ওসামা। ১০ বছর পাকিস্তানের আশ্রয়ে সংগঠনকে আবারও এক ছাতার তলায় আনার চেষ্টা করেছিলেন লাদেন। ২০১১ সালে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের অ্যাবটাবাদে অভিযান চালিয়ে লাদেনকে হত্যা করে মার্কিন সেনা। রাতের অন্ধকারে সেনা পাঠিয়ে নিকেশ করা হয়েছিল আল কায়দা প্রধানকে।
সেই হামলায় লাদেন ও তাঁর পরিবারের বেশ কয়েক জন নিহত হয়েছেন বলে আমেরিকা দাবি জানিয়েছিল। অ্যাবটাবাদে প্রায় নিশ্ছিদ্র দুর্গে তিন স্ত্রী এবং ১৭ জন ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকতেন ওসামা। প্রায় ছ’বছর ধরে সেখানে আত্মগোপন করেছিলেন। ওই বাড়িরই তিন তলায় খোঁজ মেলে লাদেনের। মার্কিন নেভি সিলের কম্যান্ডোদের বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই হামলায় মারা যান লাদেনের প্রিয় পুত্র হামজ়া, প্রথমে এমনটাই দাবি ছিল আমেরিকার।
ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার বছর চারেক পরে অ্যাবটাবাদের আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়া নথিপত্র প্রকাশ করেছে মার্কিন সরকার। সেখানেই পাওয়া গিয়েছে ওসামার লেখা চিঠিপত্র। মিলেছিল প্রশিক্ষণের নানা ভিডিয়ো, একাধিক পর্ন ভিডিয়োও। সেই নথির মধ্যে আল কায়দার এক শীর্ষনেতাকে উল্লেখ করা একটি চিঠি পাওয়া গিয়েছিল। সেখানে বিন লাদেন লিখেছিলেন, বহু দিন আগেই হামজ়াকে অ্যাবটাবাদ থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আমেরিকা বার বার হামজ়ার মৃত্যুর দাবি তুললেও ২০১৭ সালে একটি রিপোর্টে প্রকাশিত হয় পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন আল কায়দার ‘যুবরাজ’। ২০০১-এ আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা যখন তালিবানের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে তাদের কোণঠাসা করে ফেলে, সেই সময়ই সেখান থেকে পালিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নেন হামজ়া বিন লাদেন। সঙ্গে প্রাক্তন আল কায়দা প্রধান অল জাওয়াহিরি। ২০২২ সালে তাকেও মেরে ফেলে আমেরিকা।
২০১৯ সালে হামজ়ার মাথার দাম ১০ লক্ষ ডলার বলে ঘোষণা করেছিল আমেরিকা। সেই বছরই রাষ্ট্রপুঞ্জের ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ নিষিদ্ধ জঙ্গিদের তালিকায় হামজ়ার নামও অন্তর্ভুক্ত করে। আমেরিকার ঘোষণার পর হামজ়ার নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয় লাদেনের মাতৃভূমি সৌদি আরব। আমেরিকার ধারণা, সন্ত্রাসবাদের ভবিষ্যৎ মুখ হয়ে উঠতে চলেছেন হামজ়া।
সেই বছরেরই শেষের দিকে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সদর্পে ঘোষণা করেছিলেন, এক বিমান হামলায় হত্যা করা হয়েছে লাদেনের এই উত্তরসূরিকে। হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে তিনি জানান, পেন্টাগনের সন্ত্রাসবিরোধী এক অভিযানে নিহত হয়েছেন হামজ়া। তবে সেই অভিযান কবে ও কোথায় চালানো হয়েছিল সে সম্পর্কিত কোনও বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়নি।
হামজ়া বিন লাদেনের বয়স ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। ৯/১১-র নেতৃত্বে থাকা মহম্মদ আটার মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। ২০২৪ সালে সংবাদমাধ্যম ‘দ্য মিরর’-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে আত্মগোপন করে আছেন লাদেন-পুত্র। সঙ্গে রয়েছেন তাঁর ভাই আবদুল্লাহ বিন লাদেন। সেখান থেকেই জঙ্গি সংগঠনটির হাল ধরেছেন দুই সহোদর।
২০১৫-য় এক অডিয়োবার্তায় শোনা গিয়েছিল, সিরিয়ায় জঙ্গিদের জোট বাঁধার কথা বলছেন হামজ়া। তাঁর বক্তব্য ছিল, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় লড়াই চালালে ‘মুক্ত প্যালেস্টাইন’-এর পথ প্রশস্ত হবে। এক বছর পরে আর একটি বার্তায় বাবার পথ অনুসরণ করে তিনি নিজেদের দেশ, সৌদি আরব সম্পর্কে বলেছিলেন, সেখানকার নেতৃত্বকে পদচ্যুত করতে হবে। হামজ়া কোথায়, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও কোনও কোনও সূত্রের দাবি, ইরানে মায়ের সঙ্গে বেশ কিছু বছর কাটিয়েছেন তিনি।
তবে মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনী এফবিআই-এর ধারণা ছিল, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সিরিয়া ও ইরানেই ঘোরাফেরা করতেন হামজ়া। রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট অনুযায়ী, আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে ওসামা বিন লাদেনের ছেলে হামজ়ার মতো আল কায়দার শীর্ষনেতারা লুকিয়ে থাকতে পারেন। লাঘমান, পাকতিকা, কন্দহর, গজনী ও জ়াবুল প্রদেশে রয়েছে কয়েকশো আল কায়দা জঙ্গি।
আর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, আল কায়দার সদস্যেরা সহজেই স্থানীয় মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। স্থানীয় গোষ্ঠীর লড়াইয়ের সঙ্গেও নিজেদের জড়িয়ে ফেলে তারা। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ‘সন্ত্রাসের রাজপুত্র’ হামজ়ার সুরক্ষায় ৪৫০ জন স্নাইপার মোতায়েন থাকে। আফগানিস্তানের মাটিতে বসে আল কায়দার সংগঠন ঢেলে সাজছে এবং তার নেতৃত্বে থাকছেন জুনিয়র লাদেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy