All need to know about Avadhut Sathe, stock-market trainer fined and banned by SEBI dgtl
Avadhut Dinkar Sathe
শেখাতেন শেয়ার কেনাবেচার কৌশল, দিয়েছিলেন এক লাখ কোটিপতি তৈরির প্রতিশ্রুতি! সেবির জালে খ্যাতনামী ‘অবৈধ শেয়ারগুরু’
অবধূতের জন্ম মুম্বইয়ের দাদরে। পরে মুলুন্ডে চলে যান। অবধূত পড়াশোনা করেছেন মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। প্রথমে ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এবং পরে সফ্টঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করেন তিনি।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:৪২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
২০৩১ সালের মধ্যে এক লক্ষ কোটিপতি তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এখন তিনি এবং তাঁর শেয়ার কেনাবেচার কৌশল শেখানোর সংস্থাই ৬ কোটির বেশি লোকসানের মুখে। শুধু তাই নয়, সিক্যুরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি)-র নজরে পড়েছেন তিনি। নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়ে তাঁর আয় করা ৫৪৬ কোটি টাকা বাজেয়াপ্তেরও নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা।
০২১৯
কথা হচ্ছে সুপরিচিত শেয়ারবাজার প্রশিক্ষক তথা প্রভাবশালী অবধূত সাঠেকে নিয়ে। ‘অবধূত সাঠে ট্রেডিং অ্যাকাডেমি প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থার মালিক তিনি। শেয়ার কেনাবেচার কৌশল শেখানোর কাজ করে সংস্থাটি।
০৩১৯
সেই শেয়ারবাজার প্রশিক্ষকই এখন সেবির তদন্তের মুখে। অবধূত এবং তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করেছে সেবি। তাঁকে এবং তাঁর সংস্থাকে ‘সিকিউরিটিজ় মার্কেট’ থেকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি সংস্থার প্রায় ৫৪৬ কোটি টাকা বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেবির অভিযোগ, নিয়ম-বহির্ভূত উপায়ে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়ে ওই টাকা আয় করেছিলেন অবধূত এবং তাঁর সংস্থা।
০৪১৯
কিন্তু কে এই অবধূত সাঠে? সেবির তদন্তের মুখে পড়া সাঠে বহু দিন ধরেই ভারতীয় ব্যবসায়ী মহলে পরিচিত নাম।
০৫১৯
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, অবধূতের জন্ম মুম্বইয়ের দাদরে। পরে মুলুন্ডে চলে যান। অবধূত পড়াশোনা করেছেন মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। প্রথমে ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এবং পরে সফ্টঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করেন তিনি। ১৯৯৩ সালে পড়াশোনা শেষ হয় তাঁর।
০৬১৯
ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জনের পর অবধূত বেশ কয়েক বছর আমেরিকা, সিঙ্গাপুর এবং অস্ট্রেলিয়ায় চাকরি করেন। পরে ভারতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। বিনিয়োগ এবং ব্যবসায় সাফল্য পাওয়ার পর ২০০৮ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
০৭১৯
বহু বছর ধরে ভারতীয় শেয়ারবাজারে বিচরণ রয়েছে অবধূতের। ২০০৮ সালে ‘অবধূত সাঠে ট্রেডিং অ্যাকাডেমি প্রাইভেট লিমিটেড (এএসটিএপিএল)’ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। কয়েক বছরের মধ্যেই এএসটিএপিএল-কে ভারতের সবচেয়ে চর্চিত শেয়ারবাজার সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ সংস্থাগুলির একটিতে পরিণত করেন।
০৮১৯
১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে শেয়ারবাজারে কেনাবেচার কৌশল শেখানোর জন্য সেমিনার, কর্মশালা এবং ‘মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম’-এর আয়োজন করে আসছেন অবধূত। তার থেকে বেশ মোটা অঙ্ক আয়ও করতেন তিনি।
০৯১৯
অবধূত নিজের পরিচয় দিতেন এক জন ‘অর্থ এবং শেয়ারবাজার সংক্রান্ত ব্যবসায়ী, প্রশিক্ষক এবং পরামর্শদাতা’ হিসাবে। লিঙ্কড্ইন প্রোফাইল অনুযায়ী সাঠে বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। এর মধ্যে ‘সাধন অ্যাডভাইজ়ার্স এলএলপি’ (২০১০ সাল থেকে অংশীদার), ‘সাধন ভেঞ্চার্স’ (২০০৮ সাল থেকে মালিক) এবং ‘ভেঞ্চারইন্টেলেক্ট সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেড’ (২০০৮ সাল থেকে পরিচালক) অন্যতম।
১০১৯
এএসটিএপিএল-এর দাবি, মুম্বই শহর তথা সারা দেশের হাজার হাজার খুচরো বাজার অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ দেন অবধূত। অবধূত তাঁর গ্রাহকদের পরামর্শ দিতেন, ঠিক কোন শেয়ারে বিনিয়োগ করলে নিশ্চিত লাভ হবে। পরামর্শ দেওয়ার পরিবর্তে টাকা নিতেন। ২০৩১ সালের মধ্যে এক লক্ষ কোটিপতি তৈরির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন অবধূত।
১১১৯
অবধূত এবং তাঁর সংস্থা এএসটিএপিএল-এর প্রচারের রমরমা এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে নিশ্চিত এবং প্রচুর লাভের যে দাবি তারা করছিলেন, তা সেবির নজরে আসে ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে। অবধূত এবং তাঁর সংস্থার কার্যক্রম নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করে সেবি।
১২১৯
২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৯ অক্টোবর— এই সময়কালে অবধূত এবং তাঁর সংস্থা কী ভাবে আয় করেছে, তা নিয়ে বিস্তৃত তদন্ত শুরু করে সেবি। সেই তদন্ত চলাকালীনই প্রকাশ্যে আসে ‘শেয়ারগুরু’র কীর্তি।
১৩১৯
সেবির অভিযোগ, তাঁর সংস্থার শেয়ারবাজার সংক্রান্ত বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি হওয়া গ্রাহকদের নির্দিষ্ট শেয়ারে লেনদেন করতে বাধ্য করেছিলেন অবধূত। গ্রাহকেরা ভাবতেন, তাঁরা শেয়ারবাজার নিয়ে শিখছেন। অন্য দিকে অবধূত নিজের কার্যসিদ্ধি করছিলেন।
১৪১৯
কোনও বিনিয়োগ-পরামর্শদাতার রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই অবধূত তাঁর গ্রাহকদের শেয়ার কেনাবেচার পরামর্শ দিচ্ছিলেন এবং তার জন্য টাকা আদায় করছিলেন বলেও দাবি করেছে সেবি। বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার পর্যবেক্ষণ, সাঠে এবং এএসটিএপিএল ৩.৩৭ লক্ষেরও বেশি গ্রাহকের কাছ থেকে ৬০১.৩৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিলেন।
১৫১৯
সেবি আরও অভিযোগ তুলেছে, অবধূতের সংস্থাটি কেবল লাভজনক ব্যবসা প্রদর্শন করেছিলেন, যা গ্রাহকদের মধ্যে অনেক টাকা লাভের ভ্রম তৈরি করেছিল। নতুন শিক্ষার্থীদের প্রলুব্ধ করার জন্য লাইভ বাজার তথ্য এবং ট্রেড পারফরম্যান্স ব্যবহার করা হয়েছিল বলেও দাবি।
১৬১৯
সেবির সদস্য কমলেশ চন্দ্র ভার্শনে জানিয়েছেন, তদন্তে উঠে এসেছে যে অবধূত এবং এএসটিএপিএল যৌথ এবং পৃথক ভাবে অবৈধ উপায়ে ৫৪৬.১৬ কোটি টাকা আয় করেছে। সেবির এ-ও দাবি, গ্রাহকদের কাছ থেকে শেয়ারের নামে সংগৃহীত টাকা ঘুরপথে এএসটিএপিএল এবং অবধূতের অ্যাকাউন্টেই ঢুকছিল।
১৭১৯
সেই তদন্তের পরেই সেবির কোপে পড়েছেন অবধূত এবং তাঁর সংস্থা। সেবি জানিয়েছে, অবধূত এবং তাঁর সংস্থার বিভ্রান্তিকর কার্যকলাপ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্তও অব্যাহত ছিল। অবধূত এবং এএসটিএপিএল-এর বিরুদ্ধে ১২৫ পৃষ্ঠার অন্তর্বর্তিকালীন আদেশ এবং শো-কজ় নোটিসও জারি করেছে সেবি।
১৮১৯
সেই নোটিসে অবধূত এবং তাঁর সংস্থাকে অনিবন্ধিত বিনিয়োগ পরামর্শমূলক কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে সেবি। অতীতের লাভ বা অংশগ্রহণকারীদের সাফল্যের গল্প শুনিয়ে করা প্রচার বা বিজ্ঞাপনেও নিষেধাজ্ঞা চেপেছে।
১৯১৯
পাশাপাশি, প্রশিক্ষণের সময় বাজারের লাইভ তথ্য ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে অবধূত এবং এএসটিএপিএল-র বিরুদ্ধে। শেয়ারবাজার প্রশিক্ষকের বেআইনি ভাবে লাভ করা ৫৪৬.১৬ কোটি টাকাও বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছে সেবি।