All need to know about chilling murder story of Alcasser girls from Spain dgtl
The Alcasser Murders
যোনিতে অস্ত্রের আঘাত, কাটা হয় স্তন! নির্মম পরিণতি হয় ধর্ষিতা তিন কিশোরীর, ‘আলকাজ়ার গার্লস’-এর তদন্তে ধন্দে পড়ে পুলিশও
১৯৯২ সালের ১৩ নভেম্বর। নাইটক্লাবে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিল স্পেনের ভ্যালেন্সিয়া কাউন্টির আলকাজ়ারের বাসিন্দা তিন কিশোরী। আর ফেরেনি তারা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৫ ১২:১২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
নারীদের উপর নির্যাতনের অনেক নৃশংস ঘটনার সাক্ষী মানুষ। এর মধ্যে কিছু ঘটনার কথা অনেকেই জানেন। আবার কিছু ঘটনা অজানা রয়ে গিয়েছে। সেই ঘটনাগুলির মধ্যে অন্যতম স্পেনের ভ্যালেন্সিয়া কাউন্টির আলকাজ়ারের তিন কিশোরীর ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ড।
০২২২
একটি পার্টিতে যাওয়ার জন্য অচেনা সওয়ারির গাড়িতে লিফ্ট নিয়েছিল স্কুলপড়ুয়া তিন কিশোরী। এর পর আর পার্টিতে পৌঁছোয়নি তারা। ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছিল তিন ছাত্রীকে। তার আগে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয় তাদের স্তন ও যোনিতে। পরে দেহগুলি মিলেছিল একটি গর্ত থেকে।
০৩২২
৩৩ বছর আগেকার এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত এখনও অধরা। তবে তার এক সঙ্গী ধরা পড়েছিল। নৃশংসতার কারণে স্পেনের কুখ্যাত অপরাধের তালিকাতেও পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে নিয়েছে ঘটনাটি।
০৪২২
ধর্ষণ করে খুন করা সেই তিন কিশোরীর নাম ছিল মিরিয়াম গার্সিয়া ইবোরা, আন্তোনিয়া ‘টোনি’ গোমেজ রড্রিগেজ় এবং ডেজ়িরে হার্নান্দেজ় ফোক। স্পেনের ভ্যালেন্সিয়া কাউন্টির আলকাজ়ারের বাসিন্দা ছিল ওই তিন কিশোরী। ফলে সংবাদমাধ্যমের দৌলতে তাদের পরিচয় হয়ে যায় ‘আলকাজ়ার গার্লস’ নামে।
০৫২২
ঘটনাটি ঘটে ১৯৯২ সালে ১৩ নভেম্বর। স্কুলের পার্টিতে যাওয়ার জন্য নাইটক্লাবে নিয়ে যেতে মিরিয়ামের বাবার কাছে বায়না জুড়েছিল তিন কিশোরী। কিন্তু মিরিয়ামের বাবা ফার্নান্দো গার্সিয়া সে সময় ইনফ্লুয়েঞ্জায় কাবু। ফলে বাধ্য হয়েই তাঁর উপর ভরসা না করে তিন জনে হেঁটে হেঁটে পার্টিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
০৬২২
পিকাসেন্ট শহরের যে নাইটক্লাবে স্কুলের পার্টি ছিল, সেই ‘কুলার্স’ নাইটক্লাব মিরিয়ামদের বাড়ি থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে ছিল। ১৩ নভেম্বরের রাতে সেজেগুজে সেখানে যাওয়ার জন্যই বাড়ি থেকে বেরোয় বছর ১৪-১৫-র তিন কিশোরী।
০৭২২
পথে এক কমবয়সি দম্পতির কাছে লিফ্ট নিয়েছিল মিরিয়াম, আন্তোনিয়া এবং ডেজ়িরে। গাড়ি করে তিন জনকে পিকাসেন্ট শহরের একটি পেট্রল পাম্প পর্যন্ত পৌঁছে দেন ওই দম্পতি।
০৮২২
পেট্রল পাম্প থেকেও বেশ কিছুটা দূরে ছিল নাইটক্লাবটি। তাই রাতের বেলা সেখানে পৌঁছোনোর জন্য ‘হিচহাইকিং (অপরিচিতদের থেকে লিফ্ট নিয়ে একটু একটু করে গন্তব্যের দিকে এগোনো)’ করার কথা মাথায় এসেছিল তিন জনের।
০৯২২
পেট্রল পাম্পের কাছে এক স্থানীয়ের মতে, ১৩ নভেম্বর রাতে একটি সাদা রঙের ওপেল কোরসা সেডান গাড়িতে লিফ্ট নিয়েছিল তিন কিশোরী। সে গাড়িতে একাধিক পুরুষ বসেছিলেন। তখনই মিরিয়ামদের জনসমক্ষে শেষ বারের মতো দেখা গিয়েছিল বলে দাবি।
১০২২
এর পর তিন কিশোরীর আর কোনও খোঁজ মেলেনি। হন্যে হয়ে খুঁজেও প্রায় আড়াই মাস তাদের কূল করতে পারেনি পুলিশ এবং পরিবারের সদস্যেরা। অবশেষে ঘটনার ৭৫ দিন পর ১৯৯৩ সালের ২৭ জানুয়ারি মিরিয়ামদের দেহাবশেষ উদ্ধার হয় একটি গর্ত থেকে।
১১২২
তদন্ত চলাকালীন মিরিয়ামদের অপহরণ করে ধর্ষণ এবং তার পর খুনের অভিযোগে মূল অভিযুক্ত হিসাবে নাম উঠে এসেছিল আন্তোনিও অ্যাঙ্গলেসের। সঙ্গী ছিলেন তাঁর সহযোগী মিগুয়েল রিকার্ট।
১২২২
পুলিশের কাছে বয়ানে রিকার্ট জানিয়েছিলেন, গাড়িতে করে তিন জনকে নাইটক্লাবে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দিলেও তাঁরা সেখানে যাননি। গাড়ি পিকাসেন্ট শহরের ওই নাইটক্লাবে না থামায় বিপদ আঁচ করতে পারে তিন কিশোরী। চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে তারা। তা সত্ত্বেও গাড়ি থামেনি।
১৩২২
রিকার্টের বয়ান অনুযায়ী, তিন কিশোরী চিৎকার করায় গাড়ির মধ্যে তাদের একটি হ্যান্ডগান দিয়ে আঘাত করতে থাকেন আন্তোনিও। এর পর তাঁরা পৌঁছোন শহর থেকে দূরে লা রামোনা নামের একটি গ্রামে। পাহাড়ঘেরা ওই নির্জন জায়গায় একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে তিন জনকে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৪২২
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে রিকার্ট জানায়, ওই পোড়ো বাড়িতে একে একে দুই কিশোরীকে ধর্ষণ করেন আন্তোনিও এবং তাঁর সঙ্গীরা। এর পর বাইরে বেরিয়ে যান খাবার আনতে। ঘণ্টাদুয়েক পরে ফিরে এসে তৃতীয় জনকে ধর্ষণ করেন তাঁরা।
১৫২২
ধর্ষণের পরেও ছাড় পায়নি মিরিয়ামেরা। তাদের উপর সারা রাত ধরে চলতে থাকে নির্মম শারীরিক নির্যাতন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, ডেজ়িরের ডান স্তনে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। স্তনের একাংশ কেটেও করা হয়। অভিযোগ, তার পিঠে দু’বার ছুরির কোপও মারে অপরাধীরা।
১৬২২
রিকার্টের দাবি, ডেজ়িরের মতোই তার দুই বন্ধুর উপরও অকথ্য অত্যাচার চলেছিল। মিরিয়ামের যোনিতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছিলেন আন্তোনিওরা। গোটা রাত ধরে মিরিয়াম এবং আন্তোনিয়াকে লাঠি দিয়ে বেদম পেটানো হয় বলেও তদন্তে উঠে আসে।
১৭২২
জানা গিয়েছিল, সারা রাত অত্যাচারের পর তিন কিশোরীকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় একটি গর্তের কাছে। রিকার্টের দাবি, ওই পরিত্যক্ত বাড়ির অদূরে আগে থেকেই গর্ত খুঁড়ে রাখা হয়েছিল। সেখানেই গুলি করে প্রথমে খুন করা হয় তিন কিশোরীকে। তার পর তাদের গর্তে ফেলে মাটি চাপা দিয়ে দেয় অপরাধীরা।
১৮২২
আড়াই মাস পরে বৃষ্টিতে ওই গর্তের মাটি সরে গিয়ে তিনটি কঙ্কাল বেরিয়ে আসে। উদ্ধার করা হয় দেহাবশেষগুলি। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছিল রিকার্টের একটি গ্লাভস এবং আন্তোনিওর ভাই মার্টিনের নামের একটি নোট। একটি গুলির খোলও উদ্ধার হয়েছিল ঘটনাস্থল থেকে।
১৯২২
সেই সূত্র ধরেই রিকার্টের কাছে পৌঁছেছিল পুলিশ। তাঁকে ১৭০ বছরের কারাবাসের সাজা দিয়েছিল আদালত। তবে ২১ বছর জেল খেটেছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে জেলের বাইরে বেরিয়ে আসেন রিকার্ট।
২০২২
মিরিয়ামদের দেহাবশেষের সঙ্গে সাতটি চুলও উদ্ধার করেছিল পুলিশ। সেই চুলগুলির ডিএনএ পরীক্ষা করে চমকে যায় পুলিশ। কারণ সেই ডিএনএ-র সঙ্গে খুন হওয়া তিন কিশোরী কিংবা রিকার্ট বা আন্তোনিও— কারও মিল ছিল না। তা হলে এই চুলগুলি কার? তবে কি খুনে তৃতীয় কেউ জড়িত ছিলেন? সে রহস্যের সমাধান হয়নি।
২১২২
আন্তোনিও অবশ্য আজও অধরা। অনেকের দাবি, আয়ারল্যান্ডে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। আবার অনেকের মতে, ভুয়ো পাসপোর্টে ব্রাজ়িলে বসবাস করছেন। ইন্টারপোলের শত চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁর খোঁজ মেলেনি।
২২২২
‘আলকাজ়ার গার্লস’দের ঘটনা ঠাঁই পেয়েছে ক্রাইম থ্রিলারের পাতায়। জেনি অ্যাশফোর্ডের ‘দ্য ফেসলেস ভিলেন: ভলিউম থ্রি’তে উঠে এসেছেন আন্তোনিওরা। অন্য দিকে, ‘দি আলকাজ়ার মার্ডারস’ নামের তথ্যচিত্রের পাঁচ পর্ব জুড়ে দেখা যায় মিরিয়ামদের শিউরে ওঠার মতো কাহিনি।