All you need to know about Oleg Lyalin, a KGB Spy whose Divorce decision triggered the biggest Soviet spy purge in britain dgtl
Oleg Lyalin
পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন, স্ত্রীকে ছাড়তে এমআই৫-এর দ্বারস্থ হন কেজিবির চর! নির্মূল হয় ব্রিটেনকে পঙ্গু করার সোভিয়েত-স্বপ্ন
তামারা নামে এক তরুণীকে বিয়ে করেছিলেন ওলেগ। কিন্তু অতিরিক্ত মদ্যপান, রাতের পর রাত লন্ডনের ওয়েস্ট এন্ডে বিলাসযাপন এবং সহকর্মী ইরিনা টেপলিয়াকোভার সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়ানোয় স্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে ওলেগের।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:৫৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
১৯৭১ সালের গ্রীষ্ম। এক দিন সন্ধ্যায় উত্তর লন্ডনের একটি থানায় ঢুকে অদ্ভুত এক অনুরোধ করেন এক যুবক। যুবকের দাবি ছিল, স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহে ইতি টানতে তাঁকে ব্রিটেন থেকে বহিষ্কার করা হোক।
০২১৯
কিন্তু যুবক জানতেন না তাঁর এই সিদ্ধান্ত কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সোভিয়েত গুপ্তচর নির্মূল অভিযানের সূত্রপাত ঘটাবে। কারণ ওই যুবক নিজে ছিলেন সোভিয়েত যুগের গুপ্তচর সংস্থা কেজিবির চর।
০৩১৯
ওই যুবকের নাম ছিল ওলেগ লিয়ালিন। কেজিবির কুখ্যাত বিভাগ ‘ভি’-র ৩২ বছর বয়সি ক্যাপ্টেন। বলা হয়, ‘ভি’-এর চরেরা কেজিবির হয়ে নাশকতা ছড়ানো এবং গুপ্তহত্যার মতো কাজ করতেন।
০৪১৯
কেজিবির চর হলেও ওলেগ টেক্সটাইল বিশেষজ্ঞ হিসাবে লন্ডনে সোভিয়েতের বাণিজ্য দেখাশোনার কাজ করতেন। যুদ্ধের সময় ব্রিটেনকে কী ভাবে পঙ্গু করা যায় তার পরিকল্পনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।
০৫১৯
মনে করা হয় রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করা, রেলপথ ধ্বংস করা, তেজস্ক্রিয় বর্জ্য দিয়ে উপকূলীয় জল দূষিত করা এবং খাবার সরবরাহ রোধ করার মতো দায়িত্ব ছিল ওলেগের কাঁধে।
০৬১৯
তবে দক্ষ চর ওলেগকে ডুবিয়েছিল তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। তাঁকে ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থা এমআই৫-এর নজরে এনে ফেলেছিল।
০৭১৯
তামারা নামে এক তরুণীকে বিয়ে করেছিলেন ওলেগ। কিন্তু অতিরিক্ত মদ্যপান, রাতের পর রাত লন্ডনের ওয়েস্ট এন্ডে বিলাসযাপন এবং সহকর্মী ইরিনা টেপলিয়াকোভার সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়ানোয় স্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে ওলেগের। সম্পর্কে তিক্ততা আসে।
০৮১৯
বিয়ে নিয়ে হতাশায় ভুগছিলেন ওলেগ। তাঁর জীবন নাকি ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছিল। চাইছিলেন, স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটাতে। কিন্তু লন্ডনে থাকাকালীন তা সম্ভব ছিল না। আর লন্ডন থেকে মস্কো ফেরারও উপায় ছিল না। কারণ, তা হলেই কেজিবি কর্তাদের রোষের মুখ পড়তে হত তাঁকে।
০৯১৯
অনেক ভেবে এক অদ্ভুত ফন্দি আঁটেন তিনি। ওলেগের মনে ধারণা তৈরি হয়, কোনও ভাবে তিনি যদি এমআই৫-র কাছে ধরা দেন, তা হলে ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থা তাঁর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করবে। ব্রিটেন থেকে বার করে দেওয়া হবে তাঁকে। ফলে তিনি অনায়াসে কেজিবির রোষের মুখে না পড়েই মস্কো ফিরতে পারবেন। স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে শুরু করতে পারবেন নতুন জীবন।
১০১৯
যে সময়ের কথা হচ্ছে তখন আমেরিকা এবং রাশিয়ার মধ্যে ঠান্ডা যুদ্ধ তুঙ্গে। দিকে দিকে চরবৃত্তি চলছে। এমআই৫ তখনও কিম ফিলবি এবং অ্যান্থনি ব্লান্টের মতো ব্রিটিশ নাগরিকদের সোভিয়েতের হয়ে চরবৃত্তি করা নিয়ে বিচলিত ছিল। মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-ও ব্রিটেনকে সতর্ক করেছিল যে, পশ্চিমি দেশগুলিকে বিভ্রান্ত করার জন্য চর পাঠাতে পারে কেজিবি।
১১১৯
সেই পরিস্থিতিতে উত্তর লন্ডনের একটি থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন ওলেগ। খবর পৌঁছোয় তৎকালীন এমআই৫ প্রধান মার্টিন ফার্নিভাল জোন্সের কাছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝেছিলেন জোন্স।
১২১৯
জোন্স এ-ও বুঝতে পারেন, তিনি যদি আমেরিকাকে বিষয়টি জানান তা হলে সিআইএ-র তৎকালীন প্রধান জেমস অ্যাঙ্গেলটন পদক্ষেপ করবেন। সোভিয়েতকে কাঠগোড়ায় দাঁড় করানো হবে। অনেক জলঘোলা হবে। আর তাতে ব্রিটেনে থাকা বাকি কেজিবি চরেরা সতর্ক হয়ে যাবেন।
১৩১৯
বিষয়টি পাঁচকান যাতে না হয়, সেই ব্যবস্থা করেন জোন্স। পুরো বিষয়টি মস্কোর চালাকি কি না তা বুঝতে ওলেগের বিয়ে নিয়ে খোঁজ নেয় এমআই৫। নিশ্চিত হওয়ার পর এমআই৫-কে সাহায্য করে ব্রিটেনে থাকা কেজিবির চরদের চিনিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে ওলেগকে সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন জোন্স। রাজিও হয়ে যান ওলেগ।
১৪১৯
এর পরের কয়েক মাস ধরে চুপিসারে নিজেদের অভিযান চালিয়ে যায় এমআই৫। ওলেগের সাহায্যে ব্রিটেনে থাকা কেজিবি চরদের পরিচয় জেনে ফেলে ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থা। শুরু করে ব্রিটেনে থাকা সোভিয়েত চরদের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার কাজ।
১৫১৯
তবে এর মধ্যেই একটি ভুল করে বসেন ওলেগ। ১৯৭১ সালের ৩০ অগস্ট মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর জন্য মধ্য লন্ডনে তাঁকে গ্রেফতার করে একটি থানার পুলিশ। এর পরেই সাবধান হয়ে যায় কেজিবি।
১৬১৯
সোভিয়েত দূতাবাসের এক কর্মকর্তা ওলেগকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তাঁকে মস্কো ফেরার নির্দেশও দেওয়া হয়। বিপদ বুঝতে পারেন ওলেগ। বুঝতে পারে এমআই৫-ও।
১৭১৯
মস্কো যাওয়ার পরিবর্তে কেজিবির চোখে ধুলো দিয়ে ৩ সেপ্টেম্বর ইরিনার সঙ্গে পালিয়ে যান ওলেগ। তাঁকে ব্রিটেনেরই গোপন আস্তানায় পাঠানো হয়। অন্য দিকে, সেই মাসের শেষের দিকে ‘অপারেশন ফুট’ শুরু করে ব্রিটেন। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত ১০৫ জন সোভিয়েত কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করে সে দেশের সরকার। ক্রেমলিনের গুপ্তচরদের নেটওয়ার্ক এক ঝটকায় ভেঙে পড়ে।
১৮১৯
এর পরেই অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করে কেজিবি। সংস্থায় কোনও ডবল এজেন্ট রয়েছে কি না তা নিশ্চিত করার জন্য নিজেদেরই কর্তাদের উপর নজরদারি জোরদার করে। শেষ পর্যন্ত ‘ভি’ বিভাগ বন্ধ করে দেয় তারা।
১৯১৯
এর মধ্যেই ওলেগের কীর্তির কথা জানতে পারে কেজিবি। ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। তবে আর মস্কো ফেরেননি ওলেগ। ব্রিটেনে নতুন পরিচয়ে থাকতে শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত উত্তর ইংল্যান্ডেই বসবাস করতেন তিনি।