Ammonium nitrate Fuel Oil may be used Red Fort blast, all need to know about chemical dgtl
Delhi Blast
জঙ্গিদের ‘তুরুপের তাস’! দামে কম, সহজলভ্য সেই রাসায়নিকই কি ব্যবহার করা হয়েছে দিল্লির বিস্ফোরণে? কী এই এএনএফও?
এএনএফও একটি অত্যন্ত দাহ্য মিশ্রণ, যা সাধারণত শিল্পে ব্যবহৃত বিস্ফোরকগুলিতে ব্যবহৃত হয়। এই রাসায়নিকের দাম যেমন কম, তেমনই মারাত্মক এর ঘাতক প্রকৃতি। আর সে কারণেই নাশকতা ছড়াতে জঙ্গিদের অন্যতম পছন্দ এই রাসায়নিক।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৫ ১২:৩৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লির লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণে ব্যবহার করা হয়েছিল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জ্বালানি তেল (অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ফুয়েল অয়েল বা এএনএফও)। প্রাথমিক তদন্তের পর তেমনটাই মনে করা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
০২২৩
সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী বিস্ফোরণস্থলের কাছে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। তবে ফরেন্সিক রিপোর্টের পরেই বিস্ফোরকের সঠিক প্রকৃতি নিশ্চিত করা সম্ভব।
০৩২৩
এএনএফও হল একটি অত্যন্ত দাহ্য মিশ্রণ, যা সাধারণত শিল্পে ব্যবহৃত বিস্ফোরকগুলিতে ব্যবহৃত হয়। এই রাসায়নিকের দাম যেমন কম, তেমনই মারাত্মক এর ঘাতক প্রকৃতি। আর সে কারণেই নাশকতা ছড়াতে জঙ্গিদের অন্যতম তুরুপের তাস হয়ে উঠেছে এই রাসায়নিক। অতীতেও অনেক হামলায় এই রাসায়নিক ব্যবহার করেছে জঙ্গিরা।
০৪২৩
এএনএফও-তে ৯৪ শতাংশ ছিদ্রযুক্ত প্রিলড অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থাকে, যা জ্বালানির জন্য জারক এবং শোষক হিসাবে কাজ করে। বাকি ছ’শতাংশ থাকে সাধারণ জ্বালানি তেল (রোড ডিজ়েল)।
০৫২৩
এএনএফও-এর ব্যবহার শুরু হয় ১৯৫০-এর দশকে। কয়লাখনি, ধাতব আকরিক খনি এবং বড় বড় নির্মাণে এই রাসায়নিক ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়। জল প্রতিরোধ ক্ষমতা, অক্সিজেন ভারসাম্য, উচ্চ বিস্ফোরণের কারণে কম খরচের এই রাসায়নিক অনেক শিল্পেই ব্যবহৃত হয়।
০৬২৩
আমেরিকায় বার্ষিক আড়াই হাজার টনেরও বেশি এএনএফও আনুমানিক ৯০ শতাংশ খনি শিল্পে ব্যবহৃত হয়। তুষারপাতের ঝুঁকি প্রশমনেও ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয় এএনএফও।
০৭২৩
এএনএফও একটি ‘টারশিয়ারি’ বিস্ফোরক। বিস্ফোরক হিসাবে এটি অসংবেদনশীল। অর্থাৎ, এটি বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য প্রাইমার বা বুস্টার (গৌণ বিস্ফোরক)-এর প্রয়োজন হয়। বলা ভাল এএনএফও এমন একটি ‘ব্লাস্টিং এজেন্ট’, যা কোনও উদ্দীপক ছাড়া বিস্ফোরিত হয় না।
০৮২৩
এএনএফও-এর মূল উপাদান অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কৃষি শিল্পে সার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। অনেক দেশে এই রাসায়নিকের কেনা-বেচা কেবলমাত্র উপযুক্ত লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্রেতাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
০৯২৩
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের জন্য অতীতে একাধিক শিল্পাঞ্চলে বড় বড় দুর্ঘটনাও ঘটেছে। এর মধ্যে অন্যতম ২০২০ সালে লেবাননের রাজধানী বেরুটের বন্দরের বিস্ফোরণ।
১০২৩
বিস্ফোরক হিসাবে এফ-১৫ এবং এএনএফও প্রথম বার ব্যাপক ভাবে ব্যবহার শুরু করে কর্সিকার সশস্ত্র গেরিলা বাহিনী ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ কর্সিকা বা এফএলএনসি। ১৯৮৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাস্তিয়ায় আয়কর ভবন উড়িয়ে দেওয়ার জন্য এএনএফও ব্যবহার করেছিল তারা।
১১২৩
১৯৭২ সালে একটি গাড়িবোমায় বিস্ফোরক হিসাবে এএনএফও ব্যবহার করেছিল আয়ারল্যান্ডের সশস্ত্র সংগঠন ‘আয়ারল্যান্ড রিপাবলিকান আর্মি’ বা আইআরএ।
১২২৩
২০০১ সালের ১৬ মার্চ চিনের শিজিয়াজুয়াং শহরে শিজিয়াজুয়াং বোমা হামলায় মোট ১০৮ জন নিহত এবং ৩৮ জন আহত হন। অল্প সময়ের মধ্যে চারটি অ্যাপার্টমেন্টের কাছে বেশ কয়েকটি এএনএফও বোমা বিস্ফোরণ ঘটে।
১৩২৩
জঙ্গিরা বিস্ফোরক তৈরিতে এএনএফও ব্যবহার করছে খবর পেয়ে ২০০৯ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের সোয়াত, চিত্রাল, মালাকান্দ জেলা-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় অ্যামোনিয়াম সালফেট, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট এবং ক্যালশিয়াম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে পাকিস্তান।
১৪২৩
২০১০ সালের জানুয়ারিতে আফগানিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইও অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের ব্যবহার, উৎপাদন, সংরক্ষণ, ক্রয় বা বিক্রয় নিষিদ্ধ করার একটি ডিক্রি জারি করেছিলেন। কারণ একটি রিপোর্টে উঠে এসেছিল, তালিবরা বিস্ফোরক তৈরিতে ওই রাসায়নিক ব্যবহার করেছে।
১৫২৩
২০১০ সালের এপ্রিলে গ্রিসের পুলিশ আথেন্সের কারিয়াসের একটি গোপন স্থান থেকে ১৮০ কেজি এএনএফও এবং বিস্ফোরক তৈরিতে অন্যান্য উপাদান বাজেয়াপ্ত করে। ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল ৬৭ কেজি এএনএফও-সহ ডাবলিনে দু’জন সন্দেহভাজন আইআরএ সদস্যকে আটক করা হয়েছিল।
১৬২৩
ফরিদাবাদের ফতেপুর তাগা গ্রামে ধৃত চিকিৎসক মুজ়াম্মিল শাকিলের ভাড়াবাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৩৬০ কেজি অত্যন্ত দাহ্য রাসায়নিক উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। ওই দাহ্য রাসায়নিকও অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
১৭২৩
এর পাশাপাশি, ওই ভাড়াবাড়ি থেকে অন্যান্য রাসায়নিক, রিএজেন্ট এবং দাহ্য পদার্থ উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও ফরিদাবাদের সঙ্গে দিল্লি বিস্ফোরণের কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা এখনও পরিষ্কার হয়নি।
১৮২৩
তবে দিল্লিতে লালকেল্লার কাছে গাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনায় জঙ্গিযোগের তত্ত্ব জোরালো হচ্ছে। ফরিদাবাদে বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনার সঙ্গে লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণের যোগ রয়েছে কি না, তা নিয়েও উদ্বেগ দানা বাঁধতে শুরু করেছে দেশবাসীর মনে।
১৯২৩
এরই মধ্যে বিভিন্ন সূত্র মারফত উঠে আসছে জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামার এক চিকিৎসকের নাম, মহম্মদ উমর। সংবাদমাধ্যমের একাংশে দাবি করা হচ্ছে, সিসি ক্যামেরায় প্রকাশ্যে আসা ফুটেজে দেখা গিয়েছে ওই চিকিৎসককেই। যদিও দিল্লি পুলিশ বা অন্য কোনও তদন্তকারী সংস্থা এ বিষয়ে সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য এখনও পর্যন্ত করেনি।
২০২৩
সোমবার সন্ধ্যার যে গাড়িটিতে বিস্ফোরণ হয়েছে, সেটির নম্বরপ্লেট হরিয়ানার। সেই সূত্র ধরে জনৈক মহম্মদ সলমন নামে এক ব্যক্তিকে সোমবার রাতেই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। বিস্ফোরণে উড়ে যাওয়া গাড়িটি তাঁরই নামে রেজিস্ট্রেশন করা আছে বলে দাবি পুলিশের।
২১২৩
যদিও জানা যাচ্ছে, পুলিশি জেরায় সলমন জানিয়েছেন, তিনি গাড়িটি পুলওয়ামার এক বাসিন্দাকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। তবে গাড়ির নথিপত্রে এখনও নামবদল হয়নি। এ বার সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, ওই গাড়িটির বর্তমান ‘মালিক’ ছিলেন পুলওয়ামার চিকিৎসক উমর।
২২২৩
বিস্ফোরণের পরে আশপাশের এলাকার বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। সিসি ক্যামেরার একটি ফুটেজ ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা লালকেল্লার কাছে একটি পার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে ছিল গাড়িটি। গাড়িটিতে নীল-কালো রঙের টি-শার্ট পরা এক ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছে ফুটেজে। এনডিটিভি-র এক প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, ওই ব্যক্তিই চিকিৎসক উমর।
২৩২৩
ফরিদাবাদকাণ্ডে গ্রেফতার দুই চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিল ও আদিল রাথারের সঙ্গেও তাঁর যোগ ছিল বলে দাবি করা হচ্ছে ওই প্রতিবেদনে। তাতে বলা হচ্ছে, দুই সহযোগীর গ্রেফতারির পরেই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন উমর। মুজাম্মিল এবং আদিলের গ্রেফতারির পরে তিনি ভয়ে ফরিদাবাদ থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। ঘাবড়ে গিয়েই ওই চিকিৎসক এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে দাবি সূত্রের।