Bollywood Actor’s Life Changed After Meeting a Spiritual Leader, Once Smoked and Drank Regularly dgtl
Shammi Kapoor
দৈনিক ১০০ সিগারেট, দেদার মদ্যপান! আধ্যাত্মিক গুরুর সংস্পর্শে মদ-সিগারেট ছেড়ে দিয়েছিলেন কপূর পরিবারের সন্তান
প্রেমে বার বার আঘাত পেয়ে মন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল বলি নায়কের। অন্য দিকে, সংসার পাতার ইচ্ছাও বাসা বেঁধেছিল তাঁর মনে। তখনই অভিনেতার জীবনে এসেছিলেন এক নারী। গুজরাতের গোহলি বংশের রাজকুমারী ছিলেন তিনি।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:৪৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর নেশায় নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন অভিনেতা। তাঁর দুই সন্তানের দায়িত্ব পড়েছিল দাদা-বৌদির উপর। সারা দিনে শ’খানেক সিগারেট খেতেন তিনি। এমনকি, নিয়মিত মদ্যপান করতেন বলি নায়ক। তারকা-সন্তানের এই পরিস্থিতি দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন কপূর পরিবারের সদস্যেরা। শেষ পর্যন্ত এক আধ্যাত্মিক গুরুর শরণাপন্ন হয়েছিলেন তাঁরা। তাঁকে দেখে নাকি সব রকম নেশা ত্যাগ করে দিয়েছিলেন বলি অভিনেতা শম্মী কপূর।
০২১৮
ব্যক্তিগত জীবনে নানা কারণে বারংবার আঘাত পেতে হয়েছিল শম্মীকে। কিশোর বয়সে সমবয়সি এক কিশোরীর প্রেমে পড়েছিলেন শম্মী। তাঁদের মধ্যে মিষ্টিমধুর সম্পর্ক থাকলেও তা বিয়ের পরিণতি পায়নি। সেই কিশোরী পড়াশোনার সূত্রে বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। শম্মীও তাঁর কেরিয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু মনে পুরনো প্রেম কাঁটার মতো বিঁধেছিল।
০৩১৮
শম্মীর জীবন আবার রঙিন হয়ে উঠেছিল বলি অভিনেত্রী গীতা বালির সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর। ‘রঙ্গিন রাতেঁ’ নামের হিন্দি ছবির শুটিংয়ের সময় পরিচয় হয়েছিল তাঁদের। পেশাগত সূত্রে আলাপ হলেও সে সম্পর্ক গড়়িয়ে গিয়েছিল প্রেমে। মেলামেশার চার মাসের মধ্যে গীতার সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েছিলেন শম্মী।
০৪১৮
১৯৫৫ সালে গীতাকে বিয়ে করেছিলেন শম্মী। বিয়ের পর এক পুত্র এবং এক কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন গীতা। কিন্তু গীতার সঙ্গে তাঁর সংসারজীবনের স্থায়িত্ব মাত্র দশ বছরের ছিল। বিয়ের দশ বছর পর স্মলপক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন গীতা। গুঞ্জন শোনা যায়, গীতাকে হারানোর পর মদে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন শম্মী।
০৫১৮
গীতার মৃত্যুর পর নিজেকে সম্পূর্ণ একা করে ফেলেছিলেন শম্মী। নিয়মিত মদ্যপান করতেন, এমনকি, মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান করাও শুরু করে ফেলেছিলেন তিনি। শেষে শম্মীর দুই সন্তানের দেখভালের দায়িত্ব নিতে হয়েছিল শম্মীর দাদা রাজ কপূর এবং বৌদি কৃষ্ণা কপূরকে (রাজের স্ত্রী)।
০৬১৮
কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল, গীতার মৃত্যুর পর ১৬ বছরের ছোট নায়িকা মুমতাজ়ের প্রেমে পড়েছিলেন শম্মী। তাঁকে নাকি বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৭ বছর বয়সি মুমতাজ়ের চোখে তখন ছিল কেরিয়ার গড়ার স্বপ্ন। শম্মী নাকি নায়িকাকে শর্ত দিয়েছিলেন যে, বিয়ের পর অভিনয়জগৎকে বিদায় জানাতে হবে। এই শর্তে রাজি ছিলেন না মুমতাজ়। তাই শম্মীর সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছিলেন নায়িকা।
০৭১৮
বার বার আঘাত পেয়ে মন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল শম্মীর। অন্য দিকে, সংসার পাতার ইচ্ছাও বাসা বেঁধেছিল তাঁর মনে। তখনই শম্মীর জীবনে এসেছিলেন নীলা দেবী। গুজরাতের গোহলি বংশের রাজকুমারী ছিলেন নীলা। নীলার সঙ্গে সখ্য ছিল রাজের কন্যা ঋতু নন্দের।
০৮১৮
ঋতুর বিয়ের সময় নীলাকে দেখে পছন্দ হয়েছিল কৃষ্ণার। শম্মীকেও সে কথা জানিয়েছিলেন কৃষ্ণা। দেরি না করে নীলাকে ফোন করেছিলেন অভিনেতা। টানা চার-পাঁচ ঘণ্টা কথা বলার পর নীলাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ফেলেন শম্মী। অভিনেতার প্রস্তাবে রাজিও হয়ে যান নীলা।
০৯১৮
১৯৬৯ সালে নীলাকে বিয়ে করেছিলেন শম্মী। কিন্তু বিয়ের পরেও মদ এবং সিগারেট থেকে নিজেকে দূরে সরাতে পারেননি অভিনেতা। এক সাক্ষাৎকারে নীলা জানিয়েছিলেন যে, সারা দিনে অন্তত ১০০ খানা সিগারেট খেতেন শম্মী। সুরাপানও নিয়মিত চলত তাঁর।
১০১৮
নীলা জানিয়েছিলেন, বিয়ের পর শম্মীর পরিস্থিতি দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। শম্মীর এই নেশা কী ভাবে ছাড়াবেন তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না কপূর পরিবারের অন্য সদস্যেরাও। শেষ পর্যন্ত কোনও উপায় না দেখে এক আধ্যাত্মিক গুরুর শরণাপন্ন হয়েছিলেন নীলা।
১১১৮
নীলার বাপের বাড়ির লোকেরা হাইদাখান বাবা নামের এক আধ্যাত্মিক গুরুকে শ্রদ্ধা করতেন। ১৯৭৪ সালে সেই গুরুকে নিজেদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তাঁরা। সেই সময় নীলার বাপের বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন শম্মীও।
১২১৮
গুঞ্জন শোনা যায়, গুরুর সঙ্গে পরিচয়পর্ব সারা নিয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না শম্মীর। নীলার পরিবারের অনুরোধ রাখতে ঘরের এক কোণে চুপচাপ বসেছিলেন অভিনেতা। মাঝেমধ্যে ক্যামেরায় সেই গুরুর ছবিও তুলছিলেন তিনি। তখনই অন্য রকম অভিজ্ঞতা হয় শম্মীর।
১৩১৮
শম্মী হঠাৎ লক্ষ করেছিলেন যে, গুরু একদৃষ্টে তাঁর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। সেই দৃষ্টির মধ্যে অন্য রকম কিছু ছিল বলে দাবি অভিনেতার। গুরুর সঙ্গে চোখাচোখি হওয়ার পর নিজের ভিতর অদ্ভুত রকমের পরিবর্তন অনুভব করতে শুরু করেছিলেন শম্মী।
১৪১৮
কোনও রকম জোর না করা সত্ত্বেও নাকি ধীরে ধীরে আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন শম্মী। এমনকি, নৈনিতালে গুরুর আশ্রমে যাওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন অভিনেতা। আশ্রমে গিয়েও অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল শম্মীর সঙ্গে। যে অভিনেতা মদ-সিগারেট-মাংস ছাড়া থাকতে পারতেন না, তিনি আশ্রমে যাওয়ার পর সেগুলির কিছুই নাকি স্পর্শ করেননি।
১৫১৮
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, নৈনিতালে গুরুর আশ্রমে যাওয়ার সময় প্রচুর সিগারেট এবং মদের বোতল সঙ্গে নিয়েছিলেন শম্মী। এমনকি, আশ্রমে গিয়ে মাংস খাবেন বলে সেই আয়োজনও করেছিলেন নায়ক। কিন্তু আশ্রমে গিয়ে কিছুই করতে পারেননি শম্মী।
১৬১৮
শম্মী এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন যে, আশ্রমে ঢুকে গুরুর সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার পর মন শান্ত হয়ে গিয়েছিল তাঁর। শম্মীকে দেখে নাকি গুরু বলেছিলেন, ‘‘মহাত্মা, আপনি আমার আশ্রমে পায়ের ধুলো দিলেন!’’ এই কথাটি শুনে মন গলে গিয়েছিল শম্মীর।
১৭১৮
টানা ১২ দিন নৈনিতালের আশ্রমে ছিলেন শম্মী। এই কয়েক দিন মদ-সিগারেট স্পর্শ করেননি তিনি। এমনকি, ওই ১২ দিন নিরামিষ ভোজন করেছিলেন শম্মী। আমৃত্যু আশ্রমের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল অভিনেতার। মদ্যপান তো বটেই, ধূমপানও সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেন তিনি।
১৮১৮
নীলা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন যে, মাত্রাতিরিক্ত ধূমপানের কারণে ২০০৩ সালে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল শম্মীকে। টানা এক মাস ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল তাঁকে। কিডনির সমস্যাও শুরু হয়েছিল তাঁর। সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালিসিস চলত অভিনেতার। ২০১১ সালের অগস্ট মাসে অসুস্থতার কারণে মারা যান শম্মী।