আমেরিকার গোয়েন্দা বিভাগের অধিকর্তা হিসাবে হিন্দু রাজনীতিবিদ তুলসী গ্যাবার্ডকে নিয়োগ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর বিরুদ্ধেই এ বার উঠল জালিয়াতির অভিযোগ।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:৫০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ধূমকেতুর মতো উত্থান হয়েছে তাঁর। তিনিই ছিলেন আমেরিকার পার্লামেন্ট ‘কংগ্রেস’-এর একমাত্র হিন্দু সদস্য। শুধু তা-ই নয়, বর্তমানে তাঁকে গোয়েন্দা বিভাগের অধিকর্তা (ডিরেক্টর অফ ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স বা ডিএনআই) হিসাবে মনোনীত করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ হেন তুলসী গ্যাবার্ডের বিরুদ্ধে তথ্য ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় ফের খবরের শিরোনামে এসেছেন তিনি।
০২১৯
২০১৭ সালে ‘কংগ্রেস’-এর সদস্য হিসাবে নির্বাচনী প্রচারের জন্য একটি পাবলিক অ্যাফেয়ার্স সংস্থাকে নিয়োগ করেন তুলসী গ্যাবার্ড। একাধিক সাক্ষাৎকার, ইমেল এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল নির্বাচন কমিশনের রেকর্ডে এর উল্লেখ রয়েছে। অভিযোগ, এর মাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে পিরামিড প্রকল্প চালানোর বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
০৩১৯
একটা সময়ে ‘কংগ্রেস’-এর সদস্য ছিলেন গ্যাবার্ড। ‘সায়েন্স অফ আইডেন্টিটি ফাউন্ডেশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। সরাসরি বিপণন সংস্থার সঙ্গে যোগ রয়েছে এই সংস্থার। গ্যাবার্ডের বিরুদ্ধে এর মাধ্যমে একাধিক দেশে পিরামিড প্রকল্প চালানোর অভিযোগ রয়েছে।
০৪১৯
এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসুক, তা কখনওই চাননি গ্যাবার্ড এবং ওই সংস্থা। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই পিরামিড প্রকল্প চালানোর ব্যাপারটি ধামাচাপা দিতে চেষ্টার কসুর করেনি তাঁর ভাড়া করা সংস্থা।
০৫১৯
গ্যাবার্ডের ভাড়া করা সংস্থাটি হল রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ‘পোটোম্যাক স্কোয়ার গ্রুপ’। আভিযোগ, পিরামিড প্রকল্প চালানোর তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে বিপুল টাকা নেয় তারা। এই কাজে ‘সায়েন্স অফ আইডেন্টিটি ফাউন্ডেশন’-এর এক পদস্থ কর্তা তথা গ্যাবার্ডের দীর্ঘ দিনের উপদেষ্টাকে কাজে লাগায় ওই সংস্থা।
০৬১৯
‘পোটোম্যাক’-এর হয়ে তথ্য ধামাচাপা দেওয়ার কাজ করা ওই ব্যক্তির আরও একটি পরিচয় রয়েছে। যে বহুজাতিক সংস্থার সঙ্গে ‘সায়েন্স অফ আইডেন্টিটি ফাউন্ডেশন’ যুক্ত, তার অন্যতম বোর্ড সদস্য তিনি। সংশ্লিষ্ট বহুজাতিক কোম্পানিটি হংকংভিত্তিক বলে জানা গিয়েছে। বিশ্বের অন্তত সাতটি দেশে জালিয়াতি, ফৌজদারি এবং দেওয়ানি মামলা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
০৭১৯
আমেরিকার সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট মনোনীত গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের শুনানি করে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ‘সেনেট’-এর ইন্টেলিজেন্স কমিটি। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি তাঁদের সামনে হাজির হন গ্যাবার্ড। ‘সায়েন্স অফ আইডেন্টিটি ফাউন্ডেশন’ এবং ওই বহুজাতিক সংস্থাটির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ওই কমিটি।
০৮১৯
বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, গ্যাবার্ড এবং প্রাক্তন ক্যাপিটাল হিল কর্মীদের একাংশ হিন্দু সম্প্রদায়কে নিয়ে চর্চা করেন। এই সম্প্রদায়ের নেতা ক্রিস বাটলারকে ‘গুরুদেব’ বলে মানেন হাওয়াইয়ের প্রাক্তন ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেস সদস্য গ্যাবার্ড। বাটলারকে ‘ঐশ্বরিক শিক্ষক’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন তিনি।
০৯১৯
গ্যাবার্ডের তৈরি ‘সায়েন্স অফ আইডেন্টিটি’র সঙ্গে বহুজাতিক সংস্থার যুক্ত থাকার বহু প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করেছে আমেরিকার একাধিক রিয়াল ল এস্টেট ও কর্পোরেট কোম্পানি। সেখানে কর্মরত সাবেক কর্মীদের সাক্ষাৎকার থেকেও বিষয়টি উঠে এসেছে। তেমনই একজন হলেন সুনীল খেমানে।
১০১৯
গ্যাবার্ডের দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক তহবিল সংগ্রহকারী ছিলেন সুনীল। গ্যাবার্ড তাঁকে ‘কাকা’ বলে ডাকেন। বিষয়টি সেনেটের ইনটেলিজেন্স কমিটির নজর এড়ায়নি বলে জানা গিয়েছে।
১১১৯
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে সংবেদনশীল পদগুলির মধ্যে একটির জন্য গ্যাবার্ডকে মনোনীত করেছেন। সেনেটের অনুমতি মেলায় ৪৩ বছরের এই প্রাক্তন কংগ্রেস সদস্য আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ), জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা বা ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি এবং তদন্তকারী সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন বা এফবিআইয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধনের কাজ করবেন।
১২১৯
১৯৭০ সালে হাওয়াইয়ে ‘সায়েন্স অফ আইডেন্টিটি ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন বাটলার। গ্যাবার্ডের মা-বাবাও তাঁর পরম ভক্ত ছিলেন। গ্যাবার্ডের লালনপালনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল ওই সংস্থা।
১৩১৯
‘সায়েন্স অফ আইডেন্টিটি ফাউন্ডেশন’-এর প্রাক্তনীদের একাংশের দাবি, সব সময়ে সম্পূর্ণ আনুগত্য চাইতেন বাটলার। আর তাই ভক্তদের একাংশের খাবারে তাঁর পায়ের কাটা নখ মিশিয়ে দিতেন বাটলারের অনুগামীরা। এ ছাড়া প্রার্থনার সময়ে তাঁর জুতোকে পুজো করার রেওয়াজও ছিল। এগুলি করা হত ভক্তির নিদর্শন হিসাবে।
১৪১৯
বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় সংবাদ সংস্থা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের কাছে মুখ খোলেন ‘সায়েন্স অফ আইডেন্টিটি ফাউন্ডেশন’-এর কর্তাব্যক্তিরা। তাঁদের দাবি, এগুলি সবই অতিরঞ্জিত এবং অর্ধসত্য তথ্য। গ্যাবার্ডের সঙ্গে সংস্থার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কথাও অস্বীকার করেছেন তাঁরা।
১৫১৯
অন্য দিকে ‘পোটোম্যাক’-এর তরফে ক্রিস্টোফার কুপার জানিয়েছেন, নির্বাচনের সময়ে গ্যাবার্ডকে ধর্ম নিয়ে অনলাইন আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছিল। সেটা প্রতিরোধ করার জন্যই কাজ করেছেন তাঁরা। বাটলারের সঙ্গে গ্যাবার্ডের সম্পর্ক গোপন করার কোনও চেষ্টাই করা হয়নি। গ্যাবার্ডের প্রচারের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই বলেও স্পষ্ট করেছেন তাঁরা।
১৬১৯
বিশেষজ্ঞদের দাবি, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি পরিচালনার ক্ষেত্রে গ্যাবার্ডের অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। পাশাপাশি অতীতে রাশিয়া এবং সিরিয়ার শাসকদের খোলাখুলি ভাবে সমর্থন করতেন তিনি। আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একে উদ্বেগজনক বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
১৭১৯
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কমিটিতে দু’বছর কর্মরত ছিলেন গ্যাবার্ড। ‘সায়েন্স অফ আইডেন্টিটি’র সদস্যদের মতো শান্তির জন্য পার্থিব আকাঙ্ক্ষা থেকে বিরত থাকার নীতিতে বিশ্বাসী তিনি। আর তাই মাংস খাওয়া, মাদক গ্রহণ, মদ্যপান, জুয়া এবং বিবাহ- বহির্ভূত যৌন সম্পর্কের ঘোরতর বিরোধী গ্যাবার্ড।
১৮১৯
বর্তমানে হাওয়াই, ফিলিপিন্স, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ জ়িল্যান্ডে ‘সায়েন্স অফ আইডেন্টিটি’-এর শাখা রয়েছে। হাওয়াই এবং ফিলিপিন্সে স্কুলও তৈরি করেছেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা বাটলারের অনুগামীদের মধ্যে বিশেষ একটি শ্রেণিবিন্যাস রয়েছে।
১৯১৯
বাটলারের অনুগামীদের একাংশ দীক্ষা পাওয়ার অধিকারী। ‘সায়েন্স অফ আইডেন্টিটি’ অনুগামীদের অন্তত দু’জনের দাবি, গ্যাবার্ড দীক্ষা নিয়েছিলেন। নিজের নাম বদল করে ‘শ্রদ্ধা দাসী’ রাখেন তিনি।