মেসির হাতে কাপ থেকে রোনাল্ডোর কান্না, কাতার বিশ্বকাপের কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত

যত কাণ্ড গ্রুপ ই-তে: গ্রুপের প্রথম দু’টি ম্যাচের একটিতে জাপানের কাছে পরাজিত হয় জার্মানি এবং অপরটিতে কোস্টা রিকাকে ৭ গোল দেয় স্পেন। পরের রাউন্ডে যেতে হলে গ্রুপের শেষ ম্যাচটি জিততেই হত জার্মানিকে। স্পেনকে জিততে হত জাপানের বিরুদ্ধে। তা হলেই তারা গ্রুপ শীর্ষে থেকে পরের রাউন্ডে যেতে পারত। সেই ভাবে সব ঠিকঠাক চলছিলও। প্রথমার্ধের খেলার শেষে স্পেন এবং জার্মানি দুই দলই এক গোলে এগিয়ে ছিল।

তার পরই সব ওলটপালট হয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ৩ মিনিটের ব্যবধানে পর পর দু’গোল দিয়ে দেয় জাপান। অন্য দিকে কোস্টা রিকাও ম্যাচের স্রোতের বিপরীতে দু’গোল দিয়ে এগিয়ে যায়। অবশেষে জার্মানি ৪-২ গোলে ম্যাচটি জিতে যায়।

কিন্তু গোল শোধ করতে পারেনি স্পেন। জাপানের কাছে তারা ২-১ গোলে পরাজিত হয়। এর ফলে বদলে যায় সব সমীকরণ। দুই ম্যাচ জিতে গ্রুপ শীর্ষে থেকে পরের রাউন্ডে যায় জাপান। একটি ম্যাচে জয় এবং একটি ড্র করে গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান নিয়ে পরের রাউন্ডে যায় স্পেন। গোল পার্থক্যে গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যায় চার বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

গোল করে লাল কার্ড: ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ক্যামেরুনের হয়ে জয়সূচক গোল করে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন স্ট্রাইকার ভিনসেন্ট আবুবকর। ক্যামেরুন প্রথম কোনও আফ্রিকান দল হিসাবে বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে হারায়।

সেই ম্যাচেই গোল করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে গিয়ে নিজের জার্সি খুলে ফেলেন আবুবকর। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হলুদ কার্ড দেখান। আবুবকর ম্যাচের প্রথম দিকে একটি হলুদ কার্ড আগে থেকেই দেখেছিলেন। ফলে দু’টি হলুদ কার্ড হওয়ায় লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে।

পুরুষদের বিশ্বকাপে প্রথম মহিলা রেফারি: গ্রুপ ই-এর জার্মানি-কোস্টা রিকা ম্যাচে স্টেফানি ফ্র্যাপার্ট বাঁশি বাজিয়ে খেলা শুরুর নির্দেশ দিতেই তৈরি হল ইতিহাস। পুরুষদের বিশ্বকাপে এই প্রথম ম্যাচ পরিচালনা করলেন মহিলা। সেটাও কাতারের মাটিতে। তাঁর সঙ্গী আরও দুই মহিলা রেফারি ক্যারেন দিয়াজ় এবং নেওজ়া ব্যাক। ফ্রান্সের ৩৮ বছরের মহিলা রেফারি স্টেফানি নজির গড়লেন। বিশ্বকাপ ফুটবলের ৯২ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি।

চোখের জলে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় রোনাল্ডোর: সুইৎজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁকে প্রথম একাদশের বাইরে রেখেই দল সাজিয়েছিলেন ফের্নান্দো স্যান্টোস। ৬-১-এ জিতেছিলেন রোনাল্ডোরা। মরোক্কোর বিরুদ্ধেও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে দলের বাইরে রাখেন স্যান্টোস।

কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কোর বিরুদ্ধে এক গোলে পিছিয়ে পড়ে রোনাল্ডোকে মাঠে নামালেও গোল করে উঠতে পারেনি তাঁর দল। মরক্কোর কাছে হেরে শেষ ষোলো থেকেই বিদায় নিতে হয় রোনাল্ডোকে। চোখের জলে মাঠ ছাড়েন তিনি। সেই দৃশ্য ফুটবলপ্রেমীদের মনে থেকে যাবে বহু দিন।

ডিফেন্ডার জসকো গার্দিওলের বিরুদ্ধে মেসি: ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ৩-০ গোলে জয়লাভ করে আর্জেন্টিনা। ম্যাচে পেনাল্টি থেকে গোল করেন লিয়োনেল মেসি। অপর দু’টি গোল ইউলিয়ান আলভারেসের। তৃতীয় গোলটি আলভারেস করেন মেসির পাস থেকেই। সেই পাস বাড়ানোর জন্য এই বারের বিশ্বকাপের অন্যতম প্রতিশ্রুতিমান ডিফেন্ডার ক্রোয়েশিয়ার জসকো গার্দিওলকে যে ভাবে ঘোল খাইয়ে ছেড়েছিলেন মেসি, তা এই এ বারের অন্যতম সেরা মুহূর্ত।

মরক্কো সমর্থকদের বাঁশি বাজানো: কাতার বিশ্বকাপে আফ্রিকার প্রথম কোনও দল হিসাবে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল মরক্কো। দলকে সমর্থনের জন্য হাজারো সমর্থক প্রতিটি ম্যাচেই ভরিয়ে দিয়েছিলেন দর্শকাসন। শেষ ষোলোয় স্পেন, কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগাল কিংবা সেমিতে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হোক, বল যখনই প্রতিপক্ষের পায়ে গিয়েছে তখনই বেজে উঠেছে মরক্কোর সমর্থকদের বাঁশি। সেই শব্দ প্রতিপক্ষের কানে তালা লাগানোর জন্য যথেষ্ট ছিল।

এমবাপেকে এমানুয়েল মাকঁরের সান্ত্বনা: ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের ট্র্যাজিক হিরো কিলিয়ান এমবাপে। ফাইনালে হ্যাটট্রিক করেও দলকে জেতাতে পারেননি তিনি। টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার কাছে হারতে হয়েছে ফ্রান্সকে। ম্যাচ শেষে বিধ্বস্ত এমবাপেকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে এসেছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাকঁর। বুকে জড়িয়ে ধরেন তাঁকে।

মেসির হাতে বিশ্বকাপ: এই দৃশ্য দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা। ২০১৮-র ফাইনালে জার্মানির কাছে মারিও গোতজ়ের গোলে হারের ফলে কাপ রয়ে গিয়েছিল মুঠোর বাইরেই। ২০২২–এ ছিল লিয়োনেল মেসির সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপ। ফাইনালে জিতে সমর্থকদের সেই আশা পূরণ করে দিলেন ফুটবলের ‘ঈশ্বর’।