France refuses to buy Pinaka Multi Barrel Rocket Launcher from India, a big setback for DRDO dgtl
Pinaka MBRL
‘শিবের ধনুকে’ টঙ্কার দিয়ে শত্রু সংহার নয়! হঠাৎ ভারতের পিনাকায় ‘নাক সিঁটকাল’ নেপোলিয়নের দেশ
প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআর়়ডিওর তৈরি পিনাকা মাল্টি ব্যারেল রকেট লঞ্চার কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিল ফ্রান্স। কিন্তু, সেখান থেকে সরে এসে নিজস্ব প্রযুক্তিতে একই ধরনের হাতিয়ার তৈরি করে বাহিনীকে সাজাতে চাইছেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ১০:০৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
শত্রু সংহারে ভারতের থেকে ‘শিবের ধনুক’ কিনে নেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিল ফ্রান্স। কিন্তু, সে গুড়ে আপাতত বালি! আপাতত সেই পরিকল্পনা শিকেয় তুলে নিজস্ব প্রযুক্তিতে একই ধরনের সমরাস্ত্র তৈরিতে মন দিয়েছে নেপোলিয়নের দেশ। ফলে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানিতে ইউরোপের বাজারে পা ফেলার স্বপ্ন এখনই পূরণ হচ্ছে না নয়াদিল্লির। যদিও দুই দেশের তরফে এই নিয়ে সরকারি ভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
০২১৮
পিনাকা মাল্টি ব্যারেল রকেট লঞ্চার (এমবিআরএল)। প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশনের (ডিআরডিও) তৈরি অত্যাধুনিক এই অস্ত্রটিকে বাহিনীতে শামিল করতে আগ্রহী ছিলেন ফরাসি সেনা অফিসারেরা। সূত্রের খবর, বর্তমানে সেই সিদ্ধান্ত থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ ও তাঁর প্রশাসন।
০৩১৮
ফরাসি সরকার থেকে শুরু করে সেনা অফিসারদের মনবদলের নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ। প্রথমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়ে সমরাস্ত্রের ক্ষেত্রে বিদেশি নির্ভরতা কমাতে চাইছে প্যারিস। বিষয়টি নিয়ে জোরালো সওয়াল করেছেন সেখানকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। আর তাই ঘরের মাটিতে প্রতিরক্ষা গবেষণা এবং শিল্পের উপর জোর দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট মাকরঁ।
০৪১৮
২০০৫ সাল থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রকেট ব্যবহার করে আসছে মার্কিন গোলন্দাজ বাহিনী। সেগুলির পোশাকি নাম, এম১৪২ হিমার্স (হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম)। এই সমরাস্ত্রের ইউরোপীয় সংস্করণ প্রায় তৈরি করে ফেলেছে ফ্রান্স। সূত্রের খবর, সেই কারণেই পিনাকার থেকে আপাতত মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে মাকরঁ সরকার।
০৫১৮
দ্য ইউরেশিয়ান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী বছরের মাঝামাঝি নতুন অস্ত্রের পরীক্ষা করবেন ফরাসি প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছেন সেখানকার ডিরেক্টর জেনারেল অফ আর্মামেন্ট (ডিজিএ)। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা প্রযুক্তিগত দিক থেকে আরও উন্নত হাতিয়ার তৈরি করতে চাইছি। সেটা আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে শেষ করা যাবে বলে মনে হচ্ছে।’’
০৬১৮
আমেরিকার বিখ্যাত প্রতিরক্ষা সংস্থা লকহিড মার্টিনের হাত ধরে প্রাণ পেয়েছে হিমার্স। এর সাহায্যে ৪৮০ কিলোমিটার দূরের শত্রুঘাঁটিতে নিখুঁত নিশানায় হামলা চালাতে পারে মার্কিন গোলন্দাজ বাহিনী। হিমার্স চালাতে অন্তত তিন জন সৈনিকের প্রয়োজন। একসঙ্গে একগুচ্ছ রকেট ছোড়ার পাশাপাশি কৌশলগত ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সুবিধাও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হাই মবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেমে।
০৭১৮
গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিজের জাত চিনিয়েছে হিমার্স। এ ছাড়া আফগানিস্তান, সিরিয়া এবং ইরাকের যুদ্ধে শত্রুর কোমর ভাঙতে মারণাস্ত্রটিকে ব্যবহার করেছে আমেরিকা। দ্য ইউরেশিয়ান টাইমস জানিয়েছে, ফ্রান্স যে হিমার্সের ইউরোপীয় সংস্করণ তৈরি করছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের মতো অতটা শক্তিশালী নয়।
০৮১৮
সূত্রের খবর, ফরাসি হাতিয়ারটির পাল্লা হবে ১৫০ কিলোমিটার। ইতিমধ্যেই এর প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয়েছে। তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে প্যারিসের দু’টি প্রতিরক্ষা সংস্থা। সেগুলি হল, থ্যালেস অ্যান্ড আরিয়ান গ্রুপ এবং সাফরান অ্যান্ড এমবিডিএ।
০৯১৮
বর্তমানে ফরাসি গোলন্দাজ বাহিনী ল্যান্স রকেটস ইউনিটেয়ার নামের একটি সমরাস্ত্র ব্যবহার করে। আমেরিকার এম২৭০ মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেমের (এমএলআরএস) আদলে এটিকে তৈরি করা হয়েছে। ২০২৭ সালে অবসর নেবে ল্যান্স রকেটস। আর তাই গত কয়েক বছর ধরেই নতুন মাল্টি ব্যারেল রকেট লঞ্চারের সন্ধান চালাচ্ছে মাকরঁ ফৌজ।
১০১৮
গত বছর ভারত সফরে এসে প্রথম বার পিনাকার প্রসঙ্গ তোলেন ফরাসি সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল স্টিফেন রিচু। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এই সমরাস্ত্রটিকে খুঁটিয়ে মূল্যায়ন করছি। কারণ আমাদের বাহিনীর এই ধরনের হাতিয়ারের খুবই প্রয়োজন।’’ তাঁর ওই মন্তব্যের পরই পিনাকাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি হতে পারে বলে তুঙ্গে ওঠে জল্পনা।
১১১৮
একটা সময়ে ভারতের গোলন্দাজ বাহিনী গ্র্যাড বিএম-২১ নামের একটি অস্ত্র ব্যবহার করত। পরে একে বদল করে ডিআরডিওর তৈরি পিনাকাকে নিয়ে আসা হয়। পাল্লা অনুযায়ী এর বেশ কয়েকটি প্রকার রয়েছে। যেমন, ৪৫ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যে নিখুঁত নিশানায় হামলা করতে পারে পিনাকা মার্ক-১। অন্য দিকে পিনাকা মার্ক-২র পাল্লা ৯০ কিলোমিটার।
১২১৮
পিনাকার সবচেয়ে ভাল দিক হল, মাত্র ৪৪ সেকেন্ডে ১২টি রকেট নিক্ষেপ করার ক্ষমতা। এর এক একটি ব্যাটারির ৭২টি রকেট ছোড়ার ক্ষমতা রয়েছে। হাতিয়ারটির প্রতিটা লঞ্চারকে স্বাধীন ভাবে চালানো যায়। রকেটগুলির মাধ্যমে একক ভাবে বা একসঙ্গে বিভিন্ন দিকে হামলা করার সুবিধা রয়েছে।
১৩১৮
শিবের ধনুকের নামানুসারে তৈরি অত্যাধুনিক এই অস্ত্রটির মোট চারটি অপারেশন মোড রয়েছে। সেগুলি হল, ম্যানুয়াল, রিমোট, স্ট্যান্ডঅ্যালোন এবং অটোনোমাস। ১৯৮৬ সালে এটি তৈরি করে ডিআরডিও। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধে বড় ভূমিকা নেয় পিনাকা।
১৪১৮
বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, পিনাকার থেকে ফ্রান্সের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার একমাত্র কারণ হল এর পাল্লা। ইউরোপের দেশটি ১৫০ থেকে ১৭৫ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার হাতিয়ার বাহিনীতে শামিল করতে ইচ্ছুক। সেখানে পিনাকার ক্ষমতা মাত্র ৯০ কিলোমিটার।
১৫১৮
গতিবেগের নিরিখে আবার মার্কিন হার্মিস এবং পিনাকা মধ্যে পার্থক্য উনিশ-বিশ। আমেরিকার হাতিয়ারটির লঞ্চার ঘণ্টায় ৮৫ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে। সেখানে ভারতীয় অস্ত্রটির গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। পিনাকা থেকে বেরিয়ে আসা রকেট শব্দের চার গুণ গতিতে উড়ে গিয়ে শত্রুঘাঁটিতে আছড়ে পড়ে।
১৬১৮
আধুনিক যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে ড্রোন। ফলে গোলন্দাজ বাহিনীর প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে বলে মনে করা হয়েছিল। সাবেক সেনাপ্রধানদের অনেকে এই নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণীও করেছিলেন। কিন্তু, তাঁদের সবাইকে ভুল প্রমাণিত করে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের লড়াই। পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির একের পর এক শহর গুঁড়িয়ে দিতে গত তিন বছরে লাগাতার গোলা ছুড়েছে মস্কো।
১৭১৮
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার ইউরোপীয় ভূখণ্ডে মোতায়েন ১০ হাজার আমেরিকান সৈন্যকে দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। ফলে আটলান্টিকের পারে বাড়ছে রুশ আগ্রাসনের আতঙ্ক। বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, এর ফলে আক্রমণের ঝাঁজ বাড়াতে সুবিধা পাবে ক্রেমলিন।
১৮১৮
বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আরও বেশি আগ্রাসী হলে দ্রুত বাহিনীকে শক্তিশালী করার রাস্তায় হাঁটবে ফ্রান্স। তখন অতিরিক্ত হাতিয়ার আমদানির দিকে জোর দিতে পারেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাকরঁ। সে ক্ষেত্রে পিনাকা চুক্তির সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে তার আগে অস্ত্রটিকে আরও শক্তিশালী করে তোলার দিকে নজর দিতে হবে ডিআরডিওকে।