২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জম্মু-কাশ্মীরের উরি ক্যাম্পে ঢুকে হামলা চালায় চার জইশ জঙ্গি। তাতে প্রাণ হারান ১৯ জন সৈনিক। তবে ওই চার ফিদায়েঁ জঙ্গিকেই নিকেশ করেছিল ভারতীয় সেনা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৪৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৬
জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত কাশ্মীরের পহেলগাঁও। মঙ্গলবার দুপুরে কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার ওই পর্যটনকেন্দ্রের বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গি হামলার ঘটনাটি ঘটে। সেনাকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, বৈসরন উপত্যকায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের একটি দলকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে। পর্যটকদের উপর গুলি চালায় অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা।
০২২৬
এখনও পর্যন্ত সেই ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই পর্যটক। হামলায় কেউ স্বামীকে হারিয়েছেন, কেউ পুত্রকে! মাত্র কয়েক মিনিটের তাণ্ডবের নেপথ্যে ছিল চার থেকে ছ’জন জঙ্গি।
০৩২৬
স্থানীয় সূত্রে খবর, জঙ্গিদের পরনে ছিল পুলিশের পোশাক। কেউ কেউ আবার সেনার পোশাক পরেও এসেছিল। সকলের হাতে ছিল একে-৪৭। এই ঘটনায় দেশ জুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছে।
০৪২৬
পহেলগাঁওয়ের সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা দেশ। ইতিমধ্যেই একাধিক পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্র। সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে সেনাবাহিনীকে। তা হলে কি আবার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক? না কি এ বার সরাসরি যুদ্ধে নামবে নয়াদিল্লি? এই নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।
০৫২৬
যদিও গত দশ বছরে দেশে হওয়া তিন জঙ্গি হানার পর ভারত কী ভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সে দিকে এক বার ফিরে তাকালেই কারও কারও কাছে উত্তর খানিকটা স্পষ্ট হতে পারে।
০৬২৬
২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জম্মু-কাশ্মীরের উরি ক্যাম্পে ঢুকে হামলা চালায় চার জইশ জঙ্গি। তাতে প্রাণ হারান ১৯ জন সৈনিক। তবে ওই চার ফিদায়েঁ জঙ্গিকেই নিকেশ করেছিল ভারতীয় সেনা।
০৭২৬
সেই মর্মান্তিক ঘটনার ১০ দিনের মাথায় জবাব দিয়েছিল ভারত। ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কাশ্মীরে ভারত-পাক নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর জঙ্গিদের চারটি লঞ্চপ্যাডে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছিল ভারতীয় সেনা।
০৮২৬
পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে (পাকিস্তান অকুপায়েড কাশ্মীর বা পিওকে) ঢুকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে ভারতীয় সেনা। তাতে সন্ত্রাসীদের একাধিক লঞ্চ প্যাড ধ্বংস করে ফৌজ।
০৯২৬
হিজবুল, জইশ ও লশকর, এই তিন জঙ্গি সংগঠনই সেই হানায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এর মধ্যে লশকরের অন্তত ২০ জন জঙ্গি ভারতীয় সেনার হামলায় মারা যায়। খানিক হলেও প্রলেপ পড়েছিল ভারতের ক্ষতে।
১০২৬
এর পর ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। ভালবাসার দিবস লাল হয়েছিল ভারতীয় সেনার রক্তে। পুলওয়ামার অবন্তীপোরায় সিআরপিএফ কনভয়ে গাড়িবোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন ৪০ জন জওয়ান। আহতও হয়েছিলেন অনেকে।
১১২৬
ওই দিন ৭৮টি গাড়ির সিআরপি কনভয় জম্মু থেকে শ্রীনগরের দিকে যাচ্ছিল। বাস, ট্রাক ও এসইউভি মিলিয়ে ২৫০০ জন জওয়ান ছিলেন তাতে। দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়কে অন্তত ৩৫০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক ঠাসা একটি স্করপিয়ো কনভয়ের দু’টি বাসে ধাক্কা মারে।
১২২৬
প্রবল বিস্ফোরণের পরে একটি বাসে আগুন ধরে যায়। বিস্ফোরণের পরে আধাসেনাকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ও গুলি চালায় জঙ্গিরা। মৃত্যু হয় ৪০ জওয়ানের।
১৩২৬
ওই হামলার দায় স্বীকার করে পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদ। উরির জবাব ভারত দিয়েছিল ১০ দিনের মাথায়। পুলওয়ামার জবাব দিতে লেগেছিল ১১ দিন।
১৪২৬
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিভাগে দিনটি বিশেষ ভাবে স্মরণীয়। শুধু প্রতিরক্ষার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাই নন, ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারিকে মনে রেখেছে গোটা দেশ।
১৫২৬
ওই দিন পড়শি পাকিস্তানকে জবাব দিয়েছিল ভারত। পুলওয়ামা হামলার জবাবে পাকিস্তানের বালাকোটে সশস্ত্র অভিযান চালায় ভারতীয় বায়ুসেনা। উড়িয়ে দেওয়া হয় জইশ-ই-মহম্মদের একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি।
১৬২৬
বালাকোটে ভারতের এই হামলা ইসলামাবাদের কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। ভয় পেয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। ভারতের তরফে আরও বড় কোনও হামলার আশঙ্কা করেছিল ইমরান খান সরকার।
১৭২৬
২০২৩ সালের ১ এবং ২ জানুয়ারিও জঙ্গি হামলা হয় কাশ্মীরের বুকে। ১ জানুয়ারি সন্ধ্যা নাগাদ জম্মুর রাজৌরি এলাকা থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে ধাংড়ি গ্রামে জঙ্গিরা হামলা করে। তাদের গুলিবর্ষণে ৪ জন মারা যান। গুরুতর আহত হন ৯ জন।
১৮২৬
একটি এসইউভি গাড়ি করে জঙ্গিরা ধাংড়ি গ্রামে আক্রমণ করে। গাড়ি থেকে নেমে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায় তারা। তার পর স্থানীয়েরা আহতদের রাজৌরির সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে পৌঁছোনোর পর ৩ জনকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। সে রাতেই আরও এক জন মারা যান।
১৯২৬
এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ২ জানুয়ারি সকালে জম্মুর রাজৌরি এলাকায় আবার আক্রমণ করেছিল জঙ্গিরা। একটি বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে তারা। বিস্ফোরণের ফলে এক শিশু মারা যায়। ৫ জন আহত হন।
২০২৬
এরও জবাব দিয়েছিল ভারত। সীমান্তের ওপারে ভারী গোলাবর্ষণ করে ভারতীয় সেনা। ক্ষতিগ্রস্থ হয় পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি এলাকা। ভারতের তরফে ড্রোন দিয়ে নজরদারিও চালানো হয়।
২১২৬
এর পর আবার ২২ এপ্রিল দুপুরে পহেলগাঁওয়ে ভয়ঙ্কর হত্যালীলা চালাল জঙ্গিরা। হামলা চালানো জঙ্গিদের অনেকে পাকিস্তানি বলে মনে করা হচ্ছে। মঙ্গলবারের নৃশংস জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী লশকর-ই-ত্যায়বার ‘ছায়া সংগঠন’ দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)।
২২২৬
নারকীয় হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যে পাকিস্তান মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনের হাত রয়েছে, তা দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার। প্রতিশোধ নিতে পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটিতে ঢুকে আবার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালাক ভারতীয় ফৌজ, এ হেন দাবিতে সরগরম সমাজমাধ্যম।
২৩২৬
বিশেষজ্ঞদের অবশ্য দাবি, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো সেনা অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের পক্ষে বেশ কঠিন। কারণ, সে ক্ষেত্রে প্রত্যাঘাতের রাস্তা বেছে নিতে পারে ইসলামাবাদ।
২৪২৬
সূত্রের খবর, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর নাকি সাবধানি হয়েছে পাকিস্তান। ভারত যে আবার ঘরে ঢুকে জঙ্গি মারতে পারে, এমন আশঙ্কা করে পাক সেনাবাহিনী এবং তার প্রধান নাকি ইতিমধ্যেই সতর্ক।
২৫২৬
যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, পাকিস্তানে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হোক বা না হোক, ভারত এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বদলা নেবেই। আর তা নাকি স্পষ্ট উরি, পুলওয়ামা এবং রাজৌরির উদাহরণ দেখলেই। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারই জঙ্গিদের কল্পনাতীত শাস্তি দেওয়ার হুঁশিয়ার দিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
২৬২৬
ইতিমধ্যেই জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটক হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ করেছে মোদী সরকার। তার মধ্যে রয়েছে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তও।