India launches Rs1500 crore incentive scheme to extract rare earth minerals from e-waste dgtl
E-Waste Recycling India
ফেলে দেওয়া ল্যাপটপ-মোবাইল ফোনে লুকিয়ে অমূল্য রতন! আবর্জনা ঘেঁটে বিরল ধাতু বার করলেই মোটা পুরস্কার দেবে কেন্দ্র
প্রতি বছরে ভারতে জমা হচ্ছে ১৭.৫ লক্ষ টন বৈদ্যুতিন বর্জ্য। সেই সমস্ত ফেলে দেওয়া মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বিরল ধাতু পুনরুদ্ধার করতে ১,৫০০ কোটি টাকার বিশেষ পুরস্কার প্রকল্পের ঘোষণা করেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:৫২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
আবর্জনার স্তূপে লুকিয়ে অমূল্য রতন! এ বার তা ধীরে ধীরে বার করে আনার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। শুধু তা-ই নয়, এর জন্য ঘোষণা হয়েছে ১,৫০০ কোটি টাকার বিশেষ পুরস্কার-প্রকল্প (ইনসেন্টিভ স্কিম)। এতে সাফল্য এলে ভারতের হাতে যে জ্যাকপট লাগবে, তা বলাই বাহুল্য।
০২১৭
গত কয়েক বছরে এ দেশে ব্যাপক হারে বেড়েছে বৈদ্যুতিন পণ্যের ব্যবহার। আমজনতার প্রায় প্রত্যেকের হাতে হাতে ঘুরছে স্মার্টফোন। কম্পিউটার-ল্যাপটপ ছাড়া অফিস-আদালত অচল। এ ছাড়া রয়েছে স্মার্টঘড়ি, ট্যাব বা অন্যান্য গেমিং ডিভাইস। এর জেরে শহর বা গ্রামাঞ্চলে ক্রমাগত জমা হচ্ছে বিপুল পরিমাণে বৈদ্যুতিন বর্জ্য, যা এ বার পুনর্ব্যবহারের পরিকল্পনা করল কেন্দ্র।
০৩১৭
বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের চিপ থেকে ব্যাটারি— সব কিছুতেই ব্যবহার হয় কোনও না কোনও বিরল ধাতু। আর তাই এর বর্জ্য পরিশোধন করে সেগুলি বার করে নিতে চাইছে কেন্দ্র। বাতিল বৈদ্যুতিন সামগ্রী এবং ফেলে দেওয়া ব্যাটারি থেকে লিথিয়াম, কোবাল্ট এবং নিকেলের মতো বিরল ধাতু পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেই কারণে বিশেষ পুরস্কার-প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছে খনি মন্ত্রক।
০৪১৭
চলতি বছরের ৪ অক্টোবর ‘জাতীয় জটিল খনিজ মিশন’-এর (ন্যাশনাল ক্রিটিক্যাল মিনারেল মিশন) অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। বৈদ্যুতিন বর্জ্য থেকে বিরল খনিজ বার করে আনার প্রকল্পটিকে এরই অন্তর্ভুক্ত করেছে খনি মন্ত্রক। সেই মোতাবেক অক্টোবরেই একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রশাসন।
০৫১৭
ঘরের মাটিতে বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম তৈরিতে চাই বিপুল পরিমাণে বিরল খনিজ। সারা বিশ্বে এর উপর সর্বাধিক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে চিনের। খনি মন্ত্রকের কর্তাব্যক্তিদের কথায়, বিপুল পরিমাণে বৈদ্যুতিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সেই চাহিদা কিছুটা মেটানো গেলে কমবে বিদেশি নির্ভরশীলতা। সেই কারণে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটিকে এতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
০৬১৭
কেন্দ্রীয় খনি মন্ত্রকের দাবি, বৈদ্যুতিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য ইতিমধ্যেই আগ্রহ দেখিয়েছে বেশ কয়েকটি শিল্প সংস্থা। এর জন্য নিয়ম মেনে সরকারের কাছে আবেদনপত্র জমা করেছে তারা। কী ভাবে গোটা প্রক্রিয়াটি শুরু হবে, তার নীলনকশা ছকে ফেলা হয়েছে। চলতি বছরের শেষের দিকে ফেলে দেওয়া বৈদ্যুতিন সামগ্রী থেকে বিরল ধাতু বার করার প্রক্রিয়াটি শুরু হবে, খবর সূত্রের।
০৭১৭
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এ দেশে ফি বছর জমা হয় প্রায় ১৭ লক্ষ ৫০ হাজার টন বৈদ্যুতিন বর্জ্য। এর মধ্যে আবার রয়েছে ৬০ কিলোটন ব্যবহৃত লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি। চলতি আর্থিক বছরের (পড়ুন ২০২৫-’২৬) বাজেটে বাতিল বা ব্যবহৃত লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি আমদানির উপর শুল্ক বাতিল করে কেন্দ্র। এর জেরে আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে বৈদ্যুতিন বর্জ্য পরিশোধন এবং পুনর্ব্যবহারের দিকে দেশীয় শিল্প সংস্থাগুলির আগ্রহ বাড়বে বলে আশাবাদী সরকার।
০৮১৭
খনি মন্ত্রকের আওতাধীনে থাকা প্রকল্পটির বেশ কয়েকটি স্তর বিন্যাস রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ই-বর্জ্য, ব্যবহৃত লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি এবং বৈদ্যুতিন গাড়ি বা স্কুটারের অনুঘটক রূপান্তরকারী পদার্থের চিহ্নিতকরণ। এর পর প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সেগুলিকে ওই বর্জ্য থেকে আলাদা করতে হবে সংশ্লিষ্ট বরাতপ্রাপ্ত সংস্থাকে। যারা এর থেকে বিরল খনিজ বার করে আনতে পারবে, তাদের বিশেষ পুরস্কার দেবে সরকার।
০৯১৭
সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনায় একটি জায়গায় সমস্যা রয়েছে। সেটা হল, পরিকাঠামোর অভাব। এ দেশে বৈদ্যুতিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ বা তাকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার ব্যবস্থা খুবই সীমিত। সেই কারণে বর্জ্যের পরিমাণ অনেক বেশি হলেও সেখান থেকে বিপুল অঙ্কের বিরল খনিজ যে সরকার বার করে আনতে পারছে, এমনটা নয়। প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত যে সমস্ত সংস্থা ওই খনিজ বিদেশে রফতানি করবে, তাদের পুরস্কার ভাতার বাইরে রেখেছে সরকার।
১০১৭
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খনি মন্ত্রকের এক কর্তা জানিয়েছেন, যিনি বা যাঁরা বৈদ্যুতিন বর্জ্য পরিশোধনের কাজ করবেন, তাঁদের কাছে কাঁচামালের জোগান ঠিক রাখার দিকে নজর দিচ্ছে সরকার। গোটা প্রক্রিয়াটির তিনটি অংশ রয়েছে। সেগুলি হল, বৈদ্যুতিন বর্জ্যকে ভেঙে ফেলা (ডিসম্যান্টাল), তার পর গুঁড়ো করা (ক্রাশার) এবং সব শেষে তার থেকে উচ্চ মূল্যের বিরল খনিজ পদার্থ পুনরুদ্ধার।
১১১৭
খনি মন্ত্রকের জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এই প্রকল্পে যুক্ত হওয়া ছোট সংস্থা পাবে ২৫ কোটি টাকা পুরস্কার ভাতা। অন্য দিকে বড় সংস্থার ক্ষেত্রে টাকার অঙ্ক ৫০ কোটি ধার্য করা হয়েছে। বৈদ্যুতিন বর্জ্য থেকে বিরল খনিজ বার করে আনতে ‘হাইড্রোমেটালার্জি’ প্রযুক্তি ব্যবহার হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। এর মাধ্যমে জলীয় দ্রবণ ব্যবহার করে ধাতুকে বর্জ্য থেকে পৃথক করা হয়ে থাকে।
১২১৭
বৈদ্যুতিন বর্জ্য থেকে বিরল খনিজ বার করতে ‘হাইড্রোমেটালার্জি’ হল সম্পূর্ণ একটি দেশীয় প্রযুক্তি। এটি তৈরি করেছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি) এবং কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (সিএসআইআর) মতো গবেষণা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে বর্জ্য থেকে খনিজ প্রক্রিয়াকরণ প্রশিক্ষণে সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলিকে সহযোগিতা করছে তারা।
১৩১৭
খনি মন্ত্রক জানিয়েছে, বৈদ্যুতিন বর্জ্য থেকে বিরল খনিজ পুনরুদ্ধারের প্রকল্পটি দীর্ঘমেয়াদি চিন্তাভাবনা থেকে নেওয়া হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হল, দেশের মধ্যেই বৈদ্যুতিন সামগ্রীর মূল উপকরণ, পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি এবং উন্নত বৈদ্যুতিন সামগ্রী তৈরির একটি বৃহৎ অর্থনৈতিক পরিমণ্ডল গড়ে তোলা। আর তাই সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পরিকাঠামোগত মানোন্নয়নের দিকেও নজর দিচ্ছে সরকার।
১৪১৭
এ বছরের অক্টোবরের একেবারে শেষে ফের ভারতকে বিরল খনিজ রফতানি করা শুরু করেছে চিন। মাঝে ছ’মাস তা বন্ধ রেখেছিল বেজিং। তবে সংশ্লিষ্ট ধাতুগুলি সরবরাহের ক্ষেত্রে কড়া শর্ত চাপিয়েছে বেজিং। শর্ত ভঙ্গ হলে আবার রফতানি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।
১৫১৭
চিনের এক কর্তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা ‘ইকনমিক টাইম্স’ লিখেছে, ভারতের চারটি সংস্থাকে বিরল খনিজ সরবরাহ করবে চিন। সেগুলি হল, হিতাচি, কন্টিনেন্টাল, জে-শিন এবং ডিই ডায়মন্ডস। শর্ত হল, কোনও ভাবেই তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিক্রি করা যাবে না। সামরিক প্রযুক্তিতেও ওই বিরল ধাতু ব্যবহার করতে পারবে না নয়াদিল্লি।
১৬১৭
সূত্রের খবর, বিরল খনিজ রফতানির অনুমতি দেওয়ার আগে ভারতীয় সংস্থাগুলির থেকে ‘এন্ড-ইউজ়ার সার্টিফিকেট’ বা শেষ ব্যবহারকারীর শংসাপত্র চেয়ে পাঠায় চিন। সেই নথি খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট ধাতু সরবরাহের অনুমতি দিয়েছে বেজিং।
১৭১৭
প্রথম পর্যায়ে এ দেশের চারটি সংস্থা অনুমতি পেলেও ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্রের খবর, চিনা বাণিজ্য মন্ত্রকের কাছে পঞ্চাশটির বেশি আবেদন জমা পড়েছে। সেগুলি ঝাড়াই-বাছাই করে ভবিষ্যতে আরও অনেককে বিরল খনিজ সরবরাহের অনুমতি বেজিং দেবে বলে আশাবাদী দিল্লি।