India’s BrahMos or US JASSM, which missile is more lethal in speed, stealth, range, and strategic roles in modern warfare dgtl
BrahMos vs US Missile
‘জেএএসএসএম’ বনাম ‘ব্রহ্মস’! হুথিদের ঘর পোড়ানো মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে কতটা শক্তিশালী ভারতের ‘ব্রহ্মাস্ত্র’?
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর ভারত ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে তৈরি ‘ব্রহ্মস’ সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে বিশ্বের একাধিক দেশ। ইতিমধ্যেই ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের গুপ্তঘাঁটিতে হামলা করা মার্কিন মারণাস্ত্রের সঙ্গে শুরু হয়েছে এর তুলনা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৫ ০৭:৫৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে চলা ‘যুদ্ধে’ ভারতীয় হাতিয়ারের জয়জয়কার। ইসলামাবাদের বায়ুসেনার কোমর ভেঙে খবরের শিরোনামে চলে এসেছে ‘ব্রহ্মস’ সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র। শুধু তা-ই নয়, বিশ্বের অস্ত্রবাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে চাহিদা বেড়েছে নয়াদিল্লির এই ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্রের। তবে সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘এজ়িএম-১৫৮বি জেএএসএসএম’-এর সঙ্গে প্রবল প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হতে পারে তাকে।
০২২০
দুনিয়ার দ্রুততম ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মধ্যে অন্যতম হল ‘ব্রহ্মস’। রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রটি তৈরি করেছেন এ দেশের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। এর চারটি মূল শ্রেণি রয়েছে। যুদ্ধজাহাজ, ডুবোজাহাজ, যুদ্ধবিমান এবং স্থলবাহিনীর লঞ্চার থেকে শত্রুর উপর ‘ব্রহ্মস’ ছুড়তে পারে সেনা। ক্ষেপণাস্ত্রটির নকশা তৈরিতে হাত রয়েছে নয়াদিল্লির প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও (ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন) এবং মস্কোর এনপিও মাশিনোস্ট্রোয়েনিয়ার।
০৩২০
অন্য দিকে, সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি যুক্তরাষ্ট্রের ‘জয়েন্ট এয়ার টু সারফেস স্ট্যান্ডঅফ ক্ষেপণাস্ত্র’ বা জেএএসএসএম-ও একটি ক্রুজ় শ্রেণির হাতিয়ার। এর মাধ্যমে আকাশ থেকে ভূপৃষ্ঠের উপরে যে কোনও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে আমেরিকার বায়ুসেনা। সেই কারণে ক্ষেপণাস্ত্রটির নামের আগে এজিএম শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ এয়ার টু গ্রাউন্ড মিসাইল। গতিবেগ থেকে শুরু করে বিস্ফোরক বহনের ক্ষমতার নিরিখে দু’টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে।
০৪২০
শব্দের প্রায় তিন গুণ বেশি গতিতে ছুটে গিয়ে নিখুঁত নিশানায় হামলা করার ক্ষমতা রয়েছে ভারত-রাশিয়া যৌথ উদ্যোগে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্রের। এর নির্মাণকারী সংস্থার নাম ‘ব্রহ্মস অ্যারোস্পেস লিমিটেড’। প্রায় সাড়ে আট মিটার লম্বা ক্ষেপণাস্ত্রটি ৩০০ কেজি পর্যন্ত বিস্ফোরক বহনে সক্ষম। এর সাহায্যে পরমাণু হামলাও চালাতে পারবে সেনা। এক একটি ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের ওজন তিন হাজার কেজি।
০৫২০
‘এজ়িএম-১৫৮বি জেএএসএসএম’ আবার তৈরি করেছে মার্কিন মুলুকের জনপ্রিয় প্রতিরক্ষা সংস্থা ‘লকহিড মার্টিন’। ৪.৩ মিটার লম্বা সংশ্লিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্রটিতে থাকে প্রায় ৪৫০ কেজি বিস্ফোরক। তবে এটি পরমাণু আক্রমণ চালাতে অক্ষম। আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্রটির গতিবেগ সাবসনিক। অর্থাৎ, প্রায় শব্দের গতিতে ছুটতে পারে ‘জেএএসএসএম’। সে দিক থেকে অবশ্যই এগিয়ে থাকবে ‘ব্রহ্মস’। সব মিলিয়ে ওয়াশিংটনের ক্ষেপণাস্ত্রটির ওজন হাজার কেজির সামান্য বেশি।
০৬২০
বর্তমানে ভারতীয় সেনা এবং নৌবাহিনী যে ‘ব্রহ্মস’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে, তার পাল্লা ৮০০ কিলোমিটার। অন্য দিকে, এ দেশের বিমানবাহিনীর হাতে থাকা এই হাতিয়ার ৪৫০-৫০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। যদিও রফতানির ক্ষেত্রে ২৯০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার শ্রেণির ‘ব্রহ্মস’ সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি।
০৭২০
কেবলমাত্র লড়াকু জেট এবং বোমারু বিমানে ব্যবহারকারী ‘জেএএসএসএম’-এর পাল্লা প্রথম পর্যায়ে ছিল ৩৭০ কিলোমিটার। ২০১৪ সালে বর্ধিত পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি হাতে পায় যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী। সেগুলি ৯২৬ কিলোমিটার দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম বলে জানা গিয়েছে। শত্রুর রণতরী ধ্বংস করতে অনেক সময়েই ‘জেএএসএসএম’-এর উপরে ভরসা রাখেন মার্কিন বায়ুসেনার যোদ্ধা-পাইলটেরা।
০৮২০
গত কয়েক বছর ধরে ‘ব্রহ্মস’কে আবার হাইপারসনিক শ্রেণিতে বদলে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন ভারত ও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। সে ক্ষেত্রে শব্দের আট গুণ বেশি গতিতে ছুটতে পারবে ‘ব্রহ্মস’। এর পাল্লা বেড়ে দাঁড়াবে দেড় হাজার কিলোমিটার। ‘জেএএসএসএম’-এর মতো এটিও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে ‘গ্লোবাল পজ়িশনিং সিস্টেম’ বা জিপিএসের উপর নির্ভরশীল।
০৯২০
২০০৫ সালের নভেম্বর থেকে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ ব্যবহার করা শুরু করে ভারতীয় ফৌজ়। মার্কিন বাহিনী ‘জেএএসএসএম’ হাতে পায় আরও কিছুটা আগে। ২০০৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বায়ুসেনা সংশ্লিষ্ট ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রটির ব্যবহার করে আসছে। রণতরী, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং সেনাঘাঁটিকে ওড়াতে ‘ব্রহ্মস’-এর জুড়ি মেলা ভার। অন্য দিকে বাঙ্কার, অস্ত্রভান্ডার বা প্রতিরক্ষা দফতরে হামলা চালাতে সিদ্ধহস্ত ‘জেএএসএসএম’।
১০২০
‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পাক বায়ুসেনার একাধিক ঘাঁটি উড়িয়ে দিতে ‘ব্রহ্মস’ ব্যবহার করেছে নয়াদিল্লি। ইসলামাবাদের গণমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোনও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) ভারতীয় সেনার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটিকে মাঝ-আকাশে ধ্বংস করতে পারেনি। উল্টে এর আঘাতে রহিম ইয়ার খান, সরগোদা, জেকোবাবাদ এবং নুর খান ছাউনি-সহ পাক বিমানবাহিনীর ২০ শতাংশ পরিকাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।
১১২০
চলতি বছরের মার্চে ইরান মদতপুষ্ট ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের নিশানা করে মার্কিন বায়ুসেনা। সেই অভিযানের পোশাকি নাম ছিল ‘অপারেশন রাফ রাইডার’। ওই সময় হুথিদের গুপ্তঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে ‘জেএএসএসএম’ ছোড়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী। তাতে ৫০০ থেকে ৬০০ হুথি বিদ্রোহীর মৃত্যু হয়েছিল বলে দাবি করে ওয়াশিংটন। যদিও ইরান মদতপুষ্ট গোষ্ঠীটি জানিয়েছিল, ১২৩ জনকে হারিয়েছে তারা।
১২২০
পাক গণমাধ্যমগুলির দাবি, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় মোট ১৫টি ‘ব্রহ্মস’ ব্যবহার করে ভারতীয় সেনা। নয়াদিল্লি অবশ্য সরকারি ভাবে এই নিয়ে কোনও বিবৃতি দেয়নি। ২০২২ সালে ‘ব্রহ্মস’ ক্ষেপণাস্ত্র হাতে পেতে ভারতের সঙ্গে ৩৭ কোটি ৫০ লক্ষ ডলারের চুক্তি করে ফিলিপিন্স। গত বছরের এপ্রিলে হাতিয়ারটির প্রথম ব্যাচ হাতে পায় ম্যানিলা।
১৩২০
সূত্রের খবর, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারত-রুশ যৌথ উদ্যোগে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্রটির তাণ্ডব দেখে ইতিমধ্যেই ১৫টি দেশ নয়াদিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ‘ব্রহ্মস’ কেনার ব্যাপারে ৪৫ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে পারে ইন্দোনেশিয়া। এর আগে কখনও এত বড় প্রতিরক্ষা চুক্তি করেনি ভারত।
১৪২০
এ ছাড়াও নয়াদিল্লির ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে ভিয়েতনাম, তাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, মিশর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কাতার, ওমান, ব্রাজ়িল, আর্জেন্টিনা এবং চিলি। মার্কিন ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রটি বর্তমানে আমেরিকা ছাড়াও ব্যবহার করছে অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড এবং পোল্যান্ডের বায়ুসেনা।
১৫২০
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, পাকিস্তানের সঙ্গে ‘যুদ্ধে’ ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ‘ব্রহ্মস’ বিশ্বের একাধিক দেশকে বিক্রি করতে পারলে রাতারাতি রং বদলাবে ভারতীয় অর্থনীতি। ইতিমধ্যে সেই প্রক্রিয়া শুরুও করে দিয়েছে নয়াদিল্লি। কিন্তু, ঘরের মাটিতে তৈরি হওয়া এ-হেন সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রটিকে বিক্রি করা মোটেই সহজ নয়। কারণ, ‘ব্রহ্মস’ বিক্রির পথে সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারে মস্কো।
১৬২০
বিশ্বের হাতিয়ারের বাজারের প্রায় পুরোটাই রয়েছে রাশিয়া, আমেরিকা, চিন বা ফ্রান্সের মতো দেশের দখলে। এই রাষ্ট্রগুলি ইচ্ছামতো অস্ত্র বিক্রি করতে পারে। তা হলে ভারতের ক্ষেত্রে ‘ব্রহ্মস’ বিক্রিতে বাধা কোথায়? বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, এর মূল কারণ হল সংশ্লিষ্ট সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রটি পুরোপুরি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি নয়। এর প্রযুক্তিতে অংশীদারি রয়েছে রাশিয়ার।
১৭২০
উত্তর-পূর্ব ভারতের ব্রহ্মপু্ত্র এবং রাশিয়ার মস্কোভা নদীর নাম মিলিয়ে ‘ব্রহ্মস’ শব্দটি তৈরি করা হয়েছে। এর প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ডিআরডিও এবং এনপিও মাশিনোস্ট্রোয়েনিয়ারের ৫০-৫০ শতাংশ অংশীদারি রয়েছে। তাই নিয়ম অনুযায়ী, মারণাস্ত্রটি বিক্রি করতে হলে আনুষ্ঠানিক ভাবে নিতে হবে রাশিয়ার অনুমতি।
১৮২০
সেই জায়গাতেই রয়েছে মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, মস্কো এবং নয়াদিল্লির ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ এক নয়। তাই এ ক্ষেত্রে ক্রেমলিনের বার বার ‘ভিটো’ ক্ষমতা (অর্থাৎ না বলা) প্রয়োগ করার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। উদাহরণ হিসাবে ইন্দোনেশিয়ার কথা বলা যেতে পারে। সূত্রের খবর, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি ‘ব্রহ্মস’ কিনতে ইতিমধ্যেই ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু, সেই প্রতিরক্ষা চুক্তি চূড়ান্ত করতে পারেনি নয়াদিল্লি।
১৯২০
গত সাড়ে তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চালানোর জেরে বিপুল নিষেধাজ্ঞার ঘেরাটোপে থাকা মস্কোর চিন নির্ভরশীলতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বেজিঙের সমস্যা হতে পারে এমন কোনও পদক্ষেপ করার আগে অন্তত দু’বার ভাববে ক্রেমলিন, বলছেন বিশ্লেষকেরা।
২০২০
প্রতিরক্ষা সংস্থা ‘লকহিড মার্টিন’-এর তৈরি ‘জেএএসএসএম’ বিক্রির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও বাধা নেই। ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যে দেশগুলি চিনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাতের কারণে ব্রহ্মস কিনতে চাইছে, চুপিসারে সেখানে ঢুকে পড়ার সুযোগ রয়েছে আমেরিকার। এই বাধা টপকে অস্ত্রের বাজারে নয়াদিল্লি পা জমাতে পারে কি না, তার উত্তর দেবে সময়।