India’s S 400 to US THAAD, which country has the best air defence system dgtl
Air Defence System
ভারতের ‘সুদর্শন চক্রে’ মুণ্ডচ্ছেদ পাক ক্ষেপণাস্ত্র-লড়াকু জেটের! কাদের হাতে আছে ‘গেম চেঞ্জার’ এয়ার ডিফেন্স?
পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতে রাশিয়ার তৈরি ‘এস-৪০০’-এর মাধ্যমে দেশের আকাশকে দুর্ভেদ্য বর্মে ঢেকে ফেলেছিল ভারতীয় সেনা। যোগ্য সঙ্গত দিয়েছে দেশীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও। বিশ্বের কোন কোন দেশের হাতে রয়েছে এই ধরনের অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা?
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২৫ ১০:২৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
জঙ্গি দমনকে কেন্দ্র করে টানা চার দিন সংঘর্ষের পর আপাতত শান্ত ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত। আমেরিকার মধ্যস্থতায় সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয়েছে পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র। এই সংক্ষিপ্ত লড়াইয়ে খবরের শিরোনামে এসেছে নয়াদিল্লির ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ বা এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। ইসলামাবাদের পাঠানো যাবতীয় ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং যুদ্ধবিমানকে এর সাহায্যে শূন্যেই ধ্বংস করেছে ভারতীয় সেনা।
০২২০
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, আধুনিক যুদ্ধে ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ বা এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের গুরুত্ব অপরিসীম। এর সাহায্যে দুর্ভেদ্য বর্মে ঢেকে ফেলা যায় দেশের আকাশ। গত তিন বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গত দেড় বছর ধরে চলা ইজ়রায়েল-হামাসের মধ্যে লড়াইয়েও ‘গেম চেঞ্জার’-এর ভূমিকা নিয়েছে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। এ বার সেই একই ছবি দেখা গেল ভারত-পাকিস্তান সংঘাতেও।
০৩২০
শক্তিশালী প্রতিটি দেশের সেনাবাহিনীর হাতেই আছে অত্যাধুনিক ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’। সেই তালিকায় প্রথমেই আসবে রাশিয়ার নাম। মস্কোর ফৌজ ব্যবহার করে ‘এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ’ নামের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। এতে রয়েছে উন্নত রেডার, কমান্ড সেন্টার এবং ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র। একসঙ্গে মোট ৮০টি লক্ষ্যবস্তুর উপর আঘাত হানতে সক্ষম ক্রেমলিনের ‘বর্ম’।
০৪২০
উল্লেখ্য, সব ধরনের পরিবেশে কাজ করতে পারে রুশ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। অর্থাৎ, মরুভূমির প্রবল গরম এবং হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় সমান ভাবে কার্যকর এই হাতিয়ার। ‘এস-৪০০’-এর রেডারের পাল্লা ৬০০ কিলোমিটার। অন্য দিকে স্টেলথ যুদ্ধবিমান, ক্রুজ় এবং ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে মাঝ-আকাশেই গুঁড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে মস্কোর এই অস্ত্রের।
০৫২০
‘এস-৪০০’-এর নির্মাণকারী সংস্থা হল আলমাজ় সেন্ট্রাল ডিজ়াইন ব্যুরো। এটি একসঙ্গে ৩০০ লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করতে পারে। রাশিয়ার থেকে এই হাতিয়ারের পাঁচটি ইউনিট আমদানি করেছে নয়াদিল্লি। তার মধ্যে তিনটি ইতিমধ্যেই সরবরাহ করেছে মস্কো। ভারতীয় বায়ুসেনা এর নতুন নাম দিয়েছে ‘সুদর্শন চক্র’। পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং যুদ্ধবিমানকে ওড়াতে এটি যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে।
০৬২০
রুশ ‘এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ’-এর পর অবশ্যই আসবে ‘ডেভিড’স স্লিং’য়ের নাম। আমেরিকার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ তৈরি করেছে ইজ়রায়েল। ২০১৭ সালে এর ব্যবহার শুরু করে ইহুদি ফৌজ। এতে যে ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে তার নাম স্টানার। এ ছাড়া হাতিয়ারটিতে রয়েছে অত্যাধুনিক রেডার ব্যবস্থাও।
০৭২০
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে চলা যুদ্ধে দুর্দান্ত ভাবে কাজ করেছে ‘ডেভিড’স স্লিং’। এর নির্মাণকারী সংস্থা হল ইজ়রায়েলের রাফায়েল এবং আমেরিকার রেথিয়ন। ৭.৫ ম্যাক গতির মাঝারি পাল্লার রকেট, ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে মাঝ-আকাশে ধ্বংস করতে সিদ্ধহস্ত ইহুদিদের এই ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’।
০৮২০
অত্যাধুনিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের মধ্যে নাম রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থাড বা ‘টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স’-এর। এর নির্মাণকারী সংস্থা হল, যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় প্রতিরক্ষা সংস্থা লকহিড মার্টিন। ‘হিট-টু-কিল’ প্রযুক্তিতে এটি তৈরি করেছে তারা। বিভিন্ন মহড়ার সময়ে চলা পরীক্ষায় ১০০ শতাংশ সাফল্য পেয়েছে থাড। ২০০ কিলোমিটার পরিসরে এবং ১৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় দিব্যি কাজ করতে পারে আমেরিকার এই হাতিয়ার।
০৯২০
‘থাড আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’য় যে রেডার ব্যবহার করা হয়েছে, তার পাল্লা হাজার কিলোমিটার। বর্তমানে ইজ়রায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় একে মোতায়েন রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। ইরান, চিন এবং উত্তর কোরিয়ার সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে স্পষ্ট করেছে ওয়াশিংটন।
১০২০
থাড ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরও একটি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম রয়েছে। তার নাম, ‘এমআইএম-১০৪ প্যাট্রিয়ট’। ১৯৮১ সাল থেকে এটি ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা। যুদ্ধবিমান, ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র এবং স্বল্পপাল্লার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে অনায়াসেই ঠেকাতে পারে ‘প্যাট্রিয়ট’। এতে রয়েছে পিএসি-৩ ক্ষেপণাস্ত্র, যার পাল্লা ১৬০ কিলোমিটার। চার ম্যাক (শব্দের চেয়ে চার গুণ) গতিতে উড়ে গিয়ে শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্রে আঘাত হানে সেটি।
১১২০
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বর্তমানে ‘প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ ব্যবহার করছে জার্মানি, জাপান এবং সৌদি আরব। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে, এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কিভের হাতে তুলে দেয় আমেরিকা। কিন্তু, তাতে যে লড়াইয়ে ইউক্রেনীয় ফৌজ বিরাট সুবিধা করতে পেরেছে, এমনটা নয়। মস্কোর পাঠানো রকেট এবং ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে মাঝেমধ্যেই ব্যর্থ হয়েছে এই ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’।
১২২০
তালিকায় নাম রয়েছে চিনের ‘এইচকিউ-৯’ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের। বেজিঙের ‘পিপল্স লিবারেশন আর্মি’ বা পিএলএর কাছে আবার এর নাম ‘হং কি-৯’। এতে যে ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, তার গতিবেগ ৪.২ ম্যাক। একসঙ্গে ১০০টি লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করতে পারে ‘এইচকিউ-৯’। এ ছাড়া ছ’টি আঘাত হানার ক্ষমতা রয়েছে এর। হাতিয়ারটিতে সংযুক্ত রয়েছে প্যাসিভ ফেজ়ড অ্যারে রেডার।
১৩২০
চিনের এই ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ ব্যবহার করে পাক ফৌজ। গত কয়েক দিন ধরে চলা সংঘর্ষে সংশ্লিষ্ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমটিকে ড্রোন হামলা চালিয়ে উড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনা। শুধু তা-ই নয়, ৭ মে মধ্যরাতে জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে পাকিস্তানের ভিতরে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন নয়াদিল্লির ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রকে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয় বেজিঙের ‘এইচকিউ-৯’। ফলে এর কার্যকারিতা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
১৪২০
বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, রুশ ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ এস-৩০০-এর প্রযুক্তি চুরি করে ‘এইচকিউ-৯’ তৈরি করেন ড্রাগনের প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীরা। সেই কারণে যুদ্ধের সময়ে ঠিক ভাবে কাজ করেনি সেটি। পাকিস্তান ছাড়া উজ়বেকিস্তান এবং মরক্কোকে এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম বিক্রি করেছে বেজিং।
১৫২০
অন্য দিকে ফ্রান্স ও ইটালির কাছে যে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, তার নাম ‘অ্যাস্টার ৩০ এসএএমপি/টি’। এর নির্মাণকারী সংস্থার নাম ইউরোসাম। সংশ্লিষ্ট হাতিয়ারটির পাল্লা ১২০ কিলোমিটার। ওই দূরত্ব পর্যন্ত যুদ্ধবিমান এবং ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে এটি সক্ষম। ‘অ্যাস্টার’-এর ক্ষেপণাস্ত্রের গতিবেগ ৪.৫ ম্যাক। এর রেডার একসঙ্গে ১০০টি লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করতে সক্ষম। ২০২৩ সালে এটিকে বাহিনীতে শামিল করে সিঙ্গাপুর।
১৬২০
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানির হাতে রয়েছে ‘মিডিয়াম এক্সটেন্ডেড এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম’। এটিতেও রয়েছে ‘হিট-টু-কিল’ প্রযুক্তি। ৩৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং কৌশলগত (ট্যাকটিক্যাল) ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে আটকাতে সক্ষম এই ব্যবস্থা। যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ইউরোপীয় শক্তিজোট নেটোর (নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজ়েশন) সদস্য রাষ্ট্র হিসাবে এর প্রথম ব্যবহারকারী দেশ ছিল জার্মানি ও পোল্যান্ড।
১৭২০
রুশ ‘এস-৪০০’র পাশাপাশি ভারতীয় ফৌজ ব্যবহার করে ‘বারাক-৮’ নামের আর একটি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ইজ়রায়েলের আইএআইয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এটি তৈরি করেছে দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও (ডিফেন্স রিসার্চ ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন)। ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত যুদ্ধবিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্রকে রুখে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে ‘বারাক-৮’-এর।
১৮২০
সূত্রের খবর, সাম্প্রতিক সংঘাতের সময়ে ফতেহ্ নামের ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে নয়াদিল্লিকে নিশানা করে পাক ফৌজ। কিন্তু হরিয়ানার কাছেই তাকে মাঝ-আকাশে ধ্বংস করে ভারতীয় সেনা। এর ষোলো আনা কৃতিত্ব ‘বারাক-৮’-এর বলে জানা গিয়েছে। যদিও সরকারি ভাবে এই নিয়ে কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি।
১৯২০
শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের ক্ষেত্রে অবশ্যই বলতে হবে ইজ়রায়েলি আয়রন ডোমের কথা। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে জাত চিনিয়েছে এই হাতিয়ার। সেখানে এর সাফল্যের হার ৯০ শতাংশ। মূলত স্বল্পপাল্লার রকেট এবং কামানের গোলা আটকাতে এটিকে ব্যবহার করছে ইহুদি ফৌজ। সংশ্লিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটিতে যে ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, তার নাম তামির, পাল্লা ৭০ কিলোমিটার।
২০২০
২০১১ সাল থেকে আয়রন ডোম ব্যবহার করছে ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্স। ২০২১ সালে হামাসের সঙ্গে লড়াইয়ে দু’হাজারের বেশি স্বল্পপাল্লার রকেট আটকে রেকর্ড করে এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। ‘ডেভিড’স স্লিং’-এর সঙ্গে একে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে দেখা গিয়েছে।