১৯৫৭-এর ৭ নভেম্বর ছিল রুশ বলশেভিক বিপ্লবের ৪০তম বর্ষপূর্তি। সেই তারিখটাকেই স্থির করা হল সোভিয়েতের মহাকাশ-মাইলফলক স্থাপনের জন্য। তার জন্য মস্কোর রাস্তা থেকে বেছে নেওয়া হয়েছিল তিন বছরের স্ত্রী প্রজাতির একটি কুকুর। বিজ্ঞানীদের যুক্তি ছিল, মস্কোর পথের কুকুর হওয়ার জন্য সে কষ্টসহিষ্ণু। কারণ অনাহার ও তীব্র ঠান্ডা সহ্য করার ক্ষমতা আছে তার।
শোনা যায়, প্রজেক্টের সঙ্গে জড়িতে সবাই জানতেন লাইকা আর ফিরবে না। কারণ ডি-অরবিট প্রযুক্তি তখনও আবিষ্কারই হয়নি। কিন্তু এই তথ্য বাইরে আনা হয়নি। মাহাকাশযাত্রার আগের দিন লাইকাকে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন এক বিজ্ঞানী। তাঁর সন্তানরা খেলেছিল লাইকার সঙ্গে। বিজ্ঞানী চেয়েছিলেন, যাতে মৃত্যুর আগে একদিন অন্তত ভাল থাকতে পারে লাইকা।
১৯৫৭-র ৩১ অক্টোবর মহাকাশযান স্পুটনিক-২-এ রাখা হয় লাইকা-কে। ৩ নভেম্বর পৃথিবী সাক্ষী থাকে স্পুটনিক-২-এর লঞ্চের। একই সঙ্গে শেষ বিদায় জানানো হয় লাইকা-কে। শেষ মুহূর্তে তার হৃদস্পন্দন পৌঁছে গিয়েছিল ২৪০/মিনিটে। মহাকাশযাত্রার আগে তার হৃদস্পন্দন ছিল ১০৩/মিনিট। শ্বাসপ্রশ্বাসের হারও বেড়ে গিয়েছিল অস্বাভাবিক হারে। তবে নিরীহ লাইকা-র মৃত্যুর মূল কারণ ছিল আতঙ্ক।
দীর্ঘ বছর ধরে গোপন রাখা হয়েছিল লাইকার মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্য। প্রথমে বলা হয়েছিল, স্পুটনিক-২ তার গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার পরে কয়েক দিন জীবিত ছিল লাইকা। কিন্তু বহু বছর পরে স্বীকার করে নেওয়া হয়, স্পুটনিক-২ লঞ্চ হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই মারা গিয়েছিল সে। ১৯৯৩ সালে এই তথ্য প্রকাশ করেন রাশিয়ান স্পেস ডগ ট্রেনার ওলেগ গেজেঙ্কো।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে লাইকা জনপ্রিয়তা পেয়ে এসেছে। আমেরিকায় ভেগান লাইফস্টাইল অ্যান্ড অ্যানিমাল রাইটস ম্যাগাজিনের নাম ‘লাইকা’। প্রতি বছর পৃথিবী জুড়ে অন্তত ১০ কোটি জীবজন্তুর প্রাণ যায় বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা গবেষণায়। বায়োলজি ক্লাস, মেডিক্যাল ট্রেনিং বা কেমিক্যাল, ড্রাগ, ফুড ও কসমেটিক্স টেস্টিং-এর জন্য কাঁটাছেঁড়া করা হয় নিরীহ জীবজন্তুদের। ‘লাইকা’ নামটা প্রতীকী মাত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy