Maharashtrian porter’s 12 year old daughter Aditi Parthe selected for NASA tour dgtl
NASA Girl
বাবা দিনমজুর, হতদরিদ্র পরিবারের কন্যা কোনও দিন ট্রেনেও চড়েনি! নিজের চেষ্টায় নাসা যাচ্ছে ১২ বছরের বালিকা
অদিতির বাবা এবং মামা পুণের একটি বাজারে কুলির কাজ করেন। রোজ সকালে মামাবাড়ির কুঁড়েঘর থেকে বেরিয়ে হেঁটে স্কুলে যায় অদিতি। স্কুল যেতে ঘণ্টাখানেক হাঁটতে হয় তাকে। কারণ, বাসে চেপে স্কুলে যাওয়াও অদিতির পরিবারের কাছে বিলাসিতা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:২৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
প্রতি দিন বাড়ি থেকে সকাল ৯টায় বেরিয়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে যেতে হয় স্কুল। স্কুল থেকে আবার হেঁটে বাড়ি ফেরা। বাড়িতে কম্পিউটার তো দূরের কথা, একটি স্মার্টফোনও নেই। হতদরিদ্র পরিবারের সেই কন্যা এ বার ডাক পেল নাসা থেকে।
০২১৮
১২ বছর বয়সি সেই বালিকার নাম অদিতি পার্থে। পুণের বাসিন্দা। ভোর এলাকার নিগুদাঘর জেলা পরিষদের একটি স্কুলের ছাত্রী সে। চলতি বছরের শেষের দিকে পুণে জেলা পরিষদ আয়োজিত নাসা সফরের জন্য নির্বাচিত ২৫ জন পড়ুয়ার এক জন অদিতি।
০৩১৮
সম্প্রতি ‘ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্স (আইইউসিএএ)’-এর সহযোগিতায় তিনটি পর্যায়ে একটি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছিল। পরীক্ষাটি শেষ হয়েছে অগস্টে। ওই পরীক্ষায় ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণির ৭৫ জন জেলা পরিষদ স্কুলের শিক্ষার্থীকে নির্বাচিত করা হয়েছে।
০৪১৮
নির্বাচিত পড়ুয়াদের মধ্যে ৫০ জন গত ৬ অক্টোবর তিরুঅনন্তপুরমে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোয় তিন দিনের সফরে গিয়েছিল। বাকি ২৫ জন যাবে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসায়। সেই ২৫ জনেরই এক জন অদিতি।
০৫১৮
অদিতি পুণের নিগুদাঘর জেলা পরিষদ স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। বাবার সঙ্গে মামাবাড়িতে থাকে সে। দাদার সঙ্গে মা থাকে গ্রামের বাড়িতে।
০৬১৮
অদিতির বাবা এবং মামা পুণের একটি বাজারে কুলির কাজ করেন। রোজ সকালে মামাবাড়ির কুঁড়েঘর থেকে বেরিয়ে হেঁটে স্কুলে যায় অদিতি। স্কুল যেতে ঘণ্টাখানেক হাঁটতে হয় তাকে। বিকাল ৫টায় স্কুল ছুটি হয়। আবার হেঁটেই বাড়ি ফেরা। কারণ, বাসে চেপে স্কুলে যাওয়াও অদিতির পরিবারের কাছে বিলাসিতার সমান।
০৭১৮
অদিতিদের অভাবের সংসার। কুঁড়েঘরে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ অবস্থা। বাড়িতে কম্পিউটার বা স্মার্টফোন নেই। সেই বাড়িতেই এ বছরের বর্ষায় রান্নাঘরের দেওয়াল ভেঙে জল ঢুকেছিল।
০৮১৮
অদিতি কোনও দিন ট্রেনেও চড়েনি। সেই ১২ বছর বয়সি বালিকাই এ বার বিমানে চড়ে পাড়ি দেবে আমেরিকা। মুম্বই থেকে উড়ে যাবে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মহাকাশ গবেষণা সংস্থার উদ্দেশে।
০৯১৮
চলতি বছরে একটি পরীক্ষার আয়োজন করেছিল আইইউসিএএ। প্রাথমিক ভাবে সেই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১৩,৬৭১ জন পড়ুয়া। প্রতিটি ব্লক থেকে শীর্ষ ১০ শতাংশ পড়ুয়াকে দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার জন্য বেছে নেওয়া হয়।
১০১৮
দ্বিতীয় পর্যায়েও একটি অনলাইন এমসিকিউ পরীক্ষা নেওয়া হয়। অদিতিদের স্কুলে কোনও কম্পিউটার না থাকায় প্রধানশিক্ষক অশোক বন্দল তাঁর ব্যক্তিগত ল্যাপটপে অদিতির পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন।
১১১৮
সেই পরীক্ষাতেও নির্বাচিত হওয়ার পর ইন্টারভিউয়ের ডাক পায় অদিতি। ২৩৫ জন পড়ুয়াকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয়েছিল। জীববিজ্ঞান, গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং ভূগোল নিয়ে প্রশ্ন করা হয় পড়ুয়াদের।
১২১৮
শেষমেশ ২৩৫ জনের মধ্যে ৭৫ জনকে বেছে নেওয়া হয় ইসরো এবং নাসা সফরের জন্য। সেই তালিকায় নাম ওঠে অদিতিরও।
১৩১৮
অদিতির এই অভাবনীয় সাফল্যে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি তার পরিবারের সদস্যেরা। আনন্দের ঢেউ স্কুলেও। নাসাযাত্রার খবরে তাকে নিয়ে হইচই পড়েছে। অদিতি নিজেও প্রচণ্ড খুশি।
১৪১৮
প্রধানশিক্ষকের ঘরে বসে অশ্রুসিক্ত চোখে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময় অদিতি বলে, “যখন স্যর আমার মামিকে খবরটা দিলেন, তখন সে প্রচণ্ড খুশি হয়ে গিয়েছিল। মামি কী বলবে বুঝতে পারছিল না। আমার মা সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে। আমি সকাল ৭টায় তাকে ফোন করে জানাই যে আমেরিকা যাচ্ছি। তার পর থেকে মা আমাকে দিনে ১৫ বার করে ফোন করছে।’’
১৫১৮
নিগুদাঘর জেলা পরিষদ স্কুলের এক শিক্ষিকা জানিয়েছেন, স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে অদিতির সাফল্যের খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেই স্কুলের তরফে তাকে একটি সাইকেল এবং ব্যাগ উপহার দেওয়া হয়েছে। স্কুলের কাছে একটি ল্যাপটপেরও অনুরোধ করা হয়েছে অদিতির পরিবারের তরফে।
১৬১৮
পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, বক্তৃতা এবং নাচেও ভাল অদিতি। মামি মঙ্গলা কাঁক ছোটবেলা থেকে মানুষ করেছেন তাকে। মঙ্গলা বলেন, ‘‘বিমানে চড়া তো দূরের কথা, আমরা কোনও দিন তা চোখেই দেখিনি। অদিতি যে আমেরিকা যাচ্ছে, সেটা আমাদের জন্য প্রচণ্ড গর্বের। আমাদের গ্রামে পড়াশোনা না করলে কুলি হওয়া ছাড়়া উপায় নেই। তাই আমরা আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার দিকে জোর দিই।’’
১৭১৮
নভেম্বরে আমেরিকা যাওয়ার কথা অদিতিদের। ইতিমধ্যেই নাসায় যাওয়া ২৫ জন পড়ুয়ার জন্য জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে জেলা পরিষদের তরফে। গ্রুপ ভিসার জন্যও আবেদন করা হয়েছে। ভিসা যাতে দ্রুত পাওয়া যায়, তা নিশ্চিত করার জন্য দূতাবাসে চিঠি পাঠিয়েছেন মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী খোদ অজিত পওয়ার।
১৮১৮
নাসা সফরে পড়ুয়াদের সঙ্গে জেলা পরিষদ স্কুলের তিন জন শিক্ষক, আইইউসিএএ-র দু’জন কর্মী এবং এক জন মেডিক্যাল অফিসার থাকবেন। এই প্রকল্পের মোট বাজেট প্রায় ২.২ কোটি টাকা। টাকা আসবে জেলা পরিষদ এবং জেলা পরিকল্পনা উন্নয়ন কমিটি থেকে।