জানা গিয়েছে, ইন্দোনেশিয়া থেকে অগস্টে ওই চিংড়িগুলি আমেরিকায় পৌঁছেছিল। কিন্তু সেই চিংড়ি পরীক্ষা করে তার মধ্যে তেজস্ক্রিয় সিজিয়াম ১৩৭-এর সন্ধান মেলে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:৪৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
ধরুন, ছুটির দিন আয়েশ করে চিংড়ি দিয়ে ভাত খেতে বসেছেন। এমন সময় কেউ এসে বলল সেই চিংড়ি না খেতে। কারণ, সেই চিংড়িগুলি নাকি তেজস্ক্রিয়! খেলেই বিপদ। কেমন লাগবে?
০২২০
ইন্দোনেশিয়া থেকে আমেরিকায় রফতানি করা হয়েছে তেমনই তেজস্ক্রিয় চিংড়ি! শুনতে অদ্ভুত লাগছে? মনে হচ্ছে চিংড়িতে তেজস্ক্রিয়তা কী করে সম্ভব? অবিশ্বাস্য মনে হলেও তেমনটাই ঘটেছে। আমেরিকায় ইন্দোনেশিয়া থেকে পাঠানো চিংড়িতে তেজস্ক্রিয় দূষণ শনাক্ত করেছে আমেরিকার ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এফডিএ)।
০৩২০
দূষণের উৎস নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া থেকে চিংড়ি আমদানি বন্ধ করেছে আমেরিকা। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ কেজি চিংড়ি আমেরিকায় পাঠায় ইন্দোনেশিয়ার রফতানি সংস্থা ‘পিটি বাহারি মাকমুরি সেজাতি’ বা বিএমএস ফুডস।
০৪২০
বাণিজ্য তথ্য বিশ্লেষণকারী একটি সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে আমেরিকায় ৩ কোটি ৮০ লক্ষ কেজি চিংড়ি রফতানি করেছে বিএমএস ফুডস, যা আমেরিকায় আমদানি করা বিদেশি চিংড়ির প্রায় ৬ শতাংশ। আপাতত সেই সংস্থার চিংড়ি রফতানি বন্ধ রাখা হয়েছে।
০৫২০
জানা গিয়েছে, ইন্দোনেশিয়া থেকে অগস্টে ওই চিংড়িগুলি আমেরিকায় পৌঁছেছিল। কিন্তু সেই চিংড়ি পরীক্ষা করার পরে তার মধ্যে তেজস্ক্রিয় সিজিয়াম ১৩৭-এর সন্ধান মেলে। সঙ্গে সঙ্গে টনক নড়ে আমেরিকার। ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষকেও খবর দেওয়া হয়।
০৬২০
সিজিয়াম ১৩৭ হল একটি তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ, যা পরমাণু বোমা তৈরি, পরমাণু চুল্লি পরিচালনা এবং পরমাণু দুর্ঘটনায় পারমাণবিক বিক্রিয়ায় উপজাত হিসাবে তৈরি হয়। এই তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত এবং এর উপস্থিতি মাটি এবং বাতাসের মতো প্রাকৃতিক উপাদানে পাওয়া যায়।
০৭২০
এফডিএ-র মতে, সিজিয়াম ১৩৭ হল এমন একটি বিপজ্জনক তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ যা সাধারণত চের্নোবিল এবং ফুকুশিমার মতো পারমাণবিক বিপর্যয় বা পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার ফলে তৈরি হয়। সেই তেজস্ক্রিয়ের খোঁজই এ বার মিলল ইন্দোনেশিয়া থেকে আমেরিকায় পাঠানো চিংড়িতে।
০৮২০
ঘটনার সূত্রপাত চলতি বছরের অগস্টে। মার্কিন শুল্ক এবং সীমান্ত সুরক্ষা কর্মকর্তারা বিএমএস ফুডসের তরফে আমেরিকার বেশ কয়েকটি বন্দরে পাঠানো চিংড়ি দূষিত হওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
০৯২০
কর্মকর্তারা সম্ভাব্য দূষণ সম্পর্কে এফডিএ-কে অবহিত করার পর চিংড়ির নমুনা পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। এর পরেই ব্রেডেড চিংড়ির নমুনায় সিজিয়াম ১৩৭-এর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। হইচই পড়ে। শুরু হয় চিংড়ি প্রত্যাহার।
১০২০
চিংড়ি প্রত্যাহারের পর সক্রিয় হয় ইন্দোনেশিয়ার প্রশাসনও। তেজস্ক্রিয় দূষণ নিয়ে তদন্তকারী বিশেষ টাস্ক ফোর্স জাকার্তার কাছে একটি শিল্পাঞ্চলে ২২টি চিংড়ি উৎপাদন কেন্দ্রে সিজিয়াম ১৩৭-এর উপস্থিতি শনাক্ত করে।
১১২০
কর্তৃপক্ষ দেখেন, জাকার্তার বান্টেন প্রদেশের মডার্ন সিকান্দে শিল্পাঞ্চল জুড়ে ছড়িয়েছে এই তেজস্ক্রিয়তা। ওই শিল্পাঞ্চলে বিএমএস-এর উৎপাদন কেন্দ্রও রয়েছে।
১২২০
জাকার্তা থেকে প্রায় ৬৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মডার্ন সিকান্দে শিল্পাঞ্চল ৩,১৭৫ হেক্টর এলাকা নিয়ে তৈরি। সরকারি ওয়েবসাইট অনুযায়ী, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং মোটরগাড়ি উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্থানীয় এবং বিদেশি সংস্থাগুলি মিলিয়ে ২৭০টিরও বেশি সংস্থা রয়েছে সেই শিল্পাঞ্চলে।
১৩২০
সেখানে তেজস্ক্রিয় চিংড়ির খোঁজ মেলার পরেই প্রশ্ন ওঠে, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ, যেখানে কোনও পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত নেই, সেখান থেকে আসা চিংড়িতে এ রকম মারাত্মক তেজস্ক্রিয় আইসোটপের উপস্থিতি কী ভাবে সম্ভব? আমেরিকার বিরুদ্ধে কোথাও কোনও ষড়যন্ত্র হচ্ছে না তো?
১৪২০
ইন্দোনেশিয়া মনে করছে, আমদানি করা কোনও উপকরণের মাধ্যমে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ সিজিয়াম ১৩৭ তাদের দেশে প্রবেশ করেছে।
১৫২০
বিষয়টি প্রসঙ্গে জাতীয় তেজস্ক্রিয় দূষণ টাস্ক ফোর্সের মুখপাত্র বরা হাসিবুয়ান বলেন, ‘‘চিংড়ি উৎপাদন কেন্দ্রগুলি স্বাধীন ভাবে দূষণমুক্তকরণ প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় পারমাণবিক শক্তি সংস্থার তত্ত্বাবধানে দূষণমুক্তকরণ প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। দেশের পরমাণু সংস্থা আপাতত ওই কেন্দ্রগুলিকে নিরাপদ বলে ঘোষণা করেছে।’’
১৬২০
হাসিবুয়ান আরও বলেন, ‘‘সরকার স্ক্র্যাপ ধাতু আমদানির উপর বিধিনিষেধ কঠোর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর অর্থ পরিবেশ মন্ত্রক আর এই ধরনের আমদানি মঞ্জুর করবে না।’’
১৭২০
পাশাপাশি সরকারের তরফে সিজিয়াম-১৩৭ ধারণকারী দূষিত পদার্থ সংরক্ষণের জন্য ‘পিটি পিটার মেটাল টেকনোলজি (পিএমটি)’ নামে একটি ধাতু কারখানাকেও তৈরি রেখেছে।
১৮২০
অন্য দিকে, আমেরিকা নিশ্চিত করেছে যে তেজস্ক্রিয়তা লক্ষ করা গিয়েছে এমন কোনও খাবার তাদের দেশে বিক্রি করা হচ্ছে না। বেশ কিছু দোকান থেকে লক্ষ লক্ষ চিংড়ির প্যাকেট ফেরত নেওয়া হয়েছে।
১৯২০
আপাতত সিজিয়াম-১৩৭ আইসোটোপ থেকে ক্ষতির ঝুঁকি ন্যূনতম বলে মনে হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, তেজস্ক্রিয় খাবার দীর্ঘ দিন ধরে গ্রহণের কারণে স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হতে পারে। শরীরে ক্যানসারের ঝুঁকিও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে পারে।
২০২০
রফতানি করা চিংড়িতে তেজস্ক্রিয় দূষণের পর ইন্দোনেশিয়ার চিংড়ি চাষিদের হাল বেশ খারাপ বলে জানা গিয়েছে। রফতানি কমেছে প্রায় ৩০-৩৫ শতাংশ। উল্লেখ্য, চিংড়ির পর ইন্দোনেশিয়া থেকে আমেরিকায় রফতানি করা লবঙ্গের নমুনাতেও সিজিয়াম ১৩৭ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। তা নিয়েও ছড়িয়েছে উদ্বেগ।