The Chilling Story Of Chris Di Cesare And The Erie Hall Ghost At Geneseo dgtl
Ghost Boy Of Eerie Hall
দেখেই চমকে যান খ্যাতনামী পরাবাস্তববিদ, ভয়ঙ্কর আঁচড়ে ফালা ফালা হয় পিঠ! ‘অশরীরী’র কবল থেকে অদ্ভুত উপায়ে মুক্তি পান তরুণ
একরাশ স্বপ্ন নিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন ১৯ বছরের তরুণ। অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা ছিল বলে প্রতি দিন কঠিন পরিশ্রম করতেন তিনি। কিন্তু কলেজে এক অলৌকিক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হওয়ায় তাঁর জীবন আমূল বদলে যায়।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:২২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
চোখে তখন হাজারো স্বপ্ন উড়ছে ১৯ বছরের তরুণের। আমেরিকার খ্যাতনামী একটি কলেজে ছাত্রবৃত্তি দিয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। দৌড়োতে ভালবাসতেন। ছিল বহু পদক। স্বপ্ন ছিল অলিম্পিক্সে প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করার। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিল লেফটেন্যান্টের ‘আত্মা’।
০২২৩
১৯৮৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস। জেনেসিও কলেজে ছাত্রবৃত্তি নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ক্রিস দি সিজ়ারে। আমেরিকার নিউ ইয়র্কের ফিঙ্গার লেকস অঞ্চলের লিভিংস্টোন কাউন্টির একটি শহর হল জেনেসিও। বিখ্যাত মার্কিন পরাবাস্তব বিশেষজ্ঞ-গবেষক (প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটর) এড ওয়ারেন এবং তাঁর স্ত্রী লোরেন ওয়ারেন সেই কলেজে নিজেদের কাজ নিয়ে আলোচনা করতেও গিয়েছিলেন। সেই আলোচনায় দর্শকাসনে উপস্থিত ছিলেন ক্রিসও। সেখানেই এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে তাঁর সঙ্গে।
০৩২৩
আলোচনাসভার শেষে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্রছাত্রীরা আলাদা করে ওয়ারেন-দম্পতির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। বিশেষ ইচ্ছা না থাকলেও বন্ধু জেফের জোরাজুরিতে ওয়ারেন-দম্পতির সঙ্গে দেখা করতে যান ক্রিসও। কিন্তু মঞ্চে ক্রিসকে দেখার পর চমকে ওঠেন লোরেন। ক্রিসের সঙ্গে হাত মেলাতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
০৪২৩
ক্রিসকে দেখে লোরেন সকলের সামনে বলে ওঠেন, ‘‘আমি তোমার সঙ্গে হাত মেলাব না। আমি আমার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু জানতে চাই না।’’ তার পর স্বামী এডের কানে কানে কিছু বলেন লোরেন। লোরেনের কথা শোনার পর ক্রিসকে মঞ্চ ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন এড। পুরো ঘটনাটি খুব অদ্ভুত লেগেছিল ক্রিসের।
০৫২৩
বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আলোচনা করেও শান্তি পাচ্ছিলেন না ক্রিস। ওয়ারেন-দম্পতি কেন তাঁর সঙ্গে হাত মেলাতে চাইলেন না, কেনই বা ভবিষ্যৎ জানা নিয়ে কথা তুললেন, তা নিয়ে আকাশপাতাল ভেবে চলেছিলেন ক্রিস। কোনও প্রশ্নের উত্তর ছিল না তাঁর কাছে। ক্রিসের ধারণা, ওয়ারেন-দম্পতি সম্ভবত অলৌকিক কোনও কিছু আঁচ করতে পেরেছিলেন। সেই ঘটনার ১১ দিন পর থেকেই ক্রিসের সঙ্গে অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটতে শুরু করে।
০৬২৩
একা কোথাও বসে থাকলে ক্রিস শুনতে পেতেন তাঁর নাম ধরে ফিসফিস করে কেউ ডাকছে। কিন্তু ডাক অনুসরণ করে কাউকে দেখতে পেতেন না তিনি। এমনকি তিনি দাবি করেন, মাঝেমধ্যেই একটি অবয়বকে ঘোরাফেরা করতে দেখতেন তিনি। দিনকয়েক পর ক্রিস একা নন, তাঁর বন্ধুবান্ধবও ‘অশরীরী’র উপস্থিতি টের পেতে শুরু করলেন।
০৭২৩
ক্রিস যে ‘ভূত’-এর দেখা পেতে শুরু করেছেন, তা জানাজানি হতে বেশি সময় লাগল না। কলেজের অন্য ছাত্রছাত্রীরা ‘ঘোস্ট বয়’ বলে ডেকে ক্রিসকে খেপাতে শুরু করেন। পুরো বিষয়টি ভাল লাগেনি ক্রিসের বন্ধু জেফের। বন্ধুকে সাহায্য করতে চান জেফ।
০৮২৩
ছবি তুলতে ভালবাসতেন জেফ। ক্যামেরা নিয়েই বেশির ভাগ সময় ঘুরে বেড়াতেন তিনি। ‘আত্মা’কে টমি নাম দিয়ে সম্বোধন করার সিদ্ধান্ত নিলেন ক্রিস এবং জেফ। টমির সঙ্গে কথা বলার জন্য একটি টেপ রেকর্ডার জোগাড় করলেন তাঁরা। ক্রিস যে টমির সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান, তা টেপ রেকর্ডার চালু করে বললেন তিনি। পুরো ঘটনার ছবি জেফ ক্যামেরাবন্দিও করছিলেন।
০৯২৩
কিছু ক্ষণ পর টেপ রেকর্ডারটি চালিয়ে ক্রিস এবং জেফ অদ্ভুত শব্দ শুনতে পান। সেই শব্দ খুব মন দিয়ে শুনে ক্রিস বুঝতে পারেন যে, কোনও মানুষ যেন বিপদে পড়ে তাঁদের সাহায্য চাইছে। এক পাদরির সঙ্গে যোগাযোগ করেন ক্রিস। ক্রিসের ঘরে গিয়ে অদ্ভুত ঠান্ডা হাওয়া অনুভব করেছিলেন সেই পাদরি। কিন্তু মন্ত্রোচ্চারণ করার পর সেই ঠান্ডা পরিবেশ ধীরে ধীরে কেটে যায়।
১০২৩
ক্রিস ভাবেন যে, তাঁর বিপদ কেটে গিয়েছে। আবার পড়াশোনা, দৌড় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু দিন কয়েকের মধ্যেই ক্রিসের উপর হামলা করে বসে সেই ‘অশরীরী’। ক্রিস তখন বাথরুমে স্নান করছিলেন। হঠাৎ তাঁকে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে কেউ ফেলে দেয়। চিৎকার করে ওঠেন ক্রিস।
১১২৩
ক্রিসের চিৎকার শুনে বাথরুমে ছুটে যান জেফ। তিনি দেখেন, মেঝেয় ক্রিস শুয়ে রয়েছেন। ক্রিসের পিঠে লম্বা লম্বা তিনটি আঁচড়ের দাগ। সেখান থেকে রক্ত ঝরছে। আর দেরি না করে ক্রিস তাঁর বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
১২২৩
ক্রিসের জীবনে তাঁর বাবা ছিলেন পথপ্রদর্শক। বাবাকে সব কথা খুলে বলেন তিনি। ক্রিসের বাবাও চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। ক্রিসের ঘরে সারা রাত জেগে বসে পাহারা দেন তিনি। ঘরের ভিতর যে অস্বাভাবিক ঠান্ডা তা টের পেয়েছিলেন ক্রিসের বাবা। তবে, সে কথা ক্রিসকে জানাননি তিনি। বরং, ক্রিসকে ঘুমোতে বলে তিনি নিজে সারা রাত চেয়ারে বসে ছিলেন।
১৩২৩
ক্রিসের সঙ্গে সকালে দৌড়োতে বেরিয়েছিলেন তাঁর বাবা। দৌড়োতে গিয়ে ঝোপঝাড়ে ঢাকা এক জায়গা থেকে পার্কার বয়েডের নাম লেখা একটি ফলক খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু পার্কারের পরিচিতি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না ক্রিস। তিনি যে এক জন সৈনিক ছিলেন, তা ফলক থেকে জানতে পেরেছিলেন ক্রিস এবং তাঁর বাবা। পরে ক্রিসকে বিদায় জানিয়ে তাঁর বাবা বাড়ি ফিরে গেলেও ক্রিসের মাথায় পার্কারের নাম ঘুরপাক খেতে থাকে।
১৪২৩
সন্দেহ বাড়তে থাকায় পার্কার বয়েডের ফলক খুঁজে পাওয়ার কথা জেফকে জানান ক্রিস। কলেজের গ্রন্থাগারে গিয়ে বইপত্র ঘাঁটতে শুরু করেন জেফ এবং ক্রিস। পার্কার বয়েড সংক্রান্ত তথ্যও খুঁজে পান দু’জনে। সব জানার পর ভয় পেয়ে যান তাঁরা।
১৫২৩
জেফ এবং ক্রিস জানতে পারেন যে, আমেরিকায় স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন জেনেসিও শহরে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়। মৃতদের তালিকায় ছিলেন প্রচুর সৈন্যও। পার্কার বয়েড কোনও এক জন ব্যক্তির নাম নয়। বরং দুই ভিন্ন ব্যক্তির নাম জুড়ে সেই ফলকে লেখা হয়েছিল।
১৬২৩
মাইকেল পার্কার ছিলেন লেফটেন্যান্ট থমাস বয়েডের বাহিনীর সার্জেন্ট। যুদ্ধ চলাকালীন বয়েডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, আমেরিকার এক উপজাতিবিশেষের উপর সমীক্ষা করতে। কিন্তু তিনি নির্দেশ অমান্য করে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি লোকের উপর সমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন। কানাঘুষো শোনা যায়, যাত্রাপথে বয়েডকে বন্দি করেছিলেন সেই উপজাতির মানুষেরা। দিনের পর দিন তাঁর উপর অত্যাচার করা হত।
১৭২৩
বয়েডকে শাস্তি দিতে তাঁর পেট চিরে দেওয়া হয়েছিল। শরীর থেকে নাড়িভুঁড়ি বার করে তা একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। বয়েডের মুখ ছুরি দিয়ে ফালা ফালা করে তাঁর জিভ কেটে ফেলা হয়েছিল। এমনকি, তাঁর দুই কান কেটে গাছের তলায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল বয়েডের মৃতদেহ।
১৮২৩
যে গাছের তলায় বয়েডের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, সেই গাছটি জেনেসিও কলেজ থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে। ক্রিস প্রতি দিন সকালে সেই গাছের সামনে দিয়েই দৌড়োতেন। প্রতি সকালে সেখানে দৌড়োনোর সময় দ্বিতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি টের পেলেও তাতে বিশেষ আমল দেননি ক্রিস। বাবার সঙ্গে দৌড়োনোর সময় সেখানেই ফলকটি খুঁজে পেয়েছিলেন ক্রিস। বয়েডের ব্যাপারে জানার পর সব কিছু জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যায় ক্রিসের কাছে।
১৯২৩
লেফটেন্যান্ট বয়েডের ‘আত্মা’ই তবে টমি! বয়েডের ‘অশরীরী’র মোকাবিলা করতে চাইলেন ক্রিস। যে গাছের তলায় ফলকটি খুঁজে পেয়েছিলেন, সেখানে গেলেন ক্রিস। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বললেন, ‘‘আমি জানি, তুমি এখানে রয়েছ। আমার সামনে এসো।’’ ক্রিসের দাবি, সঙ্গে সঙ্গে বয়েডকে দেখতে পান তিনি।
২০২৩
টমির উদ্দেশে ক্রিস বলেন, ‘‘তোমার সঙ্গে যা হয়েছে তা ঠিক নয়। কিন্তু তোমার এখানে থাকা উচিত নয়। আমি এক থেকে দশ গুনব। দশ গোনার সঙ্গে সঙ্গেই তুমি এখান থেকে চলে যাবে।’’ তার পর চোখ বুজে গুনতি শুরু করেন ক্রিস। দশ গোনার পর চোখ খুলে আর বয়েডকে নাকি দেখতে পাননি তিনি। এমনকি, ক্রিস এবং তাঁর বন্ধুবান্ধবের সঙ্গেও আর অলৌকিক কোনও ঘটনা ঘটেনি।
২১২৩
ক্রিসের জীবন থেকে টমি নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেও তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে এই ঘটনার প্রভাব পড়েছিল। ক্রিসের বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ ক্রমশই কমতে থাকে। এমনকি, তিনি যে অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ করার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্নের পিছনে ছোটাও বন্ধ করে দেন। এখনও লেফটেন্যান্ট বয়েডের কথা মনে পড়লে ভয়ে কুঁকড়ে যান তিনি।
২২২৩
ক্রিসের বাবা এক তথ্যচিত্রে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ক্রিসের সঙ্গে টমির এই ‘সাক্ষাৎ’ কাকতালীয় নয়। ক্রিসের বাবা পরে জানতে পারেন যে, লেফটেন্যান্ট বয়েড ছিলেন তাঁর স্ত্রীর দূরসম্পর্কের আত্মীয়। সে কারণেই হয়তো বয়েডের ‘আত্মা’ দেখা দিয়েছিল ক্রিসকে।
২৩২৩
ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ‘ট্রু হন্টিং’ নামের একটি হরর ঘরানার ডকু-সিরিজ় রয়েছে। ভৌতিক ঘরানার চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় পরিচালক জেমস ওয়ান সেই ডকু-সিরিজ়ের নির্বাহী প্রযোজক। পাঁচটি পর্বের সেই ডকু-সিরিজ়ের প্রথম তিন পর্বে ক্রিস এবং তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া অলৌকিক ঘটনার বিবরণ দেওয়া রয়েছে।