The Lost Mark 15 Hydrogen Bomb Near Tybee Island and the U.S. Air Force Mystery dgtl
Nuclear bomb mystery
দুই যুদ্ধবিমানের সংঘর্ষে সমুদ্রে গায়েব হয় হিরোশিমা ধ্বংসের ২০০ গুণ শক্তিশালী পরমাণু বোমা! কোথায় গেল, কে নিল? রহস্য আজও
আমেরিকার ছোট একটি দ্বীপ টাইবি আইল্যান্ড। সেখানেই নাকি ৬৭ বছর আগে হারিয়ে যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী পরমাণু বোমা। হিরোশিমা-নাগাসাকি ধ্বংস হয়েছিল যে বোমার বিস্ফোরণে, তার চেয়ে ২০০ গুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা হারিয়ে ফেলে মার্কিন বায়ুসেনা! এখনও যদি ওই বোমার বিস্ফোরণ ঘটে, তা হলেও নাকি ধ্বংস হয়ে যাবে অর্ধেক আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:২৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
১৯৫৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। জর্জিয়ার টাইবি দ্বীপে আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বিশেষ পদক্ষেপ করেছিল মার্কিন বায়ুসেনা। তাঁদের তৈরি ৩.৫ থেকে ৩.৮ মেগাটনের পরমাণু বোমা বিমান থেকে নামানো হয় সমুদ্রের জলে।
০২২৩
হিরোশিমা-নাগাসাকি ধ্বংস হয়েছিল যে বোমায়, তার চেয়ে ২০০ গুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ছিল ওই বোমা। নাম মার্ক-১৫। পরের দিন মার্কিন বায়ুসেনা গিয়ে আর খুঁজে পায়নি ওই পরমাণু বোমা।
০৩২৩
তা হলে কি সেই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের হাতে চলে গিয়েছিল মার্ক-১৫? একাধিক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বলছে, ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’-এর সময় যে হেতু বোমাটি হারিয়ে যায়, তাই এর পিছনে হয়তো হাত রয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়নের।
০৪২৩
১৯৫৮ সালে ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’-এর আবহে যে কোনও মুহূর্তে সোভিয়েত ইউনিয়নের তরফে আমেরিকা আক্রমণের আশঙ্কা ছিল। সেইমতো মার্কিন বায়ুসেনা যুদ্ধের সব রকম প্রস্তুতি সেরে রাখছিল।
০৫২৩
তাই মার্কিন বায়ুসেনার একটি বি-৪৭ স্ট্র্যাটোজেট বিমানে পারমাণবিক অস্ত্র বহন ও অন্য জায়গায় পৌঁছোনোর মহড়া দিচ্ছিল। সেই সময় আকাশপথে আমেরিকার সীমানা বরাবর বিমানটি টহল দিচ্ছিল। কারণ, যদি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে, তা হলে যাতে তৎক্ষণাৎ আমেরিকাও প্রত্যুত্তর দিতে পারে।
০৬২৩
বি-৪৭ স্ট্র্যাটোজেট বিমানে ছিলেন পাইলট মেজর হাওয়ার্ড রিচার্ডসন, রবার্ট জেল্যাগারস্ট্রম, লেল্যান্ড ডব্লিউ উলার্ড। তাঁদের সঙ্গে ছিল সেই সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী পরমাণু বোমা মার্ক-১৫।
০৭২৩
মার্ক-১৫-এর ওজন ছিল ৩,৪৪৭ কেজি। এটি ছিল প্রায় ১২ ফুট লম্বা ও ২৮ ফুট চওড়া। বিমানে থাকা তিন জনই জানতেন এই বোমা কোনও কারণে ফাটলে শুধু তাঁদেরই প্রাণ যাবে এমনটা নয়, ধ্বংস হয়ে যেতে পারে অর্ধেক আমেরিকা। তাই সাধারণ গতিবেগের চেয়ে অনেকটাই কম গতিতে যাচ্ছিল বিমানটি।
০৮২৩
ওই একই সময় একই পরিসরের মধ্যে মার্কিন বায়ুসেনারই আরও একটি বিমান মহড়া দিচ্ছিল। বিমানের নাম ছিল এফ-৮৬ স্যাবার। মূলত বি-৪৭ স্ট্র্যাটোজেট বিমানের নিরাপত্তার উদ্দেশ্যেই টহল দিচ্ছিল সেটি। এফ-৮৬ বিমান শত্রুপক্ষের বিমানকে নিমেষে ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখত।
০৯২৩
এফ-৮৬-এর চালক ছিলেন ক্ল্যারেন্স স্টুয়ার্ট। বি-৪৭ স্ট্র্যাটোজেট বিমানের নিরাপত্তার খাতিরে বিশেষ সামগ্রী বহন করছিল এফ-৮৬ স্যাবার। এ ছাড়া বিমানে কিছু অস্ত্রও রাখা ছিল।
১০২৩
এক দিকে এফ-৮৬ স্যাবার-এর গতিবেগ ছিল সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি। অন্য দিকে ধীর গতিতে এগোচ্ছিল বি-৪৭ স্ট্র্যাটোজেট বিমান। উভয় বিমানের চালকের কল্পনার বাইরে ছিল দু’টি বিমানের কখনও সংঘর্ষ হতে পারে।
১১২৩
রাতের ঘন অন্ধকারে এফ-৮৬ দিক হারিয়ে ফেলেছিল। মার্কিন বায়ুসেনার স্থল নিয়ন্ত্রণ সংস্থা তা বুঝে যায়। তৎক্ষণাৎ তাদের তরফে দু’টি বিমানের চালককেই সতর্কবার্তা পাঠানো হয়।
১২২৩
যদিও তত ক্ষণে অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছিল। ৫ ফেব্রুয়ারির রাত আড়াইটে নাগাদ এফ-৮৬ সজোরে ধাক্কা মারে বি-৪৭-এর ডান দিকের পাখায়। সঙ্গে সঙ্গে এফ-৮৬-এর এক দিকে আগুন ধরে যায়।
১৩২৩
এফ-৮৬-এর চালক বুঝে গিয়েছিলেন এই বিমান নিয়ে বেশি দূর যাওয়া যাবে না। সঙ্গে সঙ্গে প্যারাসুটের সাহায্যে অবতরণ করেন তিনি।
১৪২৩
অন্য দিকে বি-৪৭ স্ট্র্যাটোজেট বিমানের ডান দিকের পাখাতেও আগুন ধরে যায়। ডান দিকের ইঞ্জিন সম্পূর্ণ ভাবে খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আকাশে প্রবল ভাবে দুলতে শুরু করে বিমানটি। চালক বুঝে গিয়েছিলেন তাঁদের হাতে আর বেশি সময় নেই।
১৫২৩
চালকের এ-ও ধারণা ছিল, বিমানে থাকা পরমাণু বোমা যে কোনও সময় বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। তাঁরা কী করবেন সে বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। স্থলভাগে থাকা বায়ুসেনার নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায়।
১৬২৩
কেবল দু’টি বিকল্প পথই খোলা ছিল বিমানচালকের কাছে। এক, দ্বীপের জলের মধ্যে মার্ক-১৫-এর অবতরণ করানো। আর না হলে, ঝুঁকি নিয়ে বিমানকে স্থলভাগের দিকে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু স্থলভাগ পর্যন্ত যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল না বিমানটির।
১৭২৩
এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চালক রিচার্ডসন সে সময় শুধু ভাবছিলেন, যদি এখন বোমাটিকে নামানো যায় তা হলে হয়তো সকলেই বেঁচে যাবেন। কিন্তু কোনও ভাবে তা না করলে আর বিস্ফোরণ হলে শুধু বিমানে থাকা তিন জনই না, ধ্বংস হয়ে যেতে পারে আমেরিকার বড় অংশ।
১৮২৩
আর কোনও দিক না ভেবে শেষমেশ রিচার্ডসন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। এক মুহূর্তের জন্য চোখ বন্ধ করে, এক নিঃশ্বাসে বাকি দু’জনকে জোর গলায় নির্দেশ দেন— ‘‘এখনই বোমাটি সমুদ্রের জলে নামাও!’’ ভারী প্যারাসুটের সাহায্যে মার্ক-১৫-কে জলে অবতরণ করানো হয়।
১৯২৩
অবতরণের সময়ও বিস্ফোরণের ভয় ছিল। কিন্তু তা হয়নি। অবতরণের সঙ্গে সঙ্গেই সমুদ্রের জলে ডুবে যায় বিমানটি। বি-৪৭-এর বিমানচালকেরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। এর পর প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা মেনে তাঁরা অবতরণ করেন।
২০২৩
এই খবর বায়ুসেনার আধিকারিকদের কাছে পৌঁছোতেই হুলুস্থুল পড়ে যায়। তৎক্ষণাৎ গোপন একটি মিশন শুরু হয়। বায়ুসেনা জানত, জলে ডুবে থাকা অবস্থাতেও মার্ক-১৫ যে কোনও সময় বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।
২১২৩
পরের দিনই মার্ক-১৫-এর খোঁজে বায়ুসেনার ডুবোজাহাজ টাইবি দ্বীপের কাছে যায়। কিন্তু দ্বীপে গেলে কী হবে! মার্ক-১৫-এর কোনও অস্তিত্বই খুঁজে পায় না তারা। বহু দিন ধরে হাজার চেষ্টা করেও পরমাণু বোমার কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
২২২৩
বেশ কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বলা হয়, সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে মার্ক-১৫-এর ডুবে যাওয়ার খবর ছিল। তাই তারা তড়িঘড়ি ডুবোজাহাজে করে পরমাণু বোমা নিয়ে গিয়েছে।
২৩২৩
কিন্তু এমন দাবির কোনও প্রমাণ পায়নি মার্কিন বায়ুসেনা। তবে, এক দিনের মধ্যে এত বড় একটা পরমাণু বোমা কোথায় উবে গেল, সে রহস্যের সমাধান হয়নি আজও।