কিন্তু, একজন ব্রোকার হয়ে এত টাকা কেতন পেতেন কোথা থেকে? ঋণের জন্য কিছু ছোট ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন কেতন। মাধবপুর মার্চেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের মতো কিছু ছোট ব্যাঙ্ক তাঁর কথা মেনে বিপুল পরিমাণে টাকা ঋণ দেয়। কেতন পে অর্ডার দিয়ে (তথ্য অনুযায়ী, ভুয়ো পে অর্ডার তৈরি করতেন) ঋণ নিতেন। এ ছাড়াও বেশি টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে কয়েক জন প্রোমোটারের থেকেও ঋণ নিয়েছিলেন।
শেয়ার কেনাবেচার জন্য কেতন বেছে নিয়েছিলেন সিএসই-কে। যদিও বেশি দিন তিনি বেআইনি ভাবে এই কাজ করতে পারেননি। প্রচুর টাকার বিনিময়ে আইস-স্টকের শেয়ার কেনার ফলে একটা সময়ের পর বাজারে ওই স্টকগুলির চাহিদা কমে যায়। যে চড়া দামে স্টক কিনতে হয়েছিল তার চেয়ে অনেক কম টাকায় সেগুলি বিক্রি করে দিতে হয়। কেতন অর্থনৈতিক দিক থেকে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েন। ঋণও শোধ করতে পারেননি। এমন অবস্থা নজরে আসে শেয়ার প্রশাসনের। জানা যায়, কে ১০ এবং পে অর্ডার পদ্ধতির মাধ্যমে শেয়ার বাজারে বিশাল টাকার জালিয়াতি করেছেন কেতন।
তবে শুধুমাত্র কেতনের কীর্তিকে সিএসই ভেঙে পড়ার প্রধান কারণ হিসাবে দেখছেন না অনেকে। সূত্রের খবর, সিএসই-র বরাবরই উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব ছিল। প্রযুক্তিগত দিক থেকেও বেশ নড়বড়ে অবস্থায় ছিল সিএসই। দীর্ঘ দিন ধরে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা ছিল না সিএসই-র।
এ ছাড়াও আরও একটি কারণকেও তুলে ধরা হয়েছে। একাধিক বড় সংস্থা তাঁদের মূল কার্যালয় কলকাতা থেকে মুম্বইয়ে নিয়ে চলে যায়। ধীরে ধীরে পশ্চিমবঙ্গ ব্যবসার প্রাণকেন্দ্রের তকমা হারিয়ে ফেলে। সংস্থাগুলি সিএসই থেকে নাম সরিয়ে বিএসই অথবা এনএসই-তে বিনিয়োগ করতে শুরু করে দেয়। এর ফলে সিএসই-ও ধীরে ধীরে অসাড় হয়ে পড়ে।
সিএসই-র প্রাক্তন চিফ ইনফরমেশন সিকিউরিটি অফিসার শমীক ভাদুড়ী বলেন, ‘‘সেবির না চাওয়া, ব্যবসার অভাব, আধুনিক প্রযুক্তিতে উপযুক্ত বিনিয়োগের অভাবের কারণেই সিএসই-র আজ ভঙ্গুর দশা।’’ তিনি আরও জানিয়েছেন, আগে বেশ কয়েক বার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে সিএসই, কিন্তু কর্তৃপক্ষের দূরদর্শিতার অভাব থাকার কারণে প্রতি বার বাধার সম্মুখীন হলেও শেষ পর্যন্ত তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি আর।
২০১৩ সাল থেকে একেবারে লেনদেন বন্ধ সিএসই-তে। কোনও সংস্থার নামও নেই আর সেখানে। তা হলে কি সত্যিই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিএসই? আদৌ কি সেবির কাছে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোনও অনুমোদনপত্র জমা পড়েছে? সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত সেবি-র সঙ্গে আলোচনায় রয়েছে সিএসই। সম্পূর্ণ ভাবে কলকাতার অর্থনৈতিক ঐতিহ্যের ধারক সিএসই আদৌ বন্ধ হয়ে যাবে কি না সে নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠলেও, স্পষ্ট ভাবে কোনও উত্তর মেলেনি সিএসই কর্তৃপক্ষের তরফে। (ঋণস্বীকার অদিতি ঘটকের ‘ডাউন দ্য লায়ন্স রেঞ্জ’)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy