সত্তরের দশকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবন শুরু আশুতোষ কলেজ থেকে। কলেজে পা রেখেই ছাত্র পরিষদের সদস্য হন।
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২২ ১০:২৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
সত্তরের দশকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবন শুরু আশুতোষ কলেজ থেকে। কলেজে পা রেখেই ছাত্র পরিষদের সদস্য হন। অল্প সময়েই হয়ে ওঠেন ছাত্র সংসদের সক্রিয় সদস্য।
০২১৬
তখন ছাত্র পরিষদের সভাপতি ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। মূলত তাঁর উদ্যোগেই অশুতোষ কলেজে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হন পার্থ। এক সময় দক্ষিণ কলকাতা জেলা ছাত্র পরিষদের সভাপতিও হয়েছিলেন।
০৩১৬
দক্ষিণ কলকাতা জেলা সভাপতি থাকাকালীন পার্থর সঙ্গে আলাপ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মমতাও তখন যোগমায়া দেবী কলেজে ছাত্র পরিষদের নেত্রী।
০৪১৬
দক্ষিণ কলকাতা জেলা ছাত্র পরিষদের সভাপতি থাকতে থাকতেই ম্যানেজমেন্ট পড়া শুরু করেন পার্থ। পড়াশোনার ব্যস্ততার জেরে রাজনীতি থেকে সরে আসেন। ইস্টবেঙ্গলের কট্টর সমর্থক ছিলেন। ছাত্রাবস্থায় ইস্টবেঙ্গলের খেলা থাকলেই পার্থকে দেখা যেত গ্যালারিতে। পড়াশোনার জন্য রাজনীতি ও খেলার মাঠে যাওয়া দুই-ই ছেড়েছিলেন তিনি।
০৫১৬
চাকরিতে যোগদানের পর রাজনীতির সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায় পার্থর। তবে নব্বইয়ের দশকে মমতা যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী হওয়ার পর ফের পার্থর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ শুরু হয়।
০৬১৬
১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি পথচলা শুরু করে মমতার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল। বেসরকারি সংস্থায় বড় বেতনের চাকরি ছেড়ে পার্থ যোগদান করেন তৃণমূলে।
০৭১৬
২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে মমতার প্রথম পছন্দ ছিলেন ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তিনি ভোটে না দাঁড়াতে চাওয়ায় মমতা বেহালা পশ্চিমে প্রার্থী করেন পার্থকে। প্রথম বার ভোটে দাঁড়িয়েই জেতেন তিনি।
০৮১৬
২০০৫ সালের পুরসভা নির্বাচনের আগে সুব্রত মুখোপাধ্যায় তৃণমূল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে পৃথক মঞ্চ গড়ে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময় মমতার নির্দেশে সিপিএমের মেয়র পদপ্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হন পার্থ। কিন্তু হেরে যান তিনি।
০৯১৬
২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টের কাছে তৃণমূল পর্যুদস্ত হলেও বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রে দ্বিতীয় বার জয়ী হন পার্থ। সে বার ভোটে দাঁড়াননি বিদায়ী বিরোধী দলনেতা পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবে অভিজ্ঞ বিধায়ক অশোক দেব ও শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে পিছনে ফেলে পার্থকেই বিরোধী দলনেতা করেন মমতা।
১০১৬
ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরেই মারা যান বনগাঁর তৃণমূল বিধায়ক। তাই তৃণমূলের বিধায়ক সংখ্যা কমে যাওয়ায় প্রথমে বিরোধী দলনেতার মর্যাদা পাননি পার্থ। কিন্তু পরে একাধিক উপনির্বাচনে জয়ী হয় তৃণমূল। উপযুক্ত সংখ্যা হয়ে যাওয়ায় বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার মর্যাদা পান তৃণমূলের বিধায়ক পার্থ। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনেও বিরোধী দলনেতা হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা ছিল তাঁর।
১১১৬
২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর বিরোধী দলনেতা পার্থের নেতৃত্বে বিধানসভা ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। বামফ্রন্টের তরফে সেই সময় এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হলেও পার্থের দাবি ছিল, ওই দিন সিঙ্গুর যাওয়ার পথে তাঁদের নেত্রী মমতাকে যেভাবে অপমান করেছিল পুলিশ, তাতে বিধানসভায় ভাঙচুর করে তাঁরা ভুল করেননি।
১২১৬
২০১১ সালে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের পতন হয়। সে বার তৃণমূল বিধায়কদের মধ্যে সর্বাধিক ৫৯ হাজার ২১ ভোটে জয়ী হয়ে বেহালা পশ্চিম থেকে জয়ের হ্যাটট্রিক করেন পার্থ। দায়িত্ব পান রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য এবং পরিষদীয় দফতরের মন্ত্রীর।
১৩১৬
পরে শিল্প ও বাণিজ্য দফতর পার্থের হাত থেকে নিয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে দেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর এমন সিদ্ধান্তের পর মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন পার্থ। তবে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ব্রাত্য বসুর হাত থেকে শিক্ষা দফতরের দায়িত্ব আসে পার্থের হাতে।
১৪১৬
২০১৬ সালে মমতা দ্বিতীয় বার সরকার গড়লে শিক্ষা দফতরের দায়িত্বে রেখে দেওয়া হয় পার্থকে। তাঁর হাতে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব থাকার সময়েই একাধিক দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির। আদালতে গিয়েছে শিক্ষা দফতরের তৎকালীন নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়। এসএসসি দুর্নীতি মামলায় সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে পড়েছেন পার্থ।
১৫১৬
২০২১ সালে তৃতীয় বার মমতার সরকারে পার্থকে আর শিক্ষা দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তাঁকে দেওয়া হয় শিল্প ও বাণিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তি এবং পরিষদীয় দফতরের দায়িত্ব।
১৬১৬
গত ১৯ মে প্রথম বার এসএসসি দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের মুখোমুখি হন পার্থ। পরে আরও এক বার সিবিআইয়ের কাছে হাজিরা দিয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার সকালে ইডি তাঁর বাড়িতে হানা দেয়। ২৭ ঘণ্টা জেরার পর শনিবার সকালে গ্রেফতার করা হয় পার্থকে। এর ঠিক ছ’দিন পরে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার পার্থকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানো হল। তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি পার্থকে নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই দলনেত্রী মমতা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন, পার্থ আর তাঁর মন্ত্রিসভায় নেই।