Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Joshimath Disaster

‘জোশীমঠের বিপদ ডেকে আনতে পারে নিকাশি ব্যবস্থা’! রিপোর্টের দাবিই কি সত্যি হতে চলেছে?

প্রকৃতির রোষে আতঙ্কের প্রহর গুনছেন জোশীমঠের বাসিন্দারা। শহরের ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে চওড়া ফাটল, রাস্তা হয়েছে দু’ভাগ। পূর্বপুরুষের ভিটে ছেড়ে প্রাণভয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছেন মানুষ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:৫৪
Share: Save:
০১ ২০
গাড়োয়াল হিমালয়ের কোলে মাথা তুলেছিল ছোট্ট শহর জোশীমঠ। উত্তরাখণ্ডে পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম এই কেন্দ্রবিন্দু এখন চরম বিপদের মুখে। আশঙ্কা, যে কোনও মুহূর্তে পাহাড়ের সঙ্গে হুড়মুড়িয়ে ধসে যাবে জোশীমঠ।

গাড়োয়াল হিমালয়ের কোলে মাথা তুলেছিল ছোট্ট শহর জোশীমঠ। উত্তরাখণ্ডে পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম এই কেন্দ্রবিন্দু এখন চরম বিপদের মুখে। আশঙ্কা, যে কোনও মুহূর্তে পাহাড়ের সঙ্গে হুড়মুড়িয়ে ধসে যাবে জোশীমঠ।

০২ ২০
প্রকৃতির রোষে আতঙ্কের প্রহর গুনছেন জোশীমঠের বাসিন্দারা। শহরের ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে চওড়া ফাটল, রাস্তা হয়েছে দু’ভাগ। পূর্বপুরুষের ভিটে ছেড়ে প্রাণভয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছেন মানুষ।

প্রকৃতির রোষে আতঙ্কের প্রহর গুনছেন জোশীমঠের বাসিন্দারা। শহরের ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে চওড়া ফাটল, রাস্তা হয়েছে দু’ভাগ। পূর্বপুরুষের ভিটে ছেড়ে প্রাণভয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছেন মানুষ।

০৩ ২০
কিন্তু কেন এই বিপর্যয়? ভূগোলের কোন ব্যাখ্যায় ডুবে যেতে বসেছে হিমালয়ের কোলে সাজানো আস্ত শহর?

কিন্তু কেন এই বিপর্যয়? ভূগোলের কোন ব্যাখ্যায় ডুবে যেতে বসেছে হিমালয়ের কোলে সাজানো আস্ত শহর?

০৪ ২০
জোশীমঠে যে এক দিন এই বিপর্যয় নেমে আসবে, তা খুব একটা অজানা ছিল না। বিশেষজ্ঞরা আগেই আন্দাজ করেছিলেন, অলকানন্দা নদীর তীরের এই জনপদ ধীরে ধীরে ডুবে যেতে পারে। প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছিল সেই ১৯৭৬ সালে।

জোশীমঠে যে এক দিন এই বিপর্যয় নেমে আসবে, তা খুব একটা অজানা ছিল না। বিশেষজ্ঞরা আগেই আন্দাজ করেছিলেন, অলকানন্দা নদীর তীরের এই জনপদ ধীরে ধীরে ডুবে যেতে পারে। প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছিল সেই ১৯৭৬ সালে।

০৫ ২০
জোশীমঠের অবস্থান বিশ্লেষণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল। সেই মিশ্র কমিশন ১৯৭৬ সালে রিপোর্ট পেশ করে জানায়, অদূর ভবিষ্যতে হিমালয়ের বুকে ডুবে যেতে পারে জোশীমঠ।

জোশীমঠের অবস্থান বিশ্লেষণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল। সেই মিশ্র কমিশন ১৯৭৬ সালে রিপোর্ট পেশ করে জানায়, অদূর ভবিষ্যতে হিমালয়ের বুকে ডুবে যেতে পারে জোশীমঠ।

০৬ ২০
জোশীমঠের এই বিপর্যয়ের নেপথ্যে মূলত রয়েছে এর ভৌগোলিক অবস্থান। আদতে এটি ধ্বংসস্তূপের উপর নির্মিত শহর।

জোশীমঠের এই বিপর্যয়ের নেপথ্যে মূলত রয়েছে এর ভৌগোলিক অবস্থান। আদতে এটি ধ্বংসস্তূপের উপর নির্মিত শহর।

০৭ ২০
অলকানন্দার তীরে গাড়োয়াল হিমালয়ের ধসপ্রবণ এলাকায় মাথা তুলেছে জোশীমঠ। প্রাচীন কাল থেকেই পর্বতের এই অংশে ধস নেমেছে বার বার। সেই ধসের ধ্বংসস্তূপ বুজিয়ে জোশীমঠ শহর গড়ে তোলা হয়েছে।

অলকানন্দার তীরে গাড়োয়াল হিমালয়ের ধসপ্রবণ এলাকায় মাথা তুলেছে জোশীমঠ। প্রাচীন কাল থেকেই পর্বতের এই অংশে ধস নেমেছে বার বার। সেই ধসের ধ্বংসস্তূপ বুজিয়ে জোশীমঠ শহর গড়ে তোলা হয়েছে।

০৮ ২০
১৯৭৬ সালে মিশ্র কমিশনের রিপোর্টে জোশীমঠের এই ভৌগোলিক অবস্থানের উল্লেখ করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, এই এলাকার ধারণক্ষমতা বেশ কম। তুলনামূলক দুর্বল এই শহরে জমির উপর খুব বেশি চাপ যেন না দেওয়া হয়, সতর্ক করা হয়েছিল তা নিয়েও।

১৯৭৬ সালে মিশ্র কমিশনের রিপোর্টে জোশীমঠের এই ভৌগোলিক অবস্থানের উল্লেখ করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, এই এলাকার ধারণক্ষমতা বেশ কম। তুলনামূলক দুর্বল এই শহরে জমির উপর খুব বেশি চাপ যেন না দেওয়া হয়, সতর্ক করা হয়েছিল তা নিয়েও।

০৯ ২০
মূলত, অতিরিক্ত নির্মাণকার্যের মাধ্যমে শহরের সম্প্রসারণে আপত্তি জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। যে হেতু, শহরটির ভিত নড়বড়ে ধ্বংসস্তূপ, তাই যে কোনও নতুন নির্মাণের আগেই পরামর্শ নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

মূলত, অতিরিক্ত নির্মাণকার্যের মাধ্যমে শহরের সম্প্রসারণে আপত্তি জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। যে হেতু, শহরটির ভিত নড়বড়ে ধ্বংসস্তূপ, তাই যে কোনও নতুন নির্মাণের আগেই পরামর্শ নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

১০ ২০
কিন্তু দেখা গিয়েছে, গত কয়েক বছরে জোশীমঠে বিশেষজ্ঞদের সেই নিষেধাজ্ঞা হেলায় উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যথেচ্ছ হোটেল, বাড়ি এবং দোকানপাট গজিয়েছে পাহাড়ের বুকে। সম্প্রসারিত করা হয়েছে জাতীয় সড়ক।

কিন্তু দেখা গিয়েছে, গত কয়েক বছরে জোশীমঠে বিশেষজ্ঞদের সেই নিষেধাজ্ঞা হেলায় উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যথেচ্ছ হোটেল, বাড়ি এবং দোকানপাট গজিয়েছে পাহাড়ের বুকে। সম্প্রসারিত করা হয়েছে জাতীয় সড়ক।

১১ ২০
সরকারি উদ্যোগে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও বেড়ে উঠেছে জোশীমঠে। যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শহরের স্থায়িত্বের পরিপন্থী হয়ে উঠেছে।

সরকারি উদ্যোগে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও বেড়ে উঠেছে জোশীমঠে। যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শহরের স্থায়িত্বের পরিপন্থী হয়ে উঠেছে।

১২ ২০
জোশীমঠ থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে ধৌলিগঙ্গা এবং অলকানন্দা নদীর সঙ্গমস্থল বিষ্ণুপ্রয়াগ। বর্ষায় প্রায়ই এই নদীর কূল ছাপিয়ে উপচে পড়ে জল। পাহাড়ি সেই খরস্রোতাও দিন দিন আলগা করে দিয়েছে জোশীমঠের মাটি।

জোশীমঠ থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে ধৌলিগঙ্গা এবং অলকানন্দা নদীর সঙ্গমস্থল বিষ্ণুপ্রয়াগ। বর্ষায় প্রায়ই এই নদীর কূল ছাপিয়ে উপচে পড়ে জল। পাহাড়ি সেই খরস্রোতাও দিন দিন আলগা করে দিয়েছে জোশীমঠের মাটি।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

১৩ ২০
মিশ্র কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, জোশীমঠের স্থায়িত্ব বড় জোর ১০০ বছর। আগামী ১০০ বছরের মধ্যেই ধীরে ধীরে মাটির নীচে ধসে যাবে জোশীমঠ। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল অন্য কিছু।

মিশ্র কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, জোশীমঠের স্থায়িত্ব বড় জোর ১০০ বছর। আগামী ১০০ বছরের মধ্যেই ধীরে ধীরে মাটির নীচে ধসে যাবে জোশীমঠ। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল অন্য কিছু।

১৪ ২০
১০০ বছরও সময় নিল না জোশীমঠ। মিশ্র কমিশনের রিপোর্টের পর কাটল না ৫০ বছরও। ৪৭ বছরের মাথায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ফাটল নিয়ে ডুবতে বসেছে জোশীমঠ।

১০০ বছরও সময় নিল না জোশীমঠ। মিশ্র কমিশনের রিপোর্টের পর কাটল না ৫০ বছরও। ৪৭ বছরের মাথায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ফাটল নিয়ে ডুবতে বসেছে জোশীমঠ।

১৫ ২০
২০০৬ সালে ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট অফ হিমালয়ান জিয়োলজির বৈজ্ঞানিক স্বপ্নমিতা বৈদেশ্বরণের একটি রিপোর্টে বলা হয়, জোশীমঠের বিপদ ডেকে আনতে পারে শহরের নিকাশি ব্যবস্থা। সেগুলি সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি।

২০০৬ সালে ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট অফ হিমালয়ান জিয়োলজির বৈজ্ঞানিক স্বপ্নমিতা বৈদেশ্বরণের একটি রিপোর্টে বলা হয়, জোশীমঠের বিপদ ডেকে আনতে পারে শহরের নিকাশি ব্যবস্থা। সেগুলি সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি।

১৬ ২০
পরে স্বপ্নমিতা আরও জানান, ২০১৩ সালে হিমালয়ের বিপর্যয়ের ফলে প্রচুর পরিমাণে কাদা জোশীমঠের নালা এবং নর্দমায় জমে গিয়েছে। তা সরানো যায়নি। পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে ঋষিগঙ্গার বন্যা।

পরে স্বপ্নমিতা আরও জানান, ২০১৩ সালে হিমালয়ের বিপর্যয়ের ফলে প্রচুর পরিমাণে কাদা জোশীমঠের নালা এবং নর্দমায় জমে গিয়েছে। তা সরানো যায়নি। পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে ঋষিগঙ্গার বন্যা।

১৭ ২০
জোশীমঠের ভবিষ্যৎ কী? কী ভাবে তা রক্ষা করা যাবে? আদৌ কি জোশীমঠের ধস আটকানো সম্ভব? এ বিষয়ে নানা জনের নানা মত।

জোশীমঠের ভবিষ্যৎ কী? কী ভাবে তা রক্ষা করা যাবে? আদৌ কি জোশীমঠের ধস আটকানো সম্ভব? এ বিষয়ে নানা জনের নানা মত।

১৮ ২০
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই জানাচ্ছেন, অবিলম্বে জোশীমঠে উন্নয়নের যাবতীয় কার্যকলাপ স্তব্ধ করা দরকার। জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে শুরু করে যে কোনও রকম নির্মাণকাজ বন্ধ করতে হবে হিমালয়ের এই জনপদে।

বিশেষজ্ঞদের অনেকেই জানাচ্ছেন, অবিলম্বে জোশীমঠে উন্নয়নের যাবতীয় কার্যকলাপ স্তব্ধ করা দরকার। জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে শুরু করে যে কোনও রকম নির্মাণকাজ বন্ধ করতে হবে হিমালয়ের এই জনপদে।

১৯ ২০
একই সঙ্গে জোশীমঠের নিকাশি ব্যবস্থার দিকেও প্রশাসনের নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকে। নালার জলের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য পদার্থ শহরের মাটিতে মিশছে। যার ফলে মাটির ধারণক্ষমতা দিন দিন আরও কমে আসছে।

একই সঙ্গে জোশীমঠের নিকাশি ব্যবস্থার দিকেও প্রশাসনের নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকে। নালার জলের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য পদার্থ শহরের মাটিতে মিশছে। যার ফলে মাটির ধারণক্ষমতা দিন দিন আরও কমে আসছে।

২০ ২০
বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ জোশীমঠে মাটি প্রতিস্থাপনের পরামর্শও দিয়েছেন। রাজ্য সরকারের সেচ দফতরকে এ বিষয়ে খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ জোশীমঠে মাটি প্রতিস্থাপনের পরামর্শও দিয়েছেন। রাজ্য সরকারের সেচ দফতরকে এ বিষয়ে খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ছবি: পিটিআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE