Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আমি ধোনির গেম্‌স টিচার

ধোনির প্রথম খেলার শিক্ষক ছিলেন এক জন বাঙালি। ‘ব্যানার্জি স্যর’। এক বৃষ্টিভেজা বিকেলে ১২-১৩ বছরের মাহি-র গোলকিপিং দেখে, তাকে নিয়ে আসেন উইকেটকিপিং-এ। তাঁর সঙ্গে কথা বললেন আর্যভট্ট খান ।মেকন কলোনির শ্যামলী ফুটবল অ্যাকাডেমির ছেলেগুলো বৃষ্টির মধ্যেও দাপিয়ে ফুটবল খেলছিল। হঠাৎ দূর থেকে একটা শট বারপোস্টের কোনাকুনি হয়ে একেবারে গোলে ঢুকে যাচ্ছিল। তখনই প্রায় বাজপাখির মতো ছোঁ মেরে বলটাকে গোল হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিল একটা ১২-১৩ বছরের পেটানো চেহারার ছেলে। দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।

ব্যানার্জি স্যরের ছবি: আর্যভট্ট খান

ব্যানার্জি স্যরের ছবি: আর্যভট্ট খান

কেশব বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৬ ০০:০৩
Share: Save:

মেকন কলোনির শ্যামলী ফুটবল অ্যাকাডেমির ছেলেগুলো বৃষ্টির মধ্যেও দাপিয়ে ফুটবল খেলছিল। হঠাৎ দূর থেকে একটা শট বারপোস্টের কোনাকুনি হয়ে একেবারে গোলে ঢুকে যাচ্ছিল। তখনই প্রায় বাজপাখির মতো ছোঁ মেরে বলটাকে গোল হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিল একটা ১২-১৩ বছরের পেটানো চেহারার ছেলে। দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। খেলার শেষে ওকে ডেকে বললাম, ‘অচ্ছা গোলকিপিং করতে হো। ক্রিকেট মে উইকেট কিপিং করোগে?’ লাজুক ছেলেটা ছোট্ট করে উত্তর দিল, ‘উইকেট কিপিং কভি নেহি কিয়া স্যর। মওকা মিলনে পর জরুর করুংগা।’

তখন আমি রাঁচির ডিএভি জওহর বিদ্যামন্দিরের খেলার টিচার। খেলার শিক্ষক হিসেবে আমার কাজ ছিল ভাল খেলোয়াড়দের বাছাই করা। মাহি-র গোলকিপিং দেখে মনে হয়েছিল বডি অসম্ভব ফিট। রিফ্লেক্সও খুব ভাল। ভাল উইকেটকিপিং করতে পারবে। তাই ওকে ক্রিকেটে আনলাম।’ পরের দিনই স্কুলে খেলার মাঠে আমার কাছে হাজির মাহি। কিন্তু প্রথম দিন দেখি, জাল দিয়ে মাছ ধরার মতো কিপিং করছে। সে তো হবেই, কখনও করেনি। কিন্তু আমার ভাল লাগল ওর সাহস। ক্লাস সিক্সে পড়ে, ও দিকে ইলেভেন-টুয়েলভের দাদারা প্রচণ্ড জোরে বল করছে। তবু অত জোরে আসা বলকে ভয় পেয়ে পা তুলে নিচ্ছে না বা সরে যাচ্ছে না। ব্যাটিংয়ের সময়েও বুক চিতিয়ে ব্যাট করছে। খেলার পরে মাহি আমার কাছে এসে বলল, ‘স্যর, হম সে হোগা কিপিং?’ আমি শুধু বললাম, ‘লগে রহো।’

কিন্তু শুধু ক্রিকেটে লেগে থেকে মাহির শান্তি আছে? ও তো স্কুলে সব খেলাই খেলতে চায়। ফুটবল আর ক্রিকেটের সঙ্গে ব্যাডমিন্টনও ধরল। নাইন পর্যন্ত তিনটেই সমান ভাবে চুটিয়ে খেলেছে মাহি। শুধু বাস্কেটবলটাতে ওর সে রকম আগ্রহ দেখিনি। স্কুলের ক্রিকেট টিমে কিপিং করেই, ব্যাডমিন্টন খেলতে চলে গিয়েছে জামশেদপুরে। সেখানে মোহন আহুজা ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে উঠে গেল সিংগলস-এর কোয়ার্টার ফাইনালে। তাতে হেরে ওর সে কী দুঃখ।

তবে ব্যর্থ হওয়ার দুঃখ ওর ভুলতে লাগে দশ মিনিট। সাফল্যকেও গায়ে মাখে না। আজ টিভিতে ওকে দেখি সাফল্য ও ব্যর্থতাতে সমান অবিচল। মনে পড়ে যায় ওর কিশোর বয়সের মুখটাকে। এ রকম কয়েকটা গুণই তো ওকে আজ এই জায়গায় তুলে নিয়ে গেছে। না হলে মাহির মতো খেলোয়াড় তো স্কুলে অনেকেই ছিল। আলাদা করে ও কোনও হিরের টুকরো খেলোয়াড় ছিল না। এমনকী মাহি যখন স্কুলে পড়ত তখন ডিএভি শ্যামলী’র ক্রিকেট টিম এতটাই জবরদস্ত ছিল যে ম্যাচে মাহি সব সময় ব্যাট করার সুযোগই পেত না। ও নামত চার নম্বরে। ওপেনিং জুটিই জিতিয়ে দিয়েছে অনেক সময়।

ম্যাচের পর ম্যাচ হয়তো ব্যাট পাচ্ছে না মাহি, কিন্তু তাতেও কোনও হা-হুতাশ নেই। নির্লিপ্ত ভাবে শুধু বলত, ‘কোই টেনশন নেহি হ্যায় ব্যানার্জি স্যর। মওকা মিলনে পর জরুর দিখা দেংগে।’

আবার মওকা পেলেই যে দেখিয়ে দিচ্ছে, এমনটাও সব সময় নয়। টেন-এ পড়ছে যখন, অন্য খেলা বাদ দিয়ে শুধু ক্রিকেটই হয়ে গেল মাহির ধ্যানজ্ঞান। এক বার পর পর খারাপ ব্যাটিং করছে। জিজ্ঞেস করলাম, ‘সারা ক্ষণ খেলছ। ক্রিকেটে যদি কেরিয়ার বানাতে না পারো, তা হলে কী হবে?’ মাহির ঝটপট উত্তর, ‘স্যর, আর্মি মে জয়েন কর লুংগা। মেরা ফিটনেস জবরদস্ত হ্যায়।’

এই হচ্ছে মাহি। যা নিয়ে পড়ে আছে, সেটা ছাড়তেও কোনও দুঃখ নেই। ভয়ডরহীন এই বিন্দাস চরিত্রটাই মাহিকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে দেয়। সাবির হুসেন, গৌতম উপাধ্যায়, বেদান্ত লোহানি, সঞ্জীব কুমাররা সবাই মাহির সমবয়সি। ওদের গ্রুপটা সবাই ইলেভেনে কমার্স পড়ত। আমার সব থেকে প্রিয় ছিল সাবির। ওপেন করত। কী অসম্ভব ভাল টেকনিক ছিল! গৌতম করত লেগ স্পিন, বেদান্ত করত অফ স্পিন। এক হাত করে বল ঘুরত ওদের। এই স্পিন জুটি আর ওপেনিং ব্যাটসম্যান আমাদের ইন্টার স্কুল ক্রিকেটে কত টুর্নামেন্ট জিতিয়েছে। মাহিও ভাল খেলত। তবে মাহি থাকত ওদের ছায়ায়।

কিন্তু তাতে ওর আত্মবিশ্বাস এতটুকু চিড় খেত না! একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে মাহির জন্ডিস হয়ে গেল। কান্নাকাটি করা তো দূরস্থান, ও আমাকে বলল, ‘অগলি বার জরুর খেলেংগে। সেঞ্চুরি ভি হো যায়েগা মেরা।’ ওকে কখনও বলতে হয়নি, ‘ফাইট মাহি ফাইট’। ফাইট করার কায়দাটা নিজেই শিখে নিয়েছিল। খারাপ পিচে কে কতটা ফাইট করতে পারে তা দেখতে অনেক সময় স্কুলের নেট প্র্যাকটিসে ম্যাটের নীচে ছোট ছোট পাথর, ঢিল রেখে দেওয়া হত। বল আচমকা লাফিয়ে উঠে মুখে লাগলেও মাহি কোনও দিন ক্রিজ ছেড়ে যায়নি।

সাবির, গৌতম, বেদান্ত, সঞ্জীব আর মাহি— এই পঞ্চরত্নকে এখনও যেন চোখের সামনে দেখতে পাই। হইহই করে সবাই মিলে টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছে। বেশির ভাগ সময়েই জিতে ফিরছে। জিতে ফিরলে মাহি আবদার করত, ‘স্যর ধাবা মে চিকেন তন্দুরি হো যায়ে?’ চিকেন তন্দুরির পোকা ছিল ও। রাঁচির কোথায় চিকেন তন্দুরি ভাল পাওয়া যায় সব মুখস্থ। এমনকী হাইওয়ের ধাবাগুলোও চেনে। তবে সব সময় চিকেন তন্দুরি খাওয়ার পয়সা থাকত না বলে তার বিকল্প ছিল আলুর চপ আর শিঙাড়া। মেকন কলোনিতে ‘সঞ্জয় সুইটস’ নামে একটা দোকানের আলুর চপ ছিল মাহির প্রিয়। খেলার পরে প্রায়ই বলত, ‘স্যর, আপ কা স্কুটার কা চাবি দিজিয়ে।’ মাঝেমধ্যে শুধু স্কুটারের চাবিই নয়, আলুর চপ কেনার জন্য মাহির হাতে দশটা টাকাও দিয়ে দিতাম। তখন আর ওর হাসি দেখে কে? ইলেভেনে উঠে দামি মোটরবাইক চালানোর শখ জাগে মাহির। এ দিকে মাহির বাবা মেকনের পাম্প অপারেটর। দামি মোটরবাইক কেনার প্রশ্নই নেই। তখন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাত আমার স্কুটার চালিয়ে।

কিন্তু এর বাইরে কোনও নেশাটেশা ছিল না। কত ছেলেকে দেখেছি খেলার পরে আড্ডায় সিগারেটে সুখটান দিতে। মাহি তা থেকে নিজেকে সব সময় সরিয়ে রেখেছে। তখন আমিও তো যুবক। ওরা ইলেভেন-টুয়েলভে পড়ে। খেলার পর নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হত। প্রেম ভালবাসার গল্পও হত। সলমন খানের ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’ একসঙ্গে দেখেছি। আমি তো অঙ্কের বা ইংরিজির রাশভারী স্যর নই। ওদের অনেককে প্রেমের টিপসও দিয়েছি। কিন্তু মাহিকে কোনও দিন ও সব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে দেখিনি। কেউ বন্ধুত্ব করতে এলেও খুব একটা পাত্তা দিত না। বলত, ‘অভি মেরে পাস টাইম নেহি হ্যায়।’

মাহি অ্যাকাউন্টেন্সিতে বেশ ভাল ছিল। কমার্সের স্যররা আমাকে বলতেন, ‘মাহি যদি খেলাধুলো একটু কম করে, পড়াশোনার দিকে মন বেশি দেয়, ভাল রেজাল্ট করবে। তুমি ওর মাথা খাচ্ছ।’ মাহির মা-ও আমাকে বলেছিলেন, ‘বেটা ফেল করেগা তো আপকো দেখ লুংগি!’

উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনাটা যে মাহির খুব কম হয়েছিল, সেটা বেশ ভালই বুঝতে পেরেছিলাম। তখন তো ওরা চুটিয়ে ক্রিকেট খেলছে। স্কুলের বাইরেও রাঁচির সেন্ট্রাল কোলফিল্ড লিমিটেডের টিমে খেলছে। রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ফর সয়েল-এর হয়ে খেলছে। তখনও ঝাড়খণ্ড তৈরি হয়নি। অবিভক্ত বিহার। বিহার থেকে আন্ডার নাইন্টিনে সুযোগ পাওয়ার জন্য মনপ্রাণ দিয়ে খেলছে আমার পঞ্চরত্ন। রাঁচির হারমু ময়দান, মোরাবাদি ময়দান, রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ, কোথাও ওদের খেলা বাদ নেই।

তাই উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরনোর আগে বেশ ভয়ে ভয়ে ছিলাম। তার পর দেখি, মাহি ভালই উতরে গেছে। কত পেয়েছিল ঠিক মনে নেই, কিন্তু ফিফটি পার্সেন্টের ওপর। আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘হ্যাঁ রে, তুই পড়াশোনা করলি কখন?’ মাহির সেই ভুবনভোলানো হাসি হেসে উত্তর, ‘এগজাম সে পহলে এক মহিনা রাতভর জাগা থা পড়নে কে লিয়ে। কিঁউ, আপ কা টেনশন থা কেয়া?’

এটাই মাহির আসল প্লাস পয়েন্ট। কোথায় কখন কী করতে হয়, ওর থেকে ভাল কেউ জানে না। এখানেই ও সাবির, গৌতম, বেদান্ত, সঞ্জীবদের থেকে শেষ পর্যন্ত আলাদা। না হলে কঠোর পরিশ্রম, নিয়মানুবর্তিতা, অনুশীলন ওরা সবাই সমান করেছে। যা যা টেকনিক শিখিয়েছি, সব অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছে সবাই। ক্রিকেটের প্রতি ডেডিকেশন ওদের সবার সমান ছিল। শীতের কনকনে ভোরে প্র্যাকটিস করতে সকলেই মাঠে পৌঁছে গেছে। তা হলে মাহি আজ এখানে পৌঁছল কী করে? ভাগ্যের জোরে— বললে ওকে ছোট করা হবে। ও আসলে তখন থেকেই জানে, কোথায় কখন সেরা পারফরমেন্সটা বের করে আনতে হবে। হবেই।

যেমন সেরা পারফরমেন্সটা ও দেখিয়ে দিল রাঁচি ডিস্ট্রিক্ট ইন্টার-স্কুলের ফাইনাল খেলায়। হারমু’র মাঠে ওই খেলা দেখতে এমন ভিড় হয়েছিল, মনে হচ্ছিল কোনও ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচ! খেলা দেখতে রাস্তার ওপর লোক দাঁড়িয়ে গিয়েছে। আন্ডার নাইন্টিনের কয়েক জন সিলেক্টরও খেলা দেখতে এসেছিলেন। সেই খেলায় সাবির করল ১৩৪। আর মাহি করল ২১৪। ছক্কা আর চারের ফুলঝুরি। ওই একটা মহা গুরুত্বপূর্ণ খেলায় ডাবল সেঞ্চুরি করে সাবিরকে ছাপিয়ে গেল মাহি। এত ভাল টেকনিক জেনেও সাবির মাহির ধারেকাছে এল না। মাহি সুযোগ পেয়ে গেল রাজ্যের আন্ডার নাইন্টিনে। ওই খেলাটাই ছিল মাহির জীবনের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা।

সাবির এখন একটা অফিসে অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টে কাজ করে। বেদান্ত ইঞ্জিনিয়ার। গৌতম আর সঞ্জীব শুনেছি প্রোমোটারি করে। আর মাহি ভারতের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থেকে গেল। মাহির জন্য অসম্ভব গর্ব হয়। আর ওদের জন্যে দুঃখও হয়। কিন্তু মানুষ তো নিজের ভবিতব্য নিজেই ঠিক করে।

আর কয়েক মাস পরেই অবসর নেব। আদতে চিত্তরঞ্জনের বাসিন্দা ছিলাম, কিন্তু প্রথম জীবনেই রাঁচির ডিএভি শ্যামলী’তে খেলার শিক্ষকের চাকরি পেয়ে যাই। সেই আশির দশক থেকে এখানে আছি, রাঁচিকে ভালবেসে ফেলেছি। তাই এখানেই ফ্ল্যাট কিনে নিয়েছি। যদিও আমার ফ্ল্যাটের দেওয়ালে আমার সঙ্গে মাহির কোনও ছবি টাঙানো নেই। ওর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা বোঝানোর জন্য ছবি টাঙানোর দরকার হয় না। ও রাঁচি এলে আমাকে ফোন করবেই। আমি চলে যাই দেখা করতে।

এখনও সেই পুরনো স্কুটারটায় চেপেই রাঁচির অলিগলিতে ঘুরে বেড়াই। মাঠে ময়দানে কোনও বাচ্চাকে ভাল খেলতে দেখলে থেমে যাই। এই স্কুটারের পিছনের সিটে বসে মাহি আমার সঙ্গে কত ঘুরেছে, ভেবে খুব গর্ব হয়। এখন সব থেকে দামি গাড়িতে ঘুরে বেড়ায় মাহি। ওর জীবন নিয়ে বলিউড সিনেমা করছে। সেই সিনেমাতে আমার মতো নগণ্য মানুষের চরিত্রেও এক জন অভিনয় করছেন। এই বা কী এমন কম রূপকথা?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Keshab Banerjee MS Dhoni Game Teacher memories
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE