Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
এক বার তাঁর পার্ষদ ও পরিকরদের নিয়ে নাটক করেন গৌরাঙ্গ। তিনিই ঠিক করে দেন কে কোন চরিত্র করবেন। নিজে নেন লক্ষ্মীর চরিত্র। কিন্তু কার্যকালে তাঁর অভিব্যক্তি হয়ে ওঠে জগজ্জননী মহামায়ার। ভাবাবেশে সমস্ত বৈষ্ণবকুল আবৃত্তি করেন চণ্ডীস্তুতি। তাঁর মাও চিনতে পারেননি ছেলেকে। ধর্মের ইতিহাস বলে দেয়, বিভিন্ন সম্প্রদায় আসলে খোপে খোপে ভাগ করা শত্রুতা নয়, পারস্পরিক আদানপ্রদানের ঐতিহ্য।
Bengali Story

মহাপ্রভু যখন মহামায়া

নিমাই পণ্ডিত তাঁর একান্ত অনুগত বুদ্ধিমন্ত খানকে বললেন, সবার বেশভূষার ব্যবস্থা করতে। তৎকালীন বাংলায় শব্দটি ছিল ‘কাছ’ বা ‘কাচ’। অভিধান বলছে কাছ, কাছা, কাচনি এরা খুব কাছাকাছি শব্দ।

ছবি: সুব্রত চৌধুরী।

ছবি: সুব্রত চৌধুরী।

অভিষেক বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:২৫
Share: Save:

দুর্গাপুজোর ইতিহাস এবং এই উৎসবের খুঁটিনাটি নিয়ে চর্চার শেষ নেই। গবেষকরা সকলেই মোটামুটি মানেন যে, উৎসবটি বহুকাল ধরেই বাংলায় প্রচলিত। অবশ্য বহুকালটা ঠিক কত কাল, তা নিয়ে মতের ভিন্নতা রয়েছে। কিন্তু দোল-দুর্গোৎসব যে বাংলার সমাজ-জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পার্বণ, বিশেষত ধনাঢ্য অংশের পৃষ্ঠপোষণায় পরিপুষ্ট হয়ে আমাদের ক্যালেন্ডারের প্রায় প্রধান আকর্ষণ, এতে কারও সন্দেহ নেই। ইউনেস্কোর তকমা সেই ঐতিহ্যেরই স্বীকৃতি। ভাবার কথা যে, রাধাকৃষ্ণের দোল আর দেবী দুর্গার পুজো কী ভাবে আমাদের সংস্কৃতিতে এবং তার ফলে আমাদের ভাষাতেও, মিলেমিশে গেল! শাক্ত আর বৈষ্ণবের দ্বন্দ্ব তো আমাদের চিন্তাভাবনায় একটা মিথিক্যাল জায়গা নিয়েছে। তার অন্যতম শীর্ষবিন্দু হিসেবে নবদ্বীপে চৈতন্য মহাপ্রভু এবং কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কাহিনি বহুলপ্রচারিত। যদিও সাবধানী পাঠক জানেন যে, মহাপ্রভু এবং আগমবাগীশের সময়কালের যা ব্যবধান তাতে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ঐতিহাসিক ভাবে মেনে নেওয়া যায় না। তবে মিথের দুনিয়া তো ইতিহাস মেনে চলে না। হয়তো শাক্ত আর বৈষ্ণব মতাদর্শের দীর্ঘ দিনের টানাপড়েন এই ভাবে মানুষ মনে রেখেছে।

মানুষ কী মনে রাখে সেও এক জটিল ব্যাপার। আজকের পরিস্থিতিতে যেমন মনে হয় যে, ভিন্নতার একমাত্র পরিণতিই বোধহয় শত্রুতা। কিন্তু সত্যি কি তা-ই? নাকি, দীর্ঘ দিনের টানাপড়েন মানে পরস্পরের সঙ্গে অনেক কালের আদান-প্রদানেরও সুযোগ? যার ফলে ভাবনা এবং আচরণ পরস্পরের মধ্যে চারিয়ে যায়। কখনও এই সংক্রমণ অজ্ঞাতসারে ঘটে চলে, আর কখনও রীতিমতো জেনেবুঝেই অপরের থেকে গ্রহণ করা হয়। তাই যখন আমরা জনসমাজকে ধর্মাচরণ অনুসারে বিভিন্ন সম্প্রদায়ে ভাগ করে থাকি, সরকারি ভাবে যে ভাগাভাগির শুরু উপনিবেশ আমলের জনগণনা গোছের কাজে, সেই ভাগগুলি কতটা এক্সক্লুসিভ তাই নিয়ে চিন্তার অবকাশ আছে। এর খুব মজার উদাহরণ আছে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কোন স্পেশিয়ালের পত্র’ লেখাটিতে। যুবরাজ এডওয়ার্ডের সফরসঙ্গী হয়ে এসে এক সাহেব ভারতীয় সমাজকে বোঝার চেষ্টা করছেন। তার নমুনা এই রকম:

“যাহা হৌক, উহাদিগের সামাজিক অবস্থা সম্বন্ধে কিছু বলিব। তোমরা শুনিয়াছ যে, হিন্দুরা চারিটি জাতিতে বিভক্ত; কিন্তু তাহা নহে। ইহাদিগের মধ্যে অনেকগুলি জাতি আছে, তাহাদের নাম নিম্নে লিখিতেছি।

১। ব্রাহ্মণ, ২। কায়স্থ, ৩। শূদ্র, ৪। কুলীন, ৫। বংশজ, ৬। বৈষ্ণব, ৭। শাক্ত, ৮। রায়, ৯। ঘোষাল, ১০। টেগোর, ১১। মোল্লা, ১২। ফরাজি, ১৩। রামায়ণ, ১৪। মহাভারত, ১৫। আসাম গোয়ালপাড়া, ১৬। পারিয়া ডগ্‌স।...”

মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। তবে উপনিবেশের মানুষকে ক্লাসিফাই এবং ক্যাটেগরাইজ় করে বোঝার চেষ্টা শাসকের পক্ষে খুবই কার্যকর। অবশ্য অনেক সময় আমাদের দেখাশোনার মধ্যেও এই জাতীয় ঝোঁক এসে পড়ে। বৈদিক/তান্ত্রিক, শাস্ত্রীয়/লোকায়ত, ব্রহ্মবাদী/ভক্তিবাদী, নিরাকার/সাকার— ইত্যাদি খণ্ডগুলি এ প্রসঙ্গে মনে করা যেতে পারে। বক্তব্য এমনটা নয় যে, এই ভাগ-বিভাগের আসলেই কোনও অস্তিত্ব নেই। বরং বলা যায় যে, এই ভাগগুলিকে পরস্পর নিঃসম্পর্কিত বলে ভাবার প্রচলনটি আদৌ কতটা যুক্তিযুক্ত? পুঁথির পাতায় যা-ই থাকুক, মানুষের দৈনন্দিন যাপনে কে যে কার খোপে ঢুকে বসে আছে, সেটা ঠাহর করাই মুশকিল। যে কোনও পূজা/ হোম/ দেবকর্ম করতে গেলে শুরুতেই করতে হয় আচমন, পাড়ায় পাড়ায় দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলে মাইকযোগে সেই আচমনের মন্ত্র শুনতে পাবেন— ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম্। ওঁ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোঽপি বা। যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ॥

পূজক এর পর বলবেন— ওঁ মাধবো মাধবো বাচি মাধবো মাধবো হৃদি। স্মরন্তি সাধবঃ সর্বে সর্বকার্যেষু মাধব॥

অর্থাৎ সাধুব্যক্তিদের বাক্যে মাধব, হৃদয়ে মাধব, সব কাজেই মাধবের স্মরণ। শক্তি উপাসনার জন্য অবশ্য আর একটি আচমন আছে, ওঁ আত্মতত্ত্বায় স্বাহা। ওঁ বিদ্যাতত্ত্বায় স্বাহা। ওঁ শিবতত্ত্বায় স্বাহা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এই আচমনটি করা হয় অনেক পরে। কাম্যকর্ম শুরুর সময়ে মাধবকেই স্মরণ করতে হয়। এবং সেটা সমস্ত সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেই সত্য। যাঁরা বাক্যে ও হৃদয়ে মাধবকে আবাহন করেন, টেকনিক্যালি তাঁদের সকলকেই কিন্তু বৈষ্ণব বলতে হয়, কারণ, ‘চৈতন্যচরিতামৃত’-এ মহাপ্রভুর জবানিতে বলা হয়েছে যে, “অতএব যার মুখে এক কৃষ্ণনাম। সেই ত বৈষ্ণব, করিহ তাহার সম্মান॥”

এই রকম দুশো উদাহরণ দিয়ে বলা যায় যে, সম্প্রদায়ের চুলচেরা বিভাজন আসলে একটা কাজ-চালানো ধারণা। কারণ দেশের সংস্কৃতিতে একটি সিন্‌ক্রেটিক বা সমন্বয়বাদী প্রক্রিয়া চালু আছে। আগম এবং নিগম থেকে এই আন্তঃসম্পর্কের নমুনা হিসেবে অনেক বচনও উদ্ধৃত করা যায়। তবে সে পথে না গিয়ে বরং একটি ঘটনার দিকে নজর দেওয়া যাক। উপলক্ষ একটি নাট্যাভিনয়। অকুস্থল ষোড়শ শতকের নবদ্বীপ। যে নবদ্বীপ তখন নব্যন্যায়ের পাশাপাশি তন্ত্রচর্চার অন্যতম কেন্দ্র এবং যেখানে সেই মুহূর্তে নতুন একটি ভাবান্দোলনেরপ্রস্তুতি চলছে।

চর্যাপদে ‘বুদ্ধনাটক বিসমা হোই’ জাতীয় দু’-একটি বিক্ষিপ্ত উচ্চারণ ছাড়া বাংলায় প্রাচীন-মধ্যকালে নাটক অভিনয়ের দৃষ্টান্ত সুদুর্লভ। আমরা জানি যে, জয়দেবের দেশি ছাঁদের-কান-ঘেঁষা সংস্কৃত রচনা ‘গীতগোবিন্দ’ আসলে নাটগীত। কিংবা, পরবর্তী মঙ্গল সাহিত্যকেও আসলে অভিনয়ধর্মী রচনার সাঁট হিসেবে গণ্য করা যায়। তার মধ্যে গায়নের উপযুক্ত ছন্দ-তাল ইত্যাদির উল্লেখ থেকেই সে কথা প্রমাণিত হয়। তবে পূর্ণাঙ্গ নাট্যকৌশলের ডকুমেন্টেশন পাওয়ার জন্য আমাদের ‘চৈতন্যভাগবৎ’-এর সময় অবধি অপেক্ষা করতে হয়। বৃন্দাবন দাসঠাকুর তাঁর এই বইয়ে অনেকগুলি প্রথম কৃতিত্বের দাবিদার। নিমাই পণ্ডিত তথা শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুকে ঘিরে গোটা একখানা মঙ্গল রচনা করার ক্ষেত্রে অবশ্য লোচনদাস তাঁর পূর্ববর্তী, তবে গোটা একটি নাটকের অভিনয়-প্রক্রিয়ার বর্ণনা, এবং তাকে ঘিরে দর্শকের প্রতিক্রিয়া, বাংলা ভাষায় তাঁর আগে কেউ নথিবদ্ধ করেছেন বলে আমার অন্ততঃ জানা নেই।

নিমাই পণ্ডিত তখনও ‘মহাপ্রভু’ হয়ে ওঠেননি। চব্বিশ বছরের কাছাকাছি বয়সে তাঁর সন্ন্যাস। সন্ন্যাসের এক-দেড় বছর আগে গয়ায় গিয়ে ঈশ্বর পুরীর কাছে দীক্ষা। এবং হৃদয় পরিবর্তন। সুতরাং দীক্ষা আর সন্ন্যাসের মাঝামাঝি ওই কয়েক মাসেই তাঁকে নদিয়ার অধিকাংশ উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটাতে হয়েছিল। জগাই-মাধাইয়ের সঙ্গে টক্কর বা চাঁদকাজির সঙ্গে বোঝাপড়া, সবই এই পর্যায়ে। মহাপ্রভু সন্ন্যাসের আগে এবং পরে সঙ্গীতে যথেষ্ট উৎসাহী ছিলেন। সঙ্গীত বলতে গীত, বাদ্য এবং নৃত্য তিনটিকেই বুঝে নিতে হবে আমাদের। নৃত্যের মধ্যে নৃত্ত বা অঙ্গচালনার সঙ্গে অভিনয়ও কিন্তু যুক্ত হয়ে আছে। বাঙালির মনে মহাপ্রভুর আইকনটি সব সময়েই নৃত্যরত। সে কথা বাংলার বা দেশের সীমানা ছাড়িয়েও সত্যি। তবে ঠিক নট বা নাট্য-পরিচালক হিসেবে মহাপ্রভু আমাদের কাছে খুব একটা পরিচিত নন। অথচ, বাংলায় বা ওড়িশায় তাঁর কার্যকলাপের মধ্যে অনেকটা জুড়েই আছে অভিনয়। সমস্ত অভিনয়ের ঘটনা তো একটি লেখায় বলা যাবে না। তাই বৃন্দাবন দাসের একটিমাত্র বর্ণনাতেই আমাদের কথা সীমাবদ্ধ থাকবে। এই অভিনয় আমাদের সম্প্রদায় বিভাজনের প্রচলিত ধারণাকে খানিক প্রশ্নের মুখে ফেলে দেবে। সে কথায় পরে ফিরে আসা যাবে।

জগাই-মাধাইয়ের ঘটনা তখন হয়ে গেছে। শ্রীবাসের আঙিনায় রাত্তিরে দুয়ার দিয়ে ঘনিষ্ঠ পরিকরদের নিয়ে নিমাই কীর্তন করেন। তাতে সকলের অবারিত প্রবেশাধিকার নেই। তবে যাদের অধিকার আছে, তাদের মধ্যে জাতিপাতির বাঁধন কিঞ্চিৎ শিথিল হতে দেখা যাচ্ছে। সঙ্কীর্তনের পর বিভিন্ন জাতের মানুষ এক সঙ্গে ‘চাল কলা মুদ্গ দধি একত্র করিয়া’ খাচ্ছেন, তাতে নাকি জাতের সর্বনাশ হচ্ছে। তা ছাড়া উচ্চৈঃস্বরে ঈশ্বরের নাম করে তাকে ব্রাহ্মণ চণ্ডাল সবার কাছেই অনায়াসলভ্য করে তোলাটাও সকলের মনঃপূত হচ্ছে না। সুতরাং সঙ্কীর্তন নিয়ে কানাঘুষো, গুজব ছড়ানো, বিরুদ্ধতা ইত্যাদি সবই চলছে ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক নবদ্বীপে। এই সময়ে এক দিন তিনি ঘোষণা করলেন যে আজ নাটক হবে —‘আজি নৃত্য করিবাম অঙ্কের বন্ধানে’।

লক্ষ্য করুন, এই অঙ্ক কিন্তু একটি টেকনিক্যাল কথা। ভরতের ‘নাট্যশাস্ত্র’ পর্যন্ত তার শেকড়। অঙ্ক মানে যেমন নাট্যের অন্তর্গত একটি পরিমাপের একককে বোঝায়, তেমনই আবার প্রকরণ, ভাণ ইত্যাদির মতো দশরূপকের একটি বর্গকেও বোঝায়। সুতরাং অঙ্কের বন্ধনে নৃত্য করার অর্থ দাঁড়াল, আজ একটি নাট্যাভিনয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে। অভিনয় হবে চন্দ্রশেখর আচার্যের বাড়িতে। সবাইকে খবর দেওয়া হল, বৈষ্ণবদের বাড়ির মেয়েরাও হাজির হয়েছিলেন। অর্থাৎ, শ্রীবাসের বাড়ির কীর্তন যেমন এক্সক্লুসিভ, এই নাট্য তেমন নয়। বরং অনেকটাই অবারিত এর দ্বার। এই কথাটা খেয়াল করতে বলব। আর একটা কথাও। যে, এই অভিনয়টি অনেকটাই পূর্ব-পরিকল্পিত। সঙ্কীর্তনের মধ্যে মহাপ্রভু বা তাঁর সঙ্গীসাথীরা যেমন মাঝেমধ্যেই ভাবাবেশে ‘আবিষ্ট’ হয়ে শিব বা কৃষ্ণ বা গোপী বা গরুড় ইত্যাদি চরিত্রের মতো আচরণ করতেন, এ কিন্তু তেমন কোনও স্বতঃস্ফূর্ত ঘটনা নয়। বরং অনেকটাই স্ক্রিপ্টেড। কী পালা হবে, কে কোন চরিত্রে অভিনয় করবেন— সে সব মহাপ্রভুই ঠিক করে দিচ্ছেন। আধুনিক অর্থে বলা যেতে পারে, মহাপ্রভু এই নাটকের ডিরেক্টর কিংবা ডিজ়াইনার।

নিমাই পণ্ডিত তাঁর একান্ত অনুগত বুদ্ধিমন্ত খানকে বললেন, সবার বেশভূষার ব্যবস্থা করতে। তৎকালীন বাংলায় শব্দটি ছিল ‘কাছ’ বা ‘কাচ’। অভিধান বলছে কাছ, কাছা, কাচনি এরা খুব কাছাকাছি শব্দ। কাচ মানে পোশাক যেমন, তেমনই বিস্তৃত অর্থে অভিনয়ের জন্য সজ্জা করা বোঝায়, আবার অভিনয়ও বোঝায়। পদাবলি সাহিত্য বাদই দিলাম, এই তো সে দিন রামপ্রসাদ বলেছেন— “কবি রামপ্রসাদ দাসে গো ভাষে মা, কত কাচ গো কাচ।” নাচ-কাচ, কার্তিকের কাচ, আলকাপের কাচ-জাতীয় বাগধারায় অভিনয়ের এই অনুষঙ্গটি এখনও জড়িয়ে আছে। বুদ্ধিমন্ত সে সব কাচ বা সাজসজ্জার জোগাড়যন্ত্রও করে ফেললেন। চরিত্রলিপি যা ঠিক হল, তাঁরই নির্দেশনায়, তাতে একটু অস্পষ্টতা আছে। নিশ্চিত যে চরিত্রগুলি: শ্রীবাস পণ্ডিত— নারদ, হরিদাস ঠাকুর— বৈকুণ্ঠের কোটাল, ব্রহ্মানন্দ— গদাধরের বড়াই, নিত্যানন্দ প্রভু— মহাপ্রভুর বড়াই ইত্যাদি। সমস্যা হচ্ছে গদাধর পণ্ডিতকে এক বার রমা অর্থাৎ লক্ষ্মী, এক বার গোপিকা— অর্থাৎ সম্ভবত রাধা বলা হয়েছে। চরিত্র ভাগ করার সময় অদ্বৈত আচার্য নিমাইকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, কৃষ্ণ কে হবে? উত্তর এসেছিল— ‘পাত্র সিংহাসনে গোপীনাথ’। অর্থাৎ বিগ্রহ বা শালগ্রাম কোনও একটি অর্চামূর্তিকে কৃষ্ণ হিসেবে অভিনয়ের অঙ্গ করে নেওয়া হবে। মানুষে বিগ্রহে মিলে অভিনয়ের এই ব্যবস্থাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় দুনিয়া জুড়ে নাটকের উৎপত্তিতে ধর্মীয় উৎসব তথা দেবমূর্তির ভূমিকার কথা। গ্রিক নাট্যঘটনায় আপোল্লো বা দিয়োনুসুসের মূর্তির উপস্থিতির কথা জানা আছে আমাদের। আর জানা আছে যে, ভারতের সমস্ত মাঝারি বা বড় মাপের মন্দিরে গর্ভগৃহের বাইরে বড়সড় হলঘরটির নাম কিন্তু নাট্যমণ্ডপ, পরবর্তী কালে বাংলায় যা নাটমন্দির, কিংবা দক্ষিণের অনেক অঞ্চলে মণ্ডপম্‌ নামে পরিচিত। এই পরিসরটি দেবতার উদ্দেশে নাট্যপ্রদর্শনের জন্য নির্দিষ্ট থাকত। এখনও গান-বাজনা-নাচ-কথকতা সেখানেই হয়ে থাকে। গৌরাঙ্গ নিজে বলছেন, তিনি লক্ষ্মীর বেশে নৃত্য করবেন। কিন্তু নাটকের শুরুতে তাঁকে রুক্মিণীর আবেশে স্বয়ংবরের আগে কৃষ্ণকে চিঠি লিখতে দেখছি। বোঝা যাচ্ছে যে, নাট্যাংশটি সম্ভবত ‘রুক্মিণীহরণ’। আর কাহিনিসূত্র হিসেবে ‘ভাগবত পুরাণ’-এর স্পষ্ট উল্লেখও পাওয়া যাচ্ছে।

কাহিনি সকলেরই জানা। বিদর্ভের রাজা ভীষ্মকের কন্যা রুক্মিণী। তিনি মনে মনে কৃষ্ণকে স্বামীরূপে বরণ করেছেন, কিন্তু তাঁর ভাই রুক্মীর এতে মোটেই মত নেই। তিনি শিশুপালের সঙ্গে রুক্মিণীর বিয়ে ঠিক করেন। রুক্মিণী এক দূতের মাধ্যমে দ্বারকায় চিঠি পাঠান। সারমর্ম হল, হে কৃষ্ণ! আমি তোমাকেই পতিরূপে চাই। সুতরাং এই বিয়ে হলে আমি উপবাসে প্রাণত্যাগ করব। আমায় যে কোনও ভাবে এসে উদ্ধার করো। যদি ভাবো রাজপ্রাসাদের নিরাপত্তা বেষ্টনী থেকে কী ভাবে আমায় হরণ করবে, তা হলে জেনে রাখো যে, বিয়ের আগের দিন কুলপ্রথা অনুসারে আমি নগরের বাইরে গিরিজা মন্দিরে দেবীকে প্রণাম করতে যাব। সেই সুযোগ।

‘ভাগবত পুরাণ’-এর এই অংশটি বোধহয় চিরকালই জনপ্রিয়। আসলে পরাক্রান্ত পুরুষের প্রতি দূর থেকে নায়িকার অনুরাগের সঞ্চার, সেই নায়িকার পাণিপ্রার্থী হয়ে অন্য পুরুষের আগমন, এবং শেষমেষ নায়ক কর্তৃক নায়িকাকে অপহরণ/উদ্ধার— এটা আমাদের সাহিত্যের খুবই জনপ্রিয় মোটিফ। খেয়াল করলে দেখব যে মালিক মুহম্মদ জায়সির ‘পদুমাবৎ’ এর থেকে খুব দূর কিছু নয়। মহাপ্রভুর এই অভিনয়ের খুব কাছাকাছি সময়ে শ্রীমন্ত শঙ্করদেবও ‘রুক্মিণীহরণ’ নামে অসমিয়া ভাষায় একখানি অঙ্কিয়া নাট রচনা করেছেন।

যাই হোক, চন্দ্রশেখরের বাড়ির আঙিনায় ‘কথুয়ার চান্দয়া’ খাটানো হয়েছিল, আজকের শামিয়ানা, ভরতমুনি নাট্যশাস্ত্রে যাকে চন্দ্রাতপ বলেছেন। অর্থাৎ অভিনয় হচ্ছে অঙ্গনমঞ্চে। অদ্বৈত কোনও চরিত্র পাননি, নিমাই তাঁকে বলেছেন যে, ‘সব চরিত্রই তো তোমার!’ কাণ্ডকারখানা দেখে মনে হয়, অদ্বৈত আচার্য বোধহয় অধিকারী বা স্টেজ ম্যানেজারের ভূমিকা পালন করছিলেন— ‘সর্বভাবে নাচে মহা বিদূষক প্রায়’। হরিদাসের অভিনয় দেখে দর্শকদের হাসির রোল, শ্রীবাসের অভিনয়ের প্রাবল্যে শচীমায়ের মূর্ছা, কুশীলবদের সঙ্গে দর্শকদের ঠাট্টা মশকরা— এ রকম নানা খুঁটিনাটি বর্ণনা আছে আখ্যানে। সবিস্তার বর্ণনা করতে পারলে ভাল হত, কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য একটু আলাদা। নাটক ভালই চলছিল, কিন্তু মাঝপথে সব ভেস্তে গেল। কারণ নিমাই পণ্ডিত প্রথমে বলেছিলেন লক্ষ্মীর বেশে নৃত্য করবেন, অভিনয় করছিলেন রুক্মিণীর ভাবে, কিন্তু শেষে কী হইতে কী হইয়া গেল, তিনি আদ্যাশক্তির বেশে প্রবেশ করলেন!

মনে হয়, গিরিজা অর্থাৎ দেবী দুর্গার মন্দিরে রুক্মিণীর প্রণাম করতে যাওয়ার দৃশ্য ছিল সেটি। এবং এত নিপুণ সজ্জা হয়েছিল যে, অন্য লোক দূরে থাক, তাঁর মাও তাঁকে প্রথমটায় চিনতে পারছিলেন না। এই বার বৃন্দাবনদাসের বর্ণনা নাটক ছেড়ে অন্য দিকে মোড় নিল। মহাপ্রভু কী সেজেছেন? লেখক বলছেন সীতা, লক্ষ্মী, মহালক্ষ্মী, পার্বতী, রাধা, গঙ্গা, মহামায়া নানা রূপের ঝলক যেন দেখা যাচ্ছে। স্থির করা যাচ্ছে না। তার পর তিনি নাচতে আরম্ভ করলেন। সেই নাচের মধ্যেও বিচিত্র ভাবের সমাহার দেখা যাচ্ছে—যোগেশ্বরী, মহাচণ্ডী, রেবতী, রাধিকা ইত্যাদি ইত্যাদি। “অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডে যত নিজ শক্তি আছে। সকল প্রকাশে প্রভু রুক্মিণীর কাছে॥” খানিক নৃত্য হল, সবাই ভাবাবিষ্ট, নিত্যানন্দ মূর্ছিত হয়ে পড়ে গেলেন। এ বার গৌরাঙ্গ সিংহাসনে উঠে ঠাকুর কোলে করে বসে পড়লেন। সবাই বুঝে নিল এ হল লক্ষ্মীর আবেশ। সকলে মিলে তাঁকে ঘিরে স্তবস্তুতি করতে শুরু করল।

এই বারই আমাদের আশ্চর্য হওয়ার পালা। কারণ, ‘কেহ পড়ে লক্ষ্মীস্তব কেহ চণ্ডীস্তুতি’। কিন্তু মূলত জগজ্জননী মহামায়ার রূপেই তাঁর বন্দনা হতে লাগল। নাটকের শুরুতে দেখেছি, দর্শকেরা সকলেই বৈষ্ণব এবং তাঁদের পরিবারের লোকজন। তা হলে চণ্ডীস্তুতি করছে কারা? এত দিন যে জানতাম, শৈব শাক্ত বৈষ্ণব এই রকম সব পৃথক পৃথক সম্প্রদায় রয়েছে এবং তাদের মধ্যে প্রায় জল-অচল ভেদাভেদ! যে ভেদাভেদ এবং রেষারেষি থেকে নাকি কুম্ভমেলা উপলক্ষে যুদ্ধটুদ্ধও হয়েছে! বাংলায় বৈষ্ণব আন্দোলনের ইতিহাসের শুরুতে তখনকার পরিস্থিতি বোঝাতে পণ্ডিতেরা চৈতন্যভাগবত থেকেই এই দুই পঙ্‌ক্তি উদ্ধার করে থাকেন: “বাসুলী পূজয়ে কেহানা উপহারে। মদ্য মাংস দিয়া কেহ যক্ষ পূজা করে॥” বাসুলীকে সাধারণত বিশালাক্ষী বলে মনে করা হয়। কেউ কেউ বৌদ্ধ উৎসের কথাও বলেছেন। মোদ্দা কথা হল, মহাপ্রভুর আবির্ভাবের আগে বাংলার ধর্মসংস্কৃতিতে কী রকম শাক্ত তান্ত্রিক প্রভাব ছিল, এই দু’টি লাইন যেন তারই প্রমাণ। কিন্তু আমরা খেয়াল করি না যে, ‘একাম্রক্ষেত্র’ অর্থাৎ আজকের ভুবনেশ্বরে গিয়ে শিবমহিমা বর্ণনা করে অনেক নৃত্যগীত করেছিলেন মহাপ্রভু। বা তারও অনেক আগে, নিমাই পণ্ডিত তাঁর টোল খুলেছিলেন মুকুন্দ সঞ্জয়ের বাড়ির চণ্ডীমণ্ডপে। খেয়াল করি না বলেই, গৌরাঙ্গ যে ‘আপনে হইলা প্রভু জগৎজননী’ এবং অমনি বৈষ্ণবেরা গড়গড় করে চণ্ডীস্তুতি পড়তে শুরু করে দিলেন— ব্যাপারটা আমাদের খোপে খোপে ভাগ করা ধর্ম-ধারণায় একটু নাড়া দিয়ে যায়। যদিও নাড়া দেওয়ার কিছুই নেই, যৌগমিশ্র ব্যাপারটি তো আজকের নয়। খোদ ভাগবত পুরাণেই রুক্মিণীকে লক্ষ্মীর অবতার বলা হয়েছে, অথচ সেই রুক্মিণী যাঁকে প্রণাম করছেন তিনি গিরিজা, অম্বিকা, ভবানী— ভব অর্থাৎ শিবও সেখানে যুক্ত রয়েছেন!

আসলে ধর্মের আচরণ, দর্শন এবং ইতিহাসের মধ্যে এই রকম পরস্পরবিরোধী ভাগ করাটাই মুশকিল। মনোলিথিক কোনও আচরণীয় বা পালনীয় কৃত্য দিয়ে ধর্মের এই জনসংস্কৃতি বোঝবার চেষ্টা করলে বেমালুম মারা পড়তে হবে। বাঙালি বাড়ির ঠাকুরঘরটি ভাবুন। সংস্কৃতির ছাত্র হিসেবে পরম আশ্চর্য হয়ে দেখি, তার ভেতর কালী, গণেশ, শিব, গোপাল, লক্ষ্মীঠাকুর বেশ ঠাঁই করে নেয়। এবং অভিযোজন ঘটতেই থাকে। পপুলার ফিল্ম থেকে নেমে আসা মা সন্তোষী, দু’রকম সাঁইবাবা, সেই সঙ্গে বাবা লোকনাথ, বুদ্ধদেব, এমনকি জিশুখ্রিস্ট অবধি দিব্য সেই স্থিতিস্থাপকতার মধ্যে ঢুকে পড়তে পারেন। ফলে যা হয় তাকে সিনক্রেটিক বললে বোধহয় কমই বলা হয়। এই বহুত্বের পরিসরে নিদান দিতে গেলেই একমাত্রিকতা চেপে বসে। চিরকালের ভোলেভালা হাসিমুখের শিবঠাকুরকে সরিয়ে দেন পেশিবহুল শিব, গাছতলায় সিঁদুর লেপা গোলগোল চোখের বদলে চতুর্দিকে দেখা যায় রাগী মুখের হনুমান, রাগের কারণ যদিও জানা যায় না। একমাত্রিক ভাবনা থেকেই দেবদেবীরা যথেষ্ট শাস্ত্রীয় নাকি লৌকিক, দুর্গা বড় না রাম, বৃন্দাবনের গোপীজনবল্লভ কৃষ্ণ নাকি বঙ্কিমী যুগনায়ক রাজনৈতিক কৃষ্ণ— এই জাতীয় এসপার-ওসপারের মুখে এসে দাঁড়াতে হয় আমাদের।

অথচ মাখামাখিটা শুধু জনপরিসরেই নয়, শাস্ত্রের পাতাতেও এর মধ্যেই হয়ে আছে। বস্তুত ‘ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ’ যুগে যুগে দুর্গাপূজার ইতিহাসের একটা ধারণা দেয়, তাতে বলা হচ্ছে— “প্রথমে পূজিতা সা চ কৃষ্ণেণ পরমাত্মনা। বৃন্দাবনে চ সৃষ্ট্যাদ্যৌ গোলোকে রাসমণ্ডলে॥” অর্থাৎ দেবীর প্রথম পূজা হচ্ছে গোলক বৃন্দাবনের রাসমণ্ডলে, পূজা করছেন কৃষ্ণ। বৈষ্ণবদের মতেও বৃন্দাবনের অধিষ্ঠাত্রী পৌর্ণমাসী হলেন দেবী যোগমায়া। জগন্নাথ বলদেবের মাঝখানে ছোট বোন সুভদ্রাই দেবী একানংশা, মহামায়ার রূপ। আবার কৃষ্ণকে পতিরূপে লাভ করবার জন্য শেষ বাধাটি সরাতে গোপীরা কাত্যায়নী ব্রত করেছিলেন। সকলেই জানেন যে কাত্যায়নী দেবী দুর্গারই আর এক নাম, কাত্যায়ন ঋষির গৃহে যাঁর অধিষ্ঠান। বৃন্দাবনের বৈষ্ণবরা এখনও সে ব্রত করে থাকেন। নিত্যানন্দ প্রভুর বংশধরেরা দুর্গাপূজা করেন। বৈষ্ণবতীর্থ বরানগর পাঠবাড়িতে কবে থেকেই দুর্গাপূজার লগ্নেই নিষ্ঠা সহকারে কাত্যায়নী পূজা হয়ে আসছে। এখানেই শেষ নয়, বৈষ্ণবতাত্ত্বিকদের অন্যতম জীব গোস্বামী বলছেন, যিনি তন্ত্রে দুর্গা, তিনিই কৃষ্ণ। এই অবধি অনেক কিছুই সমন্বয়বাদী প্রকল্প বলে উড়িয়ে দিতে পারা যাবে। যা ওড়ানো যাবে না, সেটি এ প্রসঙ্গে সবচেয়ে নিগূঢ় কথা। চৈতন্যপন্থী বৈষ্ণবদের মূল দীক্ষামন্ত্র, অষ্টাদশাক্ষর কৃষ্ণমন্ত্র, বিনিয়োগ অনুসারে তার অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হলেন দুর্গা!

এই রকম বিচিত্র আন্তঃসম্পর্কের সুলুকসন্ধান করতে গেলে ভেদাভেদের ধারণা ধোপে টিকবে না। দুর্গাপূজা আর কৃষ্ণ-উপাসনাকে আলাদা করতে গেলে, কে যে বৈষ্ণব আর কে শাক্ত এই বোধটাই গুলিয়ে যাবে। ধর্মের সম্প্রদায়গুলির পৃথক অস্তিত্ব নেই তা বলছি না, নিশ্চয়ই আছে— তাদের আলাদা আলাদা দর্শন, আচরণ, উপাস্য, এ সবের স্বাতন্ত্র্য নিয়েই আছে। কিন্তু তাদের মধ্যে কি শুধুই বনাম সম্পর্ক? বৈদিক তান্ত্রিক, শৈব শাক্ত, নিরীশ্বর ব্রহ্মবাদী আর সগুণ সাকারবাদী এদের মধ্যে নানা রকম যাতায়াত, লেনদেনের সম্পর্কও আছে। প্রতি বছরই দেখবেন বাড়ির পুজোর প্রতিবেদনে বার বার লেখা হয়, বৈষ্ণবমতে পুজো হয়। তার মানে কী? পশুবলি হয় না? না কি, পুজোর সঙ্কল্পে বলা হয় যে, শ্রীকৃষ্ণের প্রীতিকামনায় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে? সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের বাড়িতে যেমন শুনেছি যে, পুজোর ফলের কৃষ্ণার্পণ হয়। আবার নবদ্বীপে গেলে বৈষ্ণবেরা আপনাকে বলবেন, আগে পোড়ামাতলার মা এবং ভবতারণ শিবকে দর্শন করে তার পর ধামেশ্বর মহাপ্রভুর দর্শন বিধেয়। একটি মতে পোড়ামাতলায় আরাধ্যা হলেন তন্ত্রোক্ত নীল-সরস্বতী। এই হল সমন্বয়ী সংস্কৃতি, বৈষ্ণবদের যুগলাবতার মহাপ্রভুর দর্শনের অনুমতি শিব-শক্তির কাছে নিতে হয়। এ তো শুধু দেবদেবীদের সমন্বয় নয়, মানুষের সঙ্গে মানুষের আদানপ্রদানের সম্পর্ক। এই মুহূর্তে এই কথাটা মনে করা খুব দরকার, কারণ সম্প্রদায়ের আন্তঃসম্পর্ককে অস্বীকার করে কতগুলো একটেরে এলাকা বানানোর চেষ্টা করাটা একদেশদর্শী এবং অন্ধ। যদিও অন্ধরাই সকলের চেয়ে বেশি চোখে দেখে আজ, তবুও মনে রাখা দরকার যে ‘ওরা বনাম আমরা’ আদৌ কোনও চিন্তাপদ্ধতি নয়, সেটি আসলে ঔপনিবেশিক অভিসন্ধির দ্বৈপায়ন হ্রদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bengali Story
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE