E-Paper

অনন্ত পথের যাত্রী

কাছে বসে কখনও প্রিয় সখী শ্যামা আলুথালু কেশ প্রসাধন করে দিতে যায় কিংবা বলে, “সখী চুলে তো তোমার জটাজূট হয়ে গেল। এসো, বেণি রচনা করে কবরী বেঁধে দিই।”

অবিন সেন

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২৫ ০৯:৩৩

ছবি: রৌদ্র মিত্র।

পূর্বানুবৃত্তি: মহারানি পদ্মাকে শাস্তি দিতে এসেও ভালবাসায় হদয় দ্রবীভূত হয়ে পড়ে মহারাজ প্রতাপরুদ্রদেবের। মহারানি পদ্মা মহারাজের কাছে দাক্ষিণাত্যে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করেন। পুত্র বীরভদ্রের সঙ্গে তাঁর অনেক দিন দেখা হয়নি। মহারাজ সম্মতি দেন। মহারানিকে মনে মনে ক্ষমা করে দিলেও বীরসিংহের প্রতি মহারাজের ক্রোধ প্রশমিত হয় না। তার সন্ধানের জন্য তিনি গোবিন্দ বিদ্যাধরকে নির্দেশ দিলেন। বিদ্যাধর মনে মনে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন, কারণ তিনি এমনটাই চাইছিলেন। অন্য দিকে বৌদ্ধদের উপর নেমে আসা রাজরোষ এড়াতে বীরসিংহ অন্ধকারে ঘুরপথে গা ঢাকা দিয়ে এসে উপস্থিত হয় মন্ত্রীমশাইয়ের বাড়ি। সে বুঝতে পারছে না, গোবিন্দ বিদ্যাধর তাদের এত পৃষ্ঠপোষণা করা সত্ত্বেও বৌদ্ধদের এমন দুর্দশার কারণ কী। মহারাজ প্রতাপরুদ্রদেব যে ভাবে বৈষ্ণবদের তোয়াজ করেন, তার ফলেই কি এই দুর্ঘটনা! বীরসিংহ যা করেছে, বিদ্যাধরের নির্দেশেই করেছে। তবু কেন বিদ্যাধর বীরসিংহের বক্তব্য বুঝেও বুঝতে চাইলেন না, তা বোধগম্য হল না বীরসিংহের। ক্রূর বিদ্যাধর অনুচরকে দিয়ে বিস্মিত বীরসিংহকে হত্যা করালেন।

গোবিন্দ বিদ্যাধর কাছে গিয়ে মল্লিকাকে বুকে টেনে নিলেন। তাঁর বুকের ভিতরে অসীম দহন। মনে মনে ভাবলেন, পৃথিবীতে কোথাও কি একটুও শান্তি নেই!

২৫

কোনও কিছুতেই তাঁর মন বসে না। অহরহ যেন একটা না পাওয়ার বেদনা, একটা শূন্যতার বোধ তাঁকে কুরে কুরে খায়। তাঁর ভাল লাগে না প্রসাধন আভরণ, ভাল লাগে না সঙ্গীতচর্চা। প্রিয় সখী ফুলের মালা রচনা করে নিয়ে আসে, তিনি সে মালা স্পর্শ করেও দেখেন না।

কাছে বসে কখনও প্রিয় সখী শ্যামা আলুথালু কেশ প্রসাধন করে দিতে যায় কিংবা বলে, “সখী চুলে তো তোমার জটাজূট হয়ে গেল। এসো, বেণি রচনা করে কবরী বেঁধে দিই।”

তুক্কা তার কথায় মুখ ঘুরিয়ে পাশ ফিরে বসেন। হাত দিয়ে তার হাত সরিয়ে দেন।

শ্যামা ছদ্ম-ভর্ৎসনা করে বলে, “এমন করলে কী করে হবে সখী! তোমার আহারে মন নেই। মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে বসে থাকো। এমন কি করতে আছে! পুরুষমানুষকে কাজে বাইরে যেতে হয়, বাইরে না গেলে কি তাদের চলে!”

নৃসিংহ আবার বাণিজ্যে গিয়েছে। মাসাধিক কাল তাঁদের সাক্ষাৎ হয়নি। তুক্কার মন যেন কিছুতেই আর নিজের বশে থাকে না। গত বার গৌড়ে বাণিজ্যে গিয়ে আততায়ীর আক্রমণের কথা তিনি শুনেছেন। সেই কারণে তাঁর অন্তর আরও বেশি শঙ্কিত। তা ছাড়া রাজ্যের পরিস্থিতিও ভাল নেই।দীর্ঘ দিন খরার ফলে মানুষের অন্তরে সুখ নেই। রাজকর দিতে অস্বীকার করে তারা মাঝে মাঝে বিদ্রোহ শুরু করছে। মাঝে মাঝে লুঠতরাজের খবরও পাওয়া যায়। বিশেষ করে ধনী শ্রেণির মানুষদের গৃহে মাঝে মাঝেই ডাকাতি চলছে। সেই সঙ্গে বিজয়নগরের সঙ্গে ক্রমাগত যুদ্ধ। একের পর এক দুর্গ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। সেই সুযোগে গৌড়ের সুলতান ওত পেতে আছেন। সুযোগ পেলেই তিনি আক্রমণ করবেন।

এই সব খবর যত তুক্কার কানে পৌঁছয়, তত তিনি যেন ত্রস্ত হয়ে ওঠেন। অথচ তাঁর তো এই সব রাজনৈতিক বিষয়ে শঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। কিন্তু তিনি তাঁর মনকে কিছুতেই প্রবোধ দিতে পারেন না। একটা অচেনা শঙ্কা তাঁকে অনবরত কুরে কুরে খায়। অন্য সকল পুরনারীদের দেখে তিনি ভাবেন, সকলে কেমন হেসেখেলে পুতুলের বিবাহ দিয়ে, পোষা কবুতরের বিবাহ দিয়ে শঙ্কাহীন জীবন কাটাচ্ছে। অথচ তিনি কেন কিছুতেই স্থির থাকতে পারছেন না! এর কারণ কি শুধু প্রিয় মানুষের বিরহ। নাকি সেই মানুষটার জন্য এক অজানা শঙ্কা! দিবারাত্র তিনি ভাবেন, পিতা কি তাঁদের এই সম্পর্ককে মেনে নেবেন? প্রিয়তম যে তাঁদের স্বজাতি নন, কোনও রাজপুরুষও নন! একটা দূরাগত ভয় অনুক্ষণ তাঁর পিছু নিয়ে তাঁর সঙ্গে সঙ্গে চলে।

পিতা যদি তাঁদের এই সম্পর্ককে মেনে না নেন, তা হলে কী হবে? কী করবেন তিনি? এর বেশি তুক্কা আর ভাবতে পারেন না। তাঁর মাথার ভিতরে ভয়ের একটা ছায়ান্ধকার নেমে আসে।

অথচ নৃসিংহের দিকে তাকালে তাঁর সমস্ত ভয় দূর হয়ে যায়। মানুষটা যেন নির্ভয়। ইচ্ছে করে মানুষটার বুকের উপর মাথা রেখে সব ভয় মন থেকে দূরে সরিয়ে দিতে। প্রিয় সখী শ্যামা এ সবের কী বুঝবে! তিনি শ্যামার দিকে ফিরে অবহেলায় তাকিয়ে থাকেন।

কয়েক দিন হল তিনি তাঁর পিতার সঙ্গে রাজধানী ছেড়ে শ্রীক্ষেত্রে এসেছেন।

প্রিয় সখীর দিকে তাকিয়ে তুক্কার মনে হল, সখীর মুখে একটা প্রচ্ছন্ন হাসি লেগে আছে। কিছু একটা রসিকতা যেন গোপন করে আছে শ্যামা।

তুক্কা কিছু কথা না বলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে শ্যামার দিকে তাকালেন।

শ্যামা মুচকি হেসে বলল, “আচ্ছা আচ্ছা, তোমাকে চুল বাঁধতে হবে না। এমনি করে যোগিনী বেশেই চলো। চলো না, আজ তোমার সঙ্গীতগৃহে যাই। কত দিন তুমি সেখানে যাওনি বলো তো!”

রাজকুমারী তুক্কা প্রথমে একটু নিমরাজি হলেন। কিন্তু সখীর বারংবার অনুরোধ তিনি এড়াতে পারলেন না।

হেমন্তের অপরাহ্ণে বাতাসে শান্ত একটা হিমেল আমেজ। সমুদ্রের দিক থেকে যে বাতাস ভেসে আসে, সেই বাতাস লাগলে গায়ে একটা শিরশিরে আবেশ ছড়িয়ে পড়ে। সামান্য কয়েক জন প্রতিহারী সঙ্গী করে রাজকুমারী তুক্কা আর প্রিয় সখী শ্যামা বনপথ ধরে হাঁটছিলেন। তুক্কার এলো চুল বেহিসেবি বাতাসে উড়ছিল। একটু শীতের আমেজ লাগায় তিনি বস্ত্রটি ভাল করে গায়ে জড়িয়ে নিলেন। এই পথটি রাজপরিবারের মানুষের ব্যবহারের জন্য বলে সাধারণ মানুষের এই পথে হাঁটা নিষিদ্ধ। বাইরে বেরিয়ে তুক্কার মন যেন একটু শান্ত হয়েছে।

কিন্তু তাঁরা খেয়াল করলেন না, একটি ছায়া তাদের ক্রমাগত অনুসরণ করে চলেছে।

প্রিয় সঙ্গীতভবনে তখন দ্বীপ জ্বলে উঠছে। রাজকুমারী মন ভরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে প্রিয় বাঁশিটি হাতে তুলে নিলেন। আদরভরে এক বার তার গায়ে হাত বোলালেন।

বাঁশিতে এক বার ফুঁ দিলেন। আহা! বাঁশির সঙ্গে সমস্ত চরাচর যেন আশ্চর্য মূর্ছনায় গেয়ে উঠল। সহসা পিছনে একটি শব্দে তিনি পিছনফিরে তাকালেন।

তাঁর সারা শরীর যেন শিহরিত হয়ে উঠল। তিনি কি সত্যি দেখছেন, না কি স্বপ্ন!

দেখলেন, পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন নৃসিংহ। তাঁর মুখে অমলিন হাসি। পাশে দাঁড়িয়ে শ্যামা খিলখিল করে হেসে উঠল।

রাজকুমারী তুক্কা ত্বরিত গতিতে উঠে দাঁড়ালেন। তিনি জগৎসংসার ভুলে দৌড়ে গিয়ে নৃসিংহের বুকের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। প্রিয়তমের কণ্ঠ বেষ্টন করে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।

কান্নার ভিতর দিয়েই অনুযোগের গলায় বললেন, “আমাকে এমন করে কষ্ট দিয়ে কী সুখ পাও তুমি! আমার আর কোনও লজ্জা নেই। আমি তোমার। আমি শুধু তোমার।”

নৃসিংহ প্রথমে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। নারীর কষ্টের কারণ কবেই বা পুরুষ বুঝতে পেরেছে! ধীরে ধীরে রাজকুমারীকে কঠিন বাহুপাশে বিপুল ভালবাসায় নিজের বুকে বেঁধে নিলেন।

তাঁদের দু’জনের চার পাশের জগৎ যেন থমকে দাঁড়াল। দু’জনে দু’জনকে কাছে পেয়েও পাওয়ার আশা যেন কিছুতেই মেটে না তাঁদের।

সহসা প্রিয় সখীর আঁতকে ওঠার শব্দে তাঁরা সম্বিৎ ফিরে পেলেন।

স্বর্গলোক থেকে পৃথিবীর কঠিন মাটিতে তাঁরা যেন আছড়ে পড়লেন! প্রথমে বুঝতে পারলেন না কী ঘটেছে। কঠিন বাস্তবের আলোকে তাঁদের চোখ সয়ে গেলে দেখতে পেলেন, অদূরেই দাঁড়িয়ে আছেন মহারাজা প্রতাপরুদ্রদেব। তাঁর পাশে মন্ত্রী গোবিন্দ বিদ্যাধর। মহারাজের চোখে ক্রোধের অনল। বিদ্যাধরের মুখে বঙ্কিম হাসি। তাঁরা যা দেখেছেন, তার দ্বিতীয় কোনও অর্থ হয় না।

তুক্কা ভয়ে কাঁপছিলেন। তবু প্রাণপণে শক্তি সঞ্চয় করে তিনি মহারাজের পায়ের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। কান্নাবিজড়িত গলায় বললেন, “পিতা, আমি অপরাধিনী। ওঁর কোনও দোষ নেই। কোনও শাস্তি দেওয়ার হলে আমাকে দিন।”

মহারাজা কঠিন হাতে কন্যাকে তুলে ধরে দাঁড় করালেন। কঠিন গলায় প্রতিহারীকে হুকুম দিলেন, “রাজকুমারীকে প্রাসাদে নিয়ে যাও।”

তার পর তিনি অগ্নি-প্রজ্জ্বলিত চক্ষে নৃসিংহের মুখোমুখি দাঁড়ালেন।

নৃসিংহ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার পরেই মহারাজের মুখের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে চোখে চোখ রেখে বললেন, “আমি রাজকুমারীকে ভালবাসি মহারাজ।”

মহারাজা ক্রোধে অন্ধ। তাঁর কাছে ভালবাসার এই দাবি এখন অর্থহীন। তিনি বিদ্যাধরের মন্ত্রণায় আগে থেকেই তাঁর কার্য স্থিত করে রেখেছিলেন। কঠিন গলায় হুঙ্কার দিয়ে বললেন, “চুপ করো! তোমার স্পর্ধা তো কম নয়। আমি তোমাকে মৃত্যুদণ্ডই দিতাম। কিন্তু তুমি এক দিন বিপদের হাত থেকে শ্রীক্ষেত্রকে রক্ষা করেছিলে। তাই তোমাকে প্রাণদণ্ড না দিয়ে এই রাজ্য থেকে নির্বাসিত করলাম। আগামী কালই তুমি এই রাজ্য ছেড়ে চলে যাবে। নতুবা তোমার সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে।”

একটানে কথাগুলি বলে কোমর থেকে অসি মুক্ত করে একটি অনির্দিষ্ট দিক দেখিয়ে দিলেন।

নৃসিংহের মুখে বিপুল অন্ধকার নেমে এসেছে। তাঁর মনে হল, চার পাশে কোথাও কোনও আলো নেই। শুধু অন্ধকার। শুধু অন্ধকার। কিন্তু তাঁর সমস্ত চিন্তা জুড়ে আছে তুক্কা। তাঁর কী হবে? মহারাজ কি তাঁকে হত্যা করবেন!

তিনি আর কিছুই ভাবতে পারছেন না। চিন্তাশূন্য ভাবে মহারাজের দিকে এক বার তাকালেন। বিপুল আবেগে তাঁর ঠোঁট দুটি যেন কিছু বলতে চাইছিল। কিন্তু কিছুই না বলতে পেরে শুধু বললেন, “রাজাধিরাজ, রাজকুমারীর কোনও অপরাধ নেই।”

তার পরে অন্ধকারের দিকে তিনি নেমে পড়লেন। পিছন থেকে মহারাজা কী বললেন তিনি যেন শুনেও শুনলেন না।

বিদ্যাধর তাঁর যাওয়ার দিকে অপলক নয়নে তাকিয়ে ছিলেন। তাঁর অঙ্গারের মতো জ্বলন্ত চোখদু’টি কিছুটা শান্ত হয়েছে। কিন্তু বুক ভরে শান্তি পেতে ঢের দেরি।

নৃসিংহ খেয়াল করলেন না, অন্ধকারে এক আততায়ী তাঁকে ছায়ার মতো অনুসরণ করছে।

২৬

ইদানীং রাত্রিকাল ছাড়া মহাপ্রভুকে একান্তে পাওয়া যায় না। সারা দিনই তিনি ভক্তপরিবৃত হয়ে থাকেন। রায় রামানন্দ তাই ভাবলেন, রাত্রিতেই তিনি মহাপ্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। কিছু বিষয় তিনি মহাপ্রভুর সঙ্গে আলোচনা করতে চান। এই বিষয়ে মহারাজ প্রতাপরুদ্রদেবের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে। মহারাজও হয়তো অতি শীঘ্রই প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসবেন। কারণ মহাপ্রভুর মতো দূরদর্শী মানুষ বিরল।

তখন ঠিক কত রাত্রি, খেয়াল নেই তাঁর। গম্ভীরার ক্ষুদ্র কক্ষে মহাপ্রভু একা বসে আছেন। উন্মুক্ত অলিন্দপথে অন্ধকার আকাশের দিকে তাঁর দৃষ্টি। সর্বক্ষণের সঙ্গী স্বরূপ দামোদরকে তিনি এক প্রকার জোর করেই বিশ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি কি অন্ধকারে আলোর অন্বেষণ করছেন! তিনি বুঝতে পেরেছেন, দুই সুদক্ষ কর্মচারী রূপ আর সনাতনকে হারিয়ে এখন আর গৌড়ের সুলতানের পক্ষে শ্রীক্ষেত্র অধিকার করা সম্ভব হবে না। কয়েক দিন আগেই রূপ বৃন্দাবন থেকে নীলাচলে ফিরে এসেছেন। সনাতন গিয়েছেন বৃন্দাবনে।

সহসা দ্বারপথে একটি ছায়ার আবির্ভাব হল। মহাপ্রভু পিছন দিকে না ফিরেই বুঝতে পারলেন কে এসেছেন। তার মুখে চন্দ্রকিরণের মতো অনাবিল হাসি খেলে গেল।

ঘাড় ফিরিয়ে বললেন, “এসো রামরাজা।”

রায় রামানন্দ এগিয়ে এসে মহাপ্রভুর পদধূলি নিলে তিনি তাঁর মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন। বললেন, “তুমি এখন জগন্নাথের সেবায় আর মন্দিরের কাজে এত ব্যস্ত যে তোমার দেখাই পাওয়া যায় না।”

মহাপ্রভুর গলায় কি প্রচ্ছন্ন অনুযোগ!

রায় রামানন্দও রসিকতা করলেন, “আপনিও তো প্রভু, ভক্তপরিবৃত হয়ে ব্যস্ত থাকেন। আপনাকেও তো আমরা বিরলে পাই না।”

মহাপ্রভু মৃদু হাসলেন। কিছু বললেন না। তিনি নিজেও তা জানেন। মনে মনে ভাবলেন, দিকে দিকে মানুষের মনের মধ্যে ভক্তির ভাব, প্রেমের ভাব, শান্তির ভাব জাগিয়ে তুলতে হবে। এ যে তাঁর কর্তব্য।

অনেক দিন পরে দু’জনে একান্তে শাস্ত্র আলোচনা করলেন। তার পর রায় রামানন্দ বললেন, “প্রভু, ছোট হরিদাসের আত্মহত্যার জন্য গৌড়ীয় ভক্তরা আপনাকেই দায়ী করছেন। তাঁরা অভিমান করে বলছেন, জগন্নাথ দাস আপনার দীক্ষিত শিষ্য নন, অথচ সেই জগন্নাথ দাসকে কাছে টেনে আপনি আপন গৌড়ীয় শিষ্যদের দূরে ঠেলেছেন।”

মহাপ্রভু আত্মমগ্ন হয়ে কিছু ভাবলেন। কিছু ক্ষণ বিরতি দিয়ে বললেন, “আমি সব বুঝি রামরাজা। কিন্তু ছোট হরিদাস যা করেছে, তাও তো অনুচিত। বৈষ্ণব সন্ন্যাসীদের পক্ষে এ কাজ যে মহাপাপ।”

রায় রামানন্দ সায় দিলেন, “সে আমি জানি প্রভু। আপনি যথার্থই করেছেন,” একটু থেমে আবার বললেন, “কিন্তু গৌড়ীয় ভক্তরা যে আপনাকে ভুল বুঝে, আপনার প্রতি অভিমান করে শ্রীক্ষেত্র থেকে চলে যাচ্ছে, এটাও বোধহয় ঠিক হচ্ছে না।”

“তুমি ঠিক বলেছ রামরাজা। আমাকেই যেতে হবে তাদের কাছে। অভিমান ভাঙিয়ে আবার সবাইকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তুমি কালই ব্যবস্থা করো। আমি নিজে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসব।”

ক্রমশ

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Novel Bengali Literature

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy