পূর্বানুবৃত্তি: দীর্ঘ দিন নৃসিংহর সঙ্গে দেখা হয়নি রাজকুমারী তুক্কার। শূন্যতার কষ্ট তাঁকে কুরে কুরে খায়। বেশবাস প্রসাধনে তাঁর মন বসে না। প্রিয় সখী শ্যামার কথায়ও সান্ত্বনা পান না তিনি। এ ভাবেই দিন যাচ্ছিল। এক দিন হঠাৎই শ্যামা তাঁকে নিয়ে চললেন সঙ্গীতগৃহে। অনেক দিন পর রাজি হলেন রাজকুমারীও। যদি মন একটু ভাল হয় এই আশায়। সেখানে গিয়ে সত্যিই মন ভাল হওয়ার কারণ ঘটে, কারণ সেখানে গোপনে অপেক্ষা করছিলেন নৃসিংহ। কিন্তু দীর্ঘ দিন পরের এই মিলন সুখের হয় না। সেখানে নৃসিংহ এবং তুক্কাকে আলিঙ্গনাবদ্ধ অবস্থায় দেখে ফেলেন প্রতাপরুদ্রদেব এবং গোবিন্দ বিদ্যাধর। ক্রুদ্ধ প্রতাপরুদ্র নৃসিংহকে রাজ্য থেকে নির্বাসনের আদেশ দেন। অন্য দিকে রাত্রিকালে একাকী মহাপ্রভুর কাছে আসেন রায় রামানন্দ। মহাপ্রভুকে বোঝান, ছোট হরিদাসের ঘটনাটি কেন্দ্র করে গৌড়ীয় ভক্তদের মনে মহাপ্রভুর প্রতি বিরূপতা তৈরি হয়েছে। মহাপ্রভু তাঁর ভুল বুঝে গৌড়ীয় ভক্তদের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
মহাপ্রভু সহসা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। বার বার মাথা নেড়ে বলতে লাগলেন, “তারা যে বড় আপনার গো, তারা যে বড় আপনার। তারা অভিমান করে থাকলে আমি কী করে স্থির থাকব!”
রায় রামানন্দ অস্থির মহাপ্রভুকে নিবৃত্ত করতে চেষ্টা করলেন, “না, না প্রভু, আপনি নিজে কেন যাবেন! এই বিষয়ে আমি শিবানন্দ সেনকে বলেছি। সে বরং আপনার হস্তলিখিত একটি পত্র নিয়ে যাবে। আপনার কথা তাদের বুঝিয়ে বলে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।”
এই কথায় মহাপ্রভু যেন একটু আশ্বস্ত হলেন।
তার পরে রায় রামানন্দ বললেন, “তা ছাড়া এখনকার শ্রীক্ষেত্রের যা পরিস্থিতি, এই সময়ে আপনি এখান থেকে অন্যত্র চলে গেলে আমরা ভরসা পাব না।” একটু থেমে তিনি আবার বললেন, “আপনি তো সবই জ্ঞাত আছেন। মহারাজ বৌদ্ধদের উপরে যে ভাবে দমন-পীড়ন করেছেন, তাতে বৌদ্ধরা খুবই ক্ষিপ্ত। আর তাঁদের ধারণা হয়েছে, মহারাজ এই সব করছেন বৈষ্ণবদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই। অর্থাৎ মহারাজের এই বৌদ্ধ-বিরূপতার পিছনে রয়েছে বৈষ্ণবদের মন্ত্রণা এবং ইন্ধন। ওঁরা এ রকমই ভাবছেন। তাই বৌদ্ধরা আপনার উপরেও ক্ষুব্ধ। সেই সঙ্গে স্মার্ত-ব্রাহ্মণদের মনোভাব তো আপনি নিজেও জানেন।”
মহাপ্রভু আবার গবাক্ষপথে বহিরাকাশের অন্ধকারের দিকে তাকালেন। সে দিকে তাকিয়ে আপনমনে বললেন, “আমি সবই জানি রাম রাজা। জানি, পুঞ্জীভূত অন্ধকার থেকেই আলোর জন্ম হবে। সে শুধু সময়ের অপেক্ষা...”
রায় রামানন্দ নিষ্পলক তাকিয়ে থাকলেন মহাপ্রভুর দিকে। প্রভু কি অন্তর্যামী! তাঁর দু’চোখ জলে ভরে এল। তালুর পৃষ্ঠ দ্বারা চোখ মুছে তিনি বললেন, “প্রভুর কাছে একটি নিবেদন আছে।”
তিনি এর অতিরিক্ত কিছু বলার আগেই মহাপ্রভু বললেন, “তুমি কী বলবে আমি জানি, রাম রাজা।” তার পর তিনি ঘরের এক কোণে আঙুল দেখিয়ে বললেন, “ওই দেখো, যে যষ্টি আমি গোদাবরীর জলে ভাসিয়ে দিয়ে এসেছিলাম, সেই যষ্টিই আবার আমি হাতে তুলে নিয়েছি।”
বলে তিনি উঠে দাঁড়ালেন।
রামানন্দ দেখলেন, মহাপ্রভুর দীর্ঘ ঋজু দেহ যেন অন্ধকার ফুঁড়ে আলোকশিখার মতো স্থির, নিষ্কম্প ভাবে দণ্ডায়মান। ভিতরে ভিতরে কেঁপে উঠলেন রামানন্দ। ঠিক এমন ভঙ্গিতেই কি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রে পার্থকে বিশ্বরূপ দেখিয়েছিলেন!
নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি নতমস্তকে বললেন, “কাশীশ্বর আমার খুবই অনুগত। এখন থেকে সে আপনার সর্বক্ষণের রক্ষী হিসাবে নিয়োজিত থাকবে। ভীমসেনের মতো শক্তিমান সে। কিন্তু সে আপনার ভাবশিষ্য, বৈষ্ণব ভক্ত।”
রায় রামানন্দের দিকে মহাপ্রভু এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকলেন। রামানন্দের কথায় তিনি কোনও আপত্তি করলেন না।
ও দিকে নৃসিংহের জন্য একটা উচিত ব্যবস্থা রচনা করে দিয়ে, গোবিন্দ বিদ্যাধর তাঁর বাসস্থানে ফিরে এলেন। দেখলেন, মন্ত্রণাকক্ষে গরুড় এক জনকে নিয়ে অপেক্ষা করছে।
মন্ত্রীমশাই ঘরে ঢুকতেই উভয়ে উঠে অভিবাদন জানাল। গরুড় সঙ্গের ব্যক্তিটির পরিচয় দিলেন। কোদণ্ড নামক শীর্ণ মানুষটি এক জন চর। দাক্ষিণাত্য থেকে সংবাদ দিয়ে তাকে পাঠিয়েছে বটুকেশ্বর।
“তা বটুকের কী সংবাদ?”
সে কিছু উত্তর দেওয়ার পূর্বেই এক কিঙ্কর এসে সংবাদ দিল, গৌড় থেকে এক ব্যক্তি এসেছে। সে মন্ত্রীমশাইয়ের দর্শনপ্রার্থী।
বিদ্যাধর দ্রুত উঠে দাঁড়ালেন। মনে মনে বললেন, ‘এই কি তার আসার সময় হল!’
তিনি দু’জনকে অপেক্ষা করতে বলে অন্য একটি কক্ষে চলে গেলেন। দেখলেন, গৌড় থেকে দরবার মল্লিক এসেছে। সে সুলতানি কায়দায় গোবিন্দ বিদ্যাধরকে অভিবাদন জানাল। বলল, “সুলতান হুসেন শাহ আপনাকে একটি পত্র দিয়েছেন।”
গোবিন্দ বিদ্যাধর দ্রুত সেই পত্রে চোখ বুলিয়ে নিলেন। পত্রের মর্মার্থ, সুলতানের দুই কুশলী মন্ত্রী রূপ আর সনাতন পলায়ন করেছে। শোনা গেছে, তারা বৈষ্ণব হয়ে গিয়েছে। এই সবের পিছনে আছে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কৌশল। সুতরাং এই পরিস্থিতিতে তিনি এখন ওড়িশা আক্রমণ করবেন না। বরং তিনি কর্ণাট যুদ্ধে ইন্ধন জোগাতে পারেন। কিন্তু সরাসরি তিনি বিজয়নগরের শাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন না। দরবার মল্লিকের হাত দিয়ে তিনি প্রভূত অর্থ ও রত্ন পাঠিয়েছেন। মন্ত্রী বিদ্যাধর যেন এর সদ্ব্যবহার করেন। শেষে তিনি এও লিখেছেন, মল্লিকা নাম্নী যে নারী-রত্নটিকে উপহার হিসাবে তিনি পাঠিয়েছিলেন, সে নিশ্চয়ই মন্ত্রীমশাইয়ের মনোরঞ্জনে কোনও ত্রুটি রাখছে না! আবার রসিকতা করে লিখেছেন, তার মূল্যও এখনও মেটায়নি বিদ্যাধর।
পত্রটি একাধিক বার তিনি মন দিয়ে পড়লেন। তাঁর দুই চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। এত দিনে কি ভাগ্য তাঁর প্রতি সদয় হল! তিনি স্মিতমুখে মনে মনে বললেন, ‘চাকা ঘুরছে, সত্যি চাকা ঘুরছে এ বার!’
এই অর্থ আর রত্নের খুব দরকার ছিল বিদ্যাধরের। তিনি ভাল করে তাকিয়ে দেখলেন, রত্নপেটিকাটির আকার বেশ বড়।
দরবার মল্লিককে তিনি অন্যত্র বিশ্রাম করতে বললেন। তবে তাকে হুঁশিয়ার করে দিলেন, এই সমস্ত কথা যেন ঘুণাক্ষরেও কেউ জানতে না পারে। এমনকি এই গৃহের কোনও দাস-দাসীর কাছেও যেন সে তার আসল পরিচয় না দেয়। পরের দিন তিনি সুলতানকে একটি পত্রে তাঁর বক্তব্য লিখে দেবেন।
গোবিন্দ বিদ্যাধর আবার তাঁর মন্ত্রণাগৃহে ফিরে গিয়ে কোদণ্ডকে বললেন, “তা বটুক কি দক্ষিণে গিয়ে বসে আছে, না কিছু ব্যবস্থাও করেছে?”
কোদণ্ড জানাল, “সে গোপনে কয়েক জন সেনানীকে বশ করেছে। তারা বিশ্বাসঘাতকতা করতে প্রস্তুত। শুধু কিছু অর্থের প্রয়োজন, উৎকোচ দিতে হবে তাদের।”
বিদ্যাধর মনে মনে বললেন ‘এই তো চাই!’ মুখে বললেন, “তা সে পাবে। তুমি কালই অর্থ নিয়ে যাত্রা শুরু করে দাও। দ্রুত আমার কার্য সিদ্ধ হওয়া চাই। আর তা না হলে সমস্ত অর্থ তাকে তার জীবনের বিনিময়ে ফেরত দিতে হবে।”
২৭
বেশ কয়েক দিন কেটে গিয়েছে, মহারাজ প্রতাপরুদ্রদেব তাঁর আদরের কন্যার বিরুদ্ধে কোনও দণ্ডমূলক ব্যবস্থা নিয়ে উঠতে পারেননি। কী-ই বা ব্যবস্থা নেবেন তিনি? বড় বিদুষী আর আদরের কন্যা তাঁর। কোনও দিন তিনি কন্যাকে একটি ফুল দিয়েও আঘাত করেননি। আর আজ তিনি সেই কন্যার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা কী করে নেবেন!
তিনি কোনও সিদ্ধান্ত না নিয়েই চুপ করে থাকলেন। তুক্কাকে কিছু বললেনও না। তিনি রাজপ্রাসাদে নিজের মহলে বন্দি হয়ে থাকলেন। অবশ্য তাঁর প্রিয় সখী শ্যামাকে তিনি কারাগারে নিক্ষেপ করেছেন। এই সব যে তারই প্ররোচনায় ঘটেছে, এই ভ্রান্ত ধারণাই তাঁর বদ্ধমূল হয়েছে।
তিনি আশা করেছিলেন, তুক্কা তাঁর কাছে ক্ষমা চাইবেন। কন্যা হয়ে পিতার কাছে তাঁর অধিকারের দাবি জানাবেন। কিন্তু তুক্কা বড় অভিমানিনী। তিনি পিতার কাছে আর এলেন না। স্বেচ্ছায় সঙ্গীহীন বন্দিনীর মতো দিন কাটাতে লাগলেন।
মহারাজের মনেও একটুও শান্তি নেই। দিনের পর দিন দাক্ষিণাত্যের সঙ্গে যুদ্ধে রাজকোষ থেকে অর্থ ব্যয় হয়ে যাচ্ছে জলের মতো। তার উপরে কয়েক বৎসর ধরে বৃষ্টির দেখা নেই সেই ভাবে। অনাবৃষ্টির ফলে ফসলের উৎপাদন কমে গেছে। সারা রাজ্যে খাদ্যসঙ্কট প্রবল আকারে দেখা দিয়েছে। মানুষের মনে বিক্ষোভ ক্রমশ ভারী হয়ে উঠছে। এই অর্থনেতিক সঙ্কটের সঙ্গে সঙ্গে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে নানা রকমের সামাজিক অপরাধপ্রবণতা।
এই সঙ্কটের ভিতরেও মানুষের মনের ভিতরে প্রেমের প্লাবন ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন মহাপ্রভু। মহারাজা মনে মনে ভাবেন, এই এক জায়গাতেই যেন তিনি শক্তির উৎস খুঁজে পান। মহাপ্রভু নিরন্তর যেন তাঁকে শক্তি জুগিয়ে চলেছেন। মহাপ্রভুর শান্ত, স্নিগ্ধ, আলোকময় ব্যক্তিত্ব অশান্তির অন্ধকার মুছে দিতে পারে।
কিন্তু দক্ষিণের যুদ্ধ তিনি কিছুতেই সামলে উঠতে পারছেন না। কেন পারছেন না! তিনি আকাশ-পাতাল ভাবতে থাকেন। একের পর এক অধিকৃত দুর্গ শত্রুর দখলে চলে যাচ্ছে। সেই সংবাদ যেন তাঁর বুকের পাঁজর এক-এক করে ভেঙে দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি পুত্র বীরভদ্রকে নির্দেশ পাঠালেন, প্রায় দুর্ভেদ্য কোন্ডাবিড়ু দুর্গে তিনি যেন সঙ্গীদের নিয়ে আশ্রয় নেন। পিতার নির্দেশে রাজপুত্র বীরভদ্র বীর যোদ্ধাদের নিয়ে সেই দুর্গে আশ্রয় নিলেন। সেই সময়ে তাঁর মাতা পদ্মাদেবীও তার সঙ্গে সেখানে ছিলেন। তাঁকে সহায়তা করার জন্য সেখানে গেলেন দক্ষিণের প্রদেশপাল ‘বাহিনীপতি’ জীবদেবাচার্য। সেই দুর্গে অবস্থান করেই তিনি যুদ্ধ পরিচালনা করতে লাগলেন। কিন্তু কৃষ্ণদেবরায়ের সৈন্যরা যেন অমিত শক্তিধর হয়ে উঠেছে। হয়তো তারা ওড়িশার সাধারণ মানুষের ভগ্ন মনোবলের সাহায্য পেয়ে যাচ্ছে। বন্যা, খরার আঘাতে দীর্ণ মানুষ ভিতরে ভিতরে হয়তো বিরুদ্ধ সৈন্যদের সাহায্য করছে।
দীর্ঘদিন গৃহ থেকে দূরে যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে সৈন্যদেরও মনোবলে ভাটা পড়েছিল। সেই সঙ্গে ক্রমাগত পরাজয় ও সৈন্য-সামন্তদের মৃত্যুতেও তাদের মনের জোর ভেঙে পড়েছিল। তাই যুদ্ধটা প্রায় একতরফাই হয়ে যাচ্ছে।
ফলে কোন্ডাবিড়ু দুর্গের দিকে এগিয়ে আসতে শত্রুপক্ষের বেশি সময় লাগল না। কিন্তু এই দুর্গ অধিকার করা সহজ নয়। এই সময়ে কৃষ্ণদেবরায়ের সুদক্ষ মন্ত্রী আপ্পাজি এক কৌশলী পদ্ধতি অবলম্বন করলেন। তিনি কোন্ডাবিড়ু দুর্গের চার পাশে অবরোধ স্থাপন করে বসে থাকলেন। দুর্গের মধ্যে খাদ্য-পানীয় সরবরাহের সমস্ত উৎস বন্ধ করে দিলেন।
সময়টা ছিল গ্রীষ্মকাল। ফলে দিনে দিনে দুর্গের ভিতরে জলের সঙ্কট প্রকট হয়ে উঠতে লাগল। আরও কয়েক দিন পরে খাদ্যেরও অপ্রাচুর্য দেখা দিল। যুদ্ধক্লান্ত সৈন্যরা সামান্য জলের জন্য হাহাকার করছে। আধপেটা খেয়ে, জল না পেয়ে অচিরেই তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। দুর্গের ভিতরে যেন মড়ক লেগে গেল। মৃতদেহের সৎকার হল না। ফলে এখানে-ওখানে মৃতদেহ পড়ে থাকতে থাকতে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হল। কিন্তু সৈন্যরাও মরণপণ করেছে। কিছুতেই তারা দুর্গের অধিকার ছাড়বে না। এমন করে এক মাস অবরোধ চলল।
এক দিন মধ্যরাত্রে কৃষ্ণদেবরায়ের শিবির থেকে এক চর গোপনে দুর্গের ভিতরে বজ্রদেবের কাছে উৎকোচ পৌঁছে দিয়ে এল। হুসেন শাহের পাঠানো অর্থের বোধহয় সদ্ব্যবহার হল।
পরদিন বিপুল বিক্রমে দক্ষিণের সৈন্যরা দুর্গের প্রধান দরজায় ঝাঁপিয়ে পড়ল। এত দিন ধরে যে দরজা তারা ভাঙতে পারেনি, সেই দরজার সমস্ত অর্গল তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল। ভিতর থেকে প্রধান দ্বারে সৈন্যদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বাহিনীপতি বীর জীবদেবাচার্য। কঠিন লড়াই লড়ে তিনি নিহত হলেন। অনাহারে অর্ধাহারে মৃতপ্রায় সৈন্যরা আর কত প্রতিরোধ করবে! কৃষ্ণদেবরায়ের সৈন্যরা অচিরেই সেই দুর্গ অধিকার করে নিল। পঙ্গপালের মতো সৈন্যরা ঝাঁপিয়ে পড়ায় সাধারণ সৈন্যদের মধ্যে থাকা বজ্রদেবও নিহত হলেন। উৎকোচস্বরূপ প্রাপ্ত অর্থ-রত্ন তাঁর আর ইহজীবনে কাজে এল না।
কৃষ্ণদেবরায়ের নির্দেশে সৈন্যরা বীরভদ্রদেব ও তাঁর মাতা মহারানি পদ্মাদেবীকে বন্দি করে নিয়ে গেলেন বিজয়নগর রাজ্যের দক্ষিণ সীমান্তবর্তী একটি সুরক্ষিত জায়গায়।
বীরভদ্রদেব প্রকৃতই বীর। তাঁর খড়্গ চালনার দক্ষতার কথা প্রচলিত ছিল সারা দেশে। কৃষ্ণদেবরায়ও সেই কথা জানতেন।
তিনি বীরভদ্রর কাছে সেই দক্ষতার প্রমাণ দেখতে চাইলেন। নির্দেশ দিলেন, তাঁর বাহিনীর এক জন যোদ্ধার সঙ্গে প্রত্যক্ষ খড়্গযুদ্ধে প্রবৃত্ত হয়ে বীরভদ্রকে তাঁর দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে।
ক্রমশ
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)