এই ক্রিমের কৌটোটা ঘরের ঠিক কোন জায়গায় রাখবে, বুঝতে পারছে না সুমনা। পুরনো ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা রংচটা পাউডারের কৌটো, দাঁতভাঙা চিরুনির পাশে ওটা একদম মানাবে না। এত সুন্দর কাচের ক্রিমের কৌটো আগে কখনও দেখেনি। একে কৌটো বলবে? নাকি শিশি? নাকি অন্য কিছু? অতশত জানে না সুমনা। জানতে চায়ও না। আজ যখন দেবস্মিতা হাতে দিয়ে বলল, “এটা তোর জন্য এনেছি,” বিস্ময়ে তখন বাক্রুদ্ধ সুমনা।
শুধু ওর কথা ভেবে দেবস্মিতা বিদেশ থেকে এত সুন্দর একটা উপহার এনেছে! আনন্দ আর ধরে না। এ আনন্দ রাখবে কোথায় সুমনা?
দেবস্মিতা সুমনার ছোটবেলার বন্ধু। এক পাড়া, এক স্কুল। সুমনাদের পাশের জমিতে দোতলা বাড়ি বানিয়ে এসেছিল ওরা। কী সুন্দর দেখতে ছিল ওদের বাড়িটা! হালকা গোলাপি রং। জানালার পাল্লাগুলো কাচের। সে সময় পাড়ায় আর কারও বাড়ির জানলার পাল্লা কাচের ছিল না। সবই কাঠের। দেবস্মিতাদের বাড়ির দিকে তাকালে অবাক হয়ে যেত সুমনা। মনে হত শিশমহল।
দেবস্মিতাদের বাড়ির ছাদবাগানও কম সুন্দর ছিল নাকি? টবে টবে সাজানো কত রকমের ফুল। কাকু নিজের হাতে যত্ন করতেন বাগানের। ছুটির দিনের বিকেলগুলো দেবস্মিতাদের ছাদে খেলা করত ওরা, পাড়ার বন্ধুরা। সেই প্রথম জিনিয়া ফুল চিনেছিল। কাকু চিনিয়েছিলেন। জিনিয়া ফুলের পাতাগুলো খুব আকর্ষণ করত সুমনাকে। লোমশ, অথচ কী নিটোল! ওরা বন্ধুরা সুন্দর কোনও গাছের পাতা পেলে খাতা বা বইয়ের ভিতর সেটা রেখে দিত দিনের পর দিন। দেবস্মিতাদের ছাদবাগানের জিনিয়া-পাতা সুমনা রেখেছিল ইতিহাস বইয়ের ভিতর। এক বছর পর শুকিয়ে গেলেও সেই পাতা কী সুন্দর টান-টান ছিল।
ক্লাস টু থেকে টেন— এক রিকশায় সুমনা আর দেবস্মিতা স্কুলে যাতায়াত করত। স্কুল থেকে ফিরে পদ্মমাসির কাছে দেবস্মিতা থাকত। কাকু, কাকিমা দু’জনেই চাকরি করতেন। পদ্মমাসিকে রাখা হয়েছিল দেবস্মিতাকে দেখাশোনার জন্য। তবে নিজেদের বাড়িতে কত ক্ষণ আর ও থাকত? বেশির ভাগ সময় তো সুমনাদের বাড়িতে সুমনার সঙ্গে খেলে বেড়াত। সুমনার পুতুলের বাক্সের পুতুলগুলোকে সারা দুপুর ওরা দু’জন কী সুন্দর করেই না সাজাত।
আর সুমনার মা যে দিন আম-ডাল রান্না করবে, সে দিন তো আর কথাই নেই! দেবস্মিতা দু’বেলাই ওদের বাড়িতে খাবে। ওর খুব পছন্দের ছিলসুমনার মায়ের হাতের আম-ডাল। সুমনাদের একান্নবর্তী পরিবারের কেউই ওকে অন্য বাড়ির মেয়ে বলে মনে করেনি কখনও।
ক্লাস ফোরে দেবস্মিতা এক বার অঙ্কে কম মার্কস পাওয়ায় কাকিমা ওকে খুব মারছিল। ওর কান্না শুনে মা গিয়ে কাকিমার মারের হাত থেকে ওকে বাঁচায়। সে দিন কাকিমাকে মা খুব বকেছিল। কাকিমা পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে এ বাড়িতে আসেন। মা কাকিমাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়েছিল, আর কোনও দিন যেন দেবস্মিতাকে ও ভাবে না মারেন।
আহ্! ক্রিমের কৌটো থেকে সেই সব দিনগুলোর গন্ধ ভেসে আসছে নাকে। ছুঁতে পারছে সুমনা দিনগুলোকে। কৌটোটা হাতের মুঠিতে জড়িয়ে ধরে গুনগুন করে ওঠে সুমনা, “ফুলে ফুলে ঢ’লে ঢ’লে বহে কিবা মৃদু বায়...” রবীন্দ্রজয়ন্তীতে পাড়ার ফাংশনে ও আর দেবস্মিতা নেচেছিল এই গানের সঙ্গে। তানিয়াদি ওদের সাজিয়ে দিয়ে বলেছিল, “ঠিক যেন লক্ষ্মী আর সরস্বতী।”
মাধ্যমিকের পর বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরের স্কুলে ক্লাস ইলেভেনে ভর্তি হল ওরা দু’জন। এ বার আর রিকশা করে নয়। নিজেরাই বাস বা অটো চেপে এক সঙ্গে স্কুলে যাওয়া-আসা। কত গল্প, কত হাসি তখন। মন কষাকষি? নাহ্, এক দিনও হয়নি।
স্কুল যাওয়া-আসার পথে সেই প্রথম ছেলেদের চোখের মুগ্ধতা খুঁজে পাওয়া। দুই বন্ধুতে সে-সব নিয়ে কত খুনসুটি। ওদের চোখও মুগ্ধ হত বুদ্ধিমান, সুন্দর কোনও ছেলে দেখলে।
সুমনার ছিল গল্পের বইয়ে মুখ গুঁজে থাকার নেশা। নাওয়া-খাওয়া ভুলে গোগ্রাসে গিলত গল্পের বই। একটা ভাল বই পড়লে যত ক্ষণ না সেটা দেবস্মিতাকে বলছে, শান্তি নেই। দেবস্মিতার অবশ্য গল্পের বইয়ের নেশা ছিল না। মাঝে মধ্যে দু’-একটা পড়ত। নিজে পড়ার ধৈর্য ছিল না। সুমনা পড়ে শোনালে শুনত। তাই বেশির ভাগ সময়ই পছন্দের বই পড়ার পর সুমনা ওকে সেটা পড়ে শোনাত। মনে পড়ছে, ওদের ছাদবাগানে বসে ওকে ‘ন হন্যতে’ পড়ে শুনিয়েছিল।
*****
বহু দিন দেবস্মিতার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না সুমনার। কাকুর মুম্বইয়ে ট্রান্সফার হয়েছিল। উচ্চ মাধ্যমিক ফাইনালের পর দেবস্মিতা আর কাকিমাও চলে গেল মুম্বই। ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন বলে ট্রান্সফার পেতে কাকিমার অসুবিধে হয়নি।দমদমের বাড়ি বিক্রি করে ওরা মুম্বইতে স্থায়ী ভাবে থেকে গেছিল।
প্রথম প্রথম কিছু দিন চিঠিতে যোগাযোগ থাকলেও পরে তা ক্ষীণ হয়ে আসে। ফেসবুকের কল্যাণে ছ’বছর আগে আবার ফিরে পাওয়া দেবস্মিতাকে। এখন ওর সঙ্গে কথা হয় ইনবক্সে। বিয়ের পর পনেরো বছর ধরে আমেরিকায় আছে দেবস্মিতা। কাকু-কাকিমা কেউ আর নেই এখন। প্রত্যেক শীতে দেবস্মিতা দেশে আসে। কলকাতায় বালিগঞ্জের বাড়িতে ওঠে। এটা ওর বরের পৈতৃক বাড়ি। মুম্বইয়ের বাড়ি ভাড়া দেওয়া আছে।
দেশে এখন অনেক বন্ধুবান্ধব দেবস্মিতার। তাদের মধ্যে স্কুলের রীতা আর তপতীও আছে। স্কুলে অবশ্য রীতাদের সঙ্গে খুব একটা বন্ধুত্ব ছিল না সুমনা আর দেবস্মিতার। রীতা এখন দুবাইতে থাকে। দেবস্মিতার সঙ্গে প্ল্যান করে একই সময় দেশে আসে। তপতী কলকাতার এক বিখ্যাত কলেজে পড়ায়। ওদের বাদ দিলে দেবস্মিতার এখনকার বাকি বন্ধুরা সবাই অচেনা সুমনার।
দেশে এসে সেই বন্ধুদের সঙ্গে ক্লাবে, হোটেলে, রিসর্টে খুব আনন্দ করে দেবস্মিতা। তবে সুমনাকে কখনও ডাকে না সে-সব আনন্দ অনুষ্ঠানে। ওর ফেসবুক ওয়ালে সে-সবের ছবি দেখতে পায় সুমনা। কী সুন্দর সব ছবি! একটা ছবিতে বন্ধুদের সঙ্গে গোয়ার রিসর্টে সুইমিং পুলে সুইমস্যুটে দেবস্মিতা! কী অপূর্ব লাগছে ওকে! ঠিক যেন নাফিসা আলি! কবে দেবস্মিতা সাঁতার শিখল কে জানে। ওর তো জলে খুব ভয় ছিল।
গত বার দেশে এসে কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে শান্তিনিকেতন গিয়েছিল। সে ছবি দেখে মনে মনে শান্তিনিকেতন চলে যায় সুমনাও। ক্লাস নাইনে এক বার স্কুল থেকে ওদের শান্তিনিকেতনে নিয়ে গিয়েছিল। জ্বর হওয়ায় দেবস্মিতা যেতে পারেনি। ফেরার সময় সুমনা ওর জন্য প্লাস্টার অব প্যারিসের ছোট একটা রবীন্দ্রমূর্তি এনেছিল।
ক্রিমের কৌটোটা এ বার বুকে চেপে ধরে সুমনা। আলতো হাতে চোখের জল মুছে হেসে ফেলে। না মুছলেও ক্ষতি ছিল না। আনন্দাশ্রু নাকি মুছতে নেই। দেবস্মিতারই বলা কথা। যে বারে ওদের দু’জনের এক সঙ্গে লাগানো কামিনী গাছে প্রথম কামিনী ফুল ধরেছিল, সে দিনও সুমনা আনন্দাশ্রুতেভেসেছিল। চোখ মুছতে যেতে দেবস্মিতা বলেছিল, “আনন্দাশ্রু মুছতে নেই।”
সুমনার খুব ইচ্ছে হয় দেবস্মিতার সঙ্গে মুখোমুখি দেখা করার। ইনবক্সে মাঝে মাঝে লেখে সে কথা। দেবস্মিতা জানায়, ওরও নাকি তেমনই ইচ্ছে। প্রতি বার দেশে আসার আগে ইনবক্সে দেবস্মিতাও লেখে, “এ বার কিন্তু তোর সঙ্গে দেখা করবই।” আসলে ও সুমনার সঙ্গে একা দেখা করতে চায়। ওর একটাই কথা, “দেখ সুমনা, এত বছর পর তোকে খুঁজে পেয়েছি। তোকে আমি অন্য বন্ধুদের ভিড়ে হারিয়ে যেতে দেব না।”
এমন কথায় চোখের পাতা ভেজে সুমনার। সেই সঙ্গে হালকা একটা অহঙ্কার এসে জাপ্টে ধরে। তার মানে ওকে আর সকলের সঙ্গে এক করে দেখে না দেবস্মিতা। তবে অহঙ্কারকে আমল না দিয়ে দেবস্মিতার ভালবাসার ওম নেয় সুমনা। দেবস্মিতা আজও ওকে একই রকম ভালবাসে। সুখসাগরে ভাসে সুমনা।
কিন্তু এমনই কপাল, প্রতি বারই কিছু না কিছু বাধা এসে ওদের দেখা করায় বাদ সাধে। দেবস্মিতাই আটকে পড়ে সে-সব বাধায়। আমেরিকায় ফিরে গিয়ে ইনবক্সে আফসোস করে, “এ বারও দেখা হল না আমাদের। ভগবানের বোধহয় ইচ্ছে নেই আমাদের দেখা হোক।”
ভগবানে বিশ্বাসী সুমনা অবশ্য এর মধ্যে ভগবানের ইচ্ছে-অনিচ্ছে খুঁজে পায় না। ও জানে, মাত্র মাসখানেকের জন্য দেশে আসে দেবস্মিতা। এক বছর ধরে জমে থাকা হাজারটা কাজ আর দায়িত্ব নিয়ে আসে। সে-সব ভাল করে মিটতে না মিটতে আবার ওর আমেরিকা ফেরার দিন এসে যায়। বোঝে, সুমনা বোঝে। দেবস্মিতার অসুবিধেটা সুমনা বোঝে। সে তো অবুঝ নয়।
তবে এ বার দুই বন্ধুর মুখোমুখি সাক্ষাৎ হল। সুমনা যে কারখানায় কাজ করে সেখানকার আচার, বড়ি, ঘি, জ্যাম, জেলির কথা দেবস্মিতা অনেক বার শুনেছে সুমনার কাছে। সুমনা দিতে চেয়েছে সে-সব ওকে। কিন্তু ও নেওয়ার আগ্রহ বোধ করেনি। কিছু দিন আগে আমেরিকায় এক বাঙালি বন্ধুর বাড়িতে সুমনাদের কোম্পানির আচার খেয়ে দেবস্মিতার খুব ভাল লাগে। জানতে পারে, দেশ থেকে ওরা এই আচার, বড়ি, ঘি কিনে এনেছে। অনলাইনে এদের জিনিস পাওয়া যায় না। তক্ষুনি দেবস্মিতা ঠিক করে, এ বার দেশে গিয়ে সুমনার থেকে এ সব নিতে হবে। সেই মতো সুমনাকে অর্ডার দিয়ে রাখে।
সঙ্গে আরও একটা দায়িত্ব দেয়। দেশে এসে ও ব্লাউজ় বানায় নিউ মার্কেটের এক টেলরিং শপে। একমাত্র এখানকার ব্লাউজ়ই ঠিকঠাক ফিট হয়। পুরনো মাস্টারজি নেই। তার ছেলে বাবার মতোই দক্ষ। কিন্তু এর আগের বারের ওর কুড়িটা ব্লাউজ় একদম ঠিকঠাক বানায়নি। ছেলেটিকে ব্লাউজ়গুলো দিয়ে গেছিল ঠিক করে রাখার জন্য। সুমনাকে দায়িত্ব দিল সেগুলো টেলরিং শপ থেকে এনে নিজের কাছে রাখার। পরের বার এসে ও নিয়ে নেবে। ব্লাউজ়ের বিলের কপি ইনবক্সে পাঠিয়েছিল। মাস্টারজির ছেলেকেও বলে দিয়েছিল সুমনার কথা। সুমনা পুজোর আগেই ব্লাউজ়গুলো এনে নিজের কাছে রেখেছে। কে জানে, পুজোর সময় গাদা গাদা ব্লাউজ়ের ভিড়ে যদি দেবস্মিতার ব্লাউজ়গুলো হারিয়ে যায়!
আজ সেই ব্লাউজ়গুলো আর অর্ডারি ঘি, বড়ি, আচার নিয়ে সুমনাকে বালিগঞ্জের বাড়িতে আসতে বলেছিল দেবস্মিতা। সুমনা গিয়েছিল। অবশেষে দেখা হল দুই বন্ধুর। তবে বেশি ক্ষণ এক সঙ্গে থাকা হয়নি। ননদের নতুন ফ্ল্যাটের গৃহপ্রবেশের নেমন্তন্নে যাওয়ার তাড়া ছিল দেবস্মিতার। এত ব্যস্ততার মধ্যেও ওর জন্য আনা উপহারটি দিতে ভোলেনি দেবস্মিতা। এমন ভালবাসায় ঘোর লাগে সুমনার। ছোটবেলার বন্ধু বুঝি এমনই হয়।
*****
ময়লার গাড়ির হুইসল বাজছে। ঘড়িতে এখন সকাল ছ’টা। সুমনা এখনও ঘুম থেকে ওঠেনি। রোজকার ময়লা ফেলার কাজটা কমলই করে। আজও ব্যতিক্রম হল না। ময়লা ফেলে, হারুর দোকানে চা খেয়ে, খবরের কাগজ পড়ে বাড়ি ফিরল কমল।
বাড়ি ফিরে দেখল, সারা ঘর ওলট-পালট। আলমারি, ট্রাঙ্ক, বাক্স, ব্যাগ, সব কিছুর জিনিসপত্তর মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তন্নতন্ন করে সুমনা খুঁজে চলেছে বন্ধুর দেওয়া গতকালের উপহার, সেই সাধের ক্রিমের কৌটো। না পেয়ে চেঁচাচ্ছে, নিজেকে শাপশাপান্ত করছে ভুলো মনের জন্য।
চৌকির এক কোণে বসে পড়ল কমল। বসে বসে সেখান থেকে সুমনার অসহায় রূপ দেখছে। ভাল লাগছে দেখতে। বড্ড সরল মেয়েটা। দুনিয়ার ঘোরপ্যাঁচ কিছুই বোঝে না। ভালবাসা নামক বস্তুটিকে সব কিছুর থেকে এগিয়ে রাখে। যত্ন করে, মর্যাদা দেয় ভালবাসাকে।
কলেজে পড়ার সময় দু’বছরের জুনিয়র সুমনার সঙ্গে আলাপ কমলের। তখন থেকেই ওদের ভালবাসাবাসি শুরু। আজও একই রকম ভাবে কমলকে ভালবেসে চলেছে সুমনা।
বিয়ের পর অনেক এ পাশ-ও পাশ করেও নিয়মিত ভদ্রস্থ একটা রোজগার করতে কমল পুরোপুরি ব্যর্থ। টিউশন ভরসা করে দিনযাপন। সুমনার তাতে কিছু যায় আসে না। বরং সংসারের হাল ধরতে কমলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আচার, বড়ি কারখানার সামান্য চাকরিটা মনপ্রাণ দিয়ে করছে। সারা দিন প্রচণ্ড খাটুনি যায়। কিন্তু তাতে কমলের প্রতি ভালবাসায় এতটুকু খামতি হয় না ওর। বিয়ের পর থেকে সুমনার জন্য কিছুই করতে পারেনি কমল। দিতে পারেনি কোনও উপহারও। এ আফসোস কমলকে কুরে কুরে খায়।
গতকাল রাতে বন্ধুর দেওয়া উপহার নিয়ে আনন্দের সীমা-পরিসীমা ছিল না সুমনার। ঠিক যেন দশ বছরের এক বালিকা। ক্রিমের কৌটোটা কোথায় রাখবে, কবে থেকে মাখবে ঠিক করতে পারছিল না। কমলকে দোসর করেছিল সেই আনন্দের। সুমনার আনন্দ কমলকেও ছুঁয়ে যায়। কত যত্ন করে কাগজের সুন্দর গিফ্ট ব্যাগের ভিতর উপহারটি ভরে দিয়েছে সুমনার বন্ধু। ক্রিমের কৌটোটার উপর পরম আদরে হাত বুলিয়েছে কমলও। উল্টেপাল্টে দেখেছে। ডলারে দাম লেখা। মন দিয়ে পড়েছে কৌটোর গায়ের লেখাগুলো।
ক্রিমের কৌটো খুঁজে না পেয়ে সুমনা এ বার কাঁদছে। কাঁদুক, যত ইচ্ছে কাঁদুক, চেঁচাক, নিজেকে গাল পাড়ুক। চৌকি ছেড়ে উঠে পড়ে কমল। অনাদর বড় অসম্মানের। তার আদরের সুমনাকে অনাদরের হাত থেকে রক্ষা করতে পেরে কমল আজ খুব খুশি। নিজে কোনও উপহার দিতে না পারুক, তাই বলে দু’বছর আগে এক্সপায়ারি ডেট পেরিয়ে-যাওয়া একটা ক্রিম তো জেনেশুনে মাখতে দিতে পারে না সুমনাকে। ও যা করেছে, কিচ্ছু ভুল করেনি। ভেবে, শিরদাঁড়া টান-টান হয় কমলের।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)